পর্ব-০১:
বিবাহ আসন্ন।
তরুণীর পিতা-মাতা ব্যস্ত হইয়া উঠিয়াছে। গৃহের কোথায় কি লাগাইয়া গৃহকে আরও সজ্জিত করিবেন তাহা নিয়া তরুণীর পিতার আগ্রহ ও চিন্তার কমতি নাই। লোকজন নিযুক্ত করিয়া সারাদিন রাত্র ধরিয়া তিনি তাহাই সম্পন্ন করিতেছেন।
তরুণী তাহার পিতামাতাকে ইত্যাকার ব্যস্তসমস্ত হইতে পূর্বেও আরো কয়েকবার দেখিয়াছে। পাত্রপক্ষ বিপুল আগ্রহ লইয়া উহাকে কয়েকবার দেখিয়া গিয়াছে। পড়াশুনা, সূচিকর্ম, রন্ধনকার্যসহ তরুণীর নানাবিধ গুণের বাহার দেখিয়া বিপুল পরিমাণ প্রশংসা বাক্য ঝরাইয়া তাহাদিগের জন্য প্রস্তুত খাদ্যদ্রব্যের সমূহ গূণকীর্তন করিয়া হাসিমুখে প্রস্থান করিয়াছে এই বলিয়া যে, অতিসত্তর তাহারা শুভকার্য সম্পন্ন করিতে এই গৃহে প্রত্যাবর্তন করিবেন। কিন্তু, বলা বাহুল্য, তাহারা যদি তাহাদের বাক্য রক্ষা করিতেন তাহা হইলে উক্ত তরুণী আজকে দুই-তিন সন্তানের মাতা হইয়া তাহাদিগকে লালনপালনেই নিজেকে নিয়োজিত রাখিতে ব্যস্ত থাকিত।
এহেন নতুন করিয়া বিবাহের প্রস্তাবের সম্মুখে তরুণীর কোনও ভাবান্তর লক্ষ্য করা যাইতেছে না। তাহা হইলে সে কি এতটুকুও বিচলিত নহে?
তরুণীর মাতা ইদানিংকাল লক্ষ করিতেছেন, তাহার কন্যা রাত্র দ্বিপ্রহরের আগে বিছানাগ্রহণ করে না। তাহার কক্ষের আলোখানা জ্বলিতে থাকে অনেক রাত্র অবধি। জিজ্ঞাসা করিলে কন্যা উত্তর প্রদান করে, তাহার কাজ থাকে। মাতা ভাবিয়া পায়না, কি তাহার এত কাজ যাহা রাত্রী জাগিয়া করিতে হয়। তিনি কন্যার মুখপানে চাহিয়া চাহিয়া লক্ষ করিতে থাকেন। তাহার কন্যাকে যেন কিঞ্চিত মলিন মলিন দেখা যায়। ইহা কি উহার রাত্রী জাগরণের ফল নহে! আসন্ন বিবাহের প্রস্তুতিতে তাহা যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া বর্ষণ করিবে না তাহা কে বলিতে পারে। মাতা মনে মনে স্থির করিলেন, কইন্যার এহেন রাত্রী জাগরণ অবিলম্বে বন্ধ করিতে হইবে।
একদা কইন্যা বসিয়া রহিয়াছিলো। আপন চিন্তায় বিভোর হইয়া কি যেন ভাবিতেছিলো। মাতা আসিয়া তাহার নিকটে বসিলেন। এবং কহিলেন, “রাত্রী জাগরণ কমাইয়া দিয়া নিজ সাস্থ্যের দিকে মনযোগ দাও। তোমার দিগে তো চাহিয়া দেখা যায় না। কিরকম মলিন দেখিতে হইয়া যাইতেছ।“
কন্যা পিতামাতার অবাধ্য নহে। সে নিজেও বুঝিতে পারিতেছিলো। তাহার উক্ত অভ্যাস পরিবর্তন আবশ্যক হইয়াছে। তথাপি, কোন কাজেকর্মে নিজেকে ব্যতিব্যস্ত না থাকিয়া থাকিয়া তাহার মনের ভিতরে জং ধরিয়া যাইতেছিলো। নিজেকে এহেন বিষন্নতার খনির আঁধারে ডুবাইয়া দিতে না চাওয়ার কারণেই নিজেকে ইদানিং ইন্টারনেট পাঠকের খাতায় নাম লিখিয়া লইয়াছে। উহা করিবার পরে, তাহার এহেন বদ অভ্যাস হইয়া উঠিয়াছে। নানাবিধ লেখক, অ-লেখকের গল্প-কাহিনী-কবিতা পাঠ করিতে করিতে কখন যে সময় অতিবাহিত হইয়া ঘুমের স্বাভাবিক সময় উত্তীর্ণ হইয়া যায় তাহা নিজেরও বোধগম্য হইয়া উঠেনা।
যাহা হউক, উক্ত আদেশের পরে দুই-তিনদিন অতিবাহিত হইয়াছে।
তরুণী সক্কাল বেলা ঘুম হইতে উঠিয়া সকালের আহারাদি সম্পন্ন করিয়াছে। অতঃপর, নিজেকে প্রস্তুত করিতেছে। বাহিরে যাইবে। গন্তব্য সৌন্দর্য বটিকা। নিজের মুখমন্ডল উত্তমরুপে পরিস্কার করিবে। নিয়মিতই উহা সে করাইয়া থাকে। আজকাল ইহাই ফ্যাশন হইয়া দাঁড়াইয়াছে।
তরুণী নিজ ব্যাগে টাকা-পয়সা গুছাইয়া লইতে গিয়া দেখিতে পাইলো উহাদের সকলই অতিশয় বিশাল। যানবাহনে চড়িবার পূর্বে উহাদিগকে খুচড়া করিয়া লইতে হইবে। অতি অবশ্যই। তাহা না করিলে রিকশাওয়ালার নিকটে নিজেকে কর্তন করিতে হইতে পারে।
নিজেকে সম্পূর্ণরুপে প্রস্তুত করিয়া তরুণী ব্যস্তসমস্ত হইয়া বাহির হইয়া আসিলো। গৃহের প্রধান দ্বারের নিকটে বাহির হইতে সময় দূর হইতেই তিনজন পরিচিত চেহারা নজরে আসিলো। নিকটে যাইয়া নিজে কথা কহিবার পূর্বেই অপেক্ষাকৃত আকৃতিতে ছোটজন বলিয়া উঠিলেন, “কোথায় যাইতেছো, পারুল?” তরুণী উত্তরে কিছুই না বলিয়া স্মিত হাসি উপহার প্রদান করিল। তাহার পরে উক্ত রমণী তাহার শুভ্র বর্ণের উপরে হালকা নীল বর্ণের ছটা সম্বলিত পোশাকের প্রশংসা প্রকাশ করিতে লাগিলো; কোথা হইতে ক্রয় করিয়াছ, দোকানী কত লইয়াছে, কোথা হইতে উহাকে বানাইয়াছ ইত্যাকার প্রশ্নের কারণে টাকা খুচরা করিয়া লইবার কথা বেমালুম ভুলিয়া গেলো সে।
রিকশাযান ঠিক করিয়া তরুণী উঠিয়া বসিলো। রিকশা চলিতে আরম্ভ করিলো।
(চলিবে....)