প্রথম পর্বে ছিল, ময়নামতির পাহাড়ে চাঁদ উঠেছে আহারে , আবারও পড়তে পারেন!
------- রাতে ভাল ঘুম হলো না। কারণ বালিশ সমস্যা! শক্ত, ভারী বালিশে ঘুমাতে পারলাম না। মনে হয়, এখন থেকে আমার বালিশ বয়ে নিয়ে বেড়াতে যেতে হবে!! রাতেই প্রোগ্রাম করা হয়েছিল। ভোরে উঠে ভোরের সুর্য্য দেখতে আবার যাব নীলাচল টিলায়। ঘুম কাতুরে দু’এক জন বাদে সবারই প্রাতভ্রমণ শুরু হলো। ভোরের মিষ্টি আলোর ছবি তোলা আর সবুজের মাঝে আরো কিছুক্ষণ হাঁটাহাঁটি। তাড়াতাড়িই ফিরতে হলো। নাস্তার পরেই বেরিয়ে পড়ব আরো কিছু স্পট দেখতে। সকালের নাস্তায় দারুন মজার সবজি, ছোলার ডাউল ভূনা, ডিম, রুটি, পরোটা। মজার এই সবজি খেয়ে ভেবেছিলাম, ফেরার পথে টাটকা সবজি কিনে নিয়ে ফিরব, কিন্তু তা’ আর হয়নি।
নীলাচলের ভোরের আলোর ছবিঃ
সকাল ন’টার মধ্যেই বেরিয়ে পড়লাম। উদ্দেশ্য ইটাখোলা মুড়া, রূপবান মুড়া দেখে বার্ডে ফিরব, দুপুরের খাবারের পরে একবারে বেরিয়ে যাব। যাবার পথে ওয়ার সেমেট্রি দেখে, ঢাকায় ফিরব। আর কোন বিরতি নয়। সেভাবেই প্রথমে চললাম ইটাখোলা মুড়ার উদ্দেশে। দেখলাম ইতিহাসের সাক্ষী, সব ধ্বংসপ্রাপ্ত বৌদ্ধ বিহার। সেখানে যে ইতিহাস পেলামঃ
ইটাখোলা মুড়া
স্থানীয়ভাবে এই প্রত্নস্থানটি ইটাখোলা মুড়া নামে পরিচিত। খননের ফলে এখানে পূর্বমূখী একটি বৌদ্ধ মন্দিরের ভূমি নকশা উন্মোচিত হয়েছে। মন্দিরটিতে মোট পাঁচটি নির্মাণ এবং পুনঃ নির্মাণ পর্বের নিদর্শন পাওয়া গেছে। এই মন্দিরের উত্তর দিকে ছোট একটি বৌদ্ধ বিহারের ভূমি নক্শাও আবিস্কৃত হয়েছে।
এখানে খননের ফলে প্রাপ্তপ্রত্নবস্তুর মধ্যে ১৮তোলা স্বর্ণ, একটি রৌপ্য মুদ্রা ও একটি তাম্র শাসন উল্লেখযোগ্য। ইহাছাড়া একটি ধ্যানী বুদ্ধ মূর্তির আবক্ষ অংশ যাহা যথা স্থানে স্থাপিত রয়েছে, প্রাপ্য প্রত্নবস্তু ও স্থাপত্য বৈশিষ্ট্য বিবেচনায় মন্দিরটি সাত থেকে বারো শতকে নির্মিত বলে ধারণা করা যায়।
ইটাখোলা মুড়ার ছবিঃ
এখান থেকে ঠিক করা হলো রূপবান মুড়া দেখতে যাব। কুমিল্লা জেলা সম্মন্ধে পড়তে যেয়ে অনেক প্রত্ন স্থানের সন্ধান পেয়েছিলামঃ কুমিল্লার লালমাই ময়নামতি পাহাড়ে একটি সমৃদ্ধ প্রাচীন সভ্যতার নিদর্শন রয়েছে। এখানে রয়েছে শালবন বিহার, কুটিলা মুড়া, চন্দ্রমুড়া, রূপবন মুড়া, ইটাখোলা মুড়া, সতের রত্নমুড়া, রাণীর বাংলার পাহাড়, আনন্দ বাজার প্রাসাদ, ভোজ রাজদের প্রাসাদ, চন্ডীমুড়া প্রভৃতি। এসব বিহার, মুড়া ও প্রাসাদ থেকে বিভিন্ন প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন সামগ্রী উদ্ধার করা হয়েছে যা ময়নামতি জাদুঘরে সংরক্ষিত রয়েছে। ময়নামতি একটি বিখ্যাত বৌদ্ধ প্রত্নতাত্ত্বিক এলাকা। ময়নামতি জাদুঘরটি একটি অন্যতম পর্যটন আকর্ষন হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। ১৯২১ সালে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও ভারতের নেতা মহাত্মা গান্ধী কুমিল্লায় এসেছিলেন। কুমিল্লাতে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় নিহত বিভিন্ন দেশের সৈন্যদের কবর ও ওয়ার সেমেট্রি রয়েছে। বতর্মানে রাজশে পুর ইকোপার্ক এবং তদসংলগ্ন বিরাহিম পুরের সীমান্তবর্তী শাল বন টুরিস্ট স্পট হিসেবে ব্যপক জনপ্রিয়তা পেয়েছে।
রূপবান মুড়াঃ
স্থানীয়ভাবে রূপবান মুড়া নামে পরিচিত। কিন্তু খননের পরে এখানে একটি বিহার, একটি মন্দির ও একটি আট কোনাকার নিবেদন স্তুপের স্থাপত্য নিদর্শন উন্মোচিত হয়েছে। খনন কালে আবিষ্কৃত গুরুত্বপূর্ণ প্রত্ন সম্পদের মধ্যে একটি গুপ্ত অনুকরণের স্বর্ণ মুদ্রা, ৪ টি মিশ্রিত ধাতুর মুদ্রা, ৩ টি রৌপ্য মুদ্রা এবং গুপ্ত পরবর্তী যুগের ১টি বৃহৎ বৌদ্ধ মূর্তি উল্লেখযোগ্য। প্রাপ্ত প্রত্নঃ নিদর্শনের বিবেচনায় মূল বিহার ও মন্দির অষ্টম শতাব্দীর নির্মিত বলে ধারণা করা যায়।
রূপবান মুড়ার ছবিঃ
পাশের দিকটায় এমন একটা দরজা দিয়ে ভেতরে ঢোকা যায়
ঘরের ছাদটা সরু হয়ে ওপরে উঠে গেছে
কোন এক সময়ে হয়ত এখানে সন্ধ্যা প্রদ্বীপ জ্বলতো
ইটাখোলা আর রূপবান মুড়া ঘুরে আসার পরেও আমাদের হাতে বেশ খানিকটা সময় থাকল। দুপুরের খাবার খেয়ে রওয়ানা দেব ঢাকার পথে আর পথিমধ্যে ওয়ার সেমেট্রি দেখে যাব। হাতে সময় থাকায় বার্ড-এর বাইরের বনে-বাদাড়ে ঘুরতে বেরোলাম আমরা। চারিদিকে চিরসবুজ বন আর লালমাটির ছোট ছোট টিলা। একটা টিলার পাশে আমরা নেমে পড়লাম গাড়ী থেকে। নিশ্চুপ, নিঝুম বনাঞ্চল, পাশ দিয়েই চলে গেছে লাল মাটির মেটোপথ। সেখানেই আমাদের ফটোসেশন চললো কিছুক্ষণ। একসময় সেই নিঝুম অরণ্যে দেখা পেলাম স্থানীয় এক গাঁয়ের বধুর। তার সাথে গল্প করলাম কিছুক্ষণ।তার মতামত,” কুমিল্লার ভাষার মত সুন্দর ভাষা, কোন রাষ্টে (রাষ্ট্রে) নাই!” আসলেই মায়ের ভাষার মত প্রিয় ভাষা আর হয় কী! সে কিছু কাঁচা পাতা তুলে নিয়ে যাচ্ছিল। সে সম্মন্ধে জানতে পারলাম, ঐ পাতাগুলোর স্বাদ একটু টকজাতিয়। সেই পাতা দিয়ে সে ছোট মাছ চচ্চরি করবে। পাতাগুলো কোন গাছের পাতা, তার নাম জেনেছিলাম আর ছোট মাছকে সে কিছু একটা ‘শব্দে’ উপস্থাপন করছিল, সে নামটাও মুখস্থ করেছিলাম, কিন্তু বেমালুম ভুলে গেছি। মাথায় কিসসু নেই আমার! ছোট মাছ বিভিন্ন নামে পরিচিত; যেমন গুড়া মাছ, গুদা মাছ------- আরো যে কত কী! তাকে প্রস্তাব দিলাম ছবি তোলার, সে হাসিমুখে পোজ দিল!! সেই গাঁয়ের বধু আমাদের আমন্ত্রণ করেছিল, তার বাড়িতে খাওয়ার জন্য। কিন্তু সে আমন্ত্রণ রক্ষা করতে পারিনি আমরা!
সময় হয়ে এল দুপুরের খাবারের, ফিরে এলাম আমরা আবারও বার্ড-এ। (--চলবে)
বনে-বাদাড়ে ঘুরে বেড়ানোর ছবিঃ
হাসিমাখা মুখটি সত্যিই নিস্পাপ
ঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃ
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই অক্টোবর, ২০১৫ রাত ৮:১৫