১.স্বাধীনতার স্বাদ
বিয়ের প্রায় তিন মাস পর সঞ্জয়ের কল পেয়ে চিলের মতো ছোঁ মেরে কলটা রিসিভ করলাম।
-কয়েস ভাই, কয়েস ভাই! আমি এখন স্বাধীন। আমি এখন স্বাধীন, কয়েস ভাই, আমি স্বাধীন!
- কী ব্যাপার! কী হইসে?
-আরে কয়েস ভাই, এটা বুঝলেন না? আমি ভাই এখন মুক্ত, একেবারে মুক্ত।
-কি হইসে খুইল্যা কও।
-আহ! কয়েস ভাই, আজি কি আনন্দ আকাশে বাতাসে। কি আনন্দ!
-ধুর মিয়া! কী হইসে কও।
- বউকে এক মাসের জন্য তার বাবার বাড়ি রেখে আসছি!
২.বিক্রয় হইবে
নিজের বাড়িতে থাকার আর কোন সামর্থ্য তাদের ছিল না। বয়েস হয়ে গিয়েছিল। তার উপর ছিলেন নিঃসন্তান। অনেক শখ করে বাড়িটা বানিয়েছিলেন। বেশ বড় করেই বানিয়েছিলেন। তিন বেড, এক ড্রয়িং, প্রতি রুমের সাথে এটাচ্ড বাথরুম। কোনকিছুই কোন কাজে লাগে নি। তাই একসময় তারা দুজন একটা বৃদ্ধাশ্রমে উঠলেন, বাড়ির গেটে একটা সাইনবোর্ড টানিয়ে। সাইনবোর্ডে লেখা:
বিক্রয় হইবে।
বাড়িটা এখন নতুন কোন স্বপ্ন শুরুর অপেক্ষায়।
৩.মুহূর্তের খেলা
মাঝে মাঝে মুহুর্তের মধ্যেই জীবন পাল্টে যায়!
বর্ণালীর ক্ষেত্রে শুরু হয়েছিল প্রচন্ড রকমের ব্যাথার ঝড় দিয়ে। একেকটি ঝড় তার আগেরটির চেয়ে আরো ভয়াবহ রূপ নিচ্ছিল। তার মুখ ব্যথায় কুঁকড়ে উঠছিল বারবার। সে চিৎকার করছিল। তার আর্তচিৎকারে আশেপাশের লোকজন ভীত থেকে আরো ভীত হয়ে পড়ছিল।
১০ ঘন্টা অনবরত ব্যাথার ভিতর দিয়ে যাবার পর অবশেষে সেই জীবন পাল্টানো মুহুর্তটি আসল।
ফুটফুটে একটা মেয়ে শিশুর আগমন ঘটল।
৪. দৈব শক্তি
আমার প্রেমিকাকে ইদানিং আমি মাঝে মাঝে বেশ চমকে দেই। সেদিন কথায় কথায় বললাম, আচ্ছা বলতো, হুসেন নতুন নাম্বার নিল কেন? সে অবাক হয়ে বলল, কোন হুসেন? বললাম, আরে ঐ যে নর্থসাউথে পড়ে। মীরা অবাক হয়ে বলল, তুমি হুসেনকে চিনলে কিভাবে? আমি হেসে উত্তর দিলাম, বাদ দাও তো এসব।
আরেক দিন বললাম, আগামীকাল যখন আমার সাথে দেখা করতে আসবে তখন তোমার সেই ব্লু জিন্স আর লাল টপস্টা পড়ে আসবে।
-ছি! ওসব কি আমি পরি?
-এইতো সেদিন পরলে যে!
-কোন দিন।
- পহেলা বৈশাখের আগের দিন। ১৩ এপ্রিল!
-আরে বুদ্ধু ওটা তো বাসায় পরেছিলাম। তাও কিছুক্ষণের জন্যে।
-ও আচ্ছা।
-কিন্তু...কিন্তু রিয়াদ, তুমি এ কথা জানলে কী করে?
- আরে বাদ দাও তো! এমনি মনে হল তাই বললাম।
আমি এ পাশ থেকেই মীরার ঠিকরে বের হয়ে যাওয়া অবাক চোখ দুটো দেখতে পেয়ে মুচকি হাসলাম।
পাঠক আপনারাও নিশ্চয়ই অবাক হচ্ছেন। না, আমি দৈব কোন শক্তির অধিকারী নই।
আসলে আমি মীরার ফেসবুক আইডি হ্যাক করতে সক্ষম হয়েছি মাত্র।
৫.৫=২
-জানিস বাবু, ৫ দিনের সমান মজা আমি দুই দিনে করি।
-কি বলিস!
-সপ্তাহে দুদিন যে আমার বাবার ছুটির দিন।
৬. ব্যাংকার সাহেব
তিনি রোজ সকালে উঠে স্নান করে নিজের পরা কাপড় ধুঁয়ে নাস্তা খেয়ে ব্যাংকের উদ্দেশ্যে রওনা দেন। রাত নটায় যখন বাড়ি ফেরেন তখন দেখেন তার সেই সকালে ধোঁয়া কাপড়গুলো গুছিয়ে রাখা। তিনি আবার ঐ কাপড়গুলোই পরেন। ভাবেন কেবল রাতটাই তো। কী দরকার আর কোন কাপড় পরার! এভাবে বাড়িতে রাতের পর রাত তিনি একটাই কাপড় পরতে থাকেন তা পরার অযোগ্য হওয়া পর্যন্ত।
৭.ভার্চুয়্যাল সম্পর্ক
‘আমরা সারা জীবন একসাথে থাকব’- ফেসবুক মেসেঞ্জারে মাধুরীর টেক্স্টটি পড়ার পর বাবুল উত্তরে লিখল, ‘সারা জীবনের পরের জীবনেও...’
একসময় তাদের দেখা হল। তারা অনেকক্ষণ গল্প করল। কিন্তু কেন জানি না, আগের কোন ভাল লাগা কাজ করছিল না তখন।
তখন তারা দুজনেই স্বীকার করল,
ভার্চুয়্যাল সম্পর্ক ভার্চুয়্যাল জগতেই মানায়।
৮.ফ্যান
ছেলেবেলায় খুব ভোরবেলা আমি যখন গভীর ঘুমে, বাবা এসে মাথার উপরে ঘুরতে থাকা ফ্যানের স্পীড কমিয়ে দিতেন। গরমে আমার ঘুম ভেঙে যেত। এই মানুষটা কেন যে এ কাজটা করতো, বুঝতাম না। শুধু বাবা বলে কথা! নয়তো কী যে করতাম!
এখন খুব ভোরে ঘুম ভেঙে গেলে যখন বুঝতে পারি ঠান্ডা লাগছে, তখন মনে হয় পাশের রুমে ঘুমিয়ে থাকা ছেলেটোরও বুঝি ঠান্ডা লাগছে। বিছানা থেকে নেমে তাই ছেলের মাথার উপরে তীব্রভাবে ঘুরতে থাকা ফ্যানটার স্পীড অনেক কমিয়ে দিয়ে আসি।
৯. বই পড়া
ছোটবেলায় খুব বই পড়তে চাইতাম। গল্পের বই। কিন্তু মা পড়তে দিত না। বলত, এখন পড়ার বই পড়। বড় হয়ে ইচ্ছে মতো যে কোন বই পড়তে পারবে।
এখন আমি অনেক বড়। আমার বুক শেলফ জুড়ে প্রচুর বই। কিন্তু বই পড়ার আর ইচ্ছে হয় না। সময়ও বের করতে পারি না।
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই মে, ২০১৬ রাত ৯:২৯