মুহম্মদ (সাঃ) তখন প্রকাশ্যে ইসলাম প্রচার শুরু করেছেন। যে কারণে কুরায়েশরা তার উপর চরম বিরক্ত। তাকে দমিয়ে দেয়ার উদ্দেশ্যে তারা তার বিরূদ্ধে নানারকম চক্রান্তে লিপ্ত। এমনই এক চক্রান্তের অংশ হিসেবে তারা সবাই মিলে একত্রিত হল মুহম্মদ (সাঃ) এর জন্য ব্যঙ্গাত্মক কোন নাম রাখার জন্য। কেউ বলল তার নাম কাহিন বা গণক রাখা হোক, কেউ বলল, তার নাম মাজনূন বা পাগল রাখা হোক। কেউ বা প্রস্তাব করল, তাকে সাহিন বা জাদুকর বলে ডাকা হোক। তাদের এমন বৈঠকের কথা শুনে রাতের শুরুতেই নবী করিম (সাঃ) চাদর মুড়ি দিয়ে শুয়ে পড়লেন। তখন জীবরাঈল (আঃ) তার নিকট আল্লাহর ওহী নিয়ে হাজির হলেন। ওহীতে আদেশ করা হল, ঘুমিয়ে না থেকে রাত্রি জাগরণ করে তাহাজ্জুদের নামায পড়তে।
১. হে বস্ত্রাবৃত!
২. রাত্রি জাগরণ কর কিছু অংশ ব্যতীত।
৩. অর্ধ রাত্রি কিংবা তার কিছু কম।
৪. অথবা তারচে কিছু বেশি। আর কুরআন আবৃত্তি কর ধীরে ধীরে, স্পষ্ট ও সুন্দরভাবে। (এখানে মূলতঃ তাহাজ্জুদের নামায পড়তে বলে এর সময় নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে। সুরা বনি ইসরাইল অনুযায়ী তাহাজ্জুদ নামায হযরত মুহমমদ (সাঃ) এর জন্য একটা অতিরিক্ত কর্তব্য ছিল।)
৫. আমি তোমার প্রতি অবতীর্ণ করছি গুরুভার বাণী।
৬. প্রকৃতপক্ষে রাতের বেলা জেগে উঠা প্রবৃত্তিকে নিয়ন্ত্রণ করতে অনেক বেশি কার্যকর।
৭. দিনের বেলা তোমার জন্য রয়েছে অধিক কর্মব্যস্ততা। (দিনের বেলা নবীকে অনেক কাজে ব্যস্ত থাকতে হয়, তাই রাতের ইবাদতের প্রতি গুরুত্বারোপ করা হয়েছে।)
৮. সুতরাং তুমি তোমার প্রতিপালকের নাম স্মরণ কর এবং একনিষ্ঠভাবে তাতে মগ্ন হও।
৯. তিনি পূর্ব ও পশ্চিমের অধিকর্তা, তিনি ব্যতীত কোন মা’বুদ নেই।অতএব তাকেই গ্রহণ কর কর্মবিধায়ক রূপে।
ইসলাম ধর্মের প্রচারণা এলাকার সম্পদশালীদের স্বার্থে আঘাত করছিল। তারা রাসুল (সাঃ) এর বিরূদ্ধে নানা রকম অপপ্রচার চালাচ্ছিল। আল্লাহ নবী করিম (সাঃ) কে সেইসব বিদ্রুপাত্মক কথা ও প্রচারনায় ধৈর্য্য-হারা না হবার পরামর্শ দিলেন। আরো নির্দেশ করলেণ, সেই ব্যক্তিদের তার উপর ছেড়ে দিতে। তারা কিছুতেই তাদের কৃতকর্মের ফল এড়াতে পারবে না।
১০. লোকে যা বলে তাতে তুমি ধৈর্য্য ধারণ কর এবং সৌজন্যের সাথে তাদের পরিহার করে চল।
১১. এসব মিথ্যা আরোপকারী সম্পদশালী লোকদের সাথে বোঝাপড়ার ব্যাপারটা আমার উপর ছেড়ে দাও। আর কিছুকালের জন্য তাদেরকে এ অবস্থাতেই থাকে ত দাও।
১২. আমার নিকট আছে শৃঙ্খল, প্রজ্বলিত অগ্নি,
১৩. আর আছে এমন খাদ্য যা গলায় আটকে যায় এবং যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি।
১৪. সেই দিবসে পৃথিবী ও পর্বতমালা প্রকম্পিত হবে এবং পর্বতসমূহ বহমান বালুকারাশিতে পরিণত হবে।
মিশরের রাজা ফিারউনও তাদের শাস্তি এড়াতে পারে নি। মূসা (আঃ) জন্ম নিয়েছিলেন এমন সময় যখন ফেরাউনরা মিশর শাসন করছিল। মুসা (আঃ) এর জন্মের পূর্ব সংকেত পেয়ে ফোরউন রাজা নির্দেশ করেছিল রাজ্যে কোন পুত্র সন্তান জন্ম নেয়া মাত্রই যেন তাকে হত্যা করা হয়। কিন্তু মূসা (আঃ) এর মা মূসার জন্মের পর তাকে একটা বাক্সে ভরে নদীতে ভাসিয়ে দিলেন। সেই বাক্স ভাসতে ভাসতে গিয়ে পৌছাল ফেরাউনের বাড়ীর কাছে। পুত্র সন্তান দেখে ফেরাউন যখন তাকে মেরে ফেলার নির্দেশ দিল তখন ফেরাউনের স্ত্রী বাঁধা দিলেন এবং ছেলেটিকে দত্তক নিতে চাইলেন। ফেরাউন তার স্ত্রীর অনুরোধ উপেক্ষা করতে পারল না। মূসা (আঃ) বড় হলেন ফেরাউনের বাড়ীতেই এবং এক সময় আল্লাহর নির্দেশ পেয়ে ফেরাউনকে আলোর পথে আনতে চাইলেন। কিন্তু ফেরাউন তাকে অমান্য করল এবং ফলশ্রুতিতে শাস্তি হিসাবে সমুদ্রে ডুবে মরল।
১৫. আমি তোমাদের নিকট পাঠিয়েছি এক রাসূল তোমাদের জন্য স্বাক্ষীস্বরূপ, যেমন রাসুল পাঠিয়েছিলাম ফেরাউনের নিকট।
১৬. কিন্তু ফেরাউন সেই রাসূলকে অমান্য করেছিল, ফলে আমি তাকে কঠিন শাস্তি দিয়েছিলাম।
তাই আল্লাহর আদেশ অমান্য করার শাস্তি সবাইকেই পেতে হবে। শেষ বিচারের দিন প্রতিশ্রুত বিচার থেকে কেউ রক্ষা পাবে না।
১৭. অতএব যদি তোমরা কুফরী কর তবে কি করে আত্মরক্ষা করবে সেই দিন, যেইদিন কিশোরকে পরিণত করবে বৃদ্ধে,
১৮. যেইদিন আকাশ হবে বিদীর্ণ, তার প্রতিশ্রুতি অবশ্যই বাস্তবায়িত হবে।
১৯. এটা এক উপদেশ, অতএব যার অভিরুচি সে তার প্রতিপালকের পথ অবলম্বন করুক।
নবী করিম (সাঃ) রাত জেগে তাহাজ্জুদের নামায পড়া শুরু করলেন এবং তাকে অনুসরণ করল অন্যরাও। কিন্তু আল্লাহতা’লা জানেন যে এটা অনেক সাহাবীর কাছে মাঝে মাঝে কষ্টদায়ক হয়ে যেতে পারে। তারা অসুস্থ হয়ে পড়তে পারে। জিহাদে ব্যস্ত থাকতে পারে। তাই তাহাজ্জুদ নামাযের বিষয়ে পূর্বের নির্দেশ কিছুটা শিথিল করা হল।
২০. তোমার প্রতিপালক জানে যে তুমি জাগরণ কর কখনো প্রায় রাত্রির দুই তৃতিয়াংশ, কখনো অর্ধাংশ এবং কখনো এক তৃতিয়াংশ এবং জাগে তোমার সাথে যারা আছে তাদের একটি দলও এবং আল্লাহই নির্ধারণ করেন দিবস ও রাত্রির পরিমাণ। তিনি জানেন যে, তোমরা এর সঠিক হিসাব রাখতে পার না। অতএব আল্লাহ তোমাদের প্রতি ক্ষমা পরবশ হয়েছেন । কাজেই কোরআনের যতটুকু আবৃত্তি করা তোমাদের জন্য সহজ, ততটুকু আবৃত্তি কর,আল্লাহ জানেন যে, তোমাদের মধ্যে কেউ কেউ অসুস্থ হয়ে পড়বে, কেউ কেউ আল্লাহর অনুগ্রহ সন্ধানে দেশ ভ্রমণ করবে এবং কেউ আল্লাহর পথে সংগ্রামে লিপ্ত হবে। কাজেই কোরআন হতে যতটুকু সহজ সাধ্য ততোটুকু আবৃত্তি কর। নামায প্রতিষ্ঠিত কর, যাকাত প্রদান কর, এবং আল্লাহকে দাও উত্তম ঋন। তোমরা তোমাদের আত্মার মঙ্গলের জন্য ভাল যা কিছু অগ্রিম প্রেরণ করবে তোমরা তা পাবে আল্লাহর নিকট। ওটা উৎকৃষ্টতর এবং পুরষ্কার হিসেবে মহত্তর। আর তোমরা ক্ষমা প্রার্থণা কর আল্লাহর নিকট, নিশ্চয়ই আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।