আমি হইলাম চশমা স্ববর্ষ মানুষ। চশমা ব্যাতিত সবকিছুই একের অধিক দেখি। হঠাৎ পুরানো কলেজের বন্ধুর ফোন, না করাটা কঠিন কেননা কত বহুবার যে ওরে মিথ্যা আশ্বাস দিছি তার হিসাব নাই। তাই এই ভর দুপুরেও কান্ত দেহটা ছুটাছুটি করল আজিজ সুপার মার্কটের এগলি ওগলি। যদিও শেষটাতে বৃষ্টি ছিল।
আমার কলেজের বন্ধু, নাহিদ চৌধুরী – চৌধুরী বংশের দুইমাএ আদরের ছোট ছেলে। চোখ মেললেই চকচকে ভবিষৎ দেখা যায়, তবুও মানতে নারাজ। সব কিছুই থাকার পরেও কিছু একটা না থাকার বেদনায় আর্তনাদ করে কেবল। পি.এল(পাছায় লাথি নয়) প্রিপারেশন লিভের আগে নিজেকে সুসজ্জিত করতে চৌধুরীর সুদুর টাঙ্গাইল হইতে সোজা শাহবাগ আগমন। সঙ্গে অবশ্য এক ভাগ্নে নিয়ে এসেছিল(নামটা মনে করতে পারছিনা)কিছুদিন পূর্বে তাহার বিবাহ হইয়াছে শুনিয়া নিজের উপর বেশ বিরক্ত হলাম,আর অবশ্যই চৌধুরীর উপরও। যদিও ওর সাথে বের হয়ে আমার বহু আকাঙ্খিত ক্যামেরাটির কমপ্যাক ফ্ল্যাশ কার্ডটা শেষ পর্যন্ত কেনা হল আজ।
আজিজ সুপার মার্কেটের তিনতলার দুই বিডিং এর সংযোগস্থলটা মানে ছোট্ট এক টুকরো সিঁড়িঁ। সব সংযুক্ততাতেই কেন জানি বেশী বাতাস বয়, আমার খুব পছন্দের জায়গা। আজ অবশ্য বাতাস ছিল না, জায়গাটাতেও বসতে পারিনি তবে বিস্বাদ মুখে একটা সিগারেট শেষ করেছি। এতে কোন বাধা ছিলনা। বিগত কিছুদিন রাতদিনে পাল্টাপাল্টির কারনে পেটে তেমন কিছুই পড়েনি। সিগারেটের ধোঁয়ায় বমি বমি আসছিল। তবে বৃষ্টিতে পুরোপুরি গোছলের অল্প একটু আগে ৪১ টাকা(না পানি খাই নাই) খরচ কইরা নীলক্ষেত হইতে একপ্লেট কাউয়া তেহারী খাইছি।
এর মাঝেই মনিরের ফোন – টি.এস.সি তে জরুরি তলব। আমিও চৌধুরীর কাছ হইতে আধঘন্টার সময় নিয়ে গেলাম মনিরের সাথে দেখা করতে ঠিক ঢাকা কলেজের উল্টা পাশে গ্যালাক্সির নিচে। গিয়াই মনে হইল অল্প একটু মদ্য পানে আর কিবা হবে। আজ অনেকদিন হল খাই না। বেশ কয়েক পেগ মদ খেয়ে নিজেকে চাঙ্গা মনে হতেই বেরিয়ে পড়লাম, আর বেরতেই বৃষ্টিরা যেন আকাশ থেকে আমার উপর ঝরে পড়তে শুরু করল। ভিজে যাওয়া বৃষ্টিতে ছুটতে ছুটতে একেবারে গাউছিয়া। রাইত বাজে পৌনে নয়টা, বেশরম ম্যাইয়াগুলার ধাক্কায় আমার মালের নেশা কাটার উপক্রম। একবার ভাবলাম হাত দুটো প্রসারিত করে হাঁটি কিছুক্ষন। সব ছেড়েছুড়ে একলাফে সড়কে নেমে হাঁটতে লাগলাম। কেবল একা বৃষ্টিকে আমার সঙ্গে দিয়ে সবাই চলে গেছে।
ভিজে কাক হয়ে চিটিং সার্ভিসের লাইনে প্রায় চল্লিশটা মিনিট দাঁড়ানোর পর যখন বাস এল। ভদ্রতার খাতিরে হোক আর মালের নেশায় হোক একেওকে সাইড দিতে দিতে নিজেই জানি কখন বাদ পরে গেলাম। আর বাস আসবে না। হন্টনই একমাএ সম্বল আমার। ‘যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে,তবে একলা চলরে’ গুনগুন করতে করতে সামনের দিকে পা বাড়িয়ে চোখ মেলতেই কিসের যেন অভাব বোধ হল। চশমাটা কই? এদিক সেদিক,নর্দমায়,রাস্তায় কোথাও খুঁজে না পেয়ে শেষে অদেখা অন্ধকারের দিকে পা বাড়ালাম। আজ বুঝলাম চশমা ছাড়া আমাকে নিরদ্ধিধায় কানা বলা যায়। বেশ কয়বার হোঁচট খেয়ে আমার শখের চটিটা ফালাফালা। এবার শুরু হল খালি পায়ে অন্ধের মত বৃষ্টিতে হাঁটা।
নগ্ন পায়ে বৃষ্টিরা ধুঁয়ে যেতেই মনে হল – ‘বিধাতাও বুঝি আর সইল না’। কানার কাছ থেকে চশমা কেড়ে নিলেন, চটিখানা ছিঁড়ে গেল, শেষসম্বল ম্যানিব্যাগের ৬৫ টাকা আর খুচরো ২-৩ টা ভাংক্তি পয়সা যা ছিল তাও গেল। অল্প একটু মদই তো খেয়েছিলাম,এই কি আমার অপরাধ! ঈশ্বর আমাতে ক্ষমা দাও।
রবীন্দ্রনাথের কথায় “বিধাতা তোমাদের হাতে ঠকাবার যে-সব উপায় দিয়েছেন তাতে মধু দিয়েছেন ঢেলে”। বিধাতার পুস্তকে যা সকল হতে দুরে থাকার নির্দেশ আছে তার সবগুলোই যেন মিষ্টি মধুর আবরনে ঢাকা। মধু থাকলে তো মৌমাছি সুধা পান করবেই, এতে মৌমাছির কোন দোষ থাকার কথা নয়। তবে কেন এই অজ্ঞাতব্যথা আমার মানবহৃদয়ে।
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে এপ্রিল, ২০১০ রাত ২:৫৬