টেলিপ্যাথি (প্রথম পর্ব)
দ্বিতীয় পর্ব
২২ তারিখ পেরিয়ে গেছে এক সপ্তাহ হয়ে গেছে! প্রতিদিনের কথামালাগুচ্ছ তো আসছেনা। “সকাল-সন্ধ্যা কেমন আছেন? কি করছেন?” টাইপের ছোট ছোট কথাগুচ্ছগুলো আসছেনা। কেন? আশিক বুঝে উঠতে পারে না কি করবে। বুকের ভেতরে মচড় দিয়ে ওঠে! ও কি বেশি দেরী করে ফেলছে? দীপাকে চিনতে?
না জানে মেরে দিল কো কেয়া খো গায়া/
আভি তো এহি, থা আভি, খো গায়া...
হো গায়া হে তুঝকো তো পেয়ার সাজনা...না কর দে তো ইনকার সাজনা...হা ইয়ে পেয়ার সাজনা...
***
না জানে মেরে দিল কো কেয়া খো গায়া/
আভি তো এহি, থা আভি, খো গায়া...
হো গায়া হে তুঝকো তো পেয়ার সাজনা...না কর দে তো ইনকার সাজনা...হা ইয়ে পেয়ার সাজনা...
দীপাকে দেখতে আসার কথা। যে আসছে তাকে দীপা দেখেনি। এমনকি ছবিও না। ছেলের বায়োডাটা দেখতে দেয়া হয়েছিলো ওকে। ও নিজের কাছে নিয়েওছিলো। কিন্তু, তিন চারদিন নিজের কাছে রেখেও মায়ের মুখে যতটুকু শুনেছে ততটুকু এমনকি এখন নামই বলতে পারবেনা। ওর মনযোগ ছিলোনা। ছিলো না দেখার আগ্রহ। একেতো এইসব দেখাদেখির ব্যাপার ওর কাছে একঘেয়ে হয়ে উঠেছে। দেখতে আসার নাম করে ‘আজ আসব, কাল আসবো’ বলে বলে মনের ভেতরে যখন জায়গা করে নেয়; মোটামুটি মানিয়ে নিতে শুরু করে যখন তখনই শুনে এখানে ওর বিয়ের ব্যবস্থা হচ্ছেনা।
তার উপর, মনের ভেতর সারাক্ষণ উঁকি দিয়ে যাচ্ছে আশিকের চেহারা। আশিকের কথার শব্দ যেন ওকে সারাক্ষণ আচ্ছন্ন করে রাখে। ওর সার্বক্ষণিক সঙ্গী মোবাইল ফোনটা হাতে নিয়ে ভাবে কখন আসবে আশিকের মুঠোবার্তা। ঘুমিয়ে যাওয়ার আগেও “শুভরাত্রী আশিক!” বলে ঘুমায়। ঘুমের মধ্যেও যেন জড়িয়ে রাখে ওকে আশিক। আশিকের আদরে আদরে কেটে যায় সারা রাত! স্বপ্ন নয়। একেবারে বাস্তব। আশিক শুধু ওর। ওর জন্মই শুধু আশিকের জন্য।
***
দীপা কি আমাকে খেয়াল করেনা? তা নইলে কেন আমাকে একবারও ‘হাই’ বলে ডেকে উঠেনা! আগে প্রোফাইলের ছবি দেখলে বলে উঠতো, “আপনাকে এই ছবিতেও জোশ লাগছে!” এখন কিচ্ছু বলে না। ওপাশ থেকে সারাশব্দ মেলেনা এতটুকু! যেন দীপার অস্তিত্বই নেই ওখানে।
আশিক বার বার নিজের নতুন নতুন ছবি শেয়ার করে নিজের উইন্ডোতে। পুরানা ছবিগুলোও শেয়ার করে। যেগুলো দীপা আগে দেখেছে সেগুলোও। কিন্তু, সাড়া মেলেনা। কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে আশিক সাইন আউট করে দেয়।
***
দীপার সাথে আশিককে মাঝেমাঝে অফলাইনেও কথা বলতে দেখা গেছে। দীপা সেটা মনেও রেখেছে। আশিক যখন অনলাইন থেকে অফলাইনে চলে যায় তখনো ওর ছবিটা জ্বলজ্যান্ত থেকেই যায়। মনে হয়, ও কথা বলতে শুরু করলেই সেখানেও আগের মত কথা ফুটে উঠবে। কথা বলার জন্য দীপার মন ছুটে যায়। তবু, আশিকের নিজে থেকে কথার অপেক্ষা করে যায়। কিন্তু, অপেক্ষা আর শেষ হয় না, আশিকেরও সাড়া মিলেনা। দীপা ওর স্ট্যাটাসের মেসেজ চেঞ্জ করে যায় অনবরত;-
“না জানি মেরে দিল কো কেয়া খো গায়া...”
আবার লিখে যায়- “ইট্টুসখানি দেখো, একখান কথা রাখো, ভালোবাইসা একবার আমায় বউ কইয়া ডাকো...”
আবার কিছুক্ষণ পরে সেটা চেঞ্জ করে লিখে- “কেন দূরে থাকো, কেন আড়াল রাখো, কে তুমি কে তুমি, আমায় ডাকো!...”
আবার আকাশ এর রঙ চেঞ্জ হয়ে মেঘলা মেঘলা ভাব নিয়েছে দেখে স্ট্যাটাসে লিখে রাখে...”এই মেঘলা দিলে একলা ঘরে থাকেনা তো মন...কবে যাবো, কবে পাবো ওগো তোমার নিমন্ত্রণ!”
এইসব স্ট্যাটাস এর মাধ্যমে ও আসলে আশিককেই ডাক দিয়ে যায়। কিন্তু, বুদ্ধু লোকটা বুঝতেই পারে না।
আজ শুক্রবার। আশিকের আজ অফিস ছুটি। লোকটা সকালের দিকে নেট এ আসে। ১১টার দিকে। দীপা বাসায় ছিলো না। বাইরে থেকে ফিরে বাসায় ঢুকে ১২টার একটু পর। ফিরে ফ্রেশ হয়েই ল্যাপটপ খুলে বসে। অনেকক্ষণ ধরে বসে থাকে। আশিকের জন্য।
অনেক বেলা পর্যন্ত বসে থেকেও আশিকের দেখা না পেয়ে যখন ভাবছে লগ আউট করে দেবে তখন দেখে আশিক অনলাইনে।
“আমার ল্যাপটপে চার্জ প্রায় শেষ। বাসাতেও কারেন্ট নাই। এতক্ষণে তুমি আসছ?” দীপার চোখেমুখে অভিমান। কিন্তু, বেশ কিছুক্ষণ অপেক্ষা করেও কোন সাড়া পায়না। আশিক নিজের ছবি চেঞ্জ করে।
আশিককে সামনাসামনি দেখে নাই দীপা। অধিকাংশ ছবি দেখে ওর ধারনা দৃঢ় হয়েছে যে আশিক এর গায়ের রঙ কালো; শ্যামলা নয়। দীপা শ্যামলা হলেও ফর্সার কাছাকাছি।
দীপা এই ছবিটা নতুন দেখছে। ইচ্ছে করছে সেভ করে নেয়। কিন্তু, এখানের প্রোফাইলে রাখা ছবিটা সেভ করে নিতে পারে না। “যেভাবে ছবি সেভ করতে হয় সেভাবে বোধহয় এখানের ছবি সেভ হয়না। কি জানি!” আফসোস করে ওঠে দীপা।
আগামীকালই ওকে দেখতে আসবে। হয়তো পছন্দও করে নেবে ওরা। বিয়েও হয়ে যেতে পারে। অথচ, ও ছবি তুলে রাখছে অন্য পুরুষের। আশিক লগ আউট। কিন্তু, ওর ছবিটা এখনও স্পষ্ট। ও বসে বসে ওর ছবিটা দেখতেই থাকে...
যেভাবে ও শেষ মেসেজ দিয়েছিলো তারপরে ওর দিক থেকে যোগাযোগ করার কোন যুক্তি হয়না। দীপা একা একা দাপিয়ে মরে। কিন্তু, আশিক নিজে থেকে একটা সাড়াশব্দও করছেনা। দীপা কি বলবে? হাতে পায়ে ধরে কি ভালবাসা যায়! ভালবাসা যায় একা একাই। কিন্তু, মনের মানুষকে জোর করে পেয়ে কি লাভ হয়! অপরপক্ষের সাড়া যখন আসে তখন সেটা পূর্ণতা পায়। দীপা অপেক্ষা করতে থাকে...
***
“নাহ্! বড্ড দেরী হয়ে যাচ্ছে! দীপা তো কিছুই বলছেনা। মনে হচ্ছে আমাকে ভুলেই গেছে। কিন্তু, এভাবে হলে চলবে কি করে? দীপাকে হারালে তো চলবে না।” “দীপাকে ফোন করবো?”
***
“আশিক, তুমি আজও আমাকে একটু ডাকবে না?”
“দেখো, ওরা তোমার দীপাকে নিয়ে যাচ্ছে। বউ করবে বলে। তুমি আটকাবে না?”
দীপা প্রতিদিন ভাবে আজ নিশ্চয়ই আশিক ফোন দেবে। সারাদিনের ব্যস্ততায় নিজেও ভাবে যে আশিকেরও অফিসের ব্যস্ততা আছে। তাই সারাদিনে ওর ফোন না পেলে রাগ করেনা। কিন্তু, আশিকের অফিস ছুটির পরেও, রাত নয়টায় ডিনার টাইম পেরিয়ে যাবার পরেও রাত ১১টায় ঘুমোবার সময় হয়ে এলেও যখন কোন বার্তা পায়না ওপাশ থেকে, দীপার অভিমান জমতে থাকে। জমে জমে বরফের আকার নেয়। এভাবে বাইশ তারিখ থেকে অপেক্ষায় অপেক্ষায় আটাশ পেরিয়ে ঊনত্রিশ তারিখও চলে যায়।
***
দীপাকে দেখতে আসবে। ছেলেরা উত্তরা থেকে আসবে। সন্ধ্যায়। বা বিকেলেও আসতে পারে। ছেলে আর ছেলের ভাই আসবে। পছন্দ হলে পাকা কথা দিয়ে দেবে আজই।
মায়ের মুখ থেকে এই কথা শুনে দীপা মায়ের হাস্যোজ্জ্বল চেহারার তুলনায় ততখানিই মিইয়ে যেতে থাকে! তাহলে আশিকের সাথে এই জীবনে আর দেখা হলো না। ওর একাকী জীবনের ইতি হতে যাচ্ছে। খালেদের সাথে। যাকে ও আগে থেকে ভালোবাসেনি। মানুষটা কেমন জানাও নেই এতটুকু। সংস্কৃতিমনা হবে কিনা তাও জানা নেই। যতটা জেনেছে ওরা ধার্মিক মেয়ে চায়। যদিও অতটা গোঁড়া ধার্মিক নয় দীপা। নামাজ-কালাম যতটুকু পড়ে।
***
- “দীপা আপনি কোথায় এখন?”
- “আমাকে মনে পরলো আপনার?”
- “আপনার কণ্ঠস্বর কেমন শোনাচ্ছে!”
- “কেমন?”
- “আপনি যেন কথা বলতে চাইছেন না!”
- “তাই বুঝি!” অভিমানে দীপার কণ্ঠস্বর নিভুনিভু। একটু যেন ভেজা সে কন্ঠ!
- “আপনি কি আজ ফ্রী আছেন?”
- “কখন?”
- “কখন ফ্রী আছেন?”
- “আমি...আমারতো আজ নিয়মিত কাজটা নেই। তবে...”
- “তবে... কি?”
- “বিকেলে তো আমার বাসায় থাকতে হবে!”
- “কেন? কেন বাসায় থাকতে হবে আপনার?”
- “আছে একটা কাজ!”
- “কি কাজ?”
- “আছে একটা কাজ!” কেমন করে বলবে যে ওকেই দেখতে আসবে ছেলেপক্ষ! “তুমিতো আসো নাই এই কয়দিন! কত অপেক্ষা করেছি তোমার জন্য!! এত কাজ তোমার, আমাকে একটু ভালোবাসার সময় নেই তোমার। একটু ডাকার সময় নেই!”... অভিমানে মনে মনে বলে যায় দীপা।
- “কিছু বলছেন না যে!”
- “হ্যাঁ বলুন! আপনার বুঝি আজ ব্যস্ততা নেই?!”...কন্ঠে একটু বিদ্রুপ ঢেলে দেয় দীপা।
- “হু? না...এই তো!... আপনি কি আজ আমাকে একটু সময় দিতে পারেন? মানে, দেবেন কি?”
- “এত আন্তরিক আহ্বান! কেন?”
- “না...মানে, আমাকে আপনার দেখার ইচ্ছে ছিলো না?”
- “আর আপনার বুঝি আমাকে দেখার ইচ্ছে নেই?”
- “ঐ একই কথাই তো হলো।“
ঘন্টাখানিক পর... ...
- “দীপা, আপনি কিন্তু আমাকে খুব ঘুরিয়েছেন।“
- “আমি!! কি রকম?” দীপা অবাক!
- “এই যেমন আপনি বলেছেন, আপনার চেহারা এতটাই খারাপ যে কেউ আপনাকে পছন্দ করছেনা!”
- “না, আমি এটা বলিনি। বলেছিলাম, আমার ছবি দেখে আমাকে আপনার পছন্দ হবে না। সামনাসামনি...দেখতে।“
- “কিন্তু, জানেন, ছবিতেও আপনি সুন্দর। যেমন সুন্দর দেখতে বাস্তবেও। ছবিতে ছাড়া। সামনাসামনি।“
- “তাই বুঝি?” মুখে এতটুকু বলে মনে মনে বলে উঠলো, “তাহলে তুমি ছবি দেখেও এই এক সপ্তাহে কেন কথা বলোনি? আমিতো ভেবেই নিয়েছিলাম, আর সবার মতই তুমিও ওখান থেকেই বিদায় নিলে!”
- “হুম!!!”
- “‘হুম’ অর্থ কি?”
- “আসলে এই এক সপ্তাহে আমি অনেক ভেবেছি। সেই সাথে আপনার মুঠোবার্তার অপেক্ষা করেছি!”
- “আপনি আমার মুঠোবার্তার অপেক্ষা করেছেন!” কথাটা দীপার বিশ্বাস হলো না!
- “বিশ্বাস করছেন না আমার কথা?”
- “কি করে করি? আপনার মধ্যে তো আমাকে মিস করার এতটুকু লক্ষণ ও দেখলাম না!”
- “কেন, আমাকে ইয়াহু-তে দেখেন নাই মাঝেমাঝে?”
- “হ্যাঁ। দেখেছি। কিন্তু, আপনি যে আমার জন্যই এসেছেন, তা কেমন করে বুঝবো? আমি ছাড়া বুঝি আপনার আর কেউ থাকতে নেই!”
- “অ, আপনি এই বুঝেছেন?”
- “তবে, কি করবো? আপনাকে পরপর কয়েকটা এসএমএস দিয়েছি। ইমেইল করেছি। আমার লেখা কিছু গল্প ও কবিতাও পাঠিয়েছি আপনাকে পড়ার জন্য। যেগুলোর একটা-দুটো আপনাকে নিয়েই লেখা।” দীপা চোখ নামিয়ে নিজের নখ খুঁটতে খুঁটতে কথাগুলো বলতে থাকে। চোখে মুখে লাজুক অভিব্যক্তি। তবু, নিজের কথাগুলো এই মুহুর্তে নিজেকেই বলে দিতে হচ্ছে!
- আশিকের চোখেমুখেও হাসি। “হ্যাঁ দেখেছি!”
- “কিন্তু, এরপরে আপনার দিক থেকে আসবে কোন হ্যাঁবোধক উত্তর। কিন্তু, আপনি এতটুকু সাড়া দিলেন না। আমি...”
- “আমি...কি বলবেন? বলে ফেলুন!”
- “আমার মেসেজগুলো বা লেখা থেকে কি আপনি কিছুই বুঝতে পারেন নাই?” দীপার খুব রাগ হচ্ছে। এই লোক দেখি ওর মুখ থেকেই সব স্বীকারোক্তি চায়। নিজে কি কিছুই বলবেনা? এতটা হেলে পরতে হচ্ছে ওকে।
কিছুক্ষণ নিরবতা। আশিকও কথা বলছেনা। দীপাও। বাইরে মেঘ করেছে আকাশে। জানালা দিয়ে দুজনের চোখই বাইরের প্রকৃতি পর্যবেক্ষণে মগ্ন। ওরা যেন পরস্পরের সাথে কথা বলতে আসেনি। দুইজন যেন দুইটি আলাদা উদ্দেশ্য নিয়ে এসে এখানে বসেছে। কেউ কাউকে চেনেনা। প্রকৃতি যেমন বিষন্ন! এই মুহুর্তে দীপার ভেতরে ভিড় করেছে সেইরকম বিষন্নতা। তোলপাড় করে চলেছে ওর ভেতরটা। এত কাছের মানুষটাকেও ও এখন ছুঁতে পারছেনা। নিজে আগ বাড়িয়ে বলতেও পারছেনা, “আশিক, আমি তোমাকেই চাই। তুমি কেন বুঝছোনা?”
দীপাকে আজ যে দেখতে আসবে, তাকে বিয়ে করার ইচ্ছে একেবারেই নেই। কিন্তু, যেহেতু, ওর নিজেরও কাউকে পছন্দ, আশিককে যে ওর পছন্দ তাওতো বাবা-মা’কে সেভাবে বলতে পারছেনা। আশিক তো নিজে থেকে এখনও কিছু বলছেনা। কি করে বাবা-মা’কে বলবে ও যে খালেদের প্রস্তাবে রাজী নয়!
লোকটা একটা চিজ! কিছুই বলছেনা। নিজের উপরই বড্ড রাগ লাগছে দীপার। ক’দিন ধরে আশিকের অপেক্ষা করতে করতে “আশিক যতক্ষণ না কোন আশার কথা শুনাবে, ও কিছুতেই ওকে পাত্তা দেবে না” ভেবে রাখলেও ওর ফোন পেয়েই দেখা করতে চলে আসলো। আর এখন...”এত আশা নিয়ে এসে কি হলো? কিচ্ছুনা!”
আশিকের ভেতরের ভাবনা টের পাচ্ছেনা দীপা। আশিকও ভেবে যাচ্ছে, কি করবে। মনে হচ্ছে এই মুহুর্তে কিছু একটা করতে না পারলে, যেন অনেক বড় ভুল হয়ে যাবে। এত কাছের দীপা যেন হারিয়ে যাবে অনেক অনেক দূরে, যেখান থেকে আর টেনেও আনা যাবে না। নাহ, আজই একটা কিছু করা দরকার।
আশিক কথা বলে উঠলো, “মিস দীপা?”
- “উঁ! হ্যাঁ!” চিন্তার জগত থেকে ফিরে এলো দীপা।
- “আপনার কি তাড়া আছে?”
- “কি জন্য ডাকলেন, বললেন না তো!”
- “এই তো! আপনাকে দেখার জন্য। আপনি দেখতে চেয়েছিলেন আমাকে! আমিও আপনাকে!”
- “ও, আচ্ছা!”বলে একটা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে মনে মনে বলে উঠলো, “কেন দেখলে তার কি কোন প্রতিক্রিয়া হয়নি গো?”
- “চলুন তাহলে আমরা বের হই।“
“ধুস!! লোকটা কিছুই জানালো না! তার মানে সে যে সুন্দর, তাকে যে সুন্দরী আখ্যা দেয়া, এইসবই মন ভুলানো কথাবার্তা!” দীপার আবারো কান্না পেয়ে যাচ্ছে। না পাওয়ার বেদনায়। আশাহত হওয়ার কষ্টে!
আশিক নিজের গাড়ি নিয়ে এসেছে। ওর সাথে বিদায় নিয়ে শেষ মুহুর্তে গাড়িতে উঠে যাবে এই সময় দীপার খুব ইচ্ছে করলো আশিকের সামনে গিয়ে বলে, “আশিক, আই লাভ ইউ!”
কিন্তু, ওকে অবাক করে দিয়ে আশিকই বলে উঠলো, “দীপা, আমি আপনাকে এই মুহুর্তে বিয়ে করতে চাই! আপনার কি অমত আছে?”
দীপা কি ভুল শুনলো? খুশিতে ওর ইচ্ছে করলো এই মুহুর্তে এত লোকজনের মধ্যেই আশিককে জড়িয়ে বলে উঠতে, “আশিইইইইইইইইইক, আমি এই দিনটির জন্য, এই মুহুর্তটির জন্য কতদিন ধরে অপেক্ষা করে আছি!” কিন্তু, ফিল্মী কায়দায় বাস্তবের মানুষদের অনেক কিছুই যে মানায় না। আশিকের প্রস্তাব পেয়ে হতভম্ভ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকায় দেখতে পায়নি, আশিক ওর গাড়ির এক পাশের দরজা খুলে ওকে ভেতরে ঢুকার আহ্বান করছে। বাসায় একটা ফোন করে মায়ের সাথে কয়েক মিনিট কথা বলে নিলো। ওর কন্ঠস্বরে উচ্ছ্বলতা!
দীপা গিয়ে উঠে বসলো ভেতরে। গাড়ি চলতে শুরু করলো ওদের দু’জনের ভবিষ্যৎ গন্তব্যে...
----->সমাপ্ত