ও মঞ্জুরী, ও মঞ্জুরী আমের মঞ্জুরী,
আজ হৃদয় তোমার উদাস হয়ে পড়েছে কি ঝরি।
আমার গান যে তোমার গন্ধে মিশে দিশে দিশে
ফিরে ফিরে ফেরে গুঞ্জরি।
আজি বসন্ত জাগ্রত দ্বারে।
তব অবগুন্ঠিত কুন্ঠিত জীবনে
কোরোনা বিড়ম্বিত তারে।
আজি খুলিয়ো হৃদয়দল খুলিয়ো,
আজি ভুলিয়ো আপন পর ভুলিয়ো,
এই সঙ্গিতমুখরিত গগনে
তব গন্ধ তরঙ্গিয়া তুলিয়ো।
এই বাহির- ভুবনে দিশা হারায়ে
দিয়ো ছড়ায়ে মাধুরী ভারে ভারে।
একি নিবিড় বেদনা বনমাঝে
আজি পল্লবে পল্লবে বাজে-
দূরে গগনে কাহার পথ চাহিয়া
আজি ব্যাকুল বসুন্ধরা সাজে।
মোর পরানে দখিন বায়ু লাগিছে,
কারে দ্বারে দ্বারে কর হানি মাগিছে-
এই সৌরভবিহ্বল রজনী
কার চরণে ধরণীতলে জাগিছে।
ওহে সুন্দর, বল্লভ, কান্ত,
তব গম্ভীর আহ্বান কারে।
বাসন্তী, হে ভুবনমোহিনী, দিকপ্রান্তে, বনবন্তে,
শ্যম প্রান্তরে, আম্রছায়ে, সরোবরতীরে, নদীনীরে,
নীল আকাশে, মলয় বাতাসে
ব্যাপিল অন্তর তব মাধুরী।
একটুকু ছোঁওয়া লাগে, একটুকু কথা শুনি----
তাই দিয়ে মনে মনে রচি মম ফাল্গুনী।
কিছু পলাশে নেশা, কিছু বা চাঁপায় মেশা,
তাই দিয়ে সুরে সুরে রঙে রসে জাল বুনি।
ওরে ভাই, ফাগুন লেগেছে বনে বনে---
ডালে ডালে ফুলে ফুলে পাতায় পাতায় রে,
আড়ালে আড়ালে কোণে কোণে।
বসন্তে ফুল গাঁথল আমার জয়ের মালা।
বইল প্রাণে দখিন-হাওয়া আগুন-জ্বালা।
পিছের বাঁশি কোণের ঘরে মিছে রে ওই কেঁদে মরে---
মরণ এবার আনল আমার বরণডালা।
ওরে বকুল, পারুল, ওরে শাল-পিয়ালের বন,
কোন্খানে আজ পাই
এমন মনের মতো ঠাঁই
যেথায় ফাগুন ভরে দেব দিয়ে সকল মন,
দিয়ে আমার সকল মন।
বনে এমন ফুল ফুটেছে,
মান ক’রে থাকা আর কি সাজে।
মান অভিমান ভাসিয়ে দিয়ে
চল চল কুঞ্জমাঝে।
ফুলে ফুলে ঢ’লে ঢ’লে বহে কিবা মৃদু বায়,
তটিনী হিল্লোল তুলে কল্লোলে চলিয়া যায়।
পিক কিবা কুঞ্জে কুঞ্জে কুহু কুহু কুহু গায়,
কী জানি কিসেরই লাগি প্রাণ করে হায়-হায়।
ফাগুনের পূর্ণিমা এল কার লিপি হাতে।
বাণি তার বুঝি না রে, ভরে মন বেদনাতে।
উদয়শৈলমূলে জীবনের কোন্ কূলে
এই বাণি জেগেছিল কবে কোন্ মধুরাতে।
যখন মল্লিকা বনে প্রথম ধরেছে কলি
তোমার লাগিয়ে তখনি, বন্ধু, বেঁধেছিনু অঞ্জলি।
তখনো কুহেলীজালে,
সখা, তরুণী ঊষার ভালে
শিশিরে শিশিরে অরুণমালিকা উঠিতেছে ছলোছলি।
ফাগুন-হাওয়ায় রঙে রঙে পাগল ঝোরা লুকিয়ে ঝরে
গোলাপ জবা পারুল পলাশ পারিজাতের বুকের ‘পরে।
সেইখানে মোর পরাণখানি যখন পারি বহে আনি,
নিলাজ-রাঙা পাগল রঙে রাঙিয়ে নিতে থরে থরে।
আহা, আজি এ বসন্তে এত ফুল ফোটে,
এত বাঁশি বাজে, এত পাখি গায়,
সখীর হৃদয় কুসুম কোমল----
কার অনাদরে আজি ঝরে যায়!
মধুর বসন্ত এসেছে মধুর মিলন ঘটাতে।
মধুর মলয় সমীরে মধুর মিলন রটাতে।
কুহুকলেখনী ছুটায়ে কুসুম তুলিছে ফুটায়ে,
লিখিছে প্রণয়কাহিনী বিবিধ বরনছটাতে।
বসন্তে-বসন্তে তোমার কবিরে দাও ডাক-
যায় যদি সে যাক।
রইল তাহার বাণী রইল ভরা সুরে, রইবে না সে দূরে—
হৃদয় তাহার কুঞ্জে তোমার রইবে না নির্বাক্।
ফাগুনের নবীন আনন্দে
গানখানি গাঁথিলাম ছন্দে।
দিল তারে বনবীথি কোকিলের কলগীতি,
ভরি দিল বকুলের গন্ধে।
মাধবীর মধুময় মন্ত্র
রঙে রঙে রাঙালো দিগন্ত।
ফাগুন, হাওয়ায় হাওয়ায় করেছি যে দান—
তোমার হাওয়ায় হাওয়ায় করেছি যে দান—
আমার আপনহারা প্রাণ আমার বাঁধন-ছেড়া প্রাণ।
বায়ু আসিয়া কহে কানে কানে,
‘ফুলবালা, পরিমল দাও।‘
আনন্দে কাঁদিয়া কহে ফুল,
‘যাহা আছে সব লয়ে যাও।
দোলে দোলে দোলে প্রেমের দোলন-চাঁপা হৃদয়-আকাশে,
দোল-ফাল্গুনের চাঁদের আলোর সুধায় মাখা সে।
এস’ থরথরকম্পিত মর্মরমুখরিত নবপল্লবপুলকিত
ফুল- আকুল মালতীবল্লিবিতানে ---- সুখছায়ে, মধুবায়ে।
এস’ বিকশিত উন্মুখ, এস’ চির-উৎসুক নন্দনপথচিরযাত্রী।
এস’ স্পন্দিত নন্দিত চিত্রনিলয়ে গানে গানে, প্রাণে প্রাণে।
এস’ এস’ বসন্ত ধরাতলে।
আন’ মুহু মুহু নব তান, আন’ নব প্রাণ নব গান।
আন’ গন্ধমদভরে অলস সমীরণ।
নব বসন্তের দানের ডালি
এনেছি তোমাদেরই দ্বারে
আয় আয় আয়
পরিবি গলার হারে।
আশা বলে ‘বসন্ত আসিবে’
ফুল বলে, ‘আমিও আসিব’,
পাখি বলে, ‘আমিও গাহিব’,
চাঁদ বলে, ‘আমিও হাসিব।‘
বসন্তপ্রভাতে এক মালতীর ফুল
প্রথম মেলিল আঁখি তার,
প্রথম হেরিল চারি ধার।
আমার রান্না বাসন্তী মাসালা গোবী
সব শেষে মিষ্টি মুখের হাসি
* লেখাটি সাজিয়েছি রবীন্দ্র সঙ্গীত ও কবিতা দিয়ে।
* ফুলগুলো সব আমার বাগানের ।
*আমের মুকুলের ছবি নার্সারী থেকে তুলেছিলাম।
ঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃ
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ রাত ১:৫৫