বর্ষার সার্থকতা সে ঝরতে পারে, কাঁদতে পারে। ঝরে গিয়ে কেঁদে কেঁদে সে তার মনের অব্যক্ত কথা প্রকৃতিকে রিমিঝিমি শব্দে শোনাতে পারে। কালো মেঘের আবরণে তার যত কষ্টের দাগ লেগে আছে সবটুকু সে অঝোর ধারায় প্রকৃতির মাঝে বিলিয়ে দিতে পারে। এই পারাটাই তার সুখ, তার সার্থকতা। কিন্তু আমি তো বর্ষার মতো কাঁদতে পারি না! আমি যা পারি তা হলো, গভীর রাতে নিজের দুঃখ- যাতনার স্মৃতি রোমন্থনে দু'চোখের পানি দিয়ে বালিশ ভেজাতে। আমার এই বালিশ ভেজা চাপা কান্না কেউ দেখে না। কেউ শোনে না আমার হৃদয়ের আর্তনাদ। শুনেছি বিশ্বাসে মেলায় বস্তু। সেই বিশ্বাসের উপর ভর করে আমি যাকে আপন ভেবে নিজের দুঃখ-কষ্টকে তার সাথে শেয়ার করতে চাই, সে কেবল আমাকে সান্তনার বাণী-ই শুনিয়ে দেয়। আমার পাশে এসে দাঁড়ানোর সাহস তার হয় না। হবেই-বা কি করে আমি যে একজন শারীরিক প্রতিবন্ধী! কোন সুস্থ সবল ব্যক্তি কি চায় তার জীবন কোন প্রতিবন্ধীর সাথে জড়াক? চায় না।
একজন শারীরিক প্রতিবন্ধী হওয়া সত্ত্বেও নিজের জীবনটাকে সুন্দরভাবে সাজানোর স্বপ্ন কখনো দেখিনি যে তা নয়। আমার ভাঙ্গা মনটাতেও খুব ইচ্ছে জাগে ভালোবাসার স্বাদ পেতে। একটু ভালোবাসা পেলে আমিও যে রচনা করতে পারতাম বিশ্বের মহা কবিদের অপরিচিত সংগীতমালা। অন্তর মাধুরী দিয়ে দূর করতে পারতাম মনে সকল পুঞ্জিভূত কুয়াশা। মহা শুন্যের বুকে উড়িয়ে দিতাম শান্তির পায়রা। নতুন সৃষ্টির গানে হতাম সোচ্চার প্রতিদিন চিরদিন। মাঝে মাঝে ভাবি জীবনে চলার পথে এমন কারোর দেখা কি পাবো না, যার একটু ভালোবাসা পেলে আমার এই ভাঙ্গা জীবনটাকে সুন্দর করে সাজাতে পারবো? এমন কোন মন আছে কি, যে মনটি অন্তত বুঝবে একজন প্রতিবন্ধীর জীবনে কি পরিমাণ কষ্ট আছে? জানি তেমন মন পাওয়া আমার ক্ষেত্রে অসম্ভব কারণ আমি যে ......! আমাকে কেবল করুণা করা যায়, ভালোবাসা যায় না। ভালোবাসাতো পূর্ণতায় ভরা। অপূর্ণ জীবনে ওসব একেবারে বেমানান। যদি তা বেমানান না হতো তবে কখনো আমাকে বালিশ ভেজা চাপা কান্নায় কাঁদতে হতো না।
কামরুল ইসলাম শিমুল
কাফিলা, বরিশাল
মোবাইল ০১৭৫০০৩০৪৬৬, ০১৯১৭২৭০১৭৭