এখন তো এভাবে জিজ্ঞেস করা হয়: মতলব আলি তোমার সময় কী ভাবে পার হচ্ছে? তারমানে প্রশ্ন কর্তাও জানে মতলব আলি আগে কি করতো। লোকজনের এ জাতীয় প্রশ্নে মতলব আলি বিব্রতবোধ করে।
মতলব আলি বলে, এখন তো কিছু করি না, ঠিক কিছুদিন আগে যে প্রতিষ্ঠান ছেড়ে আমি চলে এসেছি সে প্রতিষ্ঠানের নাম মুখে আনতে আমার খুব বাধে। সত্য কথা বলতে পারি না। আবার মিথ্যা কথাও বলতে পারি না বলে চুপ থাকতে হয়। অথচ তাদের কেউতো আমার পেছনে লেগে নেই যে শুনে ফেলবে । আমার মনে হয় ঐ প্রতিষ্ঠানের নাম মুখে আনার সত্যিকার কোন অধিকার আমার নেই। আর অধিকার থাকবেইবা কি করে, আমি তাদের সাথে, বিশেষত মালিকের সাথে ভালো ব্যবহার করে আসিনি।
(মতলব আলি যুক্তিহীন কোন কিছু সহ্য করতে পারে না, চট করে উত্তেজিত হয়ে যায়।)
মতলব আলি অনেকবার ভেবে দেখেছে , নিজকে প্রশ্ন করেছে- মালিক কেন তার সাথে এভাবে কথা বললো । আবার উল্টোটাও ভেবে দেখেছে, তার সাথে খারাপ ব্যবহার করার কোন অধিকার কি মালিকের নেই? অধিক দুশ্চিন্তার ফলে মতলব আলির পেটের অবস্থা খারাপ হয়ে যায়। তবু চিন্তা অথবা দুশ্চিন্তা কোনটাই মতলব আলি বন্ধ করতে পারে না।
...ভেবে দেখলাম কে প্রথমে খারাপ ব্যবহারটা করেছে- মালিক না আমি? প্রথম প্রশ্নটা মালিকই তো করেছিল । তাই বলে এভাবে কেউ প্রশ্ন করে ?
... কিভাবে করে? (এ প্রশ্ন কারা করছে মতলব আলি প্রথমে বুঝতে পারে না।) তোমার গালে চুমু দিয়ে বল তো জনাব আপনি আমার প্রতিষ্ঠানে চাকরি করবেন আবার আমাকে না জানিয়ে কাজ কাম করবেন এটাকি ঠিক ? মতলব আলি বলে, এভাবে কথা বললে তো আমি ...। ...মতলব আলি তুমি কী শুনি ? বলো , বলো তুমি কী? মালিক নরম করে কথে বললে তুমি ফুঁস করে উঠার সুযোগ পেতে না, কিন্তু আমরা জানতে চাই তুমি আসলে কী ? তুমি নিজকে কী ভাবো? তুমি পন্ডিত হয়ে গেছো? মালিকের অবদান তুমি অস্বিকার করতে পারবে?
‘... আরে বাবা তোমরা আবার কারা ? একবারে মালিকের মতোই কথা বলছো । ও তোমরা মালিকেরই লোক । বেশ ভালো । আমাকে একটু ভাবতে দাও। আচ্ছা ঠিক আছে মালিক যদি খারাপ ব্যবহার করে থাকে তাহলে আমি সহ্য করলাম না কেন আবার ভেবে দেখা উচিত। মালিকের কি খারাপ ব্যবহার করার অধিকার নেই? একবারে চোখ রাঙিয়ে টেবিল ঠুকিয়ে আবোল তাবোল বলে অফিস গরম করে ফেললে আমি থাকবো বরফের মতো শীতল। কেন আমি শীতল থাকতে পারলাম না? তিনি তো আমার মালিক। আমি কেন বুঝলাম না মালিকরা এমনি হয়? তোমরা তো তাই ভাবছো তাই না? তোমরা আমার সমস্যটা বুঝবে না। তোমরা বলতে পারবে কেন মালিক খারাপ ব্যবহার করলো? তিনি তো অন্যভাবেও বলতে পারতেন । তোমরা যাও।
মতলব আলির অযোগ্যতা তাকে অক্টোপাশের মতো আঁকড়ে ধরে। সে কার কাছে যাবে? কারো না কারো কাছে তো মনের কাথাটা বলতে হবে। মতলব আলি তখন ফোন করে তার কোন এক বন্ধুকে ...হ্যালো , হ্যা - আমি চাকরিটা ছেড়ে দিয়েছি।
... বেশ ভাল করেছো। এবার তুমি মুক্ত । এবার নিজের ইচ্ছা মতো... ।
... নিজের ইচ্ছা মতো কী করতে পারি? নিজের ইচ্ছে মতো মানুষ আত্মহত্যাও করতে পারে না । আমার বন্ধু বলছে নিজের ইচ্ছা মতো...। আরে বাবা নিজের ইচ্ছে মতো বাঁচাও যায় না । ...বাঁচা না গেলে মরো। আমার বন্ধু আমাকে মরতে বলছে, কিন্তু মরতেও পারছি না । না অন্য কাউকে জানানো যাক । ...হ্যালো আমি চাকরিটা ছেড়ে দিয়েছি । ... কেন? ...তাইতো কেন ছাড়লাম। কি বলবো? ... মালিক আমার সাথে খারাপ ব্যবহার করেছে। মোবাইলের অপর প্রান্ত নিশ্চুপ।
না আর কাউকে এ বিষয়টি জানানো যাবে না।
এখন মতলব আলি ঘরে বসে বসে দিন পার করে । বই পড়ে । টিভি দেখে। তার আট বছরের কন্যাটি জানতে চায় সে অফিসে যায় না কেন। মতলব বলতে পারে না মালিক খারাপ ব্যবহার করেছে । মেয়েটি খুব প্রশ্ন করে । যদি বলে মালিক খারাপ ব্যবহার করেছে তাহলে বলবে, বাবা খারাপ ব্যবহার কি? একটি ছোট্ট মেয়ের মগজে খারাপ ব্যবহার এখনো ছাপ ফেলেনি। তার স্ত্রী কিছু বলে না । সে সকাল বিকাল অফিস করে । তার ব্যস্ত সময় । মতলবকে নিয়ে ভাবার সময় নেই। কিন্তু সম্পুর্ণ ভাবনাহীন কিনা বুঝা যায় না। বন্ধুদের অনেককে সে বলে দিয়েছে তাকে যেন ঐ প্রতিষ্ঠানে গিয়ে না খুঁজে ।
মতলবের বাবার মন খারাপ । তার বাবা বলেছিল চাকরিটা ছেড়ো না। কত টাকা বেতন পাচ্ছো তা ভেবো না, একটা চাকরি করছো এটাই বড় কথা । চাকরি ছেড়ে দিলে স্ত্রীর উপর নির্ভরতা বেড়ে যাবে তখন সংসারের শান্তি নষ্ট হবে, সম্মান চলে যাবে। স্ত্রী লোকের পরিশ্রমের টাকা পয়সা সংসারের ভারি কাজের জন্য নয়। মতলব জানতে চেয়েছিল- কি কাজের জন্য? মতলবের বাবা বলেছিল, সংসারের উপরি সৌন্দির্য বৃদ্ধির জন্য। যা দেখা যায় - যা চক্ চক্ করে তার জন্য। তুমি হয়তো প্রশ্ন করবে সকলে কি একই রকম । দুনিয়ার কোন কিছুই একেই রকম নয়। মতলব বলে, তাহলে এমন একটা বিষয়কে আপনি স্বত:সিদ্ধ হিসেবে বয়ান করছেন কেন? মতলবের বাবা বলেছিল, উপদেশ গ্রহন করার চেয়ে অভিজ্ঞতা অনেক ভাল, তুমি আমার উপদেশ গ্রহণ করো না , তবু বলি শুন, একজন স্ত্রী স্বামীকে ভাত খাওয়ানোর চেয়ে পোলাও খাওয়াতে বেশি পছন্দ করবে, জমি কিনে দেয়ার চেয়ে গাড়ি কিনে দেয়ার ইচ্ছাটা স্বাভাবিক, আর যদি বাড়ি তৈরি করে তবে বাড়ির সামনে লিখা থাকবে অমুক কটেজ বা ভিলা। গাড়ি দৃশ্যমান কিন্তু ভাত দৃশ্যমান নয়, পোলাও সুগন্ধ ছড়ায়। তুমি যেত পারো। মতলব বলেছিল, মেয়েদের বিপক্ষে ভাল একটা লেকচার দিলেন কিন্তু বলতে পারবেন মালিক কেন খারাপ ব্যবহার করে? বলতে পারবেন আমার মায়ের সম্পত্তি কোন জ্ঞানে ভোগ করছেন? মতলবের বাবা কিছু বলেনি।
তার বাবা কেমন মন মরা হয়ে আছে । মতলব তার বাবার কথা মানেনি। মতলবের বাবা মতলবের মায়ের সম্পত্তির সুবিধাভোগী এবং এ সুবিধার নেতিতে ভস্মিভূত।
... আহ আমি একটা সোনার হরিণ হত্যা করে দিব্যি বহাল তবিয়তে আছি। পেছন থেকে আমার স্ত্রীধন সাবসিডি দিয়ে যাচ্ছে। তবু এতো ভাবনা আসে কোত্থেকে? আর ভাবনাটা জটিল হতে থাকলে এক পর্যায়ে আমার পেটে বায়ুর চাপ বাড়তে থাকে। ইদানিং খেতে বসলে তাড়াহুড়া করি। আমার কন্যাটিকে পড়াতে বসি। তাকে যে শিক্ষক পড়াতো তাকে বিদায় দেয়া হয়েছে। গানের শিক্ষক- আরবির শিক্ষক আসে । সম্ভব তো গান পারলে গানের শিক্ষককেও বিদায় করে দিতাম। চাকরি ছাড়ার পর বাজারের ফর্দটা শতকরা দুভাগ বদলে গেছে ।
এরমধ্যে একদিন জৈষ্ঠ মাসেই বর্ষা নামলো । জানালার পাশে দাঁড়িয়ে অফিসের কথা ভাবছিলো মতলব । অফিসের সহকারিদের মুখ এক এক করে বৃষ্টির মাঝে ভেঙ্গে ভেংগে ছায়াচিত্রের মতো ভাসতে লাগলো। বজ্র চমকের ভিতর থেকে মালিক সাঁই করে বের হয়ে দু’হাত ছড়িয়ে বৃষ্টির শরীরে উড়তে লাগলো । ...বাহ ! একে বলে স্বাধীনতা। মালিক আপনি কি চমৎকার স্বাধীন, পাখির মতো স্বাধীন ! আপনি ঈশ্বরের মতো স্বাধীন। আপনি আমাকে আরেকটা ধমক দিন । একবারে বজ্রনিনাদে পৃথিবী কাঁপিয়ে , যাতে আমার চিন্তাটা আমূলে পাল্টে যায়।
... মতলব আলি তুই বেটা একটা গাধা। মালিকের সাথে ঝগড়া করে কেউ চাকরি ত্যাগ করে ? তুই মাথা নিচু করে চুপচাপ থাকলে আমি কিছুই বলতাম না । তুই বিদ্রোহ দেখাস। তোর মুখের কারণে তুই চাকরি হারালি। তোরা বলিস যুক্তি । আরে বেটা বাঁচার কোন যুক্তি আছে নাকি। বলতো মানুষ কোন যুক্তিতে বাঁচে। আমি যে অপমানটা তোকে করলাম- কোন যুক্তিতে করলাম। আর এ অপমানের পর তুই কোন যুক্তিতে বেঁচে আছিস। ...মালিক আপনি আমাকে তাহলে যুক্তি ছাড়াই অপমান করেছিলেন। এই মুহূর্তে আপনি যুক্তিবান মানুষ ।... কে বলেছে যুক্তিবান ? তোদের এক সমস্যা তোরা মানুষকে তাৎক্ষণিক বিশ্লেষণ করতে চাস। আমি কি শুধু এই মুহূর্তের মানুষ ? আমি একটা প্রবাহমান প্রক্রিয়া। আমি মানুষ বলতে রাজি না । অব্যাহত প্রক্রিয়াটি নিজকে টিকিয়ে রাখতে সবসময় সচেষ্ট। তার প্রধান দায়িত্ব অন্যের উপর আধিপত্য বিস্তার করা। ...মালিক তাহলে কি আপনি আমার উপর আধিপত্য বিস্তারের উদ্দেশ্যে খারাপ ব্যবহার করে ছিলেন ?...তোদের এ আরেক সমস্যা। না মূর্খের সাথে কথা বলে লাভ নেই।... না না মালিক আপনি বলুন। আমার শুনতে ইচ্ছে করছে। ...দেখ আমি অনেক কষ্ট করে বড় হয়েছি। আমি মনে করি মানুষের কষ্ট বুঝার মতা আমার আছে। অথচ তোর সাথে কি খারাপ ব্যবহারটা না করলাম।... না না মালিক পরিস্থিতিটা আমিই তৈরি করে ছিলাম আপনার কোন দোষ নেই। ... সত্যি বলছিস আমার কোন দোষ নেই ?
...এবার আমি কি বলবো ? যদি তাই হয়, তাহলে আমি মালিকের খারাপ ব্যবহার করার অধিকার আছে কিনা জনে জনে জিজ্ঞেস করছি কেন?
... কি ব্যাপার চুপ কেন? ... না ভাবছিলাম আপনার মতো একজন শিক্ষিত যুক্তিবান মানুষের নিশ্চয় খারাপ ব্যবহার করার অধিকার আছে।
... হ্যা শিক্ষা যে একটা মুখোশ তা জানতে আমাদের আরো ৫০ বছর লেগে যাবে। ... মালিক আপনি আবার এ কোন কথা শুনালেন! মালিক আপনি মহাজ্ঞানী, মালিক আপনাকে অসংখ্য সালাম।
... তোর সমস্যা আছে , তোর সমস্যা হলো তুই আমার সামনে বলছিস আমি মহাজ্ঞানী , আমাকে সালাম। অথচ পেছনে গালি দিস । শিক্ষা তোর আমার সৎসাহস নষ্ট করে দিয়েছে। কৌশলী হতে শিখিয়েছে। এই কৌশলটাই হলো মুখোশ । তোর অবস্থা দেখে আমার খুব রাগ হচ্ছে। ...মালিক আপনি রাগ করবেন না। কারো রাগ দেখলে আমি নিজেও রেগে যাই। আমি নিম্নমুখি বায়ুচাপ সহ্য করতে পারি না। তখন পৃথিবীর বায়ু দুষিত হয়ে যায়।
মালিক নিজের নাক চেপে ধরে শুন্যে ভেসে গেলো । ইতোমধ্যে আকাশের বায়ুও দুষিত হয়ে গেছে। মালিক কতক্ষণ আকাশে থাকবে?
...মালিক আপনি কোথায় যাচ্ছেন? আপনার পেছনের ডানাগুলো লাগাতে কত টাকা খরচ পরেছে? আহ! মালিক আমার কথা শুনতে পাচ্ছে না । মালিক মাঝে মাঝে কানে কম শুনে । এতে স্বাস্থ্য ভাল থাকে । মালিকের পক্ষে শ্রমিকের প্রসঙ্গ কম শুনাই শ্রেয়। মালিক আপনি দীর্ঘজীবী হউন।
অল্প কিছুণের মধ্যে মালিক ভুঁ করে ফিরে এলো। মালিক যখন আকাশে উড়ে তার শ্রমিকরাও তখন স্বপ্ন দেখে ।
...তুই বেটা একটা আস্তা গাধা।
... ঠিক বলেছেন । গাধা না হলে চার বছর আপনার এখানে চাকরি করি?
...তুমি ( মালিক এখন তুমি বলছেন) চালাকি করে আমার সাথে সায় দিয়ে নিজকে গাধা বললে কি হবে আমার কন্ঠে গাধা শব্দটি যে গুরুত্ব ও অর্থ বহন করে তোমার অভিমানে তা প্রকাশ পায় না।...ঠিক বলেছেন মালিক রাগটা আপনাকে খুব মানায়। রাগ শব্দটি মালিক শব্দটির পরিপূরক।... রাখ তোমার বাচলতা, যতোসব জটিলতা, পন্ডিত, আমি বলি ঘোড়ার আন্ডা।
...আহ! মালিক আপনার কণ্ঠ কি মধুর । আমি সারা জীবন চেষ্টা করেও এমন মধুর কণ্ঠে ‘ঘোড়ার আন্ডা’ উচ্চারণ করতে পারবো না। মালিক কি জিনিস একটু একটু টের পাচ্ছি। মালিক আপনি বলুন আমি মনোযোগ দিয়ে শুনছি।... সত্যি শুনছো নাকি ? ... সত্যি শুনছি।
...তুমি চলে আসার পর আমার কম্পানির প্রধান মিস্ত্রিটাকে একটু বাজিয়ে দেখলাম।
...তাকে প্রধান মিস্ত্রী বলছেন! সে’তো প্রধান ইঞ্জিনিয়ার।
...সে যা’ই হউক , আমার কথা শোন । মিস্ত্রিটাকে একটু উল্টে পাল্টে দেখলাম।
... কি দেখলেন?
প্রথমে ভেবেছিলাম তোমার দেখাদেখি মিস্ত্রিটাও চলে যাবে। সে নাকি তোমার পরে লোক। দেখলাম , তোমার প্রতি টান আছে কিন্তু খুব ঠুনকো । ২৪ ঘন্টার মধ্যে তোমাকে ভুলে যাবে আমি নিশ্চিত ছিলাম । বাকিটা তুমি জানো। তোমার প্রসঙ্গে কথা বলতেই কি যেন মিনমিনে গলায় বললো, বুঝলাম ঢোরা সাপের ফুঁসফুঁসানি। গ্রামের ছেলেদের শহরে ব্যবহার করার সুবিধাটা রপ্ত করতে হয়। অবশ্য এমন একটা গ্রাম্য বেড়াল এ শহর থেকে খুঁজে পেতে আমার বেগ পেতে হতো না । তবে আমি সাবধানে কথা বলছিলাম। যাতে তোমার মতো ফুঁস করে না উঠে। বেড়ালটা বললো , তুমি না থাকলে আসুবিধা হবে না। আসলে তুমি নাকি কোন কাজেরই ছিলে না । তুমি নাকি ছিলে তাদের অভিভাবক। এ কথা শুনে তো আমার রক্ত আগুন । আমার প্রতিষ্ঠানে আবার অন্য একজন অভিভাবক। তবু দেখি বেড়ালটা কি মতামত দেয় । আমি অপেক্ষা করতে লাগলাম। শেষে বেড়ালটা বললো, তোমার কাজটা সে আর অফিসের মেয়েটা চালিয়ে নিবে। আমি মনে মনে বললাম তথাস্তু। আমার ভেতরটা ঘামে ভিজে গেলো।
... কিন্তু মালিক সে’ তো সহজে অবনত হওয়ার লোক নয়।
... হ্যা ঠিক ধরেছো । আসলে আমিও সামান্য নরম হয়েছিলাম ।
... মালিক বলেনকি আপনি সামান্য নরম হয়েছিলেন? আহ! মালিক আপনি নরম হয়েছিলেন- এটা অবিশ্বাস্য । মালিক বলুন, আমি মনোযোগ দিয়ে শুনছি। যদি এসব কথা বানিয়ে বলে থাকেন তবু মূল্যবান। মালিক একটু বলবেন কেমন নরম হয়ে ছিলেন ?
... হ্যা বলতে অসুবিধা নেই , তুমি এখন বিগত । আমি ঠিক ‘গুয়ের’ মতো নরম হয়েছিলাম।
...মালিক আপনার ভেতর গুয়ের মতো নরম অস্তিত্ব আছে, আহ! ভাবতে আমার অবাক লাগছে।
...তুমি আমাকে উপহাস করছো মনে হয়। তুমি তো একরোখা খন্ডিত মানুষ। জীবনের যে দশ দিগন্ত আছে তা তুমি জান না । একটা প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করলে বুঝতে কে বেড়াল- কে কুকুর- কে শিয়াল- কে নরম- কে গরম- কে টাউট- কে মহান ।
...মালিক আপনি রাগ করছেন। রাগ! দেখলে আমার পাকস্থলির সমস্যা বেড়ে যায়।
মালিক তখন কিছু না বলে বৃষ্টির শরীরে মিলিয়ে গেলো ।
মতলব আলি স্ত্রীকে বললো, ইদানিং আমি আজে বাজে স্বপ্ন দেখছি। স্ত্রী তার দিকে তাকিয়ে বললো ডাক্তার দেখাও। অসুস্থ্য হয়ে পড়বে , বড়সর কোন সমস্যা হওয়ার আগে সাবধান হওয়া উচিত। ...আমার স্ত্রী কি আমার চাকরি চলে যাওয়াতে খুব চিন্তিত যা সে গোপন রাখছে । সে বলতো তোমার চাকরির দরকার নেই, তবে মেয়েকে যখন কেউ জিজ্ঞেস করবে - তোমার বাবা কি করে তখন সে কি বলবে ? এজন্য একটা কাজে লেগে থাকা। ...কি অদ্ভুত ব্যাপার । যে কোন একটা চাকরি হলেই চলবে, তার চেয়ে চাকরি না থাকাই শ্রেয় না? আমার মেয়ে সত্য কথা বলবে, বলবে আমার বাবা কিছু করে না । আমার মা চাকরি করে । তা হলে বাবা অস্তিত্বটি এক লহমায় গুরুত্বহীন হয়ে যাবে, যাক। আমার কোন সামাজিক মূল্য থাকবে না, না থাকুক। আমার স্ত্রী আবার আমার দিকে তাকিয়ে বললো , তোমার খাদ্য পরিপাকে সমস্যা হচ্ছে না তো ? ... কেন? কেন এ প্রশ্ন? তুমি আমার খাদ্য পরিপাকের খবর নিচ্ছো নাকি আমার কর্মহীন জীবনে খাদ্য গ্রহনের অধিকার সম্পর্কে প্রশ্ন তুলছো। ...না এমনিতে , অনেক আগে কে যেন বলেছিল পেটে গ্যাস জমলে লোকে স্বপ্ন বেশি দেখে । আর ঠিক সে সময় বিশাল শব্দে মতলব আলি আস পাশের বায়ূ দুষিত করে ফেললো। আর তখন মতলব আলি বুঝতে পারলো তার বাতকলমের উৎস এবং মালিকের খারাপ ব্যবহারের উৎসের মধ্যে মৌলিক কোন পার্থক্য নেই।
মতলব আলির স্ত্রী তখন নাক চেপে তার দিকে তাকিয়ে রইলো।