গ্রীন রোডের এদিকটায় এসেছিলাম আজ থেকে পাচ বছর আগে। তখন বাসা থেকে কলেজে আসতাম যেতাম বিআরটিসির দোতলা বাসে করে অথবা মুড়ির টিন বাস গুলোতে। ভাঙ্গাচুরা বাসগুলোতে চড়লেই মনে হতো এই বুঝি সব খসে পড়লো।আজ আবার এতদিন পর সেই একই বাস আমার বাড়ি ফেরার ভরসা। বয়সের ভারে নুয়ে পড়েছে একদিক আর জীর্ন খোলসটাকে যৌবনদানের জন্য সাটানো রয়েছে তারকা জগতের বেশ কিছু নারী মডেলের বিজ্ঞাপন।বাস চলতে শুরু করলে মনে হয় ইঞ্জিনটার প্রাণ আছে, জীবনের উপর বীতশ্রদ্ধ হয়ে সে চিৎকার করছে একটু বিশ্রামের জন্য ঠিক যেন আমার মত।
তবুও এটাই আজ আমার একমাএ ভরসা।বিকেলে সূর্যসেন হলে এসেছিলাম একটা পুরোনো বন্ধুর সাথে দেখা করতে।দেখা শেষে ফিরতি সময় হল ঝামেলা, কেন জানি পকেটের শেষ কয়টা টাকা ফুরতে ইচ্ছা করছে না।মাঝে মাঝে কেন জানি কিছুই করতে ইচ্ছে করে না। ফুলার রোড় দিয়ে হাটতে হাটতে ছয় টাকা দিয়ে ২টা সিগারেট কিনতে দেখি বাদবাকি টাকায় বাস করে বাসায় যাওয়া যাবে।ঘন্টাখানের অপেক্ষার পর যখন দেহটাকে টেনে তুললাম দোতালার শেষ সিটটার জানালার ধারে। জানালা দিয়ে মুখ বের করে নিচে তাকিয়ে এখানে থেকে দুরত্বের হিসেব করছিলাম। ঝাকুনি দিয়ে বাস ছাড়তেই একরাস এলোমেলো বাতাসে স্বংবিত ফিরে পেলাম।
বছর খানেক আগে এমন কোন দিনেই নিজেকে ফিরে পেয়েছিলাম।আজ বাতাস সাক্ষী ছিল আর সেদিন ছিল তার এলোমেলো চুল।ওর নামটাই জিজ্ঞাসা করে হয়নি!কোনদিন হয়ত সুন্দরী কোন রমনী আমার পাশের সিটটাতে বসবে আমি স্বপ্ন দেখতাম।মিষ্টি একটা কন্ঠস্বর আর আলতো ধাক্কায় মেটালিকার মেমরী রিমেইনস থেকে বেরিয়ে এসে চোখ মেলতেই দেখি।একটা মেয়ে, হাসিহাসি মুখে তাকিয়ে আছে।মনে হয় আমার বসার ধরন দেখে হাসছে।বেশ আরামদায়ক ভঙ্গিতে পুরো সিটটা জুরে বসে ছিলাম।হাসলে দু-গালে ভাঁজ পড়ে মেয়েটার।এতে আরও সুন্দর দেখায়। আসলে এ টাইপের মেয়েরা দেখতে খুব সুশ্রী হয়।আমি কি জানালার ধারের সিটটাতে বসতে পারি?আমি সরে গিয়ে সিটটা ছেড়ে দিলাম। দুধসাদা শুভ্র রঙের সালোযার পড়া মেয়েটি পাশে গিয়ে বসল। মেয়েদের গা থেকে একটা গন্ধ পাওয়া যায় আমি সেদিন বুঝেছিলাম।হয়ত এমন কাউকে নি:স্বার্থভাবে ভালবাসা যায়। হঠাত এলোমেলো বাতাসে ওর খোলা চুলগুলো আচরে পড়তে লাগল আমার মুখে। লজ্জিত মুখে ও যখন আমার মুখ থেকে চুলগুলো সরাচ্ছিল।আমি মনেপ্রাণে প্রার্থনা করছি সময়টা থেমে যাক না!আরও কিছুক্ষনের জন্য নিজেকে হারাই।
কিন্তু না, যাব বলে থেমে থাকতে নেই তাই মেয়েটি হঠাত করে উঠে দাঁড়িয়ে আমার দিকে তাকিয়ে চলে গেল। কিছু একটা বলতে গিয়েও আমি বলতে পারিনি সেদিন।মেয়েটি ওর যৌবৈনের কিছুটা সুরভী দিয়ে গিয়েছিল,তার গন্ধ আমি আজও পাই।
আমি আজ অবদি কেন একা।আমি আজও এর কোন উওর খুজে পাইনি তবে কি সব হাল ছেড়ে দেশের বাইরে চলে যাবার প্লানটাই কর্যকর করব।হিসেবে মেলাতে পারিনা।কেন থাকতে ইচ্ছে হবে?কি আছে এইদেশে?প্রতিহিংসার রাজনীতি।যেখানে আমাদের নেতারা দেশের বদলে নিজেদের আখের গোছাতে ব্যাস্ত।যেদেশে টাকার বিনিময়ে ভালবাসা বিক্রি হয়।সততা মানে যেথানে অবক্ষয়।ভালবাসা যেখানে উড়াল পক্ষী।হতাশা আর একাকিত্ব চেপে ধরেছে আমাকে।শুধুই হতাশ স্বপ্ন দেখতে কি আমি দেশে থাকব?আমি জানি কথাগুলো প্রচন্ড রকমের হতাশার।এইসব হতাশার কথা বলা একদম উচিত না।কোন লাভ নেই তবুও আমি চিৎকার করে যাই একাকি আমার বন্ধ রুমে বসে অথবা চিন্তার পাখা বিস্তৃত করি করি কোন জানালা ঘেষে বসে আর বারবার লজ্জিত হতে থাকি এমন একটা লেখা লিখে ফেলার জন্য।
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০১০ ভোর ৪:১৪