আমি খুব কুঁড়ে রাধুনী। তবে, মিষ্টান্ন জাতীয় খাবার বানানোতে আমার সুনাম আছে। আমার হাতের গাজরের হালুয়া, গাজরের জর্দা, ডিম আর পেপের হালুয়া, ছানার সন্দেশ বেশ ভালো হয়। পেপের হালুয়া মাত্র একবারই বানিয়েছিলাম; প্রথমবারেই বাজিমাত করেছিলাম।
আমার মামনী আমার রান্নার বা কোন কাজের প্রশংসা সহসা করেন না। কিন্তু সেদিন তিনি খুব গাল ভরে বলেছিলেন, “দারুন মজা হইছে!” শুনে রীতিমত অবাক হয়ে গিয়েছিলাম।
আমার মতন কুঁড়ে রাধুনী প্রয়োজনেই রাঁধে না; সেখানে আবার আমার জ্বরতপ্ত শরীরে রান্নাঘরে যাবো- এমনটা মা কেউই আশা করেনা। সবাইকে অবাক করে দিয়ে বলে উঠলাম, কাল আমি কিছু হালুয়া করবো।
সেই কয়েকটি নিয়েই আজকের আয়োজন।
(ক)
গাজরের জর্দা/শেমাই
উপকরণঃ
১। এক কেজি গাজর কুরানো
২। এক লিটার দুধ
৩। তিন পোয়া চিনি
৪। এলাচ- ৩টি (গাজর একটু ঝাঁঝালো বলে এলাচ বেশি)
৫। দারচিনি-২টি মাঝারী
৬। ঘি-২টেবিল চামচ/ ৩চা চামচ
প্রস্তুত প্রণালীঃ
১। আস্ত গাজর দুই-একবার পানিতে ধুয়ে প্রতিটির গোড়া সামান্য কেটে নিতে হবে। ২। ভালো করে পানি ঝরিয়ে নিয়ে গাজর কুরানোর মেশিন দিয়ে সব গাজর কুঁড়িয়ে নিতে হবে।
৩। বড় সিলভারের কুঁড়ানো গাজর দিয়ে চুলায় তাওয়ার উপরে কড়াই বসাই। জ্বাল থাকবে মাঝামাঝি। (তাওয়ার ওপরে কড়াই বসানো হলো, চুলার তাপ সরাসরি লেগে পোঁড়া লাগবেনা।)
৪। লিটার দুধের প্যাকেট কেটে দুধ ঢেলে দেই। নাড়তে থাকি। নেড়ে দুধ আর গাজর মিশিয়ে নেই।
৫। দুধ যখন জ্বাল হয়ে শুকিয়ে গাজরের সম পরিমান হয়ে যাবে তখন চিনি ছেড়ে দেই। চিনি আগেই ছাড়লে চিনি হতে পানি ছাড়বে বলে এই ব্যবস্থা।
৬। নাড়তে নাড়তে যখন চিনির পানিও শুকিয়ে যাবে তখন ঘি দেই এক চামচ। কিছুক্ষণ নেড়েচেড়ে আবারো ঘি দেই।
৭। এলাচি-দারচিনি গুলো খুঁজে তুলে নেই। নইলে বেশি নাড়াচাড়ায় বীচি বেরিয়ে গেলে খাবার সময়ে দাঁতের নিচে পরে খারাপ লাগবে।
৯। চুলা হতে গরম গরম অবস্থাতেই কোন চ্যাপটা প্লেটে নামাই। হালকা ঠান্ডা হতে দেই কিছুক্ষণ। তারপরে বরফি কাটা বা মিষ্টির মতন সাইজ; যেরকম বানাবার ইচ্ছে সেরকম করে নেই। গরম অবস্থা কেটে গেলে ফ্রিজে রেখে ঠান্ডা করে পরিবেশন করি।
১০। চুলা থেকে গরম অবস্থায় নামিয়ে তার উপরে কিসমিস, পেশতা বাদাম অথবা কাজু বাদামের টুকরো ছড়িয়ে দেয়া যেতে পারে। অথবা মাওয়া গুড়ো।
- - - - -
(খ)
মাওয়া বানানোর নিয়মঃ
এক চামচ গুড়া দুধ, এক চামচ গোলাপ জল, এক চামচ চিনি মিশিয়ে ফ্রিজে কিছুক্ষণ রেখে জমে এলে পাটায় বেঁটে নিতে হবে মিহি করে।
- - - - -
(গ)
ডিমের বরফিঃ
এটা একটা ঝটপট মিষ্টান্ন। আমার আবার মিষ্টি জাতীয় খাবার খুব পছন্দ। দুপুরের বা রাতের খাবারের পর সামান্য হলেও মিষ্টি জাতীয় কিছু খাওয়া চাই। তাই ঝটপট কিছু বানিয়ে রাখলে একদিকে যেমন হঠাত আসা মেহমানের আপ্যায়নেও কাজে লাগে তেমনি আমার নিজেরও রসনা তৃপ্তি হয়।
উপকরণঃ
১। এক হালি ডিম
২। এক কাপ চিনি
৩। দুই কাপ দুধ
৪। সামান্য সুজি
৫। গোলাপ জল
৬। জাফরান রঙ
৭। ঘি
৮। গরম মশলা/ দারচিনি।
প্রস্তুত প্রণালীঃ
১। প্রথমে ডিম ফাটিয়ে নিয়ে একটি বড় বাটিতে দুধের সাথে ভালোভাবে ফেটিয়ে নিতে হবে।
২। দুধ ও ডিমের মেশানো মিশ্রণে চিনি ঢেলে ভালোভাবে মিশিয়ে নিতে হবে। ৩। কড়াইতে ঘি ঢেলে তার ভেতরে দুধ-চিনি মিশ্রিত ডিম ছেড়ে দ্রুত নাড়তে হবে।
৪। সুজিও ঢেলে মিশিয়ে নেই। এই সময়েই দুধ জমাট বেঁধে গুড়িগুড়ি দানা বেঁধে ধরবে।
৫। কড়াই এর নিচে পাতলা তাওয়া দিয়ে নিলে ভালো হয়।
৬। এক ফাঁকে এলাচি/ দারচিনি দেই।
৭। জাফরান রঙ চিনির পানিতে গুলিয়ে ঢেলে দেই। ভালোভাবে মিশাই।
৮। শুকনো শুকনো হয়ে এলে আবার সামান্য ঘি দিয়ে নেড়ে দেই।
৯। ভাজা ভাজা হলে নামিয়ে নেই। পাতলা কোন ট্রের মতন প্লেটে ছড়িয়ে দিয়ে হালকা ঠান্ডা হলে বরফি কেটে নেই। এমনিতে বাটিতেও রাখতে পারি।
১০। সবশেষে মাওয়া গুড়া ছড়িয়ে দেই।
- - - - -
(ঘ)
গাজর অথবা পেপের নরম হালুয়াঃ
উপকরণঃ
১। গাজর/ পেপে এক কেজি
২। এক কেজি লিটার দুধ
৩। আধা কেজি চিনি(চিনি পরিমানমত; যে যেমন খেতে পছন্দ করে তেমন বুঝে)
৪। ঘি- ২/৩ চামচ
৫। এলাচি/ দারচিনি- ২/৩টা
প্রস্তুত প্রণালীঃ
১। গাজর/পেপে ছিলে নিয়ে টুকরো টুকরো করে সেদ্ধ করে নিতে হবে।
২। তারপরে ভালোমত পানি ঝড়িয়ে নিয়ে মিহি করে ব্লেন্ড করে নিতে হবে।
৩। দুধের সাথে ভালোভাবে মেশাতে হবে হাত অথবা চামচ দিয়ে।
৪। চিনিটাও ভালোভাবে মিশিয়ে নিতে হবে। তারপরে সমস্ত মিশ্রণ একসাথে করাইতে ঢেলে নিতে হবে।
৫। তারপরে চুলায় মিশ্রণটি ক্রমাগত জ্বাল দিতে হবে।
৬। পানি পানি ভাব সরে গেলে ওতে এলাচ, দারচিনি দিতে হবে। নাড়তে হবে।
৭। ভাজা ভাজা হয়ে এলে কড়াই হতে চ্যাপ্টা প্লেটে ছড়িয়ে রাখতে হবে যদি বরফি কাটার ইচ্ছে থাকে। আর সে ইচ্ছা না থাকলে সরাসরি বাটিতে ঢেলে নিলেই চলবে। বাটি হতে পরিবেশন করা যেতে পারে। বাটি অথবা প্লেটে রেখে তার উপরে মাওয়া গুড়া ছিটিয়ে দেয়া যেতে পারে। অথবা, পেশ্তা বাদাম, কাজু বাদাম বা কিশমিস ছড়িয়ে দিলে দেখতে সুন্দর লাগবে।
বরফিঃ
কথায় কথায় বেলা হলো। যার যার শেখার দরকার শিখে নাও; সাথে খেতে মনে চাইলে খেয়ে যাও। সবাইকে পবিত্র শব-ই-বরাতের শুভেচ্ছা!!