অবকাঠামোগত উন্নয়নের কাজ চলছে এমন শহরগুলোতে (স্বয়ংসম্পূর্ণ শহরগুলোর তুলনায় মফস্বল বলাই হয়তো ভালো) চীনের সুপরিকল্পিত উন্নয়ন কর্মকান্ডের ছাপ স্পষ্টতঃই বোঝা যায়। সব জায়গাতে একই সময়ে বিশালায়তনের সব নির্মাণকাজ চলছে, একটা শেষ হলে আরেকটা ...
এখানে আসার পর শীতের এক সকালে এক চীনা ভদ্রলোকের আমন্ত্রণে একা একাই চলে যাই থিয়েশি জেলায়। বেইজিং, শাংহাই এর মত শহরে যারা থাকেন তারা হয়তো রাস্তার বিড়ম্বনা সম্বন্ধে অতটা ওয়াকিবহাল নাও হতে পারেন। ভাষা না জানা থেকে বিড়ম্বনার শুরু। আমি তখন চাইনিজে হাই হ্যালো বলা শিখেছি কেবল ! যাইহোক কিভাবে যেতে হবে জেনে নিয়ে রওনা হলাম।
আমি যেখানে থাকি সেখান থেকে সাবওয়ে স্টেশন বেশ দূরে (কাছেরটার নির্মাণ কাজ চলছে), বাসে যেতে হয়। বাসে উঠেই যন্ত্রনার শুরু 'সান্তাই জিয়ে' নামে যে স্টেশন সেই জায়গাটা আমি চিনিনা - আর আমি যে চিনিনা তাই পৌঁছে গেলে ডেকে দিতে হবে এটা এখন ড্রাইভারকে কিভাবে বুঝাই !! হাত-পা ছোঁড়াছুঁড়ি করে কোনমতে বুঝালাম। এখানে বলে রাখি এদের বাস সার্ভিস কোনমতেই ঢাকার চেয়ে ভালো নয়। সেই চাপাচাপি-গাদাগাদি ... বরং বাসে বসার জন্য সিট কম (হয়তো বেশী যাত্রীধারণের জন্য)। তবে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা অবশ্যই অনেক অনেক ভালো। যাই হোক পাতাল রেলের টিকেট উঠে পড়লাম সহজেই। দুই চাইনিজের সাথে প্যাচাল পাড়তে পাড়তে পৌঁছেও গেলাম।
ড্রাইভার একখান কী বলেন !
শেনইয়াং মেট্রো
সেই দুই চাইনিজ
যেই কাজে গিয়েছি তার তখনো বেশ দেরী, এদিকে দুপুরে খাওয়ার সময় হলো। এখনতো আরেক যন্ত্রনা হালাল খাবার পাই কই !! কে এফ সি আর ম্যাকের কিছু মাছের আইটেমের বিশ্বাস আছে, এ ছাড়া এরা যে কিসের সাথে কি মেশায় ... আর সবচেয়ে বড় কথা জিজ্ঞেস করে বুঝাইতেইতো পারবোনা !! যাই হোক ওই জিনিষইবা কোথায় পাই, কত ভাবেই না বুঝাইলাম মারে! ভাইরে! দুইটা খাইতে চাই! আমি কী কই আর তারা কী বোঝে !!শেষে জয়নুল সাহেবের বুদ্ধি, ম্যাক আর কে এফ সি র লোগো র কাছাকাছি কিছু একটা এঁকে দেখাতেই সন্ধান মিললো ... পাইলাম অবশেষে উহাকে পাইলাম ... এবং খাইলাম।
লোহার তৈরী ভাস্কর্য ক্রেনের হুকঃ এটাই মনে হয় থিয়েশি স্কয়ার
করছেটা কী দেখেন! পিছে একটা লোহা দিয়া বানাইছে, শখ মিটেনাই বরফ দিয়াও বানাইতে হইবে -
এরপরের কাজ ঠিকানা খুঁজে বের করা! এক বড়সড় সুপার মার্কেটে "হিংলিশ ঠকিন" সেলসগার্ল খুঁজে বের করে লোকেশন জেনে নিলাম ... তারপর ... আর বইলেননা হাঁটার কোন শেষ নাই, ফেরিওয়ালা, পুলিশের কর্তা যারেই জিগাই খালি কয় ... এই ... সামনে ... তা সামনে যাইতেছি তো যাইতেছি ... যাই হোক শেষে কাজ ভালোভাবেই সারলাম।
ইহা এমন এক শপিং মল যেখানে ট্যাগে কোনটা কাপড়ের সাইজ আর কোনটা দাম তা নিয়ে কনফিউজ হইতে হয়
এমন অসংখ্য হাইরাইজড বিল্ডিং এ সারা শহর সয়লাব
ফেরার জন্য ট্রেনে উঠবো - কই যাবো ... স্টেশনের নাম বলি তারা কিছু বুঝেনা, এক জেলা থেকে আরেক জেলা আসতেই উচ্চারণে ভিন্নতা! এলাকা বুঝাইলাম কিন্তু এইবার টিকেট কাটার সিস্টেম দেইখা আরেক বাঁশ, বাংলা সিস্টেমে ক্যাশ নোট (কয়েনও হতে পারে তবে কার্ড নয়) মেশিনে দিতে হবে টিকেট আর চেঞ্জ বের হয়ে আসবে। কিন্তু দুচোখে খালি চাইনিজ ই দেখতেছি!! তাছাড়া হাজার হোক চাইনিজ জিনিষ ... ২০ টাকার টিকিটের জন্য ১০০ টাকার নোট দিয়ে কোন বিপদে পড়ি ... !! করিটা কী!! শেষে এক পুলিশরে ধরলাম ... তুই আমার ... (কিসের) ... ভাই ... টিকেটখান বাইর কইরা দে ... তারপর ... চিটাগাং ভার্সিটির শাটলের মতো মেট্রোতেও ব্যাপক ভীড়ের মধ্যে ঝুলতে ঝুলতে ফিরলাম হোম স্টেশনে। কিন্তু এবার আবার সেই বাসে চড়তে হবে, ততক্ষণে বেশ রাত হয়ে গেছে। ঝুলতে ঝুলতে যেই বাস স্টেশনে যাবো তার নাম ইতিমধ্যে হজম হয়ে গেছে ... এক মার্কেটের নাম মনে থাকায় রক্ষা ...
তারপর আর কী ... ফিরে এলাম বাড়ী।
ওখানে গিয়েছিলাম ১৫ ফেব্রুয়ারী ২০১২ এ।
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে মে, ২০১২ রাত ১২:৪৮