somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাংলাদেশ সরকারের প্রতি ভারতীয় থিংক ট্যাংকের নসিহত-১

০২ রা জুলাই, ২০১০ সকাল ১১:৪১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



বাংলাদেশ সরকারের প্রতি ভারতীয় থিংক ট্যাংকের নসিহত-১

জামায়াতসহ বিরোধী দলের বিরুদ্ধে এ্যাকশনে যেতে হবে এবং ভারতকে দেয়া প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন দ্রুত করতে হবে

south Aisa

ফতেহ আলী টিপু : বিএনপি-জামায়াত সকল জাতীয় দেশপ্রেমিক ইসলামী শক্তির সরকার বিরোধী সম্মিলিত আন্দোলনে ভারতের এস্টাবলিশমেন্টের অনুগত থিংক ট্যাংকের মাঝে গাত্রদাহ শুরু হয়ে গেছে। হাসিনা-মনমোহন চুক্তি বাস্তবায়ন পর্যন্ত দিল্লী বর্তমান সরকারকে ছায়া দিয়ে আগলে রাখতে চায় এবং বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি সরকারের প্রতিকূলে পুরোপুরি চলে যাবার আগেই ঐ চুক্তির শর্ত অনুযায়ী সবকিছু দ্রুত আদায় করে নিতে চাইছে। এজন্য সরকারের ওপর দিল্লীর চাপ ও নজরদারি আরও বাড়ানো হয়েছে। এদিকে সম্মিলিত বিরোধী দলের আন্দোলন দানা বাধার আগেই সরকার আত্মরক্ষার কৌশল হিসেবে যুদ্ধাপরাধের বিচার দ্রুত সম্পন্ন করতে চাইছে।
এদিকে বিএনপি-জামায়াতসহ জাতীয়তাবাদী ইসলামী দলগুলোর সাম্প্রতিক সরকার বিরোধী আন্দোলনে একাত্মতা ঘোষণা এবং গত ২৭ জুন দেশব্যাপী একটি সফল হরতাল কর্মসূচি পালন হবার ফলে সরকারি মহলে অস্থিরতা বেড়েছে। এই প্রথম আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থেকেও আনুষ্ঠানিকভাবে হরতাল ঠেকানোর দায় নিয়ে বিরোধী দলের হরতাল কর্মসূচি প্রতিহত করতে রাজনৈতিকভাবে সরাসরি মাঠে নামেনি। যদিও বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় ছাত্রলীগের ঠ্যাংগাড়ে বাহিনী ছাত্রদলের নেতাকর্মী ও বিএনপি নেতা শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানী এমপিসহ ২০-২৫ জনের ওপর পুলিশের সহযোগিতায় চড়াও হয়ে মারাত্মকভাবে তাদের আহত করেছে। তবে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও এলজিআরডি মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফ ছাত্রলীগের গুন্ডামির দায় নিতে অস্বীকার করেছেন। বিরোধী দলের হরতালের প্রতি দেশবাসীর নীরব ও ব্যাপক সমর্থন থাকায় সরকার দলীয় ক্যাডার নামিয়ে বরাবরের মতো হরতাল প্রতিরোধে কর্মসূচি নিতে পারেনি। এদিকে ছাত্রলীগের নৃশংস হামলা এবং বিএনপি নেতা সাবেক মেয়র মীর্জা আববাসের বাড়িতে ঢুকে র্যা ব বাহিনীর নজিরবিহীন পাশবিকতায় ভাংচুর ও হামলা চালানোর ঘটনায় সরকারের হরতাল নিয়ে ‘নিউট্রাল' থাকার ঘোষণা মিথ্যা প্রমাণ হয়েছে। দ্বিতীয়ত: মীর্জা আববাস, শমসের মোবিন চৌধুরী, শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানী এমপিসহ গ্রেফতারকৃত বিএনপি নেতাদেরকে বিভিন্ন মামলায় গ্রেফতার দেখানো এবং তাদের বিরুদ্ধে নতুন মামলা দায়ের ও পুলিশী রিমান্ডে নেবার মধ্য দিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন অংকুরেই বিনাশ করার ইচ্ছা প্রকাশ হয়ে পড়েছে। এছাড়া হরতালের পূর্ব রাতে ঢাকাসহ দেশব্যাপী শত শত বিরোধী দলীয় নেতাকর্মীদের গ্রেফতার, ভিআইপি ও প্রধান প্রধান সড়কে বিরোধী দলকে সমাবেশ ও পিকেটিং করতে না দেবার মধ্যে একদিকে সরকারের অগণতন্ত্রী চরিত্রের বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে, অন্যদিকে দেড় বছরের মাথায় বিরোধী দলের সকাল-সন্ধ্যা একদিনের শান্তিপূর্ণ হরতালে সরকারের নীতি-নির্ধারক মহলের ভীতি ও আতঙ্কের প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে।
চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে শাসক আওয়ামী লীগের হেভিওয়েট প্রার্থীর শোচনীয় পরাজয় সরকারের জন্য একটি রাজনৈতিক বিপর্যয় হিসেবে দেখা হচ্ছে। এরই অব্যবহিত পরে গত ২৭ জুনের সর্বাত্মক সফল হরতাল সরকারকে রাজনৈতিকভাবে বেসামাল করে ফেলেছে। হরতালের সফলতার মাধ্যমে গোটা দেশের মানুষ শাসক আওয়ামী লীগের প্রতি তাদের ম্যান্ডেটকে ফিরিয়ে নেবার সতর্ক বার্তা পাঠিয়ে দিয়েছে। জনমতকে আস্থায় নিয়ে আওয়ামী লীগ সুসাশন প্রতিষ্ঠায় সফল হবে বলে জনগণ বিশ্বাস করতে পারছেন না। তৃতীয়তঃ আওয়ামী লীগ তার ব্যর্থতা ও অপশাসনের দায়ভার লুকাতে এতটাই মরিয়া হয়ে পড়েছে যে, তাদের পক্ষে গণতান্ত্রিক সহিষ্ণুতা ও সুশাসনের পথে ফিরে আসা সম্ভব হচ্ছে না। চতুর্থতঃ গত জানুয়ারি মাসে দিল্লীতে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের সাথে সম্পাদিত বিতর্কিত ও আত্মঘাতী চুক্তি বাস্তবায়নে দিল্লীর অব্যাহত চাপ এবং এ বছরকে সময়সীমা হিসেবে নির্ধারণ করে দেবার ফলে সরকার অভ্যন্তীণ রাজনৈতিক বিরোধিতা দমনে আরও নিষ্ঠুর ও ফ্যাসিবাদী ভূমিকায় নিতে শুরু করেছে। বিশেষ করে বিরোধী দলের ঐক্য ভাঙ্গা এবং সরকার বিরোধী আন্দোলনকে দুর্বল করার লক্ষ্যে সরকার দুটি লক্ষ্যকে অগ্রাধিকার হিসেবে গ্রহণ করেছে। এর একটি হচ্ছে, বিএনপি-জামায়াত ঐক্য ভাঙ্গা। অন্যটি হচ্ছে, বিতর্কিত যুদ্ধাপরাধের বিচার দ্রুততর করে জামায়াতকে আন্দোলনে সক্রিয় হিসেবে ভূমিকা রাখতে বাধা দান। সরকারি দলের নীতি-নির্ধারক এবং ভারতীয় মহলটি ভালো করেই জানে যে, আর একটি সরকার বিরোধী আন্দোলনে বিএনপির সহযোগী শক্তি হিসেবে জামায়াত-শিবিরের সম্পৃক্ততা আন্দোলনে দুর্বার গতি সঞ্চার করবে। এজন্যই সরকার ও ভারতীয় থিংক ট্যাংকের কুশীলবরা জামায়াতের বিরুদ্ধে ক্রুসেডের নয়া ফ্রন্ট খুলেছে।
দেখা যাচ্ছে, এক দিকে ভারত সরকারের এস্টাবলিশমেন্ট ও তাদের গোয়েন্দা বিভাগের মুখপাত্র চিহ্নিত থিংক ট্রাংক জামায়াতে ইসলামীকে টার্গেট করে মিডিয়া ও বুদ্ধিবৃত্তিক সন্ত্রাস বেগবান করেছে। একই সাথে দেশের ভেতরে ভারতবান্ধব সরকার বিরোধী দলীয় আন্দোলন দানা বাধার আগেই যুদ্ধাপরাধের বিচারকে দ্রুততর করার তোড়জোর শুরু করেছে। উল্লেখ্য, যুদ্ধাপরাধের বিচার ইস্যু নিয়ে আওয়ামী লীগ হাইকমান্ড সিরিয়াস না থাকলেও ইন্দো-ইসরাইলী লবীর স্থানীয় অংশ এবং তাদের ঘরানার আমলা-বুদ্ধিজীবী মহলের চাপে সরকার যুদ্ধাপরাধ ইস্যুকে প্রায়োরিটি দিতে বাধ্য হয়েছেন। বিগত নির্বাচন-উত্তর প্রথম সাংবাদিক সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যুদ্ধাপরাধের বিচার প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে বলেছিলেন, ‘নির্বাচনের মাধ্যমে কি তাদের বিচার হয়ে যায়নি?' যদিও আওয়ামী লীগ নেতানেত্রীরা যুদ্ধাপরাধের বিচারকে ‘জাতির কলঙ্ক মুক্তি' বলে প্রচারণা চালাচ্ছেন। কিন্তু যুদ্ধাপরাধের বিচার রাষ্ট্রের স্থপতি শেখ মুজিবই চূড়ান্তভাবে নিত্তি করে গেছেন। দ্বিতীয়তঃ দালাল আইন ও যুদ্ধাপরাধ বিচারের আইন আলাদা হওয়ার কারণে ও উভয় অপরাধের সংজ্ঞা ও বর্ণনা স্বতন্ত্র হবার কারণে আইনত বাংলাদেশে কোন যুদ্ধাপরাধী নেই। যুদ্ধাপরাধ এবং যুদ্ধাপরাধীরা সুনির্দিষ্টভাবে মুজিব সরকার দ্বারা সংজ্ঞায়িত। বিশেষ করে পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর ১৯৫ জন সদস্যকে মুজিব সরকার যুদ্ধাপরাধী হিসেবে চিহ্নিত করে তালিকাভুক্ত করেছে। তাদেরকে শাস্তি না দিয়ে আঞ্চলিক শান্তি ও সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশ ফিরিয়ে আনার জন্য মরহুম শেখ মুজিব অব্যাহতি দিয়ে দেন। ক্ষমা করাটাও বিচারিক প্রক্রিয়ার অংশ। এদিকে সরকারও স্বীকার করে নিয়েছে যে, দেশে কোনো যুদ্ধাপরাধী নেই এবং যুদ্ধাপরাধ প্রমাণ করাও তাদের জন্য সম্ভব হবে না। এজন্য তারা শ্লোগান বদলিয়ে মানবতাবিরোধী অপরাধের সূত্রে জামায়াতের শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের আঘাত হানতে শুরু করেছে।
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা লক্ষ্য করছেন, বিরোধী দলের আন্দোলন ব্যাপকভাবে দানা বাধার আগেই আতঙ্কিত সরকার যুদ্ধাপরাধের বিচারকে টপ প্রায়োরিটিতে নিয়ে আসার তোড়জোর শুরু করেছে। অথচ কয়েকদিন আগেও আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমদ বলেছিলেন, যুদ্ধাপরাধের তদন্ত দীর্ঘ প্রক্রিয়ার বিষয়। এজন্য বেশ সময়ের প্রয়োজন হবে। কিন্তু কয়েকদিন আগে, যুদ্ধাপরাধের ইস্যুতে জাতিকে বিভক্ত এবং জামায়াতে ইসলামীকে দুর্বল করে বিদেশী আগ্রাসন ও তাঁবেদারি নিষ্কণ্টক করার পেছনের আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক চক্রটি তাদের স্থানীয় পঞ্চম বাহিনী ব্যবহার করে ঢাকায় একটি তথাকথিত ‘ত্রিদেশীয়' সেমিনার সম্পন্ন করেছে। এর মূল প্রতিপাদ্য হচ্ছে : সরকারের যুদ্ধাপরাধ বিচারের উদ্যোগের প্রতি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমর্থন রয়েছে। তবে এটা কোন আইনগত ভিত্তি তৈরি বা আন্তর্জাতিক জনমতের দ্যোতক নয়। ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির আয়োজনে ঢাকায় অনুষ্ঠিত এ ত্রিমহদেশীয় সেমিনারের উদ্যোক্তা এবং অংশগ্রহণকারীরা আসলে ইন্দো-ইসরাইল ঘরানার থিংকট্যাংকের ব্রেইন চাইল্ড। এরা আন্তর্জাতিক জনমতের প্রতিনিধিত্ব করে না। তাছাড়া সরকার ১৯৭৩ সালের যে আন্তর্জাতিক অপরাধ আইনে যুদ্ধাপরাধের বিচার করতে যাচ্ছে, ঐ আইনটি আন্তর্জাতিক মানদন্ডে অগ্রহণযোগ্য হিসেবে ইতোমধ্যেই আলোচিত ও চিহ্নিত। প্রথম প্রশ্ন, স্বাধীন-উত্তর সরকার যেহেতু বিষয়টির মীমাংসা করে গেছেন, এই চিন্তা করার নৈতিক ও আইনগত এখতিয়ার সরকারের আছে কিনা? দ্বিতীয় প্রশ্ন, যে আইনে সরকার বিচার করতে যাচ্ছে, সে আইনটি যেহেতু আন্তর্জাতিক মানদন্ডে উত্তীর্ণ নয়, সেই কারণে বিচার প্রক্রিয়া কতটা স্বচ্ছ ও গ্রহণযোগ্য হবে?
যুদ্ধাপরাধের বিচার ইস্যুটিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ইতোমধ্যেই সম্পৃক্ত হয়ে পড়েছেন। মার্কিন কংগ্রেস, যুক্তরাজ্য হাউজ অব কমন্স, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হেরিটেজ ফাউন্ডেশন, বৃটেনের হাউজ অব লর্ডস, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, আন্তর্জাতিক বার কাউন্সিল ও প্রধান প্রধান মানবাধিকার সংগঠনগুলো এ ব্যাপারে তাদের মতামত অবস্থান ব্যাখ্যা করে যথারীতি উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। বাংলাদেশ সরকার যে আইনে যুদ্ধাপরাধের বিচার করতে যাচ্ছে, সেই ১৯৭৩ সালের যুদ্ধাপরাধ আইনের ধারাগুলোর স্বচ্ছতা ও আইনী মানদন্ড নিয়ে তারা দফাওয়ারী মতামত ব্যক্ত করেছেন। তারা সরকারকে জানিয়েছেন, এই আইনে বিচারে অভিযুক্তদের মানবাধিকার সংরক্ষিত হবে না। মার্কিন পলিসি নির্ধারণী প্রতিষ্ঠান হেরিটেজ ফাউন্ডেশন সরাসরি বলেছে, যুদ্ধাপরাধের বিচার রাজনৈতিক প্রতিহিংসার রূপায়ণ। বাংলাদেশের সংবিধানও এ আইন অনুমোদন করে না এবং বাংলাদেশ সরকার আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সনদে স্বাক্ষর করার পর এই আইনে যুদ্ধাপরাধের বিচার হবে সরকারের মানবাধিকার সনদ লংঘন। এই আইন নিয়ে আপত্তি নিরসনে সরকার দুজন বিশিষ্ট আইনজীবীকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও বৃটেন পাঠায়। কিন্তু তারা সংশ্লিষ্ট দেশ ও সংস্থার প্রতিনিধিদের কনভিন্স করে আসতে পারেননি বলে সরকার আরও হতাশ। তবে যুদ্ধাপরাধ ইস্যু নিয়ে যে মহলটি অষ্টপ্রহর সরকারের ভূমিকা মনিটর করছে, তারা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ও আইনের তোয়াক্কা না করেই যুদ্ধাপরাধের দ্রুত বিচারের কুমন্ত্রণা দিয়ে যাচ্ছে। এই সাথে ১৯৭৫ সালে যে বামপন্থী মহলটি আওয়ামী লীগকে বহুদলীয় সংসদীয় সরকার পদ্ধতি বাতিল করে একদলীয় বাকশাল পদ্ধতির সরকার ব্যবস্থা প্রবর্তনে প্ররোচিত করেছিল, তাদের লোকজনই সরকারের নীতিনির্ধারণী বৃত্তে ঢুকে যুদ্ধাপরাধের নিত্তিকৃত ইস্যুটিকে এনে চাঙ্গা ও উত্তপ্ত করেছে।
বিএনপি-জামায়াতের ঐক্যে গাত্রদাহ নিয়ে সম্প্রতি ভারতের রাষ্ট্রীয় মদদপুষ্ট বেশ কিছু থিংক-ট্যাংক গোষ্ঠী রীতিমতো জ্ঞানদানকারী থিসিস পর্যন্ত রচনা করে ফেলেছেন। একদিকে জামায়াতের ওপর যুদ্ধাপরাধী অভিযোগের দায় নিয়ে আসা, অন্যদিকে ইসলামী জঙ্গিবাদের সাথে জামায়াতকে সম্পৃক্ত করার চক্রান্ত ভারতের একটা মহল জোরদার করেছে। এ ব্যাপারে সাউথ এশিয়ান এনালাইসিস গ্রুপ, পেপার নং ৩৮৬৭-র মোড়কে একটি প্রোপাগান্ডাপত্র আমাদের হাতে এসেছে। ভারতীয় নাগরিক ভাস্কর রায় লিখিত "Anatomy of Bangladesh Opposition : S.K. Hasina Must Act" শীর্ষক সুদীর্ঘ লেখাটির মর্মকথা হচ্ছে যে, যে কোন মূল্যে জামায়াত-বিএনপির ঐক্য ভাঙ্গা এবং যুদ্ধাপরাধ ও জঙ্গিবাদ ইস্যুতে জামায়াতে ইসলামীর রাজনীতি ধ্বংস করা। আর এ কাজটি করতে হবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে। এর কারণ দুটি। এক. সরকারের নিজের অস্তিত্ব রক্ষার জন্য জামায়াতের বিরুদ্ধে সরকারকে এ্যাকশনে যেতে হবে। দুই. সম্প্রতি সম্পাদিত শেখ হাসিনা-মনমোহন চুক্তি বাস্তবায়ন করে ভারতকে প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ট্রানজিট সমুদ্র বন্দরসহ বাংলাদেশের ওপর আধিপত্য বিস্তারের চার দশকের স্বপ্ন পূরণ করতে হলে জামায়াতসহ ভারতের স্বার্থের পরিপন্থী বিরোধী শক্তিকে ক্র্যাশ করতে হবে। ভাস্কর রায় তার থিসিসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে এই বার্তাই দিতে চেয়েছেন। এই সাথে বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ধারক শহীদ জিয়ার উত্তরসূরী হিসেবে চিহ্নিত করে ‘স্বাধীনতা বিরোধী যুদ্ধাপরাধী' জামায়াতের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবার নসিহত করা হয়েছে। এদিকে আওয়ামী লীগ আনুষ্ঠানিকভাবেই শহীদ জিয়াকে ‘পাকিস্তানের এজেন্ট' হিসেবে ঘোষণা করে মুক্তিযুদ্ধ ও দেশ গঠনে শহীদ জিয়ার অবদান মুছে ফেলার কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে চলেছে। শহীদ জিয়ার স্মৃতিঘেরা ক্যান্টনমেন্টের বাড়ি থেকে বেগম খালেদা জিয়াকে উৎখাত, আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরের স্মারক থেকে জিয়ার নাম মুছে ফেলাসহ গোটা দেশ থেকে জিয়াকে উৎখাতের কর্মসূচি বাস্তবায়নে আওয়ামী লীগ খুবই তৎপর। বেগম জিয়ার নামে সেনা সমর্থিত সরকারের দায়ের করা সবগুলো মামলা বহাল রাখা, তারেক ও আরাফাতের মামলাই শুধু বহাল রাখা হয়নি। তারেককে দেশে ফিরে রাজনৈতিক নেতৃত্ব গ্রহণের পথে সরকার বিস্তর কাঁটা বিছিয়ে রেখেছে। এখানেই শেষ নয়, ভাস্কর রায় তার লেখায় জঙ্গিবাদ প্রতিষ্ঠার পেছনে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের ভূমিকাকে দায়ী করেছেন। বিশেষ করে শেখ হাসিনার জনসভায় গ্রেনেড হামলাসহ দেশের জঙ্গিবাদী ঘটনার পেছনে ‘তারেক চক্র' এবং ‘হাওয়া ভবনকে' দায়ী করেছেন। প্রতিবেশী দেশটির গোয়েন্দা সংস্থার নীলনকশা অনুযায়ী তারেক রহমান ও ‘হাওয়া ভবনকে' টার্গেট করা হয়েছে বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে। জোট সরকারের আমলে তদানীন্তন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল জলিলের সরকার পতনের ‘ট্রাম্পকার্ড' ব্যবহারে চমক দেখানো এবং হাওয়া ভবন ঘেরাও কর্মসূচি গ্রহণের মধ্য দিয়েই তারেক রহমানের বিরুদ্ধে ‘র'-তার ষড়যন্ত্রকে প্রকাশ্যে নিয়ে আসে বলে অনুমান করা হচ্ছে। যদিও ‘হাওয়া ভবন' ছিল বিএনপির চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক কর্মকান্ডের অফিস। তারেক রহমান তখন ছিলেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। তিনি কোন সরকারি পোস্ট হোল্ড বা রাষ্ট্র-সরকারের ক্ষমতা ভোগ-ব্যবহার না করা সত্ত্বেও সরকার পতনের জন্য প্রধানমন্ত্রীকে টার্গেট না করে তারেক রহমান ও ‘হাওয়া ভবনকে' টার্গেট করার মধ্য দিয়েই বিএনপির ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব থেকে তারেক রহমানকে দূরে রাখার প্রক্রিয়া শুরু হয়। তারেক রহমানের চারপাশে প্রতিবেশী গোয়েন্দা সংস্থাটি বেশ কিছু নারী পুরুষ এজেন্ট অন্তর্ঘাতককে নিযুক্ত করে ভেতরের তথ্য চুরিসহ তারেক রহমানের ইমেজ ধ্বংসের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করেছে। এরই ধারাবাহিকতায় ১/১১-এর পটপরিবর্তনের পর বিশেষ চক্রের নীল নকশায় তারেক রহমানকে গ্রেফতার, তাঁর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের এবং পুলিশী রিমান্ডে নিয়ে তাঁকে নিঃশেষ ও পঙ্গু করার জন্য নির্যাতন চালানো হয়। যাতে তারেক রহমান শারীরিকভাবে সক্ষম থেকে বিএনপি বা দেশের ভবিষ্যৎ কর্তৃত্ব বহন করতে না পারেন। তারেক রহমানের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলাগুলো বাঁচিয়ে রাখা ছাড়াও সরকার তাঁকে দেশে ফিরিয়ে এনে সুস্থ রাজনীতি চর্চার সুযোগ দিতে চায় না। কেননা তারেক রহমান দেশে ফিরে এসে দলের নেতৃত্ব গ্রহণ করলে স্বাধীনতাকামী জাতীয়তাবাদী তরুণ-যুবকরা আধিপত্যবাদ বিরোধী দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলতে পারে। এ কারণে জঙ্গিবাদ, বোমা সন্ত্রাস, দুর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যবহার, শেখ হাসিনা হত্যার অপবাদসহ ভারতের কাছে আন্তর্জাতিক ‘মাফিয়া ডন' মধ্যপ্রাচ্য প্রবাসী দাউদ ইব্রাহীমের সাথে তারেক রহমানের যোগাসাজশ প্রমাণে ভারতীয় থিংকট্যাংক ও মিডিয়া দীর্ঘদিন ধরে প্রোপাগান্ডা চালিয়ে আসছে। কলকাতার ‘আনন্দ বাজার পত্রিকা'সহ বেশ কিছু ভারতীয় মিডিয়া তদানীন্তন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরের সাথে মিলে তারেক রহমানকে দুবাইয়ে দাউদ ইব্রাহীমের সাথে নাশকতা ও অস্ত্র চালানের সাথে সম্পৃক্ত করে নানা কল্পকাহিনী প্রকাশ করে আসছে।
বেগম খালেদা জিয়া ও শহীদ জিয়ার দেশমুখী রাজনীতির পরবর্তী কান্ডারী হিসেবে তারেক রহমানকে ঘিরে দেশব্যাপী যে ব্যাপক উদ্দীপনার সঞ্চার হয়েছে, তাকে কোনভাইে ফলপ্রসূ হতে দিতে চাইছে না প্রতিবেশী দেশটির বিশেষ মহল। ভাস্কর রায় তার নিবন্ধে সরাসরি লিখেছেনঃ ‘‘The Tareque clique was also involved in an attempt to assassinate Sk Hasina.’’-অর্থাৎ তারেক চক্র শেখ হাসিনার হত্যা প্রচেষ্টার সাথে জড়িত ছিল। তারেক রহমান সম্পর্কে- ভাস্কর রায়ের এই উদ্ভট ও বিস্ফোরক মন্তব্য আরও ভয়ংকর। তিনি লিখেছেনঃ "Khaleda Zia's elder son, Tareque Rahman Zia, bussinessman, senior joint central secretary of the BNP, who virtually ran the government from Hawa Bhawan, became an unique "mad" dictator "To him, nothing had any sancity. He and his henchmen...... who acted as Tareque's conduits to these terrorist organisation.
-তারেক রহমান এবং বিএনপির সাবেক মন্ত্রীদের বিরুদ্ধে বিষোদগার করে ভাস্কর রায় তার আসল কথায় এসে লিখেছেন আরও তাৎপর্যপূর্ণ কথা। তিনি লিখেছেনঃ
"The people of Bangladesh and the government must asseses the impact of the BNP-JEI politics on the developement of the country. Any agreement with India Including power purchase. of an energy starved Bangladesh is propagandized by the BNP and JEI as a threat to the country's sovereignty. For these two parties, they would rather go down the hole of under development than have anything to do with India".
সুতরাং জামায়াত-বিএনপির রাজনৈতিক ঐক্য এবং তারেক রহমানের নেতৃত্বে ফিরে আসার ব্যাপারে ভারতের উদ্বেগ কেন ও কোথায়, সেটা ভাস্কর রায় বেশ পরিষ্কার করে দিয়েছেন। ভাস্কর বাবুদের পরামর্শ, ছবক পাবার পর সরকার কেন যুদ্ধাপরাধের বিচার দ্রুততর করা, বিএনপি-জামায়াতের ঐক্য ভাংগা এবং দুদলকেই জঙ্গিবাদের দায়ে অভিযুক্ত করে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে চারদলীয় জোটকে নিষিদ্ধ ও অবাঞ্ছিত করে রাখার সর্বশেষ অস্ত্রে ধার দিতে শুরু করেছে, তা বুঝতে অসুবিধা হবার কথা নয়।
৫টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৩২



জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন

এখানে সেরা ইগো কার?

লিখেছেন শূন্য সারমর্ম, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪






ব্লগারদের মাঝে কাদের ইগো জনিত সমস্যা আছে? ইগোককে আঘাত লাগলে কেউ কেউ আদিম রোমান শিল্ড ব্যবহার করে,নাহয় পুতিনের মত প্রটেকটেড বুলেটপ্রুফ গাড়ি ব্যবহার করে।ইগো আপনাকে কোথায় নিয়ে গিয়েছে, টের পেয়েছেন... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবং আপনারা যারা কবিতা শুনতে জানেন না।

লিখেছেন চারাগাছ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮

‘August is the cruelest month’ বিশ্বখ্যাত কবি টিএস এলিয়টের কালজয়ী কাব্যগ্রন্থ ‘The Westland’-র এ অমোঘ বাণী যে বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে এমন করে এক অনিবার্য নিয়তির মতো সত্য হয়ে উঠবে, তা বাঙালি... ...বাকিটুকু পড়ুন

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

মার্কিন নির্বাচনে এবার থাকছে বাংলা ব্যালট পেপার

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:২৪


আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বাংলার উজ্জ্বল উপস্থিতি। একমাত্র এশীয় ভাষা হিসাবে ব্যালট পেপারে স্থান করে নিল বাংলা।সংবাদ সংস্থা পিটিআই-এর খবর অনুযায়ী, নিউ ইয়র্ক প্রদেশের ব্যালট পেপারে অন্য ভাষার সঙ্গে রয়েছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×