শুরুতেই কয়া লই, এইডা পুরাই ফালতু পোস্ট। (মানে নিয়ত হইল গিয়া - ফেসবুকে তো নিজের ফডু গুলা ধুমায়া দিসি, তারপরেও এখন ব্লগের সুন্দরী আপুদের ফডু গুলা দেখানি (সাথে ভাইয়ারাও এমনি এমনি দেখতে পারেন))। আর ছবি দেইক্কা কেউ যদি একটা ট্যুর দিয়া আইতে চান, তাইলে তো কথাই নাইক্কা। পুরা সেরের উপ্রে সোয়া সের!!কই কই গেসি, বেশিরভাগ জায়গার নাম মনে নাই। আরে কবে গেসি সেইডাও মনে করতে পারতাসি না। তবে গত বচ্ছর সেপ্টেম্বর / অক্টোবর অথবা নভেম্বরে গেসিলাম, এইডা সিউর।
২০০১ এ ইন্টার দেওনের পর ভর্তি পরীক্ষা দেওনের নাম কইরা বন্ধু বান্ধব মিল্যা দেশের তাবত এলাকা ঘুইরা বেড়াইসি (ও, ভার্সিটী গুলাতেও কয়েক বার গেসি; হলরুম গুলা কেমন, পরীক্ষা পদ্ধতি মানসম্মত কিনা, অইখানকার আপুরা স্নেহপরায়ণ কিনা আর সর্বোপরি মহামান্য শিক্ষক শিক্ষিকাদের ব্যবহার কেমন – এডি দেখতে।)। ওই শুরু, তারপর থিকা প্রতি বছর এক বা একাধিক ট্যূর দিয়া আমরা বছরটাকে বৃথা যাইতে দেই নাই। কেওক্রাডং (সে এক বিশাল রাজহাস, আরেকদিন কমুনে), সুন্দরবন, বান্দরবন, দার্জিলিং আরো কত আজায়গা কুজায়গা আমাগো পদধূলি পাইয়া ধন্য হইসে হিসাব নাই। তাই বইল্যা ভাইব্যেন না, আমরা খুব কষ্টসহিষ্ণু জাতি। হবিগঞ্জের টিলায় উইঠ্যা আমরা একবার ঘন্টা দুইয়েক রেস্ট নিসিলাম। আর বিশাল এক মাকড়া দেইখ্যা চিক্কুর দিয়া গড়ায়া পড়তে লইসিলাম (কি ভয়ঙ্কর প্রাণী!!)। আমরা হইলাম আধাগ্লাস ট্রেকিং এর সাথে দুই জগ আরাম মিশাইন্যা ট্যুর পার্টি।
বৃষ্টিতে ভিজা আমি খুব ভালা পাই। কাজিনরা আমারে ব্যাং ডাকে, কারন আকাশ কালা হইলেই নাকি আমার মাথা খারাপ হয়া যায়। হেহেহে…পুলাপান !!
বচ্ছরে একটা গ্র্যান্ড ট্যুর উপলক্ষে কই যামু কই যামু করতাসিলাম। এর মধ্যে চেরাপুঞ্জির ছবি দেইখ্যা কইলাম, চ, চেরাপুঞ্জির বৃষ্টিত ভিজ্যা আসি! দুই একজন সুশীল বন্ধু (এদের বৃষ্টিতে ভিজলে জ্বর হয়।) সুশীল গালি দিয়া কইল; হাউক্কার পো…দূর হ সামনে থিকা !! আমার মত আরো কয়েকজন (আসলে কয়জন গেসিলাম সেটাও মনে নাই), যারা প্রকৃতিকে ভালবাসে, যারা সৌন্দর্যের পূজা করতে গিয়ে আছাড় খেতে ভয় পায়না, যারা ডিজিটাল ক্যামেরার লেন্স দিয়া নিসর্গ দেখতে ভাল পায় এবং যারা নতুন এক্সোটিক প্রোফাইল পিক দেয়ার রোমাঞ্চে রোমাঞ্চিত (যেমন আমি); লাফ দিয়া ইন্ডিয়ান ভিসা সেন্টারে আইস্যা পড়লাম। আমার আর সাঈদের পাসপোর্ট রিজেক্ট হইল, কারন, আমার জন্ম ঢাকার পিজি হাসপাতালে হওয়াতে তারা ক্ষুদ্ধ! আর সাঈদের ফোডু দেইখ্যা তারা সিউর এইটা সাঈদের জন্মের ৯ মাসের মাথায় তোলা ছবি। বর্তমান চেহারা ছবির লগে কিছুতেই এই ছবি মিল খায় না! আবার এপ্লাই করলাম, কিন্তু সাঈদ ক্ষোভে দু;খে তার বংশের উপর নৃ-তাত্ত্বিক গবেষনা করতে বরিশাল চইল্যে গেল। ব্যাপক যন্ত্রনা শেষ করে এক সময় ইন্ডিয়ার উদ্দেশ্য উড়াল দিলাম। ফ্লাইট ছাড়ল প্রায় আধাঘন্টা লেট করে গাবতলী থেকে। কি বাজে ম্যানেজমেন্ট !!
পদধূলি দিয়ে ধন্য করতে যাবার পথে আমরা ক'জন মহান...
সিলেট নাইম্যা এইবার জাফলং, তামাবিল…গাড়ি পাইতে গিয়া জান তামা তামা! চেইত্যা গিয়া পুরা একটা বন্ধু পরিবহন ভাড়া কইরা ফালাইলাম। তারপর বাতাস খাইতে খাইতে, গান শুনতে শুনতে, ঢুলতে ঢুলতে, যাইতে যাইতে আতকা একটা এটোম বুমা ফুটল…(ঠিক যেন সাহারাতে ফুটলোরে ফুল…)! যাইগ্যা দেখি গাড়ি মুসা (আঃ) এর লাডীর লাহান সাপ হয়া গেসে! খালি রাস্তায় বিশাল স্পিডে এউক্কা বেউক্কা চলতাসে আর আমরা গড়াগড়ি খাইতাসি! চাক্কা বার্স্ট !! কোনমতে গাড়ী থামসে, আমরা নাইম্যা মহান আল্লাহ পাকের শুকরিয়া আদায় করলাম, হে প্রভু, ব্যাচেলর অবস্থায় মউত না দেয়ার জন্য তোমাকে এ লট অফ থ্যাঙ্কস। আর বিবাহিত বন্ধু নাহিদ থ্যাঙ্কু জানাইল আগামী দুই বছর পর জন্ম হবে তার যে সন্তান, তাকে এতিম না করার জন্য। আমরা হিংসায় অর দিকে টেরা চোখে তাকাইলাম।
হে প্রভু, ব্যাচেলর অবস্থায় মউত না দেয়ার জন্য তোমাকে এ লট অফ থ্যাঙ্কস!
বর্ডারের প্রসিডিউর গুলো অনেক সময় আর টাকা খেয়ে দিল। ট্রাভেল ট্যাক্স না দিয়ে আসাতে ঝামেলা আরো বাড়ল (খোদার কসম, ইচ্ছা কইরা ফাকি দিতে চাই নাই।)। একসময় অইপাড় গেলাম, আর জীপ ভাড়া কইরা এক্কেবারে শিলং। যাওয়ার পথে আকাবাকা রাস্তা দেখতাসিলাম আর কইতাসিলাম, ধুর, এই রাস্তা তো আমাগো বান্দরবনেও আসে। অনেকখন পর জায়গামত পৌছাইলাম। সাইনবোর্ড দেইখ্যা বুঝলাম, ও, এইটা ইন্ডিয়া!! সবিতো দেশি দেশি লাগে!!
কালার কম্বিনেশনটা দেখসেন?
হেশালা আমরা হোটেল খুজতে বাইরাইলাম, একেকজন একেকদিকে। দেখি এক বেডায় পানিপুরি বেচতাসে। এন্ডিয়ায় এসে এদেশের ঐতিহ্যের সাথে একাত্বতা ঘোষণা করতে আমরা পানিপুরির অর্ডার দিলাম। একটু পর দেখলাম সবকিছু ঝাপসা হইয়ে গেল, আর টকের পানিটা চুক্কা লাগার বদলে নোনতা স্বাদের হয়ে গেল। প্রচন্ড ঝাল; ফারাক্কার বাধের মত আমাদের নাকের পানি, চোখের পানি আটকে রাখতে দেয়নি।(আইডীয়া: মমতা ব্যানার্জীরে কড়ড়া কইরা ঝাল শুটকী ভর্তা খাওয়াইয়া দিলে কাম হইয়া যাইব)। হোটেল পাইলাম চমতকার, ভাড়াও মোটামুটি চমতকার।
শিলং পিক....এক নজরে পুরো শহর
শিলং শহরটা আর আশপাশ যত ঘুরসি মনে হইসে, এইটা এমন কোন জ়ায়গা না, যেখানে ভিসা নিয়া আসতে হইব। হুম, সুন্দর শহর, সাজান গোছান, খুব বেশি ভীড় নাই, ধাক্কাধাক্কি নাই, কিন্তু নতুন কি? খাওয়া দাওয়া, স্পেশাল মেনু, শপিং মল, ঝর্ণা, পার্ক কিম্বা দেখার মত সিনেমা হল? কিন্তু...যেখানেই যাইতাসি আহা, উহু করতাসি আর কইতাসি, কি সোন্দর ! কি সোন্দর !! মাগার মনে মনে গাইল্যাইতাসি, হালায় টেহা খরচা কইরা এ কই আইলাম !!
প্যলিক্যান, প্যালিক্যান....এত বড় ঠোট তুই পেলি ক্যান??
চমতকার একটা পার্ক। নাম মনে নাই।
জায়গার নাম বড়পানি
রাস্তাঘাটে যা পাইসি তাই ধুমায়া খাইসি (একাত্বতা ঘোষণা করসিলাম না!) আবার ঢুকসি শিলং’য়ের সবচেয়ে দামী হোটেলে (হু হু…কি ভাবসিলেন আমাগো?), মোমো খাইতে, আহারে কে টেস্ট!! জিব্লায় এখনো পানি আয়া পড়লো! দার্জিলিং’এ খায়া এর ব্যাপক ভক্ত হয়া গেসিলাম। আর আইসা পড়ার আগের রাইতে গ্র্যান্ড ডিনার খাইতে গেলাম একটা ঐতিহ্যবাহী রেস্টূরেন্টে। কাশ্মীরি পোলাও, উজবেকিস্তানি কোর্মা, পাঞ্জাবী ফতুয়া…থুক্কু লাচ্ছি আরো কত কি, নামও মনে নাই ছাই! এত্ত এত্ত পরিমানে, অত্যন্ত হৃদয়গ্রাহী পরিবেশনায় সাদা সাদা চিকুন চিকুন লম্বা লম্বা চাউল (??) এর স্পেশাল খাশির বিরিয়ানি (নামডা অনেক শানদার আসিল, শালার কিসুই মনে নাই দেখতাসি...কিন্তু চক্ষের সামনে বিরানীর ছবি আর নাকের সামনে ঘ্রান ডিজিটালী ভাইস্যা আসতাসে এখনো!) আর কয়েক পদের স্পেশাল আইটেম গার্লের লাহান স্পেশাল স্পাইসি তরকারী। আহা, যা খেলুম না দাদা!! তারপর দাদা বিলটাও যা এলু না!! ফোত...ফোত...এখনো হৃদয় দ্রবীভুত হয় আবেগে!
এলিফ্যান্ট ফলস। তিন ভাগে বিভক্ত চমতকার একটা ঝর্ণা।
শিলং থেকে চেরাপুঞ্জি...জীপ ড্রাইভ। অসাধারন সেই রাস্তা আর চারপাশের পরিবেশ। সত্যি কথা বলতে ওখান থেকেই আমাদের ট্যুরের পয়সা উসুল হওয়া শুরু। অদ্ভুত সুন্দর কিছু জায়গা আছে চেরাপুঞ্জিতে, যা দেখে অন্তত আমাদের মনে হইসে মানবজন্ম সার্থক। (হতে পারে আমাদের দেখার অভিজ্ঞতা অনেক কম, পৃথিবীর অপার সৌন্দর্যের তেমন কিছুই আমাদের দেখার সৌভাগ্য হয় নাই, কিন্তু সেই সময়ের অনুভূতিটুকু ছিল অকৃত্তিম, আবেগী)। অসম্ভব মনকাড়া বেশ অনেক গুলো ফলস বা ঝর্ণা, চেরাপুঞ্জির গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন, মস্মাই গুহা, নোয়াখালি ফলস,...কি কইলেন? না, Nohkalikai Falls , মোয়ালিয়ং এর জীবন্ত শেকড়ের ঝুলন্ত ব্রীজ, সেভেন সিস্টারস ফলস, পিঙ্ক পিলার রক, মালভূমি ইত্যাদি জায়গা সময় নিয়ে ঘুড়তে পারলে নি;সন্দেহে আপনার ট্যুরের পয়সা উসুল হয়ে যাবে। আবার জিগায়!!
দেখার মত একটা চার্চ। ভেতরে ঢুকলেই অদ্ভুত ভাললাগায় আচ্ছন্ন হবেন।
১৫০০/২০০০ ফিট উচু মালভূমি, তার বুক চিরে সমতল পিচ ঢালা রাস্তা, চারপাশে শুধু সবুজ, শুধুই সবুজ আর নীল। আপনার পাশ দিয়ে আনমনে উড়ে যাবে হালকা চেরা চেরা সাদা মেঘ, কুয়াশার মত ঢেকে ফেলবে আপনাকে মুহূর্তেই। মাঝে মাঝে মাউন্ট অলিম্পাসের মত মেঘ চিড়ে দাড়াতে দেখা যাবে কোন পাহাড়কে। মেঘের ভীড়ে হয়তো নিচে তাকালে দেখবেন না কিছুই। অদ্ভুত একটা অভিজ্ঞতা। মালভূমির শেষ মাথায় বিশাল পাথরের উপর দাড়ালে আর মেঘ সরে গেলে হয়তো দেখতে পাবেন প্রিয় বাংলাদেশের আবছা সীমানারেখা। দেশটারে কেন জানি হঠাত খুব আপন লাগসে তখন!
সোজা বাংলায় নোয়াখালি ফলস....
চরম মজা লাগসে একটা গুহার ভিতরে হান্দায়া। হালকা হ্যাজাক বাত্তির আলোডা চক্ষে সইতে সময় লাগে, তারপর অই আলোয় হামাগুড়ি দিয়া, কখনো কুজা হইয়া, আবার কখনো ঘষটাইয়া ঘষটাইয়া গুহার আরেক মাথা দিয়া বাইরান লাগে। মাথার উপ্রে দিয়া চামচিকা উড়ে আর নানা রকম শব্দ পাথরের দেয়ালে প্রতিধ্বনিত হয় আর ভৌতিক আবহ নিয়া ফেরত আসে! আতকা কারেন্ট গেসেগা। আই হায়...কি আন্ধাইর, ঘুটঘুইট্টা আন্ধাইর। ব্যাফক বিনুদুন। আরেক আজীব জায়গা মোয়ালিয়ং এর জীবন্ত ব্রীজ। প্রকৃতির খিয়াল। গাছের শিকড় ছড়াইতে ছড়াইতে ঝর্ণার দুইপাশে একটা ব্রীজের মত শেইপ হয়া গেসে, তারপর পাবলিকে পাথথর বসায়া দিসে মাঝখানের খাজ গুলাতে, ব্যাস, দুই মিনিটে তৈরী হয়ে গেল ঝুলন্ত এবং জীবন্ত ব্রীজ। অইখানে বেড়াইতে আসা আরেক সোহাগী কাপলের আহ্লাদী আর বেপুক উপচায়া পড়া ভালুবাসা দেইখ্যা; বিবাহিত অবিবাহিত নির্বিশেষে আমাগো সবার চোখ হিংসায় টেরা হইয়া গেল।
গুহার ভিত্রে ঘুটঘুইট্টা আন্ধাইর
মোয়ালিয়ং এর জীবন্ত ব্রীজ।
২০ ফুট উচা বাশের টাওয়ার, যার মাথায় উঠলে বাংলাদেশ দেখা যায়!!
যাউগগা আর কিসু কমুনা। গেলে নিজেরাই আমাগো চেয়ে বেশি দেইখ্যা আসতে পারবেন। যারা খুব বেশি ঘোরাঘুরি করেন নাই, তাদের কাছে এই নির্ঝঞ্ঝাট শিলং ট্যুর অনেক ভাল লাগবে নি;সন্দেহে। কিন্তু চেরাপুঞ্জি অবশ্যই যাওয়া উচিত। (চুপি চুপি আপ্নেগো কই, আমি অইখানে বউ রে লয়া হানিমুনে যাওনের পিলান করসি। (হায় আফসুস! আমার বিয়া কবে হইবো??!!))
মেঘের বাড়ি....
ঢেকি, ধান ভানতাসে....
যাতায়াতের সুবিধা আছে যথেষ্ট। জীপ ভাড়া পাওয়া যায়, দড়াদড়ি কইরা নিতে হইবো মাস্ট। আর ৭/৮ জন থাকলে সুবিধা, শুধু নিজেরা মিল্যাই যেখানে খুশি যাওয়া যায়। অথবা, শিলং শহরে গাইড ট্যুরের প্যাকেজ আছে, ওদের সাথেও যাইতে পারেন। সব মিলিয়ে ৪/৫ দিনের একটা রিফ্রেশমেন্ট ট্যুর প্ল্যান হিসাবে শিলং, চেরাপুঞ্জি ট্যুর আদর্শ। শুভ জার্নী, শুভ ট্যুর।
ঝর্ণার মুখে। বিরল অভিজ্ঞতা
ক্যামেরায় এই স্বর্গের কিয়দংশও আসলো না....
আমরা আমরাই
আমার হাতে ক্যামেরা, আমার ব্যাকপ্যাক ধরসে একজন, ওরে আবার ধরসে আরেকজন। ছবিটা এভাবেই তোলা। এই ছবির জন্য এরকম রিস্ক নেয়াই যায়
বেচে থাকার আনন্দ.....