ভোরবেলা তোমার গায়ে কমফোর্টার উঠিয়ে দিয়ে জানলা খুললাম,
বারুদের গন্ধে আমার গা গুলিয়ে আসছিলো;
তাকিয়ে ছিলাম আকাশের প্রায় নিভন্ত তারাটির দিকে-
হ্যা, একটি তারাই ছিলো,
বাকিগুলো ঢেকে দিয়েছে তোমার আমার জন্য গড়ে উঠা অস্ত্র কারখানা।
হঠাত চোখ ভিজে উঠল,
জানিনা-
বারুদের তেজে জ্বলে উঠল কিনা।
তুমি হয়তো ঘুরে বেড়াচ্ছো স্নিগ্ধ ঝর্না জলে,
শ্যাওলা জমা পাথরে তাকিয়ে তুমি জলের অস্তিত্বকে উপভোগ করছো,
স্রোতে ভেসে যাওয়া বুনোফুলের সাথে ভেসে যেতে ইচ্ছা করছে তোমার,
নিজের উপর বয়িয়ে দিচ্ছো অজস্র প্রকৃতি কান্না,
কোমলতায় তোমার ঘুম আরো গভীর হচ্ছে;
ওদিকে-
তিন দিন না ঘুমিয়ে কামানের নল পরিষ্কার করছে মরনসেনা,
নলের পোড়া বারুদে মিশে যাচ্ছে ওর চোখের জল,
বাড়িতে রেখে এসেছে রাজ্যের ভালোবাসা-
যে হাতে ছোট্ট এক হাত ধরে আনন্দজলে ভেসেছিল ঠিক কমাস আগে,
সে হাত দিয়েই কাল সুগম করতে হবে রক্ত নিসঃরন এর পথ,
হাত দিয়ে না হলেও বেয়োনেট দিয়ে।
কাল যার মাথায় বন্দুক রেখেছিল
চিনে না জানে না তাকে,
মারতে হবে-
মরতে হবে;
জানে ওটুকুই।
রাজায় রাজায় দরকষাকষি চলছে,
রাজার মনঃপুত না হলে
আমি তুমি তোমরা মারতে থাকব,
মরতে থাকব।
যে হাত দিয়ে অন্য হাত কেটে নিয়েছিলো,
সেই হাতে আজ বা কাল উঠেবে জাতীয় বীর বা জাতীয় কুলাংগার এর উপাধি,
ব্যবধান কত সামান্য খেয়াল করেছো?
এক মুহুর্তের ব্যবধানে হয় তুমি বীর নাহয় কুলাংগার,
তাও নির্ভর করছে দুই রাজার দরকষাকষিতে কি হলো শেষমেশ-
একটা জিনিস খুব দরকার এই নীতিতে,
মৃত্যু, রক্ত, জীবনবায়ু!
ভেবে দেখেছো, প্রিয়তমা?
তুমি পুবে তাকিও না
ওখানে চলছে নরবলি,
পশ্চিমে তাকিও না
মানুষের মাংস বিক্রি হচ্ছে কেজি দরে,
উত্তরে তাকিয়ে আঁতকে উঠো না প্লিজ
রাজারা মানুষের মগজের রেসিপি ঠিক করছে,
দক্ষিনে তাকিয়ে অবাক হয়ো না,
থরে থরে সাজানো মানুষের হৃতপিন্ড, কলিজা, শিনার মাংস,
ক্রেতারা দামাদামি করছে।
তুমি ভেবে দেখ,
পৃথিবীর প্রবীনতম বৃক্ষ-
যে সাক্ষী মানুষের গুহাবাসের,
নৈমত্তিক টিকে থাকার সংগ্রামের,
মানুষের আদিম ভালোবাসার সাক্ষী যে;
আজ সে দেখছে মানুষ দামাদামি করছে অন্য মানুষের মাংসের সের।
আদিম বৃক্ষটি কি অবাক?
প্রিয়,
তুমি আজ চোখ খুলোনা প্লিজ-
চোখ খুললেই তুমি ইউক্রেনের গর্ভবতী মায়ের কান্না শুনতে পাবে,
শুনতে পাবে আর্মেনিয়ান শিশুর ভয়ার্ত কান্না,
ইয়েমেন, সিরিয়ার বৃদ্ধরা ভারী চশমার ফাঁক দিয়ে চোখ মুছবে,
সে দৃশ্য তুমি দেখতে পারবে না।
তুমি আজকে চোখ খুলনা প্লিজ,
ফিলিস্তিন, ইসরায়েলের সদ্য কৈশরে পড়া অবাক কিশোরের বিস্মিত দৃষ্টি তোমাকে আহত করবে,
পাকিস্থান, আফগানিস্তানের মায়েদের গভীর দীর্ঘশ্বাস তোমাকে অনেক দিন ঘুমাতে দিবে না,
তুমি হজম করতে পারবে না আত্মঘাতীর স্ত্রীর সলিল চোখ,
মোটেও সহ্য করতে পারবে না চীনাদের বোবাকান্না।
তারচে ভালো,
তুমি অবগাহন কর ঝর্ণায়,
ডুবে যাও শীতল ভালোবাসায়,
পাহাড়ি গন্ধ তুমি বুক ভরে নাও,
আকাশে তাকিয়ে দেখ পাখিরা ক্যামন প্রদক্ষিন করছে তোমায়,
তুমি চোখ বন্ধ করে অনুভব কর
প্রকৃতিমাতাকে-
মা কি কাঁদছে?
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই অক্টোবর, ২০২৩ রাত ৮:৫৫