সংস্কৃতি কথাটা যত বহুল পরিমাণে ব্যবহ্রত হয়,সংস্কৃতি বস্তুটা তত পরিস্কার করে সবাই গ্রহন করেন কিনা তার সন্ধেহ আছে। আমরা সধারনত দেখি নৃত্য,গীত আর নাট্যাভিনয়কেই মুলতো সংস্কৃতি বলে ধরা হয়। তাই সভাসমিতিতে বক্তৃতা,আবৃত্তি ও প্রবন্ধপাঠ করার পর আমরা বলি , এবার সাংস্কৃতিক শুরু করতে যাচ্ছি। আর এর পরই শুরু হয় গান বজনা ও নৃত্য নয় নাটক মঞ্চস্থ । এ থেকেই বেশিরভাগ লোক ধারনা করতে পারেন যে, এই শেষোক্ত ব্যাপার গুলোই বুঝি সংস্কৃতির পর্যায়ভুক্ত। বলাই যায় নৃত্য গীত ও অভিনয় সংস্কৃতিরাজ্যেরই জিনিষ। তাই বলে শুধু এরাই সংস্কৃতি নয় । সাহিত্য,চিত্রকলা,দর্শন ধর্মপ্রত্যয়,অঙ্গসজ্জা,গৃহসজ্জা আহার প্রনালী সহ এক কথায় জীবন ধারনের জন্য যা কিছু প্রকাশ সবই সংস্কৃতির আওতা ভুক্ত ।
এর সাথে বলে রাখা যায় যে, সংস্কৃতির প্রতিশব্দ রূপে কৃষ্টি শব্দটা রবীন্দ্রনাথের দ্বারা ধিক্কৃত হলেও, আসলে কিন্তু ব্যঞ্জনাগত অর্থে দুইয়ের মধ্যে কোন তফাৎ নেই ।
এমন দেশ নেই যে দেশে লোক সংস্কৃতি নেই। কিন্তু সে দেশের সংস্কৃতি বলতে কেবল সে দেশের লোকসংস্কৃতিই বোঝায় না । তার চেয়ে উচ্চতর স্তরের সংস্কৃতি বোঝায়। আর শিক্ষিত মহলে কেবল উচ্চতর সংসকৃতিই বোঝায় । সেদিক থেকে বিচার করলে সে দেশের লোকসংস্কৃতি যদিও আর সব দেশের সঙ্গে তুলনায় সমান কিন্তু তার উচ্চতর সয়স্কৃতি কিন্তুতুলনায় অনুচ্চ। ওসব বিশেষন বাদ দিয়ে বলতে গেলে বলতে হয় সে দেশের সংস্কৃতি অন্যের তুলনাই চলে না । সেদেশের সংস্কৃতি অনন্য। তাই যদি হয় তবে সংসকৃতির ক্ষেত্রে বিশ্বজননী বা ইউনির্ভাসাল বলে কিছু নেই। সংস্কৃতি একান্ত ভাবেই স্বাদেশিক।
শুধু ব্রিটেনের জন্য শেক্সপীয়ার,শুধু জার্মানীর জন্য বেঠোভেন,শুধু রাশিয়ার জন্য টলস্টয়,শুধু ইটালির জন্য লেওনার্দো ভিঞ্চি আর শুধু বাংলার জন্যই রবীন্দ্রনাথ। এ রকম একটা ধরনা কবিগুরুর নোবেল পুরুস্কার প্রাপ্তির পূর্বে আমাদের অনেক স্বদেশীর ছিলো
ইদানীং ইংরেজীর জায়গায় নতুন নতুন বাংলা শব্দ ব্যবহার দেখতে পাই । যে সব শব্দ বাংলা অভিধানে নেই সেই সব শব্দ উদ্ভাবন করা হচ্ছে, যে সব আছে তার নতুন অর্থ করা হচ্ছে। পশ্চিম থেকে মুখ ফিরিয়ে আমরা পশ্চাতে ফিরে চলেছি কিনা তা ভাববার সময় এসেছে।
এই যে অভিনব সংস্কৃতিকরন এটা কোনকোন ক্ষেত্রে মানসের পক্ষে মানিয়ে নেয়া অস্বাভাবিক বাস্তবের সাথে এর মিল তেমন নেই বল্লেই চলে । ব্যপারটা এমন , আমরা যেন ভাজছি বেগুন বলছি পটল।
সবকিছুর পরও আমরা ক্রমশ বুঝতে পেরেছি যে দেশকে স্বাধীন করাই যতেষ্ট নয় , দেশের মানুষকে স্বাধীন ভাবে সৃষ্টি করতে ,চিন্তা করতে ,নির্মাণ করতে শেখাতে হবে। পশ্চিমের সঙ্গে আধুনিকের সঙ্গে কোন কোন ক্ষেতে পা মিলিয়ে নিতে হবে । পশ্চাতের সঙ্গে ঐতিহ্যের সঙ্গে সমন্বয় রক্ষা করতে হবে। লোকসংস্কৃতি সঙ্গে যোগসূত্র অবিচ্ছিন্ন রাখতে হবে। সার্থক সংস্কৃতির এই তিনটি ডাইমেনসন। তৃতীয়টির দিকে আরো নজর দেওয়া দরকার।
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই এপ্রিল, ২০০৯ বিকাল ৫:৫৩