সাত সকালে সাফা পাহাড়ের চূড়া থেকে তীব্র এক চিৎকার মক্কাবাসীদের কানে প্রবেশ করল। “হে ভোরের বিপদ, হে ভোরের বিপদ’ -কথাগুলো বুঝতে কারোর কষ্ট হল না। নিশ্চয়ই কোন বিপদ আসন্ন। কোন গোত্র কি মক্কাবাসীকে আক্রমণ করতে এগিয়ে আসছে? সকলে শব্দের উৎসের দিকে এগিয়ে গেল। ও মা! এ যে দেখি মুহম্মদ! মুহম্মদ (সাঃ) তখন সবে ইসলাম নামের নতুন এক ধর্ম প্রচার শুরু করেছেন। এ বিষয়টি বাদ দিলে, মক্কার লোকেরা কিন্তু তাকে খুব বিশ্বাসও করে। মুহম্মদ (সাঃ) তখন তার সামনে সমবেতদের জিজ্ঞেস করলেন, ‘যদি আমি তোমাদের এ কথা বলি যে এ পাহাড়ের পেছনে এক সেনাবাহিনী তোমাদের উপর আক্রমণ করার জন্য প্রস্তুত হয়ে রয়েছে, তবে কি আমায় বিশ্বাস করবে?’ লোকেরা জবাব দিল, ‘হ্যা আমরা কখনো আপনার মুখে মিথ্যে কথা শুনি নি।’
সমবেতদের মধ্যে উপস্থিত ছিল মুহম্মদ (সাঃ) এর চাচা, আবু লাহাব। এই আবু লাহাব ছিল অঢেল সম্পদশালী এবং প্রভাবশালী ব্যক্তি। তার ভাতিজা নতুন ধর্ম প্রচার করা শুরুর পর থেকেই সে তাঁর চরম বিরোধিতা করে আসছিল। হযরত মুহমম্দ (সাঃ) যেখানেই ইসলাম প্রচারে যেতেন, আবু লাহাব তার পিছু গিয়ে হাজির হত এবং সবাইকে বলে বোড়াতো, এই লোকটা মিথ্যাবাদী। তোমরা এর কথা বিশ্বাস কর না। মুহম্মদ যখন তার স্বজাতিকে আল্লাহর পথে আহ্বান জানাতেন তখন সে বলে উঠতো, ‘ যদি আমার ভাতিজার কথা সত্য হয় তবে আমি কিয়ামতের দিন আমার ধন-সম্পদ আল্লাহকে দিয়ে বিনিময়ে তার আযাব থেকে আত্মরক্ষা করব।’ শুধুমাত্র আবু লাহাব না, তার স্ত্রীও রাসুল (সাঃ) এর বিরোধিতায় ছিল সক্রিয়। সে জঙ্গল থেকে কাঁটাযুক্ত কাঠ সংগ্রহ করে এনে তা রাসুল (সাঃ) এর চলার পথে ফেলে রাখতো। মহামূল্যবান একটি মালা সে তার গলায় পড়তো। মুহম্মদ (সাঃ) এর ইসলাম প্রচার সহ্য করতে না পেরে সে বলে বেড়াতো, মুহম্মদের বিরোধীতায় যদি প্রয়োজন হয় তবে এ মালা বিক্রি করতেও আমার আপত্তি থাকবে না।
তো যাই হোক, হেরা পাহাড়ের পাদদেশে সমবেত সবাই যখন তাকে বিনা বাক্যে বিশ্বাস করার অঙ্গিকার করল তখন মুহম্মদ (সাঃ) বলে উঠলেন, `শোনো আমি তোমাদের আল্লাহর ভয়াবহ শাস্তির আগমন সংবাদ দিচ্ছি।' একথা শুনেই আবু লাহাব বলে উঠল, ‘একথা বলার জন্যই কি তুমি আমাদের ডেকেছো? তোমার প্রতি অভিষাপ বর্ষিত হোক।’ আবু লাহাব তার দলবল নিয়ে ফিরে চলল।
নাযিল হল:
১. ধ্বংস হোক আবু লাহাবের হস্তদ্বয়; ধ্বংস হোক সে নিজেও। (আবু লাহাবের ধ্বংস হোক।)
২. তার ধনসম্পদ ও তার উপার্জন তার কোন উপকারে আসেনি।(তার ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি তার কোন কাজে আসবে না। )
৩.অবশ্যই সে লেলিহান আগুনে নিক্ষিপ্ত হবে।(জাহান্নামের আগুন হবে তার শেষ ঠিকানা।)
৪.এবং তার স্ত্রীও যে ইন্ধন বহন করে।(তার স্ত্রীও- যে নিজেও আবু লাহাবকে ইন্ধন যোগাতো, রাসুল (সাঃ) এর চলার পথে ফেলে রাখার জন্য যে কাঁটাযুক্ত কাঠ বহন করে নিয়ে আসতো- সমান শাস্তি পাবে। )
৫.তার গলায় থাকবে খেজুর ডালের আঁশের পাকানো শক্ত রশি। (তার গলায় মালার পরিবর্তে খেজুর ডালের রশি বাঁধা থাকবে। )
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা মে, ২০১৬ সকাল ৯:৫৬