somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

স্বপ্ন যখন থ্রি-ডি আকারে ধরা দেয়।

২৪ শে মার্চ, ২০১৩ রাত ৯:০৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

১৯৯৭-৯৮ সালের কথা। রংপুর কারমাইকেলে পড়ার সময় শারীরিক ভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ি। আত্মীয় সজন কাছে না থাকায় মেঝ মামার পরামর্শে উন্নত চিকিৎসার জন্য খুলনা চলে আসি। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রান্সফার নেওয়া যে কি কঠিন আমি টের পেয়েছিলাম হাড়ে হাড়ে। অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্য পুরা কাজটা আমি নিজেই করি। একবার বিলএল কলেজ, একবার গাজীপুর আর একবার রংপুর ছুটাছুটি করতে করতে ক্লান্ত হয়ে পড়ি।

দু'বছর উত্তরবঙ্গের সংগে আমার সম্পর্ক আষ্ঠেপৃষ্টে জড়িয়ে যায়। ওখানকার পরিবেশ, খাওয়াদাওয়া, বন্ধুবান্ধব, ভাষা সবই চমৎকার ভাবে মানিয়ে ফেলি খুব অল্প দিনে। সব থেকে ভাল লাগত যখন বন্ধুবান্ধকে সুন্দর বনের গল্প শুনাতাম। ওরা খুব মনযোগ দিয়ে শুনত আর আফসোস করত। নি জকে এতটাই পড়ালেখার মাঝে ডুবিয়ে রাখতাম যে একাউন্টিং এর দিপক স্যার আমাকে "বইয়ের পোকা" বলে ডাকত।

তখন চলে এনালগের যুগ। ডিজিটাল ক্যামেরার পরিবর্তে চলত ইয়াসাকির সেই ফ্লিম ক্যামেরা। মোবাইলের পরিবর্তে ক্রিং ক্রিং টেলিফোন, এক বাগেরহাটে কথা বলতে গেলে চলে যেত খাগড়াছড়ি!! দু'বছর ছিলাম রংপুর, প্রথম একবছর মেস এবং পরবর্তী এক বছর হোস্টেল। এরই মধ্যে তৈরী হয় কিছু বন্ধু বান্ধব যাদেরকে বলা যায় যিকরী দোস্ত। সময় পেলে আড্ডা মারা, মর্ডানের মোড়ে চা খাওয়া। কলেজ গেটে ফাষ্ট ফুড খাওয়া। ক্যাম্পাসের কাঁঠাল গাছ থেকে কাঁঠাল চুরি করে খাওয়া, দল বেধে প্রাইভেট পড়া ইত্যাদি যেন আমার স্বভাবের সাথে মিশে গিয়েছিল নিবিড় ভাবে।

মেসের লাইফে আমার রুমমেট ছিল লালমনির হাটের সাবেদআলী। ওর বুকের খাঁচায় একটা গর্তের মতো দেখা যেত। আমি মজা করে বলতাম "নাগাসাকির বোমায় গর্ত হয়ে গেছ না-কিরে" ও ১৬ পাটি দাঁত বের করে হাসত। উত্তর বঙ্গের সরল সোজা ছেলেদের তালিকায় সাবেদআলী ছিল নাম্বার ওয়ান। সবথেকে কাছের বান্ধবী ছিল "মুক্তা" অংকে একটু দুর্বল তাই মাঝে মাঝে আমার কাছে হেল্প নিতে আসত। এছাড়া আমার যিকরী দোস্তদের মধ্যে রাখু, মুজিবর, জাহিদ, ঋতু, নাসির, মুকুল, রাসেল, তরিকুল সোমা, রুহিন, রুমা ছিল অন্যতম।

যাইহোক হঠাৎ করে চলে আসতে হয় খুলনায়। কপাল এমনই খারাপ চলে আসার আগে কোথাও কাউকে খুঁজে পাইনা যে বলে আসব। আর এই না বলে চলে আসাটাই আমার জীবনে কাল হয়েছে। সর্বদা এক অপরাধবোধ কুড়ে কুড়ে খেয়ে চলেছে দিন রাত। আমি জানতাম না ওদের সাথে আর কোনদিন দেখা হবে না, অথবা হলেও ১০-১৫ বছর পর একবার!! হয়তো তা-ও না। বন্ধুত্বের সেই টান আমাকে চুম্বকের মতো টেনে চলেছে প্রতিদিন প্রতিরাত।

মনের সেই তীব্র ফেলে আসা বাসনা আজ আমাকে স্বপ্নের মাধ্যে নিয়ে যায় রংপুর কারমাইকেল কলেজের ক্যাম্পসে। স্বপ্ন দেখি "অনেকদিন পরে রংপুর গেছি, হোস্টেলে সবাইকে খুঁজছি। দু'একজনকে পেলেও বাকিরা কোথায় কেউ জানে না। বিল্ডিংগুলে কেমন এবড় থেবড় হয়ে গেছে। ক্যাম্পসে বসে বসে পিছনে স্মৃতি চরণ করে চলেছি" আমার ঘুম ভেঙ্গে যায়। শরীরটা বিছানায় থাকে ঠিকই মনটা চলে যায় রংপুর। বন্ধুদের ফোন দিয়ে চেষ্টাকরি সর্বদা যোগাযোগ রাখার। হয়তো কেউ আমার মতো করে ভাবে না তাই নিজ ইচ্ছায় ফোন দেয় না। এভাবে পার হয় আমার সময় আমার রাতের বেলায় দেখা অবাস্তব স্বপ্ন। এভাবে স্বপ্ন দেখতে দেখতে এমনই হাল আমার যে, এখনও স্বপ্নের মাঝে দেখি আমি কারমাইকেলের ক্যাম্পাসে ছবি তুলছি আর ভাবছি "তোমারে কত স্বপ্নে দেখি! আজ সত্যই চলে এলাম তোমার কাছে। সেদিন আমার ক্যামেরা ছিল না তাই বেশী ছবি তুলতে পারি নাই, আজ কাইজেলিয়া গাছের ছবি তুলতে আমায় ঠেকায় কে?" আমার ঘুম ভেঙে যায় দেখি এটাও স্বপ্ন !! তার মানে স্বপ্নের মাঝেও স্বপ্ন, এক কথায় "টু-ডি" স্বপ্ন !! গতরাতে বন্ধু রাখুকে ফোন দিয়ে বললাম দোস্ত এই ঘটনা। ও শুনে হেসেছিল কিন্তু ওকে বলা হয়নি আজ সেই স্বপ্ন "থ্রি-ডি" তে টার্ন নিয়েছে !! অর্থাৎ স্বপ্নের মাঝে বন্ধুদের আমি "টু-ডি" স্বপ্নের কথা বলছি আর হাসছি, ওরাও অনেক মজা করছে আমার সাথে। ঘুম ভেঙে দেখি এটাও ছিল আমার স্পপ্ন !! প্রথমে ওয়ান-ডি, পরে টু-ডি এবং এখন চলছে থ্রি-ডি !!

মানুষের জীবনে বাস্তবতা এতই বেশী যে, ইচ্ছা থাকলেও কখনো বাস্তবতাকে অস্বীকার করা যায় না। আমার বাস্তবতা আমাকে কুড়ে খাচ্ছে প্রতিনিয়ত। হারিয়ে ফেলেছি কাজের প্রতি উৎসাহ উদ্দীপনা। ভাবছি নতুন করে আবার শুরু করতে হবে। সময়ের প্রয়োজনেই হয়তো একদিন ঠিকই পুরানো বন্ধু বান্ধবের সাথে দেখা হয়ে যাবে। অপেক্ষায় আছি সেই দিনের................আমি ফোর-ডি স্বপ্ন দেখতে চাই না। চাই বাস্তবে ঘুরে আসতে আমার সেই প্রিয় জায়গায়।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জাতির জনক কে? একক পরিচয় বনাম বহুত্বের বাস্তবতা

লিখেছেন মুনতাসির, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৮:২৪

বাঙালি জাতির জনক কে, এই প্রশ্নটি শুনতে সোজা হলেও এর উত্তর ভীষণ জটিল। বাংলাদেশে জাতির জনক ধারণাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে একজন ব্যক্তিত্বকে জাতির প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হয়। তবে পশ্চিমবঙ্গের... ...বাকিটুকু পড়ুন

আত্মপোলব্ধি......

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১০:৫১

আত্মপোলব্ধি......

একটা বয়স পর্যন্ত অনিশ্চয়তার পর মানুষ তার জীবন সম্পর্কে মোটামুটি নিশ্চিত হয়ে যায়। এই বয়সটা হল পঁয়ত্রিশ এর আশেপাশে। মানব জন্মের সবকিছু যে অর্থহীন এবং সস্তা সেটা বোঝার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবন থেকে নেয়া ইলিশ মাছের কিছু স্মৃতি !

লিখেছেন হাসানুর, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:৩২



হঠাৎ ইলিশ মাছ খেতে ইচ্ছে হল । সাথে সাথে জিভে ..জল... চলে এল । তার জন্য একটু সময়ের প্রয়োজন, এই ফাঁকে আমার জীবন থেকে নেয়া ইলিশ মাছের কিছু স্মৃতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্প ক্ষমতায় আসছে এটা ১০০% নিশ্চিত। আমেরিকায় ইতিহাসে মহিলা প্রেসিডেন্ট হয়নি আর হবেও না।

লিখেছেন তানভির জুমার, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৩৩

আর এস এস সহ উগ্র হিন্দুদের লিখে দেওয়া কথা টুইট করেছে ট্রাম্প। হিন্দুদের ভোট-আর ইন্ডিয়ান লবিংএর জন্য ট্রাম্পের এই টুইট। যার সাথে সত্যতার কোন মিল নেই। ট্রাম্প আগেরবার ক্ষমতায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্প জিতলে কঠোর মূল্য দিতে হবে ইউসুফ সরকারকে?

লিখেছেন রাজীব, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:৪২

ডোনাল্ড ট্রাম্পের এক মন্তব্যে বাংলাদেশের মিডিয়ায় ঝড় উঠেছে। ৫ তারিখের নির্বাচনে ট্রাম্প জিতলে আরেকবার বাংলাদেশের মিষ্টির দোকান খালি হবে।

আমি এর পক্ষে বিপক্ষে কিছু না বললেও ডায়বেটিসের রুগী হিসেবে আমি সবসময়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×