জনকপুর কাঠমান্ডু থেকে ১২৫ কিলোমিটার দক্ষীন-পূর্বে একটি শহর। এর লোকসংখ্যা ৮০,০০০। জনকপুর আরো পরিচিত জনকপুরাধাম হিসেবে, যা নেপালের একটি ঐতিহাসিক ও ধর্মীয় শহর।
জনকপুর ঐতিহাসিকভাবে মিথিলাঞ্চল নামেও পরিচিত, যা মিথিল সংস্কৃতির কেন্দ্রবিন্দু। জনকপুর-এর সব থেকে বড় ঐতিহাসিক সাক্ষী হলো হিন্দু মহাকাব্য “রামায়ণ”, যেখানে রাম-এর স্ত্রী সীতা দেবীকে বলা হয় জনকপুরের রাজকন্যা। তার পিতা রাজা জনক, শিশু সীতাকে একটি চাষভুমীতে খুঁজে পান এবং নিজের কন্যা হিসেবে বড় করেন। বলা হয় সীতা ধরিত্রী মাতার সন্তান। যখন সে বড় হয়, তখন রাজা ঘোষনা দেন, যে শিবের ধনুকে সুতা পড়াতে পারবে, তার সাথেই সীতার বিবাহ হবে। যদিও অনেক রাজপুত্র চেষ্টা করে, অযোধ্যার রাজপুত্র রাম ব্যতিত কেউ ধনুকটি উঁচুও করতে পারে নাই। রামচন্দ্র বিবাহ করেন সীতাকে এই জনকপুরে। রামায়ণের পূণ্য স্মৃতির স্মরণে প্যাগোডাধর্মী সুন্দর কারুকার্য করা জানকী মন্দির হয়েছে জনকপুরে। বিশাল চত্বর নিয়ে মন্দির কমপ্লেক্স জুড়ে আছে জানকীমন্দির, রাম-সীতার বিবাহ বাসর, আরো অনেক মন্দির। স্থানিয়রা বলে নোয়ালাখিয়া মন্দির।
অগ্রহায়ণ মাসের শুক্লা পঞ্চমীতে রাম-সীতার বিবাহ বার্ষিকী পালিত হয়। অযোধ্যা থেকে বিবাহের বারাত আসে। মহা সাড়ম্বরে পালীত হয় বিবাহ-বার্ষিকী। এ ছাড়াও বৈশাখের শুক্লা নবমীতে সীতার জন্মোৎসব পালীত হয়।
আমরা পুর্বাঞ্চলীয় শহর ধারান থেকে পোখরার দিকে রওয়ানা হলাম ফজর নামাজ পড়েই। প্রোগ্রাম, পথে জনকপুর দেখে যাব। রাস্তার দু’পাশে শুধু বন আর বন, অনেক অনেক বৃক্ষরাজির মাঝে চেনা গাছ শাল আর সেগুন। এখানে সমতল ভুমি। নাস্তা সাথেই ছিল। একটা বনের পাশে নাস্তা করবার জন্য বিরতি দেব, কিন্তু বানরের জ্বালায় কোথাও দাঁড়াতে পারছিলাম না। বানর ছাড়া জায়গা খুঁজতে খুঁজতে বন অনেকটাই ফাঁকা হয়ে এল। চারপাশে গাছে ঘেরা একটু ফাঁকা জায়গা দেখে নেমে পড়লাম গাড়ী থেকে। সঙ্গে দুই ছেলে, ওদের বাবা আর ড্রাইভার। নেপালী ড্রাইভারটা একেবারে আমাদের কাছের মানুষ হয়ে গিয়েছিল। নেপালের সবগুলো ট্যুরিষ্ট স্পটই তার চেনা, আমদের গাইড হিসেবে সে ই থাকে সবখানে।
নাস্তা সেরে জনকপুর পৌছুতে আমাদের প্রায় দশটা বেজে গেল। ওখানে ভক্তের ভিড় আর পর্যটকের ভিড়, সে যেন এক মিলনমেলা। আমাদের দেখেই ভক্তদের একজন তীলক লাগানোর জন্য এগিয়ে এল, আমরা মুসলিম জেনে ফিরে গেল। চারপাশ ঘুরে দেখলাম, দেখলাম রাজবাড়ির জৌলুশ। বাইরে থেকে বড় গেট দিয়ে ভিতরে জানকী মন্দির দেখলাম, ভেতরে অহিন্দুদের প্রবেশ নিষেধ তাই বাইরে থেকে যতটুকু দেখা যায় দেখলাম।
জনকপুর রাজবাড়ীর চারপাশ জুড়ে বসে আছে অনেক বিক্রেতা। কারো কাছে পূজার জন্য ব্যবহৃত ফুল, প্রদীপ সহ আরো অনেক কিছু। চুড়ি-মালার দোকানও আছে ওখানে। পূজার পরে এখানেও কেনাকাটা চলছে।
জনকপুরে তোলা কিছু ছবি এখানে পোষ্ট করলামঃ-
জনকপুর রাজবাড়ী
জানকীমন্দির (এই ছবিটি ইন্টারনেট থেকে নেয়া। কারন মন্দিরের ভেতরে অহিন্দুদের প্রবেশ নিষেধ। তাই ছবি তুলতে পারি নাই)
বাইরে থেকে দেখা জানকীমন্দির
বাইরের চত্বরে রঙ বিক্রি হচ্ছে, যা দিয়ে তীলক লাগানো হয়
পূজায় ব্যবহৃত ফুল ও অন্যান্য সামগ্রী
চুড়ি-মালার দোকান ।
***************************************
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে নভেম্বর, ২০২১ সন্ধ্যা ৬:৩৬