সেদিন রাত্রিবেলায় বাসায় ফিরিতে একটু না, বরং অনেক খানিই লেইট হইয়াছিলো। মাইর খাওয়ার ভয়ে মাকে ডাকিবার সাহস হইলোনা। বদ মেজাজী ভাইয়া ঘুমাইয়া পরিয়াছে কিনা নিশ্চিত না হইলেও মেরী পেয়ারকী ভাবি জাগিয়া আছে তা নিশ্চিত জানি। কারন ভাবি কখনোই রাত্রিবেলায় আমাকে না খাওয়াইয়া ঘুমায়ইনা। মুর্খরা উল্টা বুঝিলে আমি দায়ী থাকিবনা। আমি ভাতের কথাই কহিলাম।
অতি সাবধানে দরজায় কান লাগাইয়া ভাবিজানকে ছোট্ট করিয়া একটা মিসকল মারিলাম। মিসকল ছোট্ট করিয়া মারিলেও সেটা উনার ঢিঙাচিকা ঢিঙাচিকা রিঙটোনের কারনে রাতের নিস্তব্ধতা ভেদ করিয়া বিকটাকার ধারন করিয়া সারা ঘরময় একটা হুলুস্থুল ঘটাইয়া তাহা আমার হৃদপিন্ডে ডাইরেক্ট আঘাত হানিল। সবাই জানে এই টোন ভাবি কেবলমাত্র আমার জন্যই রাখিয়াছে। আজ কি তাহলে কোতল হইয়া যাইবো?
মৃদু শব্ধে দরজা খুলিয়া গেলে দুটো রক্তজবা লাল চোখ আমার সম্মুখে উদয় হইয়া এবার কলিজায় তীর মারিল। মুখটাতে অনেক কষ্টেও হাসি হাসি ভাব আনিতে পারিলামনা, অতি যতেœ পাশ কাটিয়া আমার রুমে প্রবেশ করিলাম মাত্র, ভাবি কুকিল কন্ঠে রোমান্টিক ভাবে ডাক পারিল। ফ্রেশ হইয়া খাইতে আসো।
ভয়ে ভয়ে জবাব দিলাম খাইয়া আসিয়াছি, আজ আর খাইবার ইরাদা নাই।
তোমার ফালতু বন্ধুগুলোর সহিত কোথায় কি খাইয়া আসিয়াছো বলোতো শুনি?
এবার আরো ভয়ে ভয়ে কহিলাম ”ম্যাগি”
”তোমার এত অধপতন??” বলিয়াই ভাবি সেই রোমান্টিকতা ছাড়িয়া রোদ্রমুর্তি ধারন করিয়া হুঙ্কার করিয়া পুরো ঘরময় একটা হালকা পাতলা ভুমিকম্পের সৃষ্টি করিলো।
আমি হাজার ভাবিয়াও উনার অগ্নিমুর্তির হেতু খুঁজিয়া পাইলামনা। তড়িৎ মেমোরীতে রিপরেশ মারিলাম। যেখানে আমি মনে মনে জিএফকে নিয়ে জপ করিলেও ভাবি সাহেবান উনার পাওয়ারফুল এন্টেনায় তাহা ক্যাচ করিয়া ফেলিতেন সেখানে আজ কিভাবে ”্য” (যফলাটা) উনার এন্টেনার উপর দিয়া চলিয়া গেল বুঝিতে পারিলামনা। তাহার এন্টেনা আবার না হ্যাঙ হইয়া যায় তড়িৎ কহিলাম আমরা সবাই মিলিয়া ম্যাগি লুডল্স খাইয়াছি। বত্রিশ দাঁত বাহির করিয়া কহিলাম ”অনেক টেষ্ট”
ভাবি ফুশ ফুশ করিতে করিতে কহিল, এবার অন্তুত দুধটাতো খাইয়া যাও।
এবার আমি আর টু শব্দও কিরলামনা। বাধ্য ছেলের মতো সোজা ভাবির কাছে যাইয়া একচুমুকেই সব দুধ পান করিয়া গ্লাস খানি টেবিলে রাখিয়া কোনরকমে জান বাঁচাইয়া রুমে আসিয়া বিছনায় শুইয়া পড়িলাম। আর একটা সুন্দর হিট গল্পের কথা ভাবিতে লাগিলাম। বন্ধুরা কহিয়াছে, সামুতে হিট খাইতে হইলে ১৮+ ছাড়া নাকি কোন উপায় নাই। তাই আমি ১৮+ ভাবিতে লাগিলাম। মুর্খরা অন্য কিছু ভাবিলে আমার কি দোষ?
১৮+ ভাবিতে ভাবিতে কখনযে ঘুমাইয়া পরিয়াছিলাম খেয়ালই করিতে পারিলামনা। মায়ের ঝাড়–র বারিতেই বুঝিলাম ভোর হইয়াছে। ১২টা বাজে, এখনো ঘুমাস?? ধরপর করিয়া উঠিয়া বাথরুমে দৌড় লাগাইলাম। লুঙ্গিটা বিছনাতেই পরিয়া রহিল। মা নিত্যকার মতোই চিৎকার করিয়া বলিয়া উঠিলেন ”বড় হইছস এখনো হুশ জ্ঞান হইলোনা, বিয়ের বয়স হইছে, কবে তোর লজ্জাসরম আইবো???”
মনে মনে কহিলাম, সারাক্ষন বিয়ার বয়স হইছে, বিয়ার বয়স হইছে বলিয়া চিৎকার করিতে পারো, বিয়াটা করাইতে পারোনা?? উপযুক্ত পোলা বাহিরে ঘুরিয়া ফিরিয়া বেড়ায়,যামানা খারাপ, কখন কি ঘঠিয়া না যায়। যখন ইজ্জত যাইবো তখন বুঝিতে পারিবা। (মুখ ফুটিয়া যদি এই কথাটি মাকে কহিতে পারিতাম)
বাথরুমেযে এত শান্তি তা কি আর বলিতাম। চোখ বন্ধ করিয়া ত্যাগিয়া এত শান্তি মনে হয় আর কোথাও নাই। শান্তির মাঝেই ১৮+ ভাবিতে লাগিলাম। আরে মুর্খরা সামুর গল্পের কথাই কহিয়াছি। গল্পটা বেশি দুর আগাইতে পারিলনা, হঠাৎ দরজায় বিকট শব্ধে আমার শান্তি উড়িয়া গেল। ভাবি হুঙ্কার ছাড়িল, ওইখানে বসে বসে কি আকাম করো?? এতক্ষন লাগে কেন ওই খানে??
ও মোর জালা, একটু শান্তিতে ত্যাগিতেও পারিবনা? ত্যাগিবার সময় নাকি কথা বলিতে নাই, কিন্তু কথা না বলিলেযে ভাবির আশঙ্খাই সঠিক বলিয়া গৃহীত হইবে ভাবিয়া তড়িৎ জবাব দিলাম, আরে কৃত্রিম কিছুইতো করিনা, প্রাকৃতিক কর্ম স্বাধন করি। বাহির হইতে কুকিলা কুকিল কন্ঠে কহিল, তাড়াতাড়ি বাহির হও, আমার শ্যাম্পু লাগিবে। কি আর করা, তড়িত হাত চালাইলাম। মুর্খরা এখানেও উল্টা ভাবিলে আমার কোন দোষ নাই।
নাস্তা খাইয়া ভাবিলাম এবার জুইত করিয়া ল্যাপ্পিতে বসিয়া একটা ১৮+ লিখিয়া ফেলিতেই হইবে। ল্যাপ্পি খুলিয়া মাত্র ক্লিক করিয়াছি, মা আসিয়া কহিল, যা রেডি হইয়া নে। তোর ভাবির সহিত মার্কেটে যাইতে হইবে। ভাবির সহিত বাহির হইলে আবার সাহেব বাবু সাজিয়া যাইতে হয়। বিরক্তকর লাগে এসবে আমার। তাই পাঞ্জাবীর সাথে সেন্ডেল পরিয়া রেডি হইয়া বসিয়া আছি। মহারানীর ঘন্টাদুয়েকতো লাগিবেই নিজেকে তৈরী করিতে। এই ফাকে গল্পটা কিছুটা লিখিয়া ফেলিলেই উত্তম হইবে ভাবিয়া ল্যাপ্পিতে বসিলাম।
ভাবি হাক মারিল। কি পরো??
ভাবিলাম শ্যু না সেন্ডেল তা জানিতে চাহিলো মনে হয়। তাই কহিলাম ”চটি” পরিতেছি।
ভাবি দৌড়াইয়া আসিয়া হুঙ্কার ছাড়িয়া কহিল, বের কর চটি, এই সাজ সকালে তুই চটি পড়িস?? কত্তোবড় সাহস, এত্ত অধঃপতন তোর?? কই বের কর হতচ্ছড়া। আজ তোকে সুদ্ধ তোর চটি জ্বালাবো।
টেবিলের নীচে পা হইতে চটিজোড়া খুলিয়া লইয়া ভাবির হাতে তুলিয়া দিলাম।
আমার আর ১৮+ লিখাও হইলোনা, সামুতে হিট হওয়াও হইলোনা। আফসুস
(রম্য লেখা এত সহজ নয়, যেটা আমি চাইলেও পারিনা। কিন্তু সামুতে দেখা সকল রম্যকারদের মধ্য আমার দেখা সেরা এবং প্রিয় রম্যকার দূর্যোধন , উনাকে দেখেই কিছু রম্য লিখার অপপ্রয়াস মাত্র। তাই উনাকেই আমার প্রথম রম্য উৎসর্গ করলাম।)