ইংরেজী নাম দিয়েছি বাংগালিকে বোঝানোর জন্য যে এটা ভারিক্কি একটা ব্যাপার। কিন্তু, ভারিক্কি জিনিষকে ভারী মনে করে বসে থাকলে হ্যান্ডেল করা কঠিন ছাড়া সহজ হবে না। তাই, একটু হালকা করে নেয়াটাই বুদ্ধিমানের কাজ হবে। আর, এই ব্যাপারে ডেল কার্নেগি টাইপের বই প্রথমেই লেখার বদলে আপাতত ছোট ছোট পোস্ট দিব।
মানুষের কত রকম প্রবলেম, বা সমস্যা। এখন এই সমস্যার সমাধান করতে চাইলে, এর সমাধান খুঁজে বের করতে হবে। আপনার যদি সমাধান করার ইচ্ছা থাকে, আপনাকে এর গিঁট ঠান্ডা মাথায় বসে বসে খুলতে হবে। গিঁট খুলছে না বলে পাগলের মত টানাটানি করলে গিঁট এমন অবস্থায় যাবে, সেখান থেকে আর ছোটানো সম্ভব হবে না।
সমস্যা সমাধানের প্রথম ধাপ হচ্ছে, সমস্যাটা চিহ্নিত করা। আপনাকে জানতে হবে সমস্যাটা কি। আর, কয়েকটা সমস্যাকে একসাথে করে গিঁট দেবার বদলে আপনাকে আলাদা আলাদা সমস্যাগুলোকে আলাদা আলাদা করে নিতে হবে। একটু উদাহরণ দিলে এগুলো পরিস্কার হবে।
আপাতত সাহিত্য থেকে উদাহরণ নিয়ে শুরু করছি। বহুব্রীহি নাটকে ২টা কিউট বাচ্চাসহ দাড়িওলা এক ভদ্রলোক ছিলেন, চরিত্রটার নাম ভুলে গেছি। উনারো আমার মত একটা গুণ ছিল। সেটা হচ্ছে, সমস্যার সমাধান দিতে পারার ক্ষমতা (আলহামদুলিল্লাহ)। পৃথিবীতে বহু সমস্যা। সব সমস্যার সমাধান কেউ যদি করতে পারেন, তিনি হচ্ছেন এক আল্লাহ। আমি বা আমরা মানুষ। আমরা শুধু কিছু কিছু সমস্যার সমাধান বের করার চেষ্টা করতে পারি। বহুব্রীহির উনি একটা অফিস দিয়েছিলেন, পরামর্শ কেন্দ্র টাইপের। উনার পসার ভাল ছিল না। নাটকে উনার কাছে ১ জন আসলো। তার সমস্যা হচ্ছে, তার আয় দিয়ে সংসার চলে না। তার ছোট সংসার, কিন্তু, তবু তার সংসার চলে না। নাটকে কি সমাধান দেয়া হয়েছিল, তা বলার আগে, আসুন দেখি, কিভাবে এটাকে বিশ্লেষণ করতে হবে।
প্রথমে আমাদের চিহ্নিত করতে হবে, সমস্যাটা কি? এখানে সমস্যাটা হচ্ছে, অর্থনৈতিক সমস্যা। মানে, আয়-ব্যয়ের সমস্যা। সংসার চলে না মানে, আয়ের থেকে ব্যয় বেশি।
সমস্যা চিহ্নিত করার পর সমাধানের জন্য দ্বিতীয় ধাপ হচ্ছে, মূল সমস্যাটাকে দূর করা। এই অর্থনৈতিক সমস্যায় আমরা দেখতে পাচ্ছি, আয়ের থেকে ব্যয় বেশি। এটা দূর করবেন কিভাবে? সহজ সমাধান, হয় আয় বৃদ্ধি করেন, নয়তো ব্যয় হ্রাস করেন। এখন কিভাবে আয় বৃদ্ধি করবেন, বা কিভাবে ব্যয় হ্রাস করবেন, সেগুলো ভিন্ন সমস্যা। মূল সমস্যা নয়।
এখন, আমরা এখানে বসেছি, সমস্যা সমাধানের জন্য। কিন্তু, আপনি এসেছেন, কথার মারপ্যাঁচে আমাকে ছোট করে মজা নিতে। সেক্ষেত্রে আমি হয়ত আপনাকে ভীষণ ভাবে অপমান করে ফেলব, আপনাকে ছোট করে ফেলব সবার সামনে। আপনাকে এটা মাথায় রাখতে হবে, আপনি যদি কাউকে সবার সামনে ছোট করতে চান, সেও হয়ত আপনাকে সবার সামনে ছোট করতে চাইতে পারে। তাই, আসুন, সদিচ্ছা নিয়ে সমস্যা সমাধানের পথ বের করি।
আয় কিভাবে বৃদ্ধি করবেন বলার থেকে ব্যয় কিভাবে হ্রাস করবেন, সেটা বলাটা সহজ হওয়া উচিত। প্রবাদে আছে, Cut your coat according to your cloth. আপনার যতটুকু কাপড় আছে, সেই আনুযায়ী আপনি জামার জন্য কাপড় কাটুন। আপনার ব্যয় হ্রাসের জন্য প্রথমেই দেখেন, আপনার ব্যয় এর খাতগুলোর মাঝে সবচেয়ে বড় খাত কোনগুলো। সেগুলোর কোনটা আপনাকে কমিয়ে ফেলতে হবে। আপনি ঠিক করুন, কোনটা আপনার জন্য বিলাসিতা হচ্ছে, কোনটা আপনার সাধ্যের বাইরে। আপনি ভাবতে পারেন, না এটা আপনার লাগবেই। কিন্তু, আপনার টাকা না থাকলে আপনি এটার জন্য মূল্যপরিশোধ করবেন কিভাবে? এখানে আরো একটা সমসায় এসে হাজির হচ্ছে, কোন খাতগুলো বাদ দেয়া যাবে, বা কোন খাতগুলোকে কাটছাট করা যাবে।
খরচের মধ্যে খাবার খরচ অবশ্যম্ভাবী। আপনাকে খেতে হবেই। এটা ছাড়া মানুষ বাঁচতে পারে না। মানুষের প্রয়োজনগুলোর মাঝে অবশ্যম্ভাবী যেগুলো, সেগুলো হচ্ছে খাদ্য-বস্ত্র-বাসস্থান। এখন, খরচ কমাতে হলে দেখতে হবে, আপনি কোথায় খরচ করছেন? আপনার সাধ্য অনুযায়ী খরচ করছেন, নাকি সাধ্যের অতিরিক্ত খরচ করার মত বিলাসিতা করছেন? আপনার যদি প্রতি বেলা ফাইভ স্টার হোটেলে খাবার সাধ্য থাকে, আপনি সেটাই খাবেন। আপনার যদি প্রতি বেলায় চিকেন ফ্রাইড রাইস খাবার সাধ্য থাকে, আপনি সেটাই খাবেন। আপনার যদি দিনে এক বেলা মাছ-মাংস খাবার সাধ্য থাকে, আপনি সেটাই খাবেন।
এইরকম ভাবে, আপনার যদি ব্র্যান্ডের দামী পোষাক পরিধানের সাধ্য থাকে, আপনি সেটা পরবেন। আপনার যদি সাধারণ পোষাকের সাধ্য থাকে, আপনি সেটাই পরবেন। আপনার যদি সপ্তাহের ৭ দিন ৭ টা জামা পরার সাধ্য থাকে, ৭টা জামা পরবেন। আপনার যদি সারা সপ্তাহ ১টা বা ২টা জামা পরার সাধ্য থাকে, আপনি তাই পরবেন। আপনার যদি বছরে শুধু ২ ঈদে নতুন জামা কেনার সাধ্য থাকে, আপনি তাই করবেন।
একই ভাবে আপনার যদি বিশাল বাড়িতে থাকার সাধ্য থাকে, আপনি তাই থাকবেন। একটা মাঝারি সাইজের ফ্ল্যাটে থাকতে পারলে তাতেই থাকবেন। না পারলে সাবলেট দিয়ে এক রুমে থাকবেন। আসল কথা, আপনার সাধ্য অনুযায়ী থাকতে হবে।
এভাবেই অর্থনৈতিক সমস্যা দূর করার জন্য ব্যয় কমানোর চেষ্টা করতে হবে। আর, সাধ্যের অতিরিক্ত খরচ করে কিছু করতে চাইলে সেটা আর অর্থনৈতিক সমস্যা থাকে না। সেটা সাইকোলজিক্যাল বা অন্য কোন সমস্যা হিসেবে বিবেচিত হবে। মূলত, অর্থনৈতিক সমস্যা সমাধান তুলনামূলকভাবে সহজ।
এখন আসি, আয় বৃদ্ধির কথায়। আপনার সংসার চলছেনা। ব্যয় কমানোর সাথে সাথে আয় বাড়ানোর চেষ্টা করতে হবে। এখন, আপনার সংসারে উপার্জনকারী কয়জন? আপনি আর আপনার স্ত্রী দুজনেই কি উপার্জন করেন? যদি, কোন একজন উপার্জন না করে থাকেন, তিনি উপার্জনের জন্য চাকরী বা ব্যবসার চেষ্টা করে দেখতে পারেন। আপনার সন্তানেরা যদি একটু বড় হয়, তারা আপনাকে সাহায্য করার চেষ্টা করতে পারে। সন্তানেরা স্কুলের উপরের ক্লাসের ভাল ছাত্র হলে ছোট ক্লাসের ছাত্র একজনকে পড়িয়ে উপার্জন করে নিজের খরচ চালানোর চেষ্টা করতে পারে। আপনাকেও হয়ত সময়ে সময়ে সাহায্য করতে পারে। আপনি শুনে অবাক হবেন, পশ্চিমারা তাদের সন্তানদের ১৮ বছর বয়স হলে বাসা থেকে প্রায় বের করে দেয়। যাও বাবা, এখন নিজেরা উপার্জন করে থাকো, খাও, বা গার্লফ্রেন্ড বয়ফ্রেন্ড নিয়ে যাই কর, নিজের উপার্জন দিয়ে কর। এটা আপনার কাছে একটু কঠিন বলে মনে হলেও তাদের সেন্সে ঠিকই আছে। ১৮ বছর বয়স হয়ে গেলে ছেলে-মেয়েরা বাপ-মার কথা শুনতে চায় না। হয়ত দেখা যায়, নিজের পছন্দ মত প্রেম বা বিয়ে করে। এত সেয়ানা পোলাপান নিজের কামাই দিয়ে এসব করলেই কি ভাল নয়? আবার উল্টোটাও দেখা যায়। বাগানের ঘাস কাটার জন্য কিশোর ছেলেকে বাবা হয়ত মজুরী দিয়ে থাকে। এতে আসলে সন্তানের একটা শিক্ষা লাভ হয়, যেটা জীবনে চলতে খুব প্রয়োজনীয়। শিক্ষাটা কি, সেটা আপনারাই চিন্তা করে বের করেন। আমি আরেকদিন আরেক লেখায় সেটা বিস্তারিত আলোচনা করব, ইনশাআল্লাহ।
মূলকথা হচ্ছে, সংসার একটা কালেক্টিভ ব্যাপার। এখানে একা আপনাকে সবকিছু করার চেষ্টা করার মত কোন ব্যাপার হয়নি। সংসারের সকল মেম্বার তাদের সাধ্য অনুযায়ী সংসারের জন্য চেষ্টা করতে হবে। এই শিক্ষাটা যখন মানুষের মাঝে আসে, তখন সে এই ব্যাপারটা সমাজ-রাষ্ট্র-জাতি পর্যায়ে প্রয়োগের চেষ্টা করে। সেটা বাড়তি পাওনা। কিন্তু, আপনার আয় বৃদ্ধির সাথে সাথে আপনার সংসারের আয়-বৃদ্ধির জন্য সংসারের সকলের সাধ্যমত চেষ্টা বাড়ানো উচিত। এখন, আপনার স্ত্রী বা সন্তানেরা আয় করার পরেও যদি আপনাকে সাহায্য না করে, বা আপনার স্বামী-সন্তানেরা আয় না করতে চান, তবে সেটা আর অর্থনৈতিক সমস্যা নয়। আর, আমিতো আগেই বলেছি, অর্থনৈতিক সমস্যার সমাধান তুলনামূলকভাবে সহজ।
আজকে এই পর্যন্ত। ভাল থাকবেন সবাই। নিজেদের সমস্যায় ভেঙে না পড়ে সমাধানের চেষ্টা করবেন।
মূল লেখার ফেসবুক লিংক
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই মে, ২০১৪ বিকাল ৩:৪০