মেটাল গান আমার নিত্যসঙ্গী। সস্তা, ভ্যাপিড পপ মিউজিক কখনোই আমার কাপ অফ টি না। ক্রিয়েটর, ক্যানিবল কর্পস, ব্লাডবাথ, ডাইং ফিটাস, ভাইটাল রিমেইনস, ইনফ্যান্ট এনাইহিলেটর এর গানে তারা মৃত্যু, রাজনীতি, ধর্মের কুসংস্কার, যুদ্ধ ইত্যাদি নিয়ে কথা বলে। ব্রুটাল মেটালের সাউন্ডে এই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন বিষয়গুলা সঠিক আবহ দেয়। আরেক ধরনের গান আমাকে সরল হতে শিখায়। লালন সাঁইজির গান। এমন অনেক হয়েছে, লালনের গান শুনতে শুনতে চোখ দিয়ে অঝোর ধারায় পানি পড়ছে। লালনের গানে যে সারল্য, যে অহিংসা, যে পান্ডিত্য তা আপনাকে আমাকে শিশু বানিয়ে দেয়, মনে এনে দেয় প্রশান্তি, চোখে পানি।
শত বছর ধরে বাংলার গ্রামে প্রান্তরে লালনের গান ঘুরে বেড়িয়েছে, ইভলভ হয়েছে মিউজিক্যালি। গ্রীষ্মের দুপুরে গ্রামের কোন এক গাছতলায় জটা চুলের বাউল আপন মনে লালনের গান করত। সে সময় কেউই হয়ত নাই সেখনে, কিন্তু বাউল গান করত নিজের আত্মার শান্তির জন্য। একতারার টুনটুন আওয়াজে জড়ো হতো গ্রামের ছেলে পুলে, মুরুব্বিরা। লম্বা দাঁড়িওয়ালা পাঁচ ওক্ত নামাজ পড়া মুসলমান মুরুব্বিরাও লালনের জ্ঞান শুনতে আসতেন। সেখানে কোন অনুভূতির চাষাবাদ হতো না। ব্যাপারটা আধুনিক যুগে কোন দার্শনিকের সেমিনার সিম্পজিয়ামে যাওয়ার মত। আপনি অনেক কিছুই জানবেন, শুনবেন যা হয়ত আগে জানতেন না। কথাগুলা এমন ভারী যে আপনি তা নিয়েই ভাবতে থাকবেন। চাপাতি নিয়ে দৌঁড়াবেন না।
এইত সেদিন একজনের নামে মুমিনরা মামলা করল ধর্মীয় অনুভুতিতে আঘাত দেয়ার জন্য। বেচারা লালনের দুই লাইন শেয়ার করেছিল তার ফেইসবুকে। আমাদের এত অধপতনের কারন কি? সম্মিলিত চাটুকারিতা, ব্যর্থতা আর কপটতা। ধর্ম যদি ব্যক্তিগত বিষয় হয়ে থাকত, কে আল্লাকে সিজদা দিবে, কে মাথা ঠুকাবে তার ঠাকুরের কাছে সেটা যদি তার ঘর আর উপাসনালয়ে সীমাবদ্ধ থাকত, তাহলে কোন কথা ছিল না। কিন্তু যখন আপনি ব্যক্তিগত স্পেস থেকে ধর্মকে সামাজিক এবং রাষ্ট্রীয়ভাবে প্রোমোট করবেন তখন আপনার দেশে কয়েক দিন পরপরই উপাসনালয়ে হামলা হবে, আপনার দেশে সংখ্যালঘু আরো লঘুতর হবে। একসময় হয়ে যাবে বিলুপ্ত। আপনার গান বাজনা, সিনেমা, নাটক, কনসার্ট এমন কি খবরও হয়ে যাবে ধর্মীয় জোশে টইটুম্বর। সেদিন টিভিতে দেখলাম, আরবে বৃষ্টি হচ্ছে এটা নিয়ে নিউজ- " ..... এটা কি কিয়ামতের আলামত?" খবর পাঠিকা রীতিমত কুরান হাদিস আওরানো শুরু করলেন এটা যে কিয়ামতের আলামত সেটা বুঝানোর জন্য।
মুক্তিযুদ্ধের কপিরাইট অনেক দিন থেকেই আওয়ামী লীগের কাছে। নিজেদের সেক্যুলার দাবি করা আওয়ামী লীগ যে হারে দেশে মৌলবাদের চাষাবাদ করছে তাতে খালি বিএনপিকে দোষ দেয়ার আর সুযোগ দেখছি না। আওয়ামী লীগের এই শাসন আমলে হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রীষ্টানদের উপর অসংখ্য হামলা হয়েছে। ২০২১ সালে খোদ দূর্গাপুজাই ভেস্তে গিয়াছিল। সপ্তমী, অষ্টমীতে প্রতীমা বিসর্জন করতে হয়েছে হিন্দুদের, রামুতে বৌদ্ধ মন্দির গুঁড়িয়ে দেয়া হয়েছে। অসংখ্য ঘটনার উদাহরন দেয়া যাবে। সেক্যুলার মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সরকার কি বিচার করেছে তার একটা ঘটনারও? হ্যা বিচার হয়েছে, ইকবালের। সমস্ত বাংলাদেশের পূজা পন্ড করে, শত শত হিন্দু বাড়িতে আক্রমনের, খুনের জন্য দায়ী ইকবালের বিচার হয়েছে। দেড় কি দুই বছর জেলে থাকবে ইকবাল!
আওয়ামী লীগ ঠিক জানে তারা কতটা অজনপ্রিয় জনগনের মধ্যে। এখন যদি নিউট্রাল ইলেকশন হয় আওয়ামী লীগ যে ৮/১০% ও ভোট পাবে না তা তারা খুব ভালো মতন জানে। এমনকি নিউট্রাল ইলেকশন হলে শেখ হাসিনাও তার সিটে হেরে যেতে পারেন। তাই আওয়ামী লীগ বাংলার মুমিন মুসলমানকে ক্ষ্যাপাতে চাননা। যে দাবিই তার করুক মাথা নিচু করে মেনে নেন। সেটা হোক শিক্ষানীতি পরিবর্তন বা অন্য কিছু।
আর যেসব বুদ্ধিজীবী দেশের এই অবস্থায়ও চেতনার চাষাবাদে ব্যস্ত, সরকার কি কি ভালো কাজ করল, শেখ হাসিনা কত মহান এটা প্রমানে ব্যস্ত, আপনারা ইতিহাসে নর্দমার কিটের স্থান পাবেন। আপনারা হওয়ার কথা ছিল সরকারের থিংক ট্যাংক, কিন্তু আপনারা হয়ে গেছেন পা চাটা। ধিক্কার।
এই মাটি জন্ম দিয়েছিল লালন সাঁইজির। সাঁইজি, এই দেশ আপনাকে ডিজার্ব করে না!
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:২৫