ছবিঃ Adrian Murray
ভোরের আলো ফুটেছে ক্যাবল রংচঙ্গা মেট্রোপলিসে,
বিভোর ঘুমে কাতর কর্পোরেট যুগল,
ঘন্টা দুই পর শুরু হবে সাঁতার;
নিজেকে, অপরকে, প্রতিবেশীকে-
প্রিয়তমাকে ছাড়িয়ে যাওয়ার সাঁতার,
স্বচ্ছ জলে ঝড় তুলে, আলোড়ন তুলে দূষণ ছড়ানোর প্রতিযোগীতা।
যে কটি মাছ টিকে আছে টক্সিক জলে,
অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে উপরের দূর্বোধ্য কার্যকলাপের দিকে;
সূর্যের আলো আসতে পারছে না আলোড়িত জল ভেদ করে-
আর জলে ছড়িয়ে পড়েছে ফ্রেঞ্চমেড শ্যানেলের গন্ধ,
গা গুলিয়ে আসে;
তবুও কি অপার প্রতিযোগীতা পরবর্তী শ্যানেলের স্বচ্ছ বোতল করায়ত্ত্ব করার!
গুচিতে ভাঁজ পড়া যাবেনা
ড্রাইওয়াস হচ্ছে প্রতিনিয়ত;
খোঁজ নিয়ে দেখা গ্যালো,
গাছের তুলা দিয়ে তৈরী সুতা দিয়ে গুচি, প্রাডা বানাও তোমরা।
কৃষক কন্যা মাঠে ভাত নিয়ে যাচ্ছে রোদে পোড়া বাবার জন্য,
গামছা দিয়ে ঢাকা ভাতের প্লেট,
এই গামছাও একই তুলা গাছের সুতা দিয়ে তৈরি!
কৃষকের মলিন শার্টের মত;
তোমার প্রাডায়ওতো ঘাম লাগছে,
যে নিত্যকার প্রতিযোগীতায় লড়ছো তুমি-
দৌড় শেষে হাঁপাচ্ছ যখন,
সরু সুতা ভেদ করে তোমার আদিম ঘাম ঢুকে যাচ্ছে জর্জিও আর্মানিতে!
শত প্রানী আত্মহূতী দিয়ে চালাচ্ছে তোমার মার্সেডিজ,
ফসিল ফুয়েল আর কি?
আত্মহূতী দেয়া প্রানীরা মরেও সুখ পেলনা,
টানছে আবিরাম তোমার চার চাকা।
মাটি খুঁদে ঠিকই বের করে ফেল্লে লোহা, তামা;
শ্রমিকের ঘামে তাকে বদলালে যন্ত্রে,
সে যন্ত্র আবিরাম চলছে-
সকাল থেকে রাত;
কারখানার চিলেকোঠায় ঝুলতে ঝুলতে বিস্ময়ে তাকিয়ে আছে,
তোমারই বিবর্তনিক সহচর টিকটিকি!
সে তো ক্যাবল খাবার চায়,
বেঁচে থাকের জন্যে;
কিন্তু তুমি?
নিরিহ সমুদ্র সৈকতে তুমি নিয়ে গ্যালে আতশকাঁচ,
আলো ফেললে,
ছড়ালে তোমার শ্যানেলের গন্ধ,
কিছু মৃত প্রানী টেনে নিয়ে আসলো তোমাদের
“বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতি”,
পরদিন-
জর্জিও আর্মানিতে আদিম মনুষ্য গন্ধ ছড়িয়ে দিতে দিতে বললে-
“আজকে আমরা অত্যন্ত আনন্দের সাথে জানাচ্ছি যে আমাদের দেশের সি বিচে ইউরেনিয়াম পাওয়া গিয়েছে”
‘তোমাদের’ দেশ?
মাটি খুঁদে কিছু তামা লোহা বের করে ছুঁড়ে দিলে তোমার পাশের জঙ্গলের দিকে,
আর ঠিক করে দিলে এই জঙ্গলে আর কেউ ঢুকতে পারবে না?
এ জঙ্গল তোমার?!
ঢুকতে পারবে-
কি লাগবে?
কিছু গাছ কাটতে হবে-
বানাতে হবে কাগজ,
লিখতে হবে কয়লা দিয়ে,
এরপর তুমি ঢুকতে দিবে!
তোমার জঙ্গলের শিম্পাঞ্জি অপলক তাকিয়ে আছে তোমার দিকে,
৯৮% ডিএনএ’র মিল নিয়েও সে বুঝতে পারছে কিভাবে তুমি টেনে দিতে পার বিভেদ রেখা!
ইউরেনিউয়াম দিয়ে তুমি কি করবে?
জ্বালিয়ে দিবে পাশের জঙ্গল,
দূরের জঙ্গল,
প্রস্তুত করবে আরো মৃত প্রানী, মানুষ-
তোমাদের ভবিষ্যত প্রজন্মের পোর্শে টানার জন্যে?
কি চাও তুমি?
বাঁচতে?
বাঁচতে শ্যানেল, গুচি, প্রাডা, আর্মানি লাগে?
চলতে মার্সেডিজ, পোর্শে, ফেরারি লাগে?
উড়তে বোয়িং লাগে?
যতই ডিওর, ক্লাইন দিয়ে ঢেকে দাও,
তোমার গায়ে কিন্তু লেগে আছে বুনো গন্ধ,
যতই সুপ্রিম, প্রাডা দিয়ে মুছে দাও,
তোমার গায়ে কিন্তু এখনো লাগছে প্রাচীন ধুলো,
যতই দৌড়ে বেড়াও আউডি, ফোর্ডে
তোমার হাতের ছাপ লেগে আছে প্রাগৈতিহাসিক গুহায়!
কি চাও তুমি?!
বিভেদ রেখা আর কত টানবে?
আর কত সাজবে আঠারশো শতকের ইংরেজ ক্লাউন?
কি চাও তুমি?
এরিস্টোক্রেসির অপর নাম মৃত্যু;
পাখির জন্য, গাছের জন্য, মাছের জন্য,
তোমার প্রায় সমতুল্য শিম্পাঞ্জির জন্য!
ভাবছো তাতে তোমার কি?
পাশের জঙ্গলে যে এর চেয়ে বেশি কিছু হচ্ছে না তা কে বলল তোমাকে?!
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ রাত ১০:৩০