somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

কালা পাহাড় ২০০০
আমি স্বপ্ন দেখি এক যুবকের, যে নরকের কীটদের বিশাল বাহিনীর সামনে যুদ্ধের ময়দানে হাজির হবে। যুদ্ধে জিতে বিজয়ী হবার জন্য নয়, শুধু ন্যায়ের পক্ষে দাড়াবার জন্যেই যুদ্ধে যাবে সেই যুবক। মহাভারতের সেই চরিত্র "সংশপ্তক" এর মত, যে পরাজয় নিশ্চিত জেনেও যুদ্ধের ময়দানে হা

মোদির ২ কোটি অবৈধ বাংলাদেশি বিতারণের লাভ, কৌশল ও প্রভাব

২৯ শে এপ্রিল, ২০১৪ বিকাল ৫:১৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মোদি সাহেব অনেক কথাই বলছেন। ভারতে এখন নির্বাচনের সময়, অনেক কথাই বলতে হবে। তবে, এর মাঝে আমাদের নিয়েও অনেক কথা হচ্ছে। আমাদের মানে বাংলাদেশ নিয়ে কথা বোঝাচ্ছি। যেমন, উনি বলেছেন, ভারতে ২ কোটি অবৈধ বাংলাদেশি আছে, যাদেরকে তিনি ক্ষমতায় এসে বাংলাদেশে ফেরত পাঠাবেন। এইসব কথা হেসে উড়িয়ে দেবার আর সুযোগ নেই। সম্ভবত উনি নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে ক্ষমতায় আসবেন। উনি ক্ষমতায় না গেলেও প্রধান বিরোধীদল হিসেবে বেশ প্রভাবশালী অবস্থায় থাকবেন। এখন ভারত নিজেকে দেখছে ভবিষ্যত সুপার পাওয়ার হিসেবে। যুদ্ধ করার ইতিহাস ভারতের কম নয়। সেখানে বাংলাদেশের উপর এই রকম দুই কোটি শরণার্থী চাপিয়ে দেয়া কোন অসম্ভব কিছু না।
এই ঘটনাকে একটু বিশ্লেষণ করার জন্য আমাদের একে কয়েকটি অধ্যায়ে ভাগ করে নেয়া উচিত। আসুন, অধ্যায় গুলো ক্রমানুসারে দেখি।

মোদির লাভঃ
এইবারের নির্বাচনে মোদির বিজয়ের কথা হচ্ছে প্রধানত যে কারণে, তা হচ্ছে, কংগ্রেসের দারিদ্র দূরীকরণে ব্যর্থতা। মোদি এসেও যে রাতারাতি তার উন্নতি করতে পারবেন, তা নয়। তাহলে কি উপায়? এসব ক্ষেত্রে রাজনীতিবিদরা যে কৌশল অবলম্বন করেন, তার প্রথমটি হচ্ছে, পূর্ববর্তীজনের উপর সব দোষ চাপানো। এতে কয়েকবছর কাটলে ২য় কৌশলের দ্বারা জনগণের নজর সরাতে হয়। এটা হচ্ছে চেতনার আফিম খাওয়ানো। যুক্তরাষ্ট্রে গণতন্ত্রের আফিম খাইয়ে বিভিন্ন দেশে যুদ্ধের দ্বারা তাদের জনগণকে প্রতারিত করা হয়। ভারতে মোদি সাহেব বাংলাদেশের সাথে একটা ক্যাচাল লাগিয়ে তাতে রাজনৈতিক ফায়দা হাসিল করতে পারেন।
পাকিস্তান ও বাংলাদেশকে ভারতের অংশ মনে করা ভারতীয়দের সংখ্যা নেহাত কম নয়। এছাড়াও সুপার পাওয়ার হয়ে বিশ্ব রাজনীতিতে মোড়ল হবার পথে এসব ছোট দেশগুলোকে ভারতের অংশ করে নেবার পক্ষে জনমত কম নয়। এখন মোদি যদি বাংলাদেশের সাথে একটা যুদ্ধে জিতে বিজয়ীর তকমা লাগাতে পারেন, তবে বিদেশিনী সোনিয়ার থেকে মোদিকে ভারতের সেই অংশ ভোট দিতে বাধ্য থাকবে।
মোদি একজন হিন্দু হিসেবে গর্বিত। এরকম গর্বিত আরো আছেন। উনারা মোদির এই কাজে তার সাথে থাকবেন গর্বিত হিন্দু হিসেবেই। তাদের দৃষ্টিতে নিম্নবর্ণের শুদ্রের চেয়েও অধম যবন মুসলমানদের শিক্ষা দেবার জন্য মোদিকেই তারা ভোট দিবেন।
যুদ্ধ হলে অস্ত্র কেনার যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে না আর। উপমহাদেশে অস্ত্র কেনায় বিশাল দুর্নীতির কথা কারো অজানা নয়। এক্ষেত্রেও এই সুযোগের সদব্যবহার করতে কেউ ছাড়বে বলে মনে হয় না।

বাস্তবায়নের কৌশলঃ
এখানে এই কৌশল আলোচনা করা হচ্ছে পাল্টা-কৌশল বিবেচনার জন্য। শত্রুকে পথ বাতলে দেবার জন্য নয়।
২ কোটি অবৈধ বাংলাদেশিকে ভারত থেকে ফেরত পাঠানোর মানে তাদেরকে ১ম শ্রেণীর যানবাহনের টিকেট ধরিয়ে দিয়ে পৌছে দেয়া হবে বলে মনে করার কিছু নেই। আমরা ইতিহাসের দিকে তাকালে দেখতে পাই, কিভাবে এই কাজটা করা হয়। এর জন্য, কিছু ঘটনা আলোচনা করব।
১৯৭১ সালে পাকিস্তানী জান্তা তৎকালীন পূর্ব-পাকিস্তানী নিরস্ত্র জনগণের উপর রাতের আঁধারে যখন ঝাঁপিয়ে পড়ে, তখন প্রায় ১ কোটি শরণার্থি ভারতে আশ্রয় নিয়েছিল। এর মূলে ছিল ভীতি। মোদি যদি ভীতি সৃষ্টি করতে পারেন, শরণার্থির ঢল নামবে রোহিংগাদের মত নিশ্চিতভাবেই।
বাংলাদেশের স্বাধীনতার পরে বাংগালি জাতীয়তাবাদের চোটে পার্বত্য এলাকার পাহাড়ী জনগোষ্ঠীর বিদ্রোহী হয়ে ওঠা এবং তা দমন করতে গিয়ে সেনাঅভিযানে অনেক পাহাড়ী পরিবার ভয়ে ভারতের ত্রিপুরা-আসামে আশ্রয় নেয়ার কথা যেন আমরা ভুলে না যাই। সেখানেও ভয়টাই কাজ করেছিল।
২য় বিশ্বযুদ্ধের সময়ে ইহুদীদের বিশাল জনগোষ্ঠীকে জড়ো করে ঘেটো তৈরি করা এবং তাদেরকে স্থানান্তর করার কথা হয়ত ভারতীয় সামরিক বিশেষজ্ঞরা ভেবে দেখতে পারে। রাশিয়াতেও তাতার জনগোষ্ঠীকে নির্বাসিত করা হয়েছিল ক্রিমিয়া থেকে মধ্যএশীয়ায়। লিবিয়াতে কলোনিয়াল ইতালীয় বাহিনী স্থানীয় বেদুইনদের বন্দী শিবির বা কনসেনট্রেশন ক্যাম্প এ জড়ো করতে পেরেছিল। এরকম কিছু করে ভারতীয় বাহিনী বন্দীদের বাংলাদেশে পুশইন করার চেষ্টা করতে পারে।
তবে, এর আগে, গর্বিত হিন্দু মোদি সাহেব, যিনি কিনা গুজরাটে মুসলিম নিধনের পিছনে কালো হাত, তিনি এই কথিত অবৈধ বাংলাদেশি বলতে যেসব বাংগালি মুসলমানদের বোঝাচ্ছেন, তাদের বিরুদ্ধে অবশ্যম্ভাবীরূপে একটা সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা লাগিয়ে দেবেন। প্রতিবেশী মুসলমানরা চলে গেলেই সেই ভিটা-বাড়ি-ব্যবসা দখল করা যাবে ভেবে লোভীরা এতে দলে দলে অংশ নেবে। এতে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা থাকলেতো কথাই নেই। জার্মানীর সব সমস্যার মূলে যেমন হিল ইহুদীরা, সেরকম করে এখন অবৈধ বাংলাদেশি ওরফে বাংগালি মুসলমানদের দায়ী করলেই সব কিছু সহজ হয়ে যাবে তাদের জন্য।

বাস্তবায়নের প্রভাবঃ
এভাবে জানের ভয়ে যদি দলে দলে বাংগালি মুসলমানরা বাংলাদেশে পালাতে চায়, রোহিংগাদের মতই তাদেরো মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে আশ্রয় দিতে হবে। তারা আমাদের মত বাংগালি বা মুসলমান বলে নয়, তারা মানুষ এবং বিপদে পড়ে আশ্রয় খুজছে বলেই আশ্রয় দিতে হবে। এর ফলে কি প্রভাব পড়তে পারে, আসুন তা আলোচনা করে দেখি।
এই দুই কোটি মানুষ যদি সত্যিই বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়, তবে তারা প্যালেস্টিনিয়ানদের মত শরণার্থী শিবিরে মানবেতর জীবনের সম্মুখীন হবে। কিন্তু, তাদের জন্মভূমির অধিকার হয়ত এত সহজে ছেড়ে দেবে না। শরণার্থী শিবিরে কাজের অভাব ও দারিদ্র তাদের ঠেলে দেবে সশস্ত্র সংগ্রামের পথে। এখানে আমাদের নতজানু সরকারী নীতি থাকলে তারা হয়ত জংগী দমনের নামে সেই দুইকোটি মানুষের অধিকারের জন্য প্রতিবাদ করার পথ বন্ধ করতে গিয়ে নিজেদের উপর বিপদ ডেকে আনতে পারে। ভারত সরকার যখন তামিলদের উপর সমর্থন প্রত্যাহার করে নেয়, তখন রাজীব গান্ধী নিহত হয়েছিলেন তামিলদের আত্মঘাতী হামলায়। সেরকম কিছুর আশংকা উড়িয়ে দেয়া যায় না। আবার, ভারত যেমন ৭১ এ বাংগালি মুক্তিকামী মানুষকে ট্রেনিং ও অস্ত্র দিয়ে সাহায্য করেছিল ও পরবর্তীকালে শান্তি বাহিনীকে একই ভাবে সাহায্য করে পার্বত্য চট্টগ্রামে বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলনে মদদ দিয়েছিল, তেমনিভাবে এখানকার কেউ এই দুই কোটি শরণার্থীকে ট্রেনিং দিলে ভারতের জন্য সেটা একটা বিশাল মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়াবে। কাশ্মীরের স্বাধীনতাকামীদের মত তখন মুর্শিদাবাদ জেলার স্বাধীনতাকামীদের জন্য সেনা বাজেট বাড়াতে হবে ভারতকে। এই ধরণের গেরিলা যোদ্ধারা আক্রমণের জন্য বেছে নিতে পারে, ফারাক্কা বাঁধ বা ভারতের তিস্তা ব্যারেজের মত স্থাপনাকে। সেটাও ভারতের জন্য মাথাব্যাথা হয়ে দাঁড়াবে।
বাংলাদেশিদের জন্য এই শরণার্থী সমস্যা যে বাড়তি বোঝা নিয়ে আসবে, তা নিশ্চয়ই বলে দিতে হবে না। ভারতের জন্য বাংলাদেশ পঞ্চম রেমিটেন্স উপার্জনকারী দেশ। এই দেশটিকে এভাবে তারা ঘাটানোর সাহস করতে পারে শুধুমাত্র এখানে নতজানু সরকার ক্ষমতায় থাকলেই। নয়ত, এদেশে থাকা হিন্দীভাষী ভারতীয়দের বিতারণের সুর তুললেই ওপারের সব ঠান্ডা হয়ে যাওয়া উচিত ছিল। ভারতীয় স্যাটেলাইট চ্যানেল বন্ধ করা অথবা বর্তমানের বিনামূল্যে ট্রানজিট সুবিধা বন্ধ করে দেয়ার কথাও বলা যায়। এইরকম অবৈধ বাংলাদেশির ফাপরবাজি দিয়ে হয়ত ভারত ফ্রি ট্রানজিটের থেকেও আরো বেশি কিছু আদায় করে নিতে পারে। যাই হোক, ভবিষ্যতে কি হবে সময়ই বলে দেবে।
৩টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বেফাঁস মন্তব্য করায় সমালোচনার মুখে সমন্বয়ক হাসিবুল ইসলাম !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৩ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১১:৩২



"মেট্রোরেলে আগুন না দিলে, পুলিশ না মারলে বিপ্লব সফল হতো না "- সাম্প্রতিক সময়ে ডিবিসি নিউজে দেয়া সাক্ষাৎকারে এমন মন্তব্য করে সমালোচনার শিকার বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসিবুল... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমিত্ব বিসর্জন

লিখেছেন আজব লিংকন, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১:৪৮



আমি- আমি- আমি
আমিত্ব বিসর্জন দিতে চাই।
আমি বলতে তুমি; তুমি বলতে আমি।
তবুও, "আমরা" অথবা "আমাদের"
সমঅধিকার- ভালোবাসার জন্ম দেয়।

"সারভাইভাল অব দ্য ফিটেস্ট"
যেখানে লাখ লাখ শুক্রাণুকে পরাজিত করে
আমরা জীবনের দৌড়ে জন্ম... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বৈরাচারী আওয়ামীলীগ হঠাৎ মেহজাবীনের পিছে লাগছে কেন ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৭:৪১


স্বৈরচারী আওয়ামীলীগ এইবার অভিনেত্রী মেহজাবীনের পিছনে লাগছে। ৫ ই আগস্ট মেহজাবীন তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছিলেন ‘স্বাধীন’। সেই স্ট্যাটাসের স্ক্রিনশট যুক্ত করে অভিনেত্রীকে উদ্দেশ্য করে আওয়ামী লীগ তার অফিসিয়াল ফেইসবুকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:২৪



সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪১





বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×