somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বিমানে বিদেশী CEO নিয়োগ প্রসংগঃ জাতীয় লজ্জা নাকি লজ্জা থেকে উত্তোরণ পথ

২৪ শে এপ্রিল, ২০১৩ দুপুর ১২:১৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বিমানের বিদেশী CEO নিয়োগ বিষয়ে সাধারণ এবং আপাতঃদৃষ্টিতে স্বাভাবিক একটি প্রতিক্রিয়া- এটা আমাদের জাতীয় মর্যাদাকে ক্ষুন্ন করেছে কিনা, আমাদের দেশীয় মেধ্যার অবমুল্যায়ন হলো কিনা ইত্যাদি! আমি এই বিষয়টাকে পজিটিভলি-ই দেখতে চাই, নিচে কারণগুলো ব্যাখ্যা করছি।

একটা বিষয় বুঝতে হবে এটা শুধু ব্যক্তিগত দক্ষতার প্রশ্ন নয়; একজন দেশীয় কর্মকর্তাকে নিয়োগ দিলে তিনি কতটা স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারতেন? সরকারী অন্যান্য আমলা বা বিশেষ কোন মন্ত্রনালয়ের চাপ এড়ানো কতটুকু সম্ভব হতো? প্রাতিষ্ঠানিক লক্ষ্য অর্জনের চেয়ে ব্যক্তিগত বা গোষ্ঠীগত লক্ষ্যগুলোকে প্রাধান্য দেয়াই আমাদের এখানে সংস্কৃতি। হুট করে এই চক্র থেকে একজন সিনিয়র লোকের পক্ষে বের হয়ে আসা খুব সহজ নয়। হুমকি-ধামকিতো বোনাস। একটি উদাহরণ চিন্তা করা যাক- এক টিমে ৩ জন খুব দক্ষ খেলোয়াড় আছে যাদের সংশ্লিষ্ট খেলায় আদ্যোপান্ত দক্ষতা কিন্তু এদের তিনজন যদি তিনদিকে ওরিয়েন্টেশন ধরে রেখে অচলাবস্থা তৈরী করে তখন কর্তৃত্ব চতুর্থ জনের হাতে দেয়াই কাঙ্ক্ষিত। একই পর্যায়ের আরেকজন বাংলাদেশীর ডমিনেন্স বা সদুপদেশ মেনে নিতে আপত্তি থাকলেও বিদেশী পেশাদারের উপর ছড়ি ঘোরানোর আগে আমলা/কর্মকর্তাদের একটু আগ-পিছ ভাবার সম্ভাবনা আছে বৈকী (এটা দাসত্ব করার মানসিকতা? খারাপ জিনিষ- কিন্তু মনটা যেহেতু ৬০/৭০ বছরেও বদলায়নি, শীঘ্রই বদল হওয়ার সুযোগও কম, তাহলে নেগেটিভটাকেই পজিটিভলি ব্যবহার করার চেষ্টা করা যায়। মন্দ কী!)।

আর ব্যক্তিগত দক্ষতার প্রশ্ন যদি ওঠেই- পরিসংখ্যান দেখতে হবে, ছোট ছোট প্রাইভেট এয়ারলাইন্সগুলোর কয়টা লাভে আছে, কয়টা আশংকাজনকভাবে ক্ষতির সম্মুখিন। বিমানের মত প্রতিষ্ঠান চালানোর জন্য অভিজ্ঞ লোকটা/লোকগুলো কোথা থেকে তৈরী হবে? বিমানবাহিনীর ডেপুটেশন? অতীত বর্তমানের রেকর্ড আর দুই ধরণের প্রতিষ্ঠানের ব্যাকগ্রাউন্ড তুলনা করে দেখলেই হবে, এটা নিয়ে মন্তব্য করতে চাইনা। এই ধরণের প্রতিষ্ঠানের মাথা যারা তাদের ট্রায়াল-এরর করে শেখার সুযোগ নেই, এখানে হ্যাঁ-না গুলোর প্রতিক্রিয়া হয় মিলিয়ন-বিলিয়নে। তাছাড়া আমরা হয়তো জাতিগতভাবেই রুটিন কাজে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি, কেউ ছক বানিয়ে দেবে আর সেই ছক মেনে আটটা-পাঁচটা অফিস করবো - এই হলো আমাদের কাজের প্রকৃতি। কিন্তু উদ্যোগী ও উদ্যমী যেই CEO'র ভার্সন এই ছক বানানো বা পুনর্বিন্যাসের কাজে অভ্যস্থ বা স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে, এমন আইডিয়াবাজ আঁতেল কিন্তু অস্বাভাবিক চালু এবং নিজের কাজে দক্ষ CEO আমাদের ওখানে হয়তো এখনো তৈরী হয়নি। রবীন্দ্রনাথ বেচারা কষ্ট পেয়ে বলেছিলেন-

"আমরা না পড়িয়া পণ্ডিত, আমরা না লড়িয়া বীর, আমরা ভান করিয়া সভ্য, আমরা ফাঁকি দিয়া পেট্রিয়ট্। আমরা ভারি ভদ্র, ভারি বুদ্ধিমান, কোন বিষয়ে পাগলামি নাই। আমরা পাশ করিব, রোজগার করিব ও তামাক খাইব। আমরা এগোইব না, অনুসরণ করিব, কাজ করিব না, পরামর্শ দিব!"

তবে হয়নি মানে হবেনা তা নয়, অদূর ভবিষ্যতে হয়তো হবে, কিন্তু এই মুহুর্তে একটা দৃষ্টান্ত দরকার ছিল বলেই আমার মনে হয়। এই লিংকে নতুন CEO'র কিছু উদ্যোগের বিবরণ পাওয়া যাবে।

যদি বিদেশী নিয়োগ করা লজ্জার বিষয় হয় তাহলে আমরা সেই লজ্জা পাওয়ারই উপযোগী। মর্যাদা ধারণের যোগ্যতা ছাড়া বেহুদাই মর্যাদার মুখোশ পরে কেবল নিজের ঘরের মধ্যে বসে আত্নম্ভরিতা দেখানোর কোন মানে হয়না। দুর্বলতা মেনে নিলে তা থেকে উত্তোরণের পথ বের হয়। গুরুত্বপূর্ণ হলো দেশী/বিদেশী যাই হোক আসলেই যোগ্য লোক নিযুক্ত হলো কিনা। ভবিষ্যতের কথা জানিনা কিন্তু গোঁ ধরে বাস্তবতাকে উপেক্ষা না করে, একে আর তার অভিজ্ঞতাকে কিভাবে কাজে লাগানো যায় তার চিন্তা করাই ভালো, অন্ততঃ বিমান বানিজ্যিকভাবে নিজের খরচে নিজে চলার মত পর্যায়ে উঠে আসার বিকল্প নেই। পাশাপাশি লোকালদের ডেভেলপ করার চেষ্টা করা যেতে পারে, কিন্তু তাতে সময় লাগবে, ওই বিকল্প তৈরী হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করা ছাড়া বিকল্প কী?

ছবির লিংকঃ
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে এপ্রিল, ২০১৩ বিকাল ৫:২৭
৬টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কমলার জয়ের ক্ষীণ ১টা আলোক রেখা দেখা যাচ্ছে।

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:১৮



এই সপ্তাহের শুরুর দিকের জরীপে ৭টি স্যুইংষ্টেইটের ৫টাই ট্রাম্পের দিকে চলে গেছে; এখনো ট্রাম্পের দিকেই আছে; হিসেব মতো ট্রাম্প জয়ী হওয়ার কথা ছিলো। আজকে একটু পরিবর্তণ দেখা... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:২৪



সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪১





বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৩২



জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×