কাতল ধরার জন্য ভাল কাঁটা হলো উঁমাচরনের কাঁটা । উঁমাচরনের নিক্তি ছাড়া যেমন মুদি - আড়ৎ - গুদামের মাল মাপা যায় না তেমনি উঁমাচরনের কাঁটা ছাড়া কাতল ধরা যায় না। বাজারে হরেক রকমের কাঁটা আছে তার মধ্যে কাতল ধরার জন্য উঁমাচরনের কাঁটাই শ্রেষ্ঠ।
বর্ষা চলে যায়, গফুর মিয়ার বড়শি দোকানে কাষ্টমার নেই বললেই চলে। মাছ ধরবে যে, সেই নদীনালা খাল বিল ‘কই’? আর পানি তো নামতে নামতে তলানিতে ঠেকেছে। সব মাছ যেনো পাতালে চলে গেছে। আছে অল্প কয়েকটা মাছের খামার , খামার না করেও উপায় নেই। দেশি মাছ দিয়ে কি কোটি কোটি মানুষের পেট ভরে? দশ পনের বছর আগেও ক্ষেতে খালে নালায় জলায় হরেক রকম মাছ পাওয়া যেতো। এখন টিকেট কিনে মাছ ধরতে হয়।
একজন তার অভিজ্ঞতা থেকে বলে , একবার ঘাউড়া জলায় একটা কাতল ছয় কাঁটাওয়ালা এক বড়শিতে এমনভাবে আটকায়, এটাকে ছাড়াতে গিয়ে মাছটির সমস্ত গলদেশ ছিঁড়ে ফেলতে হয়। কে যেন তখন জিবে শব্দ তুলে আফসোস করে ওঠে । কাঁটায় আটকে যাওয়া মাছের জন্য কে আফসোস করে? আমরা জানি যারা বড়শি দিয়ে মাছ ধরে তারা একরকম ধ্যান মগ্নতায় ডুবে থাকে । অন্তত যতক্ষণ বড়শির দিকে - ফাৎনার দিকে তাকিয়ে তাকে ততক্ষণ সে দুনিয়া থেকে বিচ্ছিন্ন । হয়তো এমন কারো চোখে এ দৃশ্য জ্যান্ত হয়ে ওঠেছে ।
আমরা যখন কাতল সম্পর্কে কথা বলছিলাম বা ভাবছিলাম তখন লোকটি বললো আপনাদের বড়শি দোকানে এলেই মাছের আলাপ ছাড়া অন্য কোন আলাপ শুনতে পাই না।
লোকটি বলে কি, মাছের দোকানে মাছের আলাপ হবে না তবে কি মহিষের আলাপ হবে? লোকটি মাঝে মধ্যে আসে, গলায় একটা মাপলার পেঁচানো থাকে , সম্ভবতো শীত গরম বার মাসেই থাকে। আমাদের কথাবার্তায় লোকটার যখন এতো অনিহা তাই আমরা বললাম ঠিক আছে আপনি কিছু বলেন, আমরা শুনি। লোকটি সাথে সাথে কিছু বলার জন্য রাজি হয়ে গেলো। এবং যা বললো তা জোরাতালি দিলে এমনটি দাঁড়ায়:
গফুর মিয়ার বড়শি দোকানের মতো তাদেরও একটা বড়শি দোকান ছিল। সেবার শহরের বড় দিঘীতে টিকেট ছাড়া হলো। দিঘীটাতে কাতল মাছে ঠাসা। তার বাবা তাকে বললো কাতলের বড়শি ‘বানা’ । ছিপ সুতা হুইল স্লুইবার সব স্টকে আছে। দরকার শুধু কাতলের কাঁটা । তার বাবা ঢাকায় খবর দিয়ে পাইকার থেকে কিছু উঁমাচরন কোম্পানির কাঁটা আনালো। সে সুন্দর করে এবং শক্ত করে কাঁটা বাঁধতে পারে। অবশ্য এ বিষয়ে বাবাই তার ওস্তাদ। ‘বৈড়ালরা’ আসতে শুরু করবে, এটা ছিল পুরাতন দোকান হিসাবে তাদের একমাত্র ভরসা। সে গুন গুন করে গান গায় আর কাজ করে। তার বাবা একদিন বললো , তোর কি হইছে , তুই কেবল কাতল কাতল ‘করস’। ব্যবসার মজা তার মনে বাতাস দিয়ে চলছে । গান যে কাতল কাতল বলে গাইছে তার বাবা বলার পর সে টের পায়। বড়শি তৈরির মনোযোগ ভেদ করে অন্য কোন গানের কলি তার অন্তরে প্রবেশ করতে পারে না। বকের মতো নিমগ্ন আর মুখে সূর ধরা কাতল অবস্থা তার। দোকানে কেউ এলে তার মনে হয় বড়শির জন্য এসেছে এবং লোকটি দামী চেয়ে একটা বড়শি কিনে বলবে, কাতলের কাঁটা লাগিয়ে দাও। বড়শি বিক্রির ধুম । ক্যাস বাক্সে টাকার স্তুপ । এক ঘোর লাগা কাতল মৌসুম যেন তার সমস্ত মন প্রাণে।
হঠাৎ একদিন দোকানের বিপরীত পাশে হৈ চৈ শুনে মাথা তুলে তাকাল সে। ব্যাপার কী? উৎসুক লোকজন ঐ দিকে ছুটছে কেন । সে কাতল সঙ্গীতের সুর কেটে সোজা হয়ে দাঁড়ালো। কাউকে জিজ্ঞাস করবে এমন অবস্থা নেই। দোকানে চাচাতো ভাই আলাউদ্দিনকে রেখে কয়েক কদমে রাস্তা পাড় হয়ে গ্রিন ভিউ রেস্ট হাউজের সামনে হাজির হলো। পুলিশের তাৎক্ষণিক তৎপরতা দেখে সে অবাকও হয় বিরক্তও হয় । তার একবার ইচ্ছে হয় পুলিশকে জিজ্ঞেস করতে, এ রেস্ট হাউজটি সিল করে দেয়া যায় না? আবার ভেবে দেখে লাইসেন্সধারী ব্যবসা বন্ধ করা যায় না। সবদেখে শুনে সে দোকানে ফিরে আসে। মন খরাপ হয়েছে কিনা বুঝতে বুঝতে না পারলেও তার কন্ঠ থেকে আর কোন গান বা সঙ্গীত বের হয় না। হৈ চৈ শেষ হওয়ার পরও লোকজন আসতে লাগলো । যে যার মতো পথ চলছে । কিন্তু অল্প কিছুণ পর সে বুঝতে পারলো - লোকজন জানতে চাইছে, গ্রিন ভিউ রেস্ট হাউজে কি ঘটেছে, হৈ চৈ'টা কিসের হয়েছিল। সে কয়েকজনকে বললো, কিছু ঘটেনি, কিছু হয়নি। উত্তর শুনে লোকজন সন্তুষ্ট হয় না। কে সন্তুষ্ট হলো আর কে হলো না তাতে তার কি । সে আবার কাতল সঙ্গীতে ডুব দিতে চেষ্টা করলো কিন্তু পারলো না । সানু ভাই নামে একজন প্রতিদিন দোকানে একবার হলেও ঢুঁ দিয়ে যায়। সানু ভাই এলো। সানু ভাইও একই বিষয়ে জানতে চাইলো। সে কিছু বলার আগেই চাচাতো ভাই আলাউদ্দিন বললো, গ্রিন ভিউ রেস্ট হাউজ থেকে পুলিশে চারটা কাতল ধরে নিয়ে গেছে। সানু ভাই রাগি চোখে আলাউদ্দিনের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলো। সে বিষয়টি বুঝিয়ে বলার পর সানু ভাই চলে গেলো। সে আলাউদ্দিনকে বললো, আর যেনো কাতল নামটি মুখে না আনা হয়। আলাউদ্দিন চুপ করে রইলো। কিছুণ পর বিপুল আগ্রহ নিয়ে চারটি ছেলে এলো। তাদের দৃষ্টিতে যেনো এক্স-রে মেশিন বসানো। এরা বড়শির কাঁটা সুতা আর কয়েকটা ফাৎনার অর্ডার দিয়ে গ্রিন ভিউ রেস্ট হাউজের দিকে মুখ করে দোকানের মেঝেতে বসে রইলো । ছেলেরা গ্রিন ভিউ রেস্ট হাউজের প্রতিটি রুমে যেন তন্ন তন্ন করে কি খুঁজছে । তারা গড় পরতা নবম দশম শ্রেনীর ছাত্র হবে। কিন্তুু মনে মনে একেক জন যেন সোমত্ত পুরুষ । এবং এখনি রেস্ট হাউজের মালিককে জিজ্ঞেস করবে- আপনি এখানে কি ব্যবসা ‘জোড়াইছেন’ । এই দেখেন আমাদের রক্ত কি রকম টগবগ করছে। আমরা স্কুলে যাবার সময় সব কিছু ভুলে আপনার রেস্ট হাউজটা মগজে নিয়ে স্কুলে যাই এবং প্রতিদিন কোন না কোন কাসে মার খাই । আজ আপনার একদিন কি আমাদের একদিন। ছেলেরা তখন ফিস ফিস শব্দে কথা বলে এবং আলাউদ্দিনের কাছে জানতে চায়, গ্রিন ভিউ রেস্ট হাউজে আসলে কি হয়েছে । আলাউদ্দিন যেন পণ করেছে ,আজ তার কথা শুনবে না। আলাউদ্দিন তার চোখের দিকে তাকিয়ে বললো, পুলিশে চারটা কাতল ধরে নিয়ে গেছে। ছেলেদের আগ্রহের মাত্রা থেকে আরো কি জাতীয় প্রশ্ন বের হয় বলা যায় না। তাই সে তাদের খরিদা বস্তু দ্রুত বুঝিয়ে দিয়ে বলে, যাও- তোমরা যাও। ছেলেরা চলে যায় কিন্তু অল্প কিছুণের মধ্যে ছেলেদের চার অভিভাবক এসে উপস্থিত । ভদ্রলোকদের কোন ছেলেকে সানু ভাই থাপ্পড় দিয়েছে আর বাকিদের প্রচন্ড ধমক দিয়েছ । এখন সানু ভাই কোথায় তাকে বলতে হবে এবং গ্রিন ভিউ রেস্ট হাউজ থেকে পুলিশ কাতল ধরে নিয়ে গেছে এমন কথা সে কি কারণে ছড়াচ্ছে তাও বলতে হবে।
সে ভাবে বদনামের কাতল সিল যেহেতু লেগে গেছে সেহেতু ভাল ভাবেই লাগা উচিত। সে মনে মনে এ ভদ্রলোকদেরকে ধরার ইচ্ছে পোষন করছিলো অনেক আগ থেকেই। ‘এ কাতলগুলো প্রতিদিন এ রাস্তা ধরে অফিসে যায়, ব্যবসায় যায়, ফিস ফিস করে ,আলাপ করে, গ্রিন ভিউ রেস্ট হাউজের মালিকের এথিকস সম্পর্কে নিশিরাতের টিভির বগ বগ করা আলোচনার মতো করে চুলচেরা বিশ্লেষন করে কিন্তু কাজের কাজ ‘ছইদ্দানা’ (শিমের বিচি)!’
তাদের ছেলেরা পথে সানু ভাইকে জিজ্ঞেস করেছে রেস্ট হাউজে কাতল ধরা পরেছে তা সত্য কি না। সানু ভাই উচিত শাস্তি দিয়েছে।
সে অপেক্ষা করতে লাগলো, দেখা যাক তারা আর কি করে । সে তাদেরকে বসতেও বলে না । তখন একজন মোটামুটি তেজি গলায় জানতে চাইলো- এই বেটা কাতল কি’রে? । সে অপো করছিলো এমন একটা কিছুর জন্য। তবু সে উত্তর না দিয়ে চুপ রইলো। এবার বাঘের গর্জন শুনা গেলো। একবারে সুন্দর বনের বাঘ। অভ্রভেদি হুঙ্কার: এই বেটা চিনিস আমরা কে? সে তাদেরকে ভাল করে চিনে এবং তারাও তাকে ভাল করে চিনে। ‘চিনিস’ শব্দটি কেমন যেন ক্রোধ ধরে টান দিয়ে তাকে উলঙ্গ করে দিলো : ‘চিনিস’ ফিস ফিস কিচমিচ কিচ কিচ ভিজ ভিজ ভিজা বিড়াল শালারা...(তার মগজের ভেতর), সে চিৎকার দিয়ে উঠলো- তোরা ভেজা বেড়াল শালারা, তোদের আমি ভাল করে চিনি।
ভদ্রলোকদের মুখ যেন পাতলা থিন পেপারে মোড়ানো থাকে ,আগুন দিলে যে পেপার সবার আগে আস্তিত্ব হারায়, মুচড়ে যায়, ছাই হয়ে যায়। সে চেয়ে দেখলো ভদ্রলোকদের মুখের অবস্থা সে রকমই। এবার তারা তাকে কি বলবে? তারা না ভদ্রলোক । সে আরো এক কদম এগিয়ে গেলো, চারটা উঁমাচরনের কাঁটা দেখিয়ে বললো, এগুলো কাতলের কাঁটা , ঠিক দুই ঠোট একত্রে করে এই কাঁটা লাগিয়ে সারা শহর ঘুরাবো। লোকজনকে বলবো, এবার চারটা পুরুষ কাতল ধরা পরেছে, আপনারা দেখেন ।
তারা তার দোকান থেকে কয়েক কদম দূরে সরে গেলো। কিন্তু একবারে চলে না গিয়ে সামনে দাঁড়িয়ে লোক জড়ো করার নিরব চেষ্টা করতে লাগলো। তাতে কাজও হলো । তাকে এবার জবাব দিহি করতে হবে। অপরিচিত লোকজনের সাহস কোথায় যে তাকে কিছু জিজ্ঞেস করে। পরিচিতদের দু’একজন প্রশ্ন করার সাথে সাথে গলা ছেড়ে সে বললো , ‘ঐ রেস্ট হাউজ থেকে পুলিশে চারটা কাতল ধরে নিয়ে গেছে, এখন এজন্য আমাকে এ ভদ্রলোকেরা জেরা করতে এসেছে।’ মালন চাচা বললো, কাতল মানে ? সে বললো ,হ্যা কাতল , আমি কাতলই বলেছি, আপনি পারলে এবার চিতল বলেন , তখন আপনাকেও জবাব দিহি করতে হবে কেন চিতল বললেন। মালন চাচা কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললো, বাবারা চলে যান। এসব লজ্জাজনক বিষয়ে বাড়া বাড়ি না করাই ভালো। ভদ্রলোকদের চোখ ফেটে যেনো জল আসার উপক্রম। একটু মুখ খারাপ হলে তারা তার চৌদ্দগুষ্টি উদ্ধার করতে পারতো । তাতে তার কিছু না হলেও তাদের ঝালতো মিটতো।
২.
তারপর থেকে কাতল গল্প মহামারির মতো ছড়তে লাগলো। হাসপাতালের (পাশে বড় একটি হাসপাতাল থাকার কারনে) ডাক্তারদের কেউ কেউ কাতল মাছ বড়শিতে আটকালে কিভাবে সুতা নিয়ে দৌড় লাগায়, মোটামুটি কত দূর গিয়ে পাক বা চক্কর নেয়, তখন ‘বৈড়াল’কে কী করতে হয় , তা অভিনয় করে দেখালে তারা বুঝতে পারে তাদের কেউ কেউ অভিনয় গুন ধারণ করে । তাদের মধ্যে মনোচিকিৎসকটি মনো যাতনায় ভুগতে থাকলেও কিছু বলতে পারে না । তার মনে হয় তাদের কারো কারো সন্তান এমন ভাবে বড় হচ্ছে যে, সে বুঝতে পারে না তার
সন্তান কি কারণে লেখা পড়া ভুলে যায়। অথবা সে সন্তান কি কারণে পর্দাহীন প্রাণীর মতো তাকিয়ে থাকে এবং সব দেখে । তারা তখন রোগীদের সঙ্গেও এ বিষয়ে মত বিনিময় করে অথবা রোগীরা তাদের সাথে এ বিষয়ে কথা বলে আনন্দ পায়। কিন্তু তারা যখন বুঝতে পারে তাদের প্রতিদিনের আসা যাওয়া গ্রিন ভিউ রেস্ট হাউজের সামনে দিয়ে, তখন তাদের ভেতরগত চিন্তাটির মৃত্যু হয় এবং তখন তারা কিছু ঘটবে এমন কিছুর জন্য অপেক্ষা করেত থাকে এবং বুঝতে পারে তারা বুদ্ধিমান কিন্তু খুব অসহায় এবং বিগত সময়ে তারা যত বেশি বাকপটুতা অর্জন করেছে তত বেশি দুর্বল হয়েছে, ফলে কে একজন উঁমাচরনের কাঁটায় আটকিয়ে চারটি কাতল সমস্ত শহর ঘুরিয়েছে তা বিস্ময়কর ভেবে আনন্দ পেতে চেষ্টা করে। তবু তারা অপেক্ষায় থাকে হাওয়া থেকে কোন একজন উকিল (হয়তো উকিলটি তার ভাই) এসে বিষয়টির সাথে নিজকে এমনভাবে মেখে ফেলবে যার ফলে অনেক মানুষ এক সঙ্গে দীর্ঘ একটা স্বস্তির নিঃশ্বাসে অংশগ্রহন করবে। একই রকম অপেক্ষায় থাকে আশপাশের প্রতিটা বাসিন্দা।
কিন্তু তখনও আশপাশের পান দোকান চা দোকান ঔষধের ফার্মেসি ডেকোরেটর দোকান অফিস স্টেসনারি দোকনে বিভিন্ন ফরমে কাতলের আলোচনা সমালোচনা অভিনয় তর্ক বিতর্ক ধুমসে চলতে থাকে। ফলে গ্রিন ভিউ রেস্ট হাউজের মালিকের নামটি আবার নুতন করে সবার সামনে চলে আসে। কিন্তু প্রকৃত মালিক রেস্ট হাউজটি ভাড়া দিয়ে নিরাপদ দূরত্বে অবস্থান নেয়ার কারনে বিষয়টি ফসকে যাবার উপক্রম হয়। তবে ভদ্রলোকদের সাথে তার খারাপ ব্যবহারের কারনে একটি জটিলতা ক্রমশ বিস্তার লাভ করতে থাকে । নতুন করে অনেকে জানতে পায় এ রেস্ট হাউজের বর্তমান ব্যবসার ভাগ বাটোয়ারা বিভিন্ন জনে পেয়ে থাকে । ফলে তারা (ভাগবাটোয়ারাভোগীরা) তাকে ধরার অপোয় থাকে । তবে তারা সিদ্বান্তে পৌঁছতে পারে না এ কারনে যে তার একটি ভাই উকিল। তখন সে জানতে পারে আসপাশের সর্দার মাতবররা গ্রিন ভিউ রেস্ট হাউজের ভাড়াটে মালিকের সঙ্গে একটা দফা রফা করবে। এ ব্যাপারে তাকে উপস্থিত থাকতে হবে। তার বাবা তাকে নিষেধ করলেও সে বিচারে উপস্থিত থাকার জন্য প্রস্তুত থাকে। তার উকিল ভাইটিও তাকে বিচারে অনুপস্থিত থাকার পরামর্শ দিলে সে দুলতে থাকে। কোন্ দিকে যাবে সে স্থির করতে পারে না। সর্দার মাতবররা তার দোদুল্যমানতার খবর পেয়ে তার সাথে দেখা করলে সে তাদের মনের অবস্থা জানার চেষ্টা করে । সে কিছু প্রশ্ন করে এবং সর্দার মাতবররা সে সকল প্রশ্নের উত্তর দেয়:
১) ভদ্রলোকরা কি এ বিচারে উপস্থিত থাকবে? না উপস্থিত থাকবে না।
২) যারা বাগ ভাটোওয়ারা নেয় তারা কি উপস্থিত থাকবে? না থাকবে না।
৩) আসপাশের ব্যবসায়িরা কি উপস্থিত থাকবে? না থাকবে না
৪) রেস্ট হাউজের মূল মালিক কি উপস্থিত থাকবে? না থাকবে না।
৫) অমার কি উপস্থিত থাকার প্রয়োজন আছে ? হ্যা আছে।
এবার সে নিশ্চিত হয় এ বিচারে উপস্থিত থাকবে না ।
বিচারের নির্দিষ্ট তারিখ পার হয়ে যায়। তারপর বিষয়টি সকলে প্রায় ভুলতে বসে। প্রকৃতপক্ষে ভুলেই যায়। তখন একদিন বাড়ি ফেরার পথে হঠাৎ বিদ্যুৎ চলে যাওয়ায় অন্ধকারের মধ্যে সে আটকে যায়। তারপর সে আর কোন কিছু মনে করতে পারে না
আমরা জানতে চাইলাম, কেন তার কোন কিছু মনে নেই।
তখন সে তার মাপলারটা খুলে দেখালে আমরা দেখতে পাই তার গলার অবস্থাটি যেন ঘাউড়া জলার সেই কাতলের গলা। তার গলার চামড়া মাংস এমন ভাবে উপরে নিচে স্থানচ্যুতির পর নতুনভাবে স্থাপিত হয়েছে যা দেখে আমরা উপস্থিত সকলে প্রায় একই সঙ্গে জানতে চাই - কারা এমন করলো?
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই এপ্রিল, ২০১০ দুপুর ১২:১৭