somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

প্রতিবন্ধী ব্যক্তিবর্গের খেলাধুলা, সাংস্কৃতিক এবং বিনোদনমুলক কর্মকান্ডে অংশগ্রহণ : দয়া নাকি অধিকার?

১৩ ই জানুয়ারি, ২০১১ রাত ৯:৫৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মানববর্গের এক বিশাল অংশ প্রতিবন্ধী মানুষ। তা হলে কী হবে, অ-প্রতিবন্ধী মানুষদের তুলনায় এরা সংখ্যায় কম। ঐতিহাসিক কাল থেকেই এই মানুষদেরকে অ-প্রতিবন্ধী মানুষরা রেখে দিয়েছে ‘পূণ্য অর্জনের জন্য’। দেবতা করে নয়, অসহায় করে, যাতে এদের ‘উপকার করে’ ‘দয়া করে’ স্বর্গে যাওয়াটা সহজ করা যায়। মানুষ দয়াশীল, এটা স্বাভাবিক বটে। তবে এই দয়া যদি আরেকদল মানুষকে করে তোলে নির্ভরশীল, অধীনস্ত, তবে তা অত্যাচার' বৈকি! সংখ্যাগুরু অপ্রতিবন্ধী মানুষ তাদের শ্রেষ্ঠত্ব্ প্রমাণ করতে, তা বহাল রাখতে যা কিছুই তৈরি করেছে, তার প্রায় সবকিছু থেকেই বাদ পড়েছে প্রতিবন্ধী মানুষ। সে হোক পড়া-লেখা, হোক কর্মসংস্থান, হোক চলাফেরার রাস্তাঘাট আর অপ্রতিবন্ধী মানুষের হাতে তৈরি করা সকল ব্যবস্থা। শিক্ষাব্যবস্থা এই মানুষদের কথা ভাবেনি। আত্মনির্ভরশীল হবার ব্যবস্থা বা কর্মসংস্থান এর আয়োজন সাধারণত বাদ দেয় এই মানুষদের।
মানুষের মানসিক ও শারীরিক বিকাশের জন্য যেসব উপাদান বিকশিত হয়েছে, খেলাধুলা, সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড আর চিত্ত বিনোদন তার মধ্যে অন্যতম। অন্যান্য সকল জগতের মতই এই খেলাধূলার জগতেও প্রতিবন্ধী মানুষ সর্বদাই ছিল উপেক্ষিত। শিক্ষার সুযোগ থেকে প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠির মোটাদাগে বাদ পড়ার সাথে এই উপেক্ষার সম্ভবত একটা সম্পর্ক আছে। এই মানুষদের বিনোদন, খেলাধূলার অধিকারের দিক বিবেচনা করে, প্রতিবন্ধী মানুষ ও তাদের সমর্থক মানুষেরা নিয়ে এসেছে খেলাধুলার নানান উপকরণ ও পদ্ধতি। তবে এর বেশিরভাগই বিকশিত হয়নি, হতে পারেনি। এর প্রধান কারণ, এই মানুষদের সমাজে কোনঠাসা অবস্থা ও অবস্থান। অপ্রতিবন্ধী মানুষের জন্য তৈরি করা খেলাধুলার প্রতিষ্ঠানের দাপটে ওইসব খেলাধুলা উঠে দাঁড়াতেই পারেনি। সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে নিজের অংশগ্রহন তো দূরের কথা, দর্শক-স্রোতা হবার সুযোগ কতটা আছে, সেটা একটা প্রশ্ন বটে! বিনোদনও তো সব অপ্রতিবন্ধী মানুষের কথা ভেবে পরিকল্পনা করা হয়েছে। কারন কী? আমাদের অবহেলা? বিষয়টি নিয়ে কেউ তাই একেবারেই ভাবেনি? নাকি প্রতিবন্ধী মানুষদের পূর্ণাঙ্গ মানুষই ভাবা হয়নি? তাদের শারিরিক, মানসিক বিকাশ আমাদের কাছে গুরুত্ব পেল না কেন? কারন কী এই বৈষম্যের? আসুন, একবার খতিয়ে দেখি কী আছে আমাদের দেশের প্রতিবন্ধী নাগরিকদের জন্য :
প্রতিবন্ধী মানুষের শারিরিক ও মানসিক বিকাশের অধিকার : আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন প্রসঙ্গ
জাতিসংঘ ‘শিশু অধিকার সনদ’
সনদের ২৩ অনুচ্ছেদে বলা আছে- রাষ্ট্রসমূহ ‘প্রতিবন্ধী শিশুর শিক্ষা, প্রশিক্ষণ, স্বাস্থ্য পরিচর্যা এবং বিনোদন লাভের ক্ষেত্রে কার্যকর সুযোগের ব্যবস্থা করে সহায়তা প্রদান করবে। তবে তা এমনভাবে প্রদান করা হবে যে শিশূর সাংস্কৃতিক এবং আত্মিক বিকাশসহ ব্যক্তিগত উন্নয়ন এবং যতদূর সম্ভব তার সামাজিক একাত্মতা ঘটবে।’ অ-প্রতিবন্ধী শিশুর পাশাপাশি প্রতিবন্ধী শিশুদের জীবনমানের বৈষম্যই আমাদের বলে দেয় এ বিষয়ে অগ্রগতি কতটা হয়েছে।
বিওয়াকো মিলেনিয়াম ফ্রেমওয়ার্ক ফর একশন (বিএমএফ) :
একটি একীভূত ও বাধামুক্ত সমাজ গড়ার প্রত্যয়ে জাতিসংঘের এশীয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলের দ্বিতীয় প্রতিবন্ধী দশকে “বিওয়াকো মিলেনিয়াম ফ্রেমওয়ার্ক ফর একশন” শিরোনামে একটি নীতিকাঠামো প্রণীত হয়েছে। এর বাস্তবায়নের স্বাক্ষর করেছে বাংলাদেশ। এই দলিলে স্বীকার করা হয়েছে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিবর্গের খেলাধুলা, অবকাশ ও বিনোদন তাদের জীবনমান উন্নয়নে অপরাপর মৌলিক অধিকারের মতই প্রয়োজনীয় ও গুরুত্বপূর্ণ।
উপরোক্ত দুটো প্রাসঙ্গিক দলিল ছাড়াও প্রতিবন্ধী ব্যক্তিবর্গের ক্রীড়া, বিনোদন, অবকাশ ও সাংস্কৃতিক জীবনে সক্রিয় অংশগ্রহণে
অন্তত তিনটি গুরুত্বপূর্ণ মানবাধিকারের দলিল রয়েছে। প্রত্যেক দলিলেই খেলাধুলায় ও সাংস্কৃতিক জীবনে সক্রিয় অংশগ্রহন ও দর্শক-স্রোতা এই দুই ভূমিকারই মর্যাদাপূর্ণ ব্যবস্থাগ্রহণের উপর জোর দেয়া হয়েছে।
১৯৮২ সালে জাতিসংঘের প্রতিবন্ধী ব্যক্তিবর্গের জন্য গৃহীত ওয়ার্ল্ড প্রোগ্রাম অফ একশন সদস্য রাষ্ট্রসমূহকে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিবর্গের খেলাধুলায় উৎসাহ ও সুবিধা প্রদানে জোর দিয়েছে। এর পর ১৯৯৩ সালে গৃহীত জাতিসংঘের ষ্ট্যান্ডার্ড রুলস প্রতিবন্ধী ব্যক্তিবর্গের অবাধ বিচরণে বিদ্যমান ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক পরিবেশ বাধামুক্ত করতে এবং এই নাগরিকেরা যাতে সক্রিয়ভাবে ক্রীড়ায় অংশ নিতে পারে সদস্য রাষ্ট্রসমূহকে তার ব্যবস্থা গ্রহনে বিশেষভাবে জোর দিয়েছে।
জাতিসংঘের প্রতিবন্ধী ব্যক্তিবর্গের অধিকার সনদ (সিআরপিডি) :
আমরা আনন্দিত ও গর্বিত যে, ২০০৬ সালের ডিসেম্বরে জাতিসংঘের সাধারন পরিষদে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিবর্গের অধিকার ও মর্যাদা সুরক্ষা ও প্রতিষ্ঠায় একটি পূর্ণাঙ্গ সনদ গৃহীত হয়েছে। বাংলাদেশ সরকার ৯১তম রাষ্ট্র হিসেবে এই সনদে স্বাক্ষর করেছে ২০০৭ সালের মে মাসে। আমরা আশাবাদি, সরকার এই সনদের পূর্ণ অনুসমর্থনও করবে খুব শিগগিরই। সনদের ধারা ৩০ প্রতিবন্ধী মানুষের সাংস্কৃতিক জীবন, বিনোদন, অবকাশ ও খেলাধুলায় সম ও মর্যাদাপূর্ণ অংশগ্রহনের অধিকার এর স্বীকৃতি । এই সনদে প্রতিবন্ধী ব্যক্তির ক্রীড়া, অবকাশ, সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড আর বিনোদনে অংশগ্রহনকে আন্তর্জাতিক মানবাধিকারের আওতায় এনে এর আইনী স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে। আন্তর্জাতিক আইন হিসেবে সমর্থনকারি দেশের জন্য একটি বাধ্যবাধকতা নিয়ে হাজির হয়েছে। ফলে বিষয়টি আর উপেক্ষা করবার কোন সুযোগ নেই আমাদের।
প্রতিবন্ধী নাগরিকদের শারিরিক ও মানসিক বিকাশের অধিকার : জাতীয় কর্ম-কাঠামো
আইনী অধিকার :
বাংলাদেশ সরকার ১৯৯৫ সালে জাতীয় প্রতিবন্ধী বিষয়ক নীতিমালা অনুমোদন করে। এই নীতিমালার ধারা ১২-“চিত্ত বিনোদন” এ বলা হয়েছে, “সকলের কল্যাণ ও উপভোগের নিমিত্তে বিদ্যমান জনবিনোদনমূলক সুযোগ-সুবিধায় উম্মুক্ত সুবিধা গ্রহন করা থেকে প্রতিবন্ধীদের বঞ্চিত রাখা যাবে না। এজন্য সরকার খেলাধূলা ও সাংস্কৃতিক অধিকার নিশ্চিত করবার জন্য যে পদক্ষেপ গুলো গ্রহন করবে তা হলো :
ক) প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য সকল প্রকার খেলাধূলাসহ অন্যান্য বিনোদনমূলক ক্ষেত্রে অংশগ্রহন অবাধ করা হবে।
খ) প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য জাতীয় ক্রীড়া সংস্থা গঠন করা হবে এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় প্রতিবন্ধীদের খেলাধূলার আয়েজন করবে।
চ) সাংস্কৃতিক বিষয়ক মন্ত্রনালয় প্রতিভাবান প্রতিবন্ধীদের দ্বারা অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করবে।”

২০০১ সালের প্রতিবন্ধী কল্যান আইনের তফসিল ’জ’ এর ‘সংস্কৃিত’ অংশে ধারা ৭ ও ৮ এ খেলাধূলা প্রসঙ্গে বলা হয়েছে :
“প্রযোজ্য ক্ষেত্রে জাতীয় পর্যায়ে ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক সংগঠনে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের প্রতিনিধিত্বের ব্যবস্থা করা এবং দেশে- বিদেশে ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক বিষয়ক কার্যক্রমে বা প্রতিযোগিতায় প্রতিবন্ধী দল প্রেরণ এবং প্রয়োজনীয় আর্থিক সহযোগিতার ব্যবস্থার করা।”
নীতিমালায়, আইনে প্রতিবন্ধী মানুষদের খেলাধুলা ও বিনোদনের অধিকার নিশ্চিত করার কথা জোড়ালোভাবে উল্লেখ করলেও, এর বাস্তবায়নে সরকারের পক্ষ থেকে সু¯পষ্ট, ধারাবাহিক ও কার্যকর কোন পদক্ষেপ গ্রহন করতে দেখা যায়নি। সরকারি পর্যায় থেকে আর্ন্তজাতিকভাবে স্বীকৃত ক্রীড়া কমিটি গুলোর সাথে নেই তেমন যোগাযোগ বা সমন্বয়। যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রনালয়ের কার্যবিধিতে এখনও পর্যন্ত প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের খেলাধুলা অর্š—ভুক্ত হয়নি। ফলে আর্ন্তজাতিকভাবে যে খেলাগুলোতে বাংলাদেশ অংশগ্রহন করে, তার মূল উদ্যোক্তা থাকে মূলত এনজিও প্রতিষ্ঠানগুলোই।
বাংলাদেশ সরকার ১৯৯৮ সালে জাতীয় ক্রীড়ানীতিতে প্রতিবন্ধী নাগরিকদের ক্রীড়ার অধিকার অর্ন্তভুক্ত করে। সুনিদির্ষ্টভাবে অনুচ্ছেদ ২.৫ এবং ১১ তে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের ক্রীড়ার বিষয়ে বলা হয়েছে : “খেলাধূলার সমান অধিকার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে শারীরিক ও মানসিক প্রতিবন্ধীদের খেলাধূলার অংশগ্রহণ এর জন্য তাদের উপযোগি বিশেষ ধরনের খেলাধূলার আয়োজনের ব্যবস্থা করা”। ২০০১ সালে প্রতিবন্ধী কল্যাণ আইন পাশ হবার আগেই একধাপ এগিয়ে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের খেলাধূলার বিষয়টি জাতীয় ক্রীড়ানীতিতে স্থান পেয়েছে এটা অবশ্যই প্রগতিশীলতা ও সদিচ্ছার লিখিত প্রমাণ। তবে, নয় বছর আগে ক্রীড়া নীতিতে স্থান পেলেও এই অনুচ্ছেদের বাস্তবায়নের জন্য সরকারি পর্যায় থেকে বলতে গেল কোন ধরনের উদ্যোগই গ্রহণ করা হয়নি।
অধিকারের শক্তিশালি দলিল থাকলেও অবস্থা এতটা বেগতিক কেন তবে?
উন্নয়ন-অগ্রাধিকারের প্রশ্ন?
আমাদের জাতীয় উন্নয়ন ব্যয় বরাদ্দের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার এর বিবেচনায় বিষয়টি হয়তো আসে না। প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের নিয়ে বেশিরভাগ কাজ ‘পূণর্বাসনমূলক’ হওয়াতে এই জনগোষ্ঠিকে আমরা সাধারণত ‘বিপদগ্রস্ত ভাবি, উন্নয়নের সক্রিয় অংশীদার ভাবি না। ফলে, উন্নয়নের সাথে ‘অ-প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠির’ ক্রীড়া বা সাংস্কৃতিক জীবনের সম্পর্ক নিয়ে আমাদের বোঝাপড়া থাকলেও প্রতিবন্ধী নাগরিকগণ এ বিষয়ে সাধারণভাবেই উপেক্ষার শিকার হন। এই ঘটনার পেছনে সরকারি ও বেসরকরি সকল মহলকেই দায়ি করা যায়।
‘বিনিয়োগ’ এর প্রশ্ন : কী ‘ফেরত’ আসবে?
কি লাভ হবে বিনিয়োগ করে সম্ভবত এই প্রশ্নটিই ভিড় করে যখন জাতীয়ভাবে সিদ্ধান্ত নেবার প্রশ্ন ওঠে। অনেক দেশেই প্রতিবন্ধী ক্রীড়াবিদেরা দেশের গৌরবের প্রতীক। বাংলাদেশের বুদ্ধি প্রতিবন্ধী ক্রীড়াবিদেরা ‘বিশেষ অলিম্পিকে’ অংশগ্রহন করে প্রতিবছর স্বর্ণ পদক জয় করছে। তবে একে ধরে রাখার জন্য প্রয়োজন নিয়মিত অনুশীলন, উপযুক্ত মাঠ, প্রশিক্ষক, উপযুক্ত সরঞ্জাম ইত্যাদি। এই অসাধারন বিজয়ের পরেও আমরা সরকারি পর্যায় থেকে আগ-বাড়ানো কোন উদ্যোগ লক্ষ করিনি।
উন্নয়নের নিষ্ক্রিয় গ্রহীতা থেকে প্রতিবন্ধী মানুষদের সক্রিয় অংশগ্রহনকারি হবার প্রচেষ্টাকে উৎসাহিত করা হচ্ছে। একীভূত সমাজে, সমতাভিত্তিক ব্যবস্থায় তারা যেন মূলস্রোতের সমাজ বদলের অংশ হয়ে ওঠে, মর্যাদাসহ তাই নিয়েই কাজ চলছে। খেলাধুলায় এবং সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ এর মধ্যে একটি, তবে তা চরমভাবে অবহেলিত। এখনও আমাদের দেশে এই বিষয়টি দয়া আর করুণার শেকলে বন্দী হয়ে আছে। নাগরিকের প্রতিবন্ধী অংশকে প্রাতিষ্ঠানিকভাবেই আমরা দয়া করি। ‘কল্যাণ’ এর নামে। জাতিসংঘের প্রতিবন্ধী অধিকার সনদ সেই যুগের অবসান ঘোষনা করেছে। প্রতিবন্ধী নাগরিকের অধিকার বাস্তবায়নে সদস্য রাষ্ট্র হিসেবে অপরাপর দেশের মতই বাংলাদেশ এখন অগ্রণী ভূমিকা গ্রহনে প্রস্তুত। আসুন, সকলে মিলে মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা করি, সমতা আর বৈষম্যহীন সমাজ গড়ি। ব্যবধান ঘুচাই মানুষে-মানুষে। গৌরবমাখা এক ইতিহাসের অংশীদার হই। সবাই মিলে এমনভাবে কাজ করি, যাতে মানুষ স্বাধীন হয়, পরাধীনতা ঘুচে যায় মানুষের। মানুষের অসীম সম্ভাবনা পায় স্বীকৃতি, আর বিকশিত হবার দুয়ারগুলো খুলতে থাকে। মানুষের পাশে মানুষ দাঁড়াবার, মানুষে-মানুষে ব্যবধান ঘুচানোর এটাই বোধহয় আদি মূলমন্ত্র।

১. UNESCAP Consideration of a Regioanl framework for Action towards an Inclusive, Barrier-free and Rights Based Society for Persons with Disabilities in Asia and the Pacific, 2003. Paragraph 29
ধারা ৩০
সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড, বিনোদন, অবকাশ ও খেলাধুলায় অংশগ্রহন
১. রাষ্ট্র পক্ষ অন্যান্যদের সাথে সমতার ভিত্তিতে সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিবর্গের অংশগ্রহনের অধিকারের স্বীকৃতি দেবে। রাষ্ট্র পক্ষ উপযুক্ত সকল পদক্ষেপ গ্রহন করবে যাতে করে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিবর্গ :
অ. তাদের জন্য যথোপযুক্তভাবে প্রস্তুতকৃত সাংস্কৃতিক উপকরণ পায় ও তা উপভোগ করতে পারে।
ই. তাদের জন্য যথোপযুক্তভাবে প্রস্তুতকৃত টেলিভিশনের অনুষ্ঠানমালা, চলচ্চিত্র, মঞ্চনাটক ও অন্যান্য সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড উপভোগ করতে পারে;
ঈ. সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান বা পরিষেবার স্থান, যেমন, মঞ্চনাটক, জাদুঘর, চলচ্চিত্র, গ্রন্থাগার ও পর্যটন পরিষেবা এবং যতটা সম্ভব, স্মৃতিসৌধ ও জাতীয় সাংস্কৃতিক গুরুত্বপূর্ণ দর্শনীয় স্থানে সহজে যেতে পারে এবং তা উপভোগ করতে পারে।
২. শুধু ব্যক্তিগত উপকারের জন্য নয়, সার্বিক সমাজিক উন্নয়নের জন্য রাষ্ট্র পক্ষ যথোপযুক্ত ব্যবস্থা নেবে, যাতে করে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিবর্গ তাদের সৃজনশীল, শিল্পীসুলভ ও বুদ্ধিবৃত্তিক সম্ভাবনার উন্নয়ন ও তা ব্যবহারের সুযোগ পায়।
৩. রাষ্ট্র পক্ষ আন্তর্জাতিক আইন অনুসারে যুতসই সকল পদক্ষেপের মাধ্যমে নিশ্চিত করবে, যে সকল আইন মেধাস্বত্ব অধিকার সুরক্ষা করছে, তা যেন প্রতিবন্ধী ব্যক্তিবর্গের সাংস্কৃতিক উপকরণে ব্যবহার ও উপভোগে কোনরূপ অযৌক্তিক বা বৈষম্যমূলক প্রতিবন্ধকতা তৈরি না করে।
৪. প্রতিবন্ধী ব্যক্তিবর্গকে অন্যান্যদের সাথে সমতার ভিত্তিতে ইশারা ভাষা ও ইশারা ভাষাগোষ্ঠির সংস্কৃতি সহ তাদের স্বকীয় সাংস্কৃতিক ও ভাষাগত পরিচিতির স্বীকৃতি দিতে হবে;
৫. প্রতিবন্ধী ব্যক্তিবর্গকে অন্যান্যদের সাথে সমতার ভিত্তিতে বিনাদন, অবকাশ ও খেলাধুলায় অংশগ্রহনে সক্ষম করে তুলতে রাষ্ট্র পক্ষ নিম্নলিখিত লাগসই ব্যবস্থাদি গ্রহন করবে :
(ক) মূলধারার খেলাধুলার সকল পর্যায়ে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিবর্গের পূর্ণ অংশগ্রহন উৎসাহিত করতে সম্ভব সকল ব্যবস্থা গ্রহন করবে;
(খ) প্রতিবন্ধি ব্যক্তি-উপযোগি খেলাধুলা ও বিনোদনমূলক কর্মকাণ্ড আয়োজন, উন্নয়ন এবং অংশগ্রহন করবার সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে। এই লক্ষ্যে, প্রতিবন্ধী ব্যক্তিবর্গের জন্য অন্যান্যদের সাথে সমতার ভিত্তিতে সঠিক শিক্ষণ, প্রশিক্ষণ এবং সম্পদ বরাদ্দ উৎসাহিত করবে
(গ) প্রতিবন্ধী ব্যক্তিবর্গের খেলাধুলা, বিনোদন ও পর্যটন স্থলে বিনাবাধায় প্রবেশ ও তার ব্যবহার নিশ্চিত করবে;
(ঘ) অন্যান্য শিশুদের মতই প্রতিবন্ধী শিশুদের জন্য স্কুল-ভিত্তিক নিয়মিত কর্মকাণ্ডসহ সাধারণ খেলাধুলা, বিনোদন, অবকাশ ও ক্রিড়ামূলক কর্মকাণ্ডে সমান অংশগ্রহণের অধিকার নিশ্চিত করবে;
(ঙ) প্রতিবন্ধী ব্যক্তিবর্গের জন্য বিনোদন, পর্যটন, অবকাশ ও ক্রীড়ামূলক কর্মকাণ্ডে নিয়োজিত সংগঠনের পরিষেবা প্রাপ্তি ও উপভোগ নিশ্চিত করবে।

৩. Allocation of Business Among the Different Ministries and Divisions (Schedule I of the Rules of Business, 1996, revised up to August, 2000) Cabinet Division, Government of the Peoples’ Republic of Bangladesh. Ministry of Youth and Sports, PP 93-94
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বেফাঁস মন্তব্য করায় সমালোচনার মুখে সমন্বয়ক হাসিবুল ইসলাম !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৩ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১১:৩২



"মেট্রোরেলে আগুন না দিলে, পুলিশ না মারলে বিপ্লব সফল হতো না "- সাম্প্রতিক সময়ে ডিবিসি নিউজে দেয়া সাক্ষাৎকারে এমন মন্তব্য করে সমালোচনার শিকার বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসিবুল... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমিত্ব বিসর্জন

লিখেছেন আজব লিংকন, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১:৪৮



আমি- আমি- আমি
আমিত্ব বিসর্জন দিতে চাই।
আমি বলতে তুমি; তুমি বলতে আমি।
তবুও, "আমরা" অথবা "আমাদের"
সমঅধিকার- ভালোবাসার জন্ম দেয়।

"সারভাইভাল অব দ্য ফিটেস্ট"
যেখানে লাখ লাখ শুক্রাণুকে পরাজিত করে
আমরা জীবনের দৌড়ে জন্ম... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বৈরাচারী আওয়ামীলীগ হঠাৎ মেহজাবীনের পিছে লাগছে কেন ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৭:৪১


স্বৈরচারী আওয়ামীলীগ এইবার অভিনেত্রী মেহজাবীনের পিছনে লাগছে। ৫ ই আগস্ট মেহজাবীন তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছিলেন ‘স্বাধীন’। সেই স্ট্যাটাসের স্ক্রিনশট যুক্ত করে অভিনেত্রীকে উদ্দেশ্য করে আওয়ামী লীগ তার অফিসিয়াল ফেইসবুকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:২৪



সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪১





বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×