দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জাপানের জীবানু গবেষণায় সরাসরি যুদ্ধবন্দীদের গিনিপিগ হিসেবে ব্যবহার করার কলংকিত ইতিহাসের সাক্ষী চীনের হারবিন। প্রাথমিকভাবে চীনের অংশ থাকলেও বিশ্বযুদ্ধের সময় জাপান রাশিয়ার হাত ঘুরে ১৯৪৬ সালে হারবিন আবার চীনাদের নিন্ত্রনে ফিরে আসে। তবে আধুনিক শহর হিসাবে হারবিনের গোড়াপত্তন রাশিয়ানদের হাতেই হয়েছিল। স্থাপত্যশৈলী, স্থানীয়দের শারীরিক গড়ন, উচ্চারণ সবকিছুতেই রাশিয়ান প্রভাব স্পষ্টতঃ লক্ষণীয়।
এসব ছাপিয়ে হারবিনের না শুনেই যে বিষয়টি সামনে উঠে আসে তা হলো বৈরী আবহাওয়া। শীতকালে মাইনাস ৫০ ডিগ্রীতে নেমে আসা ঠান্ডার তীব্রতা সশরীরে উপস্থিত না থাকলে বোঝা কঠিন। তবে এই ঠান্ডার বদৌলতেই হারবিনের খ্যাতি, গৌরবের বরফ স্থাপত্যগুলো তৈরী হয়। শীতের শুরুতেই তুষারপাত শুরু হলেও স্থাপত্য তৈরীর কাজ মোটামুটি ডিসেম্বর থেকে শুরু হয়। দর্শনার্থীদের জন্য জানুয়ারী থেকে খুলে দেয়া হয় প্রদর্শনীকেন্দ্রগুলো। তবে তীব্র শীত আর চাইনিজ ঐতিহ্যবাহী কিছু অনুষ্ঠানের কারণে ফেব্রুয়ারীতেই সবচেয়ে বেশী আকর্ষণীয়ভাবে উপস্থাপন করা হয় প্রদর্শনীগুলো।
এই বছরের জানুয়ারীতে এক প্রকার ঝটিকা সফরে গিয়েছিলাম হারবিনে। উদ্দেশ্য আইস ফেস্টিভাল দেখা। চীনে ভ্রমণ মানেই হয়তো বিদঘুটে কিন্তু মজার অনেক ঘটনার সাক্ষী হওয়া, সেগুলো লিখতে গেলে সিরিজ পোস্টেও কুলোবেনা। এটাই ট্রেনে প্রথম ভ্রমণ ছিল চীনে থাকাকালীন সময়ে। খরচ বাঁচাতে মোটামুটি সস্তা ট্রেনে যাত্রা, ঝলমলে স্টেশন থেকে তুলনামুলক জীর্ণতর ট্রেনে ওঠা।
৮ ঘন্টার ক্লান্তিকর ভ্রমণ শেষে হারবিন পৌঁছেই তুষার বৃষ্টির অভ্যর্থনা। স্টেশন থেকে বের হতেই প্রচন্ড বাতাস আর তুষার বৃষ্টিতে জান যায় অবস্থা। তাপমাত্রা অবশ্য ভালোই (!) ছিলো মাইনাস ৩১ ডিগ্রীর মত। সদ্য জমা তুষারের উপর দিয়ে বিচিত্র ভঙ্গিতে হেঁটে সড়ক পর্যন্ত যেতে পারলাম। কিন্তু নতুন বিপত্তি – অনেকগুলো লেন এর মধ্যে কোন বাস/ট্যাক্সির গন্তব্য (আপ/ডাউন) কোন দিকে বোঝা দুষ্কর। দিক-জ্ঞানতো ঠিক থাকার প্রশ্নই আসেনা।
অবস্থা বেগতিক দেখে ট্যাক্সি নেয়া হলো (ভুল লেন থেকে), কাছের লক্ষ্য হারবিন মসজিদ এর উদ্দেশ্যে। আধুনিক ঘরানার স্থাপত্য নকশায় তৈরী মসজিদ কমপ্লেক্সটি। সাদা-সবুজের অসাধারণ মিশেল এ রং। ভেতরে যেতেই দাওয়াত পেলাম লাঞ্চের । অসাধারণ আতিথেয়তায় দুপুরের খাবার খাওয়া হলো (তাদের অনুষ্ঠান ছিলো কিছু একটা)। তারপর নামাজ শেষে আবার ট্যাক্সিতে আইস ফেস্টিভাল স্পটে যাত্রা।
প্রথম পার্কটিতে মুলতঃ ভাস্কর্যের প্রদর্শনী। বিশাল বিশাল ভাস্কর্য গুলো সাদা বরফ দিয়ে বানানো, যার কিছু কিছু আবার বিভিন্ন মজার মজার অভিব্যক্তি প্রকাশ করে। এই পার্কের সম্পূর্ণ নির্মাণ তখনো শেষ হয়নি। তবে প্রচন্ড ঠান্ডায় হাত কালো বর্ণ ধারণ করছিলো আর পায়ের ভারী বুট উপেক্ষা করে ব্যাথা অনুভব হচ্ছিল। তবে পরে অবশ্য এর একটা অস্থায়ী সমাধান হয়েছিল (থার্মাল প্যাড)।
দ্বিতীয় পার্কটিই ছিল হারবিনের মূল আকর্ষন। ছবি অনেক বেশী হয়ে যাওয়ায় পোস্টটি দুই ভাগে ভাগ করে দিলাম। পর্ব-২ এ থাকছে দ্বিতীয় পার্কের ছবিগুলো।
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই অক্টোবর, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:২২