২০১৩ সালের কথা!
টিভিতে একদিন দেখলাম শাহবাগে কয়েকজন "ব্লগার" জড়ো হয়েছেন হাতে প্ল্যাকার্ড নিয়ে। জাদুঘরের পাশে যেখানে এখন একটা ফুট ওভারব্রিজ আছে ওখানটায়। সংখ্যাটা টিভিতে যট্টুক দেখলাম ৮/১০ জন। ওদের দাবি হচ্ছে রাজাকারের ফাঁসি চাই। তখন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালে বিচার চলছে কাদের মোল্লা, সাইদী, মুজাহিদ, নিজামী আর গোলাম আজমদের। তো খবরটা খবরের মতই নিলাম। শাহবাগেতো প্রায় প্রতিদিনই কোন না কোন দাবিতে মানববন্ধন করে। ওমন কিছুই হবে হয়ত।
কয়েকদিন গেল। দেখলাম যে খবরে দেখানো আন্দোলনকারীর সংখ্যাটা বেড়েছে। দেখে যাচ্ছিলাম। তো কয়েকদিন পর দেখলাম একদম গণমানুষ যোগ দেয়া শুরু করল। ফেইসবুক তখন খুবই ফাঁকা থাকত। এখন যারা ফেইসবুক চালাচ্ছেন ভাবতেও পারবেন না কত বেশি ফাঁকা ছিল তখন। ফেইসবুকে দেখতাম বিভিন্ন ব্যক্তিত্ব, মিউজিশিয়ান এই আন্দোলনে সমর্থন জানাচ্ছে। দাবিগুলা নিয়ে চিন্তা করে দেখলাম, তাইতো, মানে রাজাকাররা যেই কাজ করল ১৯৭১ সালে এটার বিচার না চাওয়াটা বা হওয়াটাই তো বরং অস্বাভাবিক। তখনো ভেবে দেখি নি কেন শেখ মুজিব, জিয়া, এরশাদ কেউই এদের বিচার করেনি। কেন শেখ মুজিব ৭১-৭৫ এর মধ্যে রাজাকারদের তালিকা প্রস্তুত করে বিচার শুরুও করেনি। সে যাই হোক, একদিন বিকালে গেলাম শাহবাগ। দেখি অনেক মানুষ। পিজি আর বারডেম এর মাঝখানের গোলচত্ত্বর ভরে গেছে। একদম মাঝে একটা উঁচু ছোট্ট প্লাটফর্ম আছে৷ ওটার উপর টিভিগুলোর ক্যামেরা। প্লাটফর্মটার একদম নিচেই বসলাম। বসলাম না ঠিক, বসতে হলো। আর জায়গা নাই। বের হওয়ার ইচ্ছা ছিল না। তাই ওখানেই বসে পড়লাম। স্লোগান দিল লাকি, ওঁর সাথে স্লোগান দিলাম।
"ক তে কাদের মোল্লা
তুই রাজাকার, তুই রাজাকার"
"একটা একটা শিবির ধর,
ধইরা ধইরা জবাই কর"
দেখলাম মুন্নি সাহা প্লাটফর্মে উঠছে রিপোর্ট করতে বা ক্যামেরাপার্সন এর সাথে কথা বলতে। সন্ধ্যা হয়ে এল, বাসায় যেতে হবে। আম্মা জানে খেলতে বের হইসি। ফেরত গেলাম বাসায়। একটা উত্তেজনা কাজ করছে।আন্দোলনের স্পিরিট চলে এসেছে ভিতরে। পরদিন আবার গেলাম। এবার জাদুঘরের সামনে। শাহবাগ মোড়ে প্রচন্ড ভীড়, আস্তে আস্তে পাতলা হয়ে এসেছে জাদুঘরের দিকে। মানে খালি না কিন্তু। নিঃশ্বাসটা নেয়া যাচ্ছে। গোল হয়ে গ্রুপ গ্রুপ করে স্লোগানের সাথে গলা মিলাচ্ছে সবাই। পাশে একটু দূরেই দেখলাম চঞ্চল চৌধুরী, শাহনাজ খুশি বসে আছেন। ওভাবে, গোল হয়ে। স্লোগান দিচ্ছেন। কেউ কিন্তু গিয়ে বলছে না, বস, একটা ছবি তুলব। সবাই আমজনতা হয়ে গিয়েছিল শাহবাগে। পানি আসল হাতে, আশপাশ থেকে পানি বিলাচ্ছে কেউ। আমি খেয়ে পাশের জনকে দিলাম, চিনি না কিন্তু। এরপর ধুম করে বুকে এসে কিছু একটা লাগলো, একটা বিস্কুটের প্যাকেট। ব্যাথা পাই নি, কিন্তু মেজাজ খারাপ হল। সবাই তো বসে আছে। একটু দূরে আইল্যান্ডের কাছ থেকে একজন বিস্কুট ছুঁড়ে ছুঁড়ে দিচ্ছে। উদ্যোগ মহৎ, প্রক্রিয়া ডিহিউমেনাইজিং। বিস্কুটটা তার দিকে ফিরতি ছুঁড়ে মারলাম। আমিতো কুকুর বিড়াল না যে এভাবে খাবার দিবা। আর আমার খাবার লাগবে তোমাকে বলল কে? লোকটা বুঝেছে হয়ত, পরে দেখলাম হাত দিয়ে পাস করে করে খাবার দিচ্ছে।
পরদিন বিকালে এলাম আবার শাহবাগে। আমাদের ড্রইং স্যার কে দেখলাম। উনি মুক্তিযোদ্ধা। উনার নজর পাশ কাটিয়ে দূর থেকে পাবলিক লাইব্রেরীর সামনে থেকে দাঁড়িয়ে দেখলাম। সময় বেশি ছিল না। বাসায় দেরী হলে আজকে খবর আছে। ঘন্টাখানেক দাঁড়িয়ে চলে আসলাম। ইন দ্যা মিন টাইম, ফেইসবুকে কিন্ত চরম মজা হচ্ছে। জামাতি, শিবির এদের কে পচায়ে ভাসায়ে ফেলতেসি সবাই। আন্দোলনের খবর, ছবি দেখছি।
জাদুঘরের পাশের রাস্তা আর ফুলের মার্কেটের মাঝের আইল্যান্ডের ওখানে একটু জায়গা নিয়ে ছোট্ট একটা প্যান্ডেলমত করা। ওখানে নাকি সাইবার ইউনিট। কাজটা কি বুঝি নাই। পরে শুনেছি ওখান থেকে ফেইসবুকে আপডেট দেয়া, ব্লগে লিখা এসব হচ্ছিল। দাঁড়িয়ে দেখলাম অনেকক্ষন। আশেপাশে একবিন্দু জায়গা নাই দেখে আইল্যান্ডের উপর করা হয়েছে। সেদিন বিকালে সমস্বরে জাতীয় সংগীত ছিল, আরেকদিন ছিল নীরবতা যট্টুক মনে পড়ে। গাইলাম জাতীয় সংগীত। বিকাল ৪ টা কি ৫ টা। কর্মসূচী ছিল সারা বাংলাদেশের সবাই ওই নির্দিষ্ট সময়ে জাতীয় সংগীত গাবে। আমি শাহবাগ থানার একটু সামনে ফুলের দোকানগুলার সামনের রাস্তায় দাঁড়িয়ে জাতীয় সংগীত গাইলাম বুকে হাত দিয়ে। এটা আমি করতাম ক্যানো যেন। স্কুলের এসেম্বলিতেও বুকে হাত দিয়ে গাইতাম জাতীয় সংগীত।
এর মধ্যে শুনছিলাম যে মতিঝিলের দিকে নাকি হেফাজতে ইসলাম নাম নিয়ে মোল্লারাও গনজমায়েত ডাক দিয়েছে। সেটা নিয়ে বেশ প্রচার হচ্ছে মিডিয়ায়। ফেইসবুকে আমরা হাসাহাসি করছি। ব্লগাররা মজা নিচ্ছে। আর মোল্লারা মিনমিনিয়ে শাহবাগ আন্দোলনকে কনডেম করার চেষ্টা করছে। কেন মিনমিনিয়ে? কারন শাহবাগে তখন লক্ষ মানুষ। পিজির ছাদ থেকে টিভিতে লাইভ করলে মাঝখানে উপরে তারে ঝুলানো বিশাল পতাকাটার চারপাশ দিয়ে মানুষ আর মানুষ। বার্ডস আই ভিউ থেকে এত মানুষ, তাহলে বুঝুন কত মানুষ জড়ো হয়েছে। সাধারন মানুষের সমর্থন শাহবাগের প্রতি আর মাদ্রাসা মসজিদমুখী মানুষ হেফাজতের সমাবেশে যাবে যাচ্ছে। তখনো মোল্লারা এত মেইনস্ট্রিম ছিল না (এখন যেমন দেশের অর্থনীত নিয়ে রিপোর্ট করার সময়ও একজন অর্থনীতিবীদের পর আহমদুল্লাহর সাক্ষাৎকার নেয়া হয়, তখন তেমন ছিল না)
পরদিন শাহবাগে যাব। ওইদিন আবার হেফাজতের সমাবেশ। ভাবলাম ওখানে যাই। দেখে আসবো ওদের ব্যাপারটা কি। কি করতে চায় আর এটমোসফিয়ার টা কি। দেখে তারপর শাহবাগে চলে আসব। মতিঝিলের একমাথা দিয়ে ঢুকলাম হেঁটে। মনে নাই কোন দিক দিয়ে। মাইকের আওয়াজ আসছে চারপাশ দিয়ে কিন্তু স্টেজ খুঁজে পাচ্ছিনা। তো আমি হাঁটছি। দেখলাম জায়গায় জায়গায় পিক আপ ট্রাক থামানো। পুরো ট্রাক ভর্তি শসা, পানির বোতল। আর পিকাপের সামনে বড় করে ব্যানার লাগানো-
"পল্লিবন্ধু এরশাদ ও জাতীয় পার্টির সৌজন্যে"।
বিনামুল্যে পানি, শসা দিচ্ছে। হ্যা, আমি পুরোটা রাস্তায় এমন অনেক পিক আপ দেখেছি এবং বেশিরভাগই ছিল "পল্লিবন্ধু"র সৌজন্যে। মোল্লারা পানি নিয়ে যাচ্ছে, শসা চাবাতে চাবাতে দৌড়াচ্ছে মাদ্রাসার বাচ্চারা।
আজকে হেফাজতের সমাবেশ নিয়ে কথা বললে অনেকের নাম আসে। কিন্তু আমি দেখিনি জাতীয় পার্টির প্রত্যক্ষ সহযোগীতার কথা কেউ বলে। আমি কিন্তু বিএনপির কোন ট্রাক দেখেনি বা আওয়ামী লীগের তো না ই। কিন্তু পুরো রাস্তায় এরশাদের ব্যানার আর শসা, পানি বিরতনের পিকাপ দেখেছি অনেক। গরম ছিল তাই পানি, শসা ছিল মোল্লাদের সেবা করার উপকরন জাতীয় পার্টির পক্ষ থেকে।
প্রচন্ড গরম লাগছিল আর মোল্লাদের সমুদ্রের মধ্যে প্যান্ট, টিশার্ট পড়া নিজেকে বেমানান লাগছিল। মাইকে "....বাংলাদেশের কৃতি সন্তান ওমুক মাদ্রাসার শাইখুল হাদিস আল্লামা ব্লা ব্লা আমাদের সাথে আছেন। আরো যোগ দিবেন..." চলছিল। প্রলয়ংকারী শব্দ। কারন বহু মাইক।
"পল্লিবন্ধু"র এক বোতল পানি নিয়ে ফিরত আসছি। দেখলাম যে কোন এক চ্যানেলের এক নারী সাংবাদিক মাথায় ঘোমটা টেনে বুম হাতে সামনের দিকে যাচ্ছেন। সাথে হাতে ক্যামেরা ঝুলিয়ে ক্যামেরাপার্সন ফলো করছে। সব মিলিয়ে আধাঘন্টা হয়ত ছিলাম। মানে হেঁটে গেছি এবং ব্যাক করছি। এরমধ্যে চারপাশের আবহ আর মোল্লাদের পুরো ব্যাপারটা বুঝার চেষ্টা করলাম।
সুবিধার লাগছিল না।
এরমধ্যেই শাহবাগের ব্লগাররা রাসুলকে এটা বলসে, ওটা বলসে এসব বলে প্রচার শুরু হয়ে গেছে। এটা ইন ফ্যাক্ট হেফাজতের সমাবেশের আগেই প্রচার শুরু হইসিল। মোল্লারা শাহবাগের আন্দোলন নিয়ে নানা কথা বলছে।
রাজাকারের ফাঁসি চাওয়া গনজাগরণ মঞ্চের বিরোধীতা মোল্লারা কেন করছিল? কারন তাদের আরেক মোল্লা ভাই এর ফাঁসির দাবিতেই চলছিল আন্দোলন। লাখ লাখ মানুষ যোগ দিয়েছে। শাহবাগ আন্দোলনের সাইজের কাছে হেফাজতের কথাবার্তা কিছুই ছিল না।
কিন্তু আমি এখানে ভুল। কিছু ছিল! তার প্রমান হল কয় দিন পর।
একদিন আমাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এ ক্লাসপার্টি ছিল। তো ক্লাসপার্টি শেষ হয়ে যায় এরাউন্ড ৪ টায় বা ৫ টায়। এরপর কই যাওয়া যায় এটা নিয়ে অনেকে প্ল্যান করছিল। বললাম, চল শাহবাগ যাই আন্দোলনে। সবাই রাজি হয়ে গেল। আমাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে শাহবাগ বেশ কাছে।
সবাই গিয়ে জাদুঘরের সামনে গোল হয়ে বসে স্লোগান দিচ্ছি। স্লোগান থামিয়ে থামিয়ে মাইক থেকে ঘোষনা দেয়া হচ্ছিল " অমুক স্কুল, অমুক কলেজ, ওমুক প্রতিষ্ঠান আমাদের আন্দোলনে যোগ দিয়েছে"। তারপর আবার স্লোগান।
একটা কলম নিয়ে ছোট্ট চিরকুটে নিজের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এর নাম লিখে পাস করে দিলাম। কিছুক্ষন পর মাইকে আমাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এর নাম ঘোষণা করা হলো। গর্ব লাগল বেশ।
এর মধ্যে একদিন খবর আসলো রাজীব হায়দার নামে শাহবাগের এক ব্লগারকে নাকি জঙ্গীরা কুপিয়ে হত্যা করেছে। সে নাকি "থাবা বাবা" নামে অনলাইনে মোহাম্মদকে গালাগাল করতো।
ওই সময়ে কিন্তু আমি ধর্ম থেকে বের হয়ে যাইনি। কিন্তু আমি মোটেও ধর্ম পালন করিনা। আল্ট্রা মডারেট বলতে পারেন। তো এই জিনিস খারাপ লাগলো, কিভাবে মোহাম্মদকে নিয়ে খারাপ কথা বলা যেতে পারে। এত ভালো মানুষকে নিয়ে গালাগালি করার কোন কারনই তো নাই।
পরদিন মাহমুদুর রহমান প্রকাশিত "আমার দেশ" পত্রিকায় দুই পাতা নিয়ে থাবা বাবার ওরফে রাজীব এর মোহাম্মদকে নিয়ে লিখাগুলো পাবলিশ হলো। চিন্তা করুন, একটা জাতীয় পত্রিকার পুরো দুই পাতা জুড়ে মোহাম্মদকে গালাগালি করা ব্লগ ছাপা হয়েছে। কেন? বাংলাদেশ উদারপন্থী হয়ে গেছে বলে? নাহ! রাজীব হায়দারের হত্যাটাকে জাস্টিফাই করার জন্য।
এরপর আমি একটা অদ্ভুত কাজ করলাম। আমি জানিনা কি বুঝে করেছি। একটা ব্লগ একাউন্ট খুল্লাম, Blogspot এ মোস্ট প্রবাবলি। "আমার দেশ" এ প্রকাশিত মোহাম্মদকে নিয়ে মশকরা, ক্রিটিসিজম করা লিখাগুলো হুবুহু কপি করে পেস্ট করলাম আমার ব্লগের দুটা পোষ্টে। লেখাগুলা কোথা থেকে নিয়েছি মনে নাই, আমার দেশের ওয়েবসাইট ছিল কিনা মনে নাই, হয়ত সামু থেকে বা অন্য কোথাও থেকে নিয়েছি। মানে পত্রিকা দেখে টাইপ করেছি এমন না, কপি পেস্টই।
ব্লগটা পাবলিশ করার ঘন্টা দুই পরে আমার নীল ঘাম ছুটতে শুরু করল। আমি যে এই লিখাগুলা অনলাইনে লিখলাম আবার, হোয়াট ইফ কেউ জেনে যায় যে এটা কে লিখেছে। তাহলে তো আমাকেও কোপায়ে মেরে ফেলবে। হাতের কাছে কোন ফোন ছিল না। তখন আমার নিজের কোন ফোন ছিল না। কখনো আব্বুর ফোন, কখনো বোনের ফোন নিয়ে ফেইসবুকিং বা অনলাইনে জিনিসপাতি করতাম। আব্বু অফিসে, আপু ফোন দিচ্ছে না!
আতংকে আমি নীল হয়ে যাচ্ছি। সেদিন আর ফোন পেলামই না। ভয়ে আমি নড়তে পর্যন্ত পারছি না। এমন না কিন্তু ব্লগে আমার নাম, ঠিকানা দেয়া আছে। তাও বার বার মনে হচ্ছিল, এই বুঝি খুঁজে বের করে ফেলল। ২০১৩ সালে নিশ্চয়ই অনলাইনের জিনিসপাতি কম বুঝতাম এখনকার সময়ের চেয়ে। আজ থেকে ১১ বছর আগের কথা।
আগেরদিনও আপুর কাছে ফোন চেয়েছি। তখন আপু হয়ত ভেবেছিল চ্যাট করব বা কিছু, দেয়নি। কারনটাও বলি নি। আপু অনেক খারাপ ভাব্বে। কিন্তু ভয়, আতংক আমাকে এতই গ্রাস করেছে,আমি আপুর কাছে গিয়ে খুলে বল্লাম যে রাজীব হায়দারের লিখাগুলা আমি ব্লগে রিপাবলিশ করেছি। কোন রাজীব হায়দার? বললাম পেপারে কালকে যে লিখাগুলা দেখলি, ওগুলা। আপু কিছুক্ষন চোখ গরম করে তাকিয়ে ছিল, তারপর ফোন দিল। ডিলিট করলাম ব্লগ দুইটা। লেখাগুলার আকার অনেক বড় ছিল, তাই দুইটা ব্লগে লিখেছিলাম। ব্লগ ডিলিট করে ফোন ফিরত দিয়ে চুপচাপ বসে ছিলাম।
আমি আজও জানি না আমি লিখাগুলা কেন পাবলিশ করেছিলাম।
আমিতো নাস্তিক ছিলাম না তখন?
তাহলে?
রাজীব এর মৃত্যু কি আমাকে নাড়িয়ে দিয়েছিল?
ছোট মানুষের মনের সেই অনুভূতিকে আজও আমি ট্রান্সলেট করতে পারব না।
আর এমন তো না যে লিখাগুলা আর অনলাইনে নাই, তাহলে আমি কেন আবার রিপাবলিশ করতে গেলাম?!
আই ডোন্ট নো!
এরপর এক এক করে নীলয় নীল, অনন্ত বিজয় দাস, দীপন, অভিজিত রায়সহ অনেক ব্লগার খুন হলেন।
নিজের ব্লগে রাজীব হায়দারের লিখাগুলা থাকলে আর আমার নাম ঠিকানা পেলে আমাকেও কি মেরে ফেলত?
হয়ত না, লিখাগুলা তো আমার না!
কিন্তু প্রকাশ করার অপরাধে, এই নিষিদ্ধ লিখাগুলা আরো বেশি মানুষের কাছে ছড়ানোর অপরাধে কি আমিও ঢলে পড়তাম মাটিতে?
আমার তো বন্যা আহমেদও ছিল না, যার কোলে ঢলে পড়ে রক্তমাখা ভালোবাসা নিতে নিতে চলে যাব?!
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ রাত ১১:০৮