অনেক সময় আমরা চারপাশ দ্বারা প্রভাবিত হই। আমার মনে আছে, ছোটবেলায় আমি গবর্নমেন্ট ল্যাবরেটরি স্কুলে পড়ার সময় দেখতাম, অনেকে তাদের স্কুল থেকে দেয়া টিফিন ফেলে দিত। তারা হয়ত বাসা থেকে ভাল টিফিন আনতো, বা স্কুলের সেই টিফিন পছন্দ করেনি, বা হয়ত কেউ কেউ ঢং করে এটা-ওটা খায়না, ইত্যাদি। আমিও একদিন কি মনে মনে আমাকে দেয়া লুচি বা পরোটায় মোড়া বুন্দিয়া টেবিলের উপর ফেলে দিয়ে আসলাম। বাসায় আসার পর আম্মাকে বললাম। ক্লাস ওয়ানে পড়িতো, আম্মার সাথে শেয়ার করি অনেক কিছুই। আম্মা শুনে বললেন, কাউকে দান করে দিলেই হত, অনেকেতো খেতে পায়না। উনি রাগ না করলেও আমার মাঝে চিন্তার খোরাক দিলেন। আমি এটা নিয়ে অনেক চিন্তা করলাম। ছোট হলেও আমার চিন্তা করা বা ঝিমানো বা দিবা-স্বপ্ন দেবার মত সময়-সুযোগের অভাব ছিলনা। (সম্ভবত এই কারণেই সে সময় থেকে নিজেকে দার্শনিক দাবী করতাম ) যাইহোক, এরপর আর কখনো খাবার ফেলে দিয়ে আসিনি। এমনকি, খাবার নষ্ট পর্যন্ত কখনো করার চেষ্টা করিনি (নিতান্ত বাধ্য না হলে)। এমনকি বাসার কোন কোন খাবার বিশেষ সুস্বাদু না হলেও চুপ করে পুরোটা খেতাম। এমনকি আম্মা কিছুদিন যাবত বাসার নিমগাছ থেকে নিমপাতা ছিড়ে সেটা দিয়ে শাকভাজি করছেন খুবই উপকারী বলে। সেটাও খেয়ে যাচ্ছি (এই পর্যন্ত ২ দিন খেয়েছি)।
অবশ্য, যত যাই হোক, স্কুলে কখনো রুটি আর আলু ভাজি টিফিন নেবার সাহস করিনি। এই এতদিন পরে এসে অফিসে আজকাল রুটি-আলু ভাজি টিফিন নেই দুপুরের খাবারের জন্য। বয়স বাড়তেছে। সারাদিন ল্যাপটপ নিয়ে বসে কাজ করা পড়ে, তাই ভুড়িও বাড়তেছে। এখন রুটি-আলু ভাজি আমার জন্য উপযুক্ত খাদ্য হয়ে দাড়িয়েছে। অফিসের ভারতীয় সহকর্মী একজন ভেজেটারিয়ানের সাথে বসে বসে খাই। সে আবার নিজ হাতে বানানো লাল আটার রুটি নিয়ে আসে, সবজি দিয়ে খায়। এখন ভাবি, ছোট ছিলাম বলেই হয়ত তখন সেই সমাজকে উপেক্ষা করতে পারিনি। স্রোতের বিপরীতে গিয়ে অন্য ছেলেদের আনা নুডুলস, স্যান্ডউইচ, বার্গারের সাথে বসে রুটি-আলু ভাজি খেতে পারিনি। ভাবছি, এখনো কি আমি স্রোতের বিপরীতে গিয়ে হলেও সঠিক কাজটা করার ক্ষমতা রাখি? সবসময় তিতা সত্যটা বলার ক্ষমতা রাখি?