"বিবর্ণ ভালবাসা দিবস!"
আচ্ছা, মন কেনো এমন হয়?
একটা বিয়ের প্রস্তাব এসেছে গত সপ্তাহে।
বুধবার কোচিং থেকে বাসায় এসে নিজের ঘরে বসে পেপার পড়ছিলাম। এই সময় মা আসলেন মুখ গম্ভীর করে।সোফায় বসলেন। বুঝলাম, নিশ্চয়ই কিছু বলবে।সিরিয়াস কিছু! কারন, আমার মা, আমাদের সাথে প্রায় সব বেপারেই খোলামেলা। কিন্তু, যখন সেরকম কিছু বলতে চান, গম্ভীর হয়ে যান।
যাই হউক, আম্মা আমাকে বললেন, মনু ফোন করেছিল। একটা ছেলের খবর দিয়েছে। আর বলেছে, ছেলের দাড়ি আছে, তোমার যদি এটাতে কোন প্রব্লেম না হয়, তাইলে কথা এগুবে।
আমার মনে প্রশ্ন এল, " শুধু কি দাড়ি ই, নাকি আরও কোন বেপার আছে?"
এটা মনে হবার কারন, আমার মা, কখনই পুরোটা বলেন না, কিছু কথা বাকি রাখা তাঁর অভ্যেস আছে।
যা হউক, মাকে বললাম, "না, দাড়িতে আমার কোন প্রব্লেম নাই। তার বেপারে আর কি বলেছে, বল?"
বলল, " ছেলের বাড়ী ফরিদপুর, ঢাকায় থাকে, কি যেন একটা চাকরী করে।"
"আর, এই খবরটা এনেছে, তোমার খালু"।
"খালু এনেছে এই খবর? তাইলেই হইছে!" মনে মনে বললাম।
কারণ, আমার ওই খালু ঘোর হুজুর। তবলিগ করেন। তিন চিল্লায় যান।মেয়ে মানুষকে দেখা দেন না। আমরা মেয়েরা কেউ ফোনে করলে, ধরেন না। মেয়েদের কে বোরখা ছাড়া দেখতেই পারেন না, ইত্যাদি বেপার সেপার।
ভাবলাম, আম্মাকে জিজ্ঞাসা করে লাভ নেই। যা জানা গেছে, তার বেশি আর বোধহয় বলবে না। তাই, এই বেপারে খালামনির সাথে ফোনে কথা বলাই ভাল হবে।
যেই কথা সেই কাজ।
খালামনিকে ফোন করলাম। সালাম দিয়ে সরাসরি আসল কথায় চলে আসলাম। ল্যান্ড ফোন থেকে মোবাইলে এত বেশক্ষন কথা বলা যাবেনা।
খালামনির কাছে যা জানলাম, তা হল, ছেলেটা তবলিগ করে।খালুর মতো তিন চিল্লায় যায়।দাঁড়ী আছে।এম.এ পাস। মোহাম্মাদপুরে বাসা।আর, তার সাথে মার কাছে যা শুনেছি তা ও জানলাম।
আমি বললাম, "দাঁড়ি থাকা তো মেইন বেপার না। আমি যেরকম ভাবে গড়ে উঠেছি, এই ছেলেতো সেই রকম নয়। আমি হুট করে এখনি বোরখা পড়া শুরু করতে পারব না। আর তাছাড়া, আমার ছবি আঁকা-আঁকির বেপারটা তার পছন্দ হবে কিনা, আমার সাথে তার মন-মানসিকতার মিল হবে কত খানি, এইসব দেখতে হবে।"
আরও বললাম," আমার আসলে এই রকম হুজুর টাইপের ছেলে পছন্দনা, জানেন ই তো!"
"আমাকে হঠাত করে এই রকম আমার সব পছন্দের বেপারগুলো বাতিল করেত কাউকে বিয়ে করতে চাইনা!"
এইরকম আরও কিছু কথা বলে আমি ফোন রেখে দিলাম।
এই প্রপোজাল টা শুনেই প্রথমে যে রকম ভীত হয়েছিলাম, সেটা পুরোপুরিই কেটে গেল, খালামনির সাথে কথা বলার পর।
আমার সাংস্ক্রৃতি মানসিকতা সম্পন্ন ছেলে ভালো লাগে।নামাজ-কালাম ও তার জানতে হবে।মানতে হবে। কিন্তু, ধর্মীয় বেপার সেপার নিয়ে অতিরিক্ত বাড়াবাড়ি করবে না।
হুজুররাতো প্রথমেই আমার চলার একটা গন্ডী বেঁধে দিবে।এই ভাবে চলোনা। এইটা করোনা।ইত্যাদি।
কিন্তু, পরদিন, আমি শুনলাম, খালামনি আম্মাকে ফোন করেছে, ওই বিয়ের খবর নিয়েই।
অথচ, খালামনি আমাকে বলেছিল, এটা নিয়ে আর কথা বাড়াবে না।
আমি মাকে সেই কথাই বলতে গেলাম। ......"মা, আমিতো কাল ই এই বেপারে কথা শেষ করে দিয়েছি, তাইলে, এ নিয়ে খালামনি আর কথা বাড়ায় কিভাবে?"
মায়ের কথা......" আরে, একজন একটা প্রস্তাব আনছে, বললেই তো আর এইখানে তোমার বিয়ে হয়ে যাচ্চ্ছেনা!"
আমি বললাম," কিন্তু, আমিতো এইটার প্রতি কোনো আগ্রহ পাচ্ছিনা, মা।কেন বোঝনা?"
এই এক কথা , দুই কথায় তুমুল হই-চই হয়ে গেল। তার পর, ৩/৪ দিন একেবারে কথা বার্তা বন্ধ। আর, কথা বলতে ভাল্লাগেনা। এতো করে বুঝানর পর ও কথা শুনছেনা । বিরক্তই লাগলো।
আর, যখন শুনলাম, আমি এই ছেলে কে দেখতে রাজি নই শুনে, আমার খালু খুব খেপেছে।উনি আসবেন আমার বাবার সাথে কথা বলার জন্য। বাবা আবার ঢাকায় থাকেন না, উনি কবে আসবেন, উনি সেই অপেক্ষায় আছেন।
আচ্ছা, আমি বুঝিনা, যার বিয়ে , তার অমতে বিয়ে দেবার কথা মানুষ ভাবে কি করে? তার বাবা-মার ও তো একটা মতামত আছে , নাকি অই খালুর ইচ্ছেটাই প্রধান!
আর, বিয়েটা যার, তার ই তো বেশি খুশি হবার কথা। এটা দেখবেনা ! যত্তসব!
ঠিক এখনই বিয়ে করার ইচ্ছে নেই আমার। যদিও এখনই হয়তো করা উচিত!
কিন্তু, নিজের মনের মতো একজনকে কি পাওয়া যাবেই না? আর কিছুদিন খুঁজে দেখি না! মনটা এখনো হুট করে কাউকে না জেনে, না বুঝে বিয়ের পিঁড়িতে বসার ইচ্ছা নেই।
যাই হউক, পর দিন খালামনির ফোন পেয়ে আর মেজাজ খারাপ হয়ে গেলো।
এঁরা আমাকে পেয়েছে কি? নিজেদের যা খুশি চাপিয়ে দেবে ?
আমার খালামনির সাথে মা বলেছে," শোন, বাহাউদ্দিন (খালু) খেপেছে বল্লেইতো হবেনা, আমার মেয়ে চাইছেনা আর, আমার মেয়ে হঠাত করে এইরকম জায়গায় গিয়ে মানিয়ে নিতে পারবে না।"
আমার খালামনি উত্তর দিল,"নামাজ কালাম, আর মেয়েদের পরদার দরকার আছে না! আর, মানিয়ে নেয়ার কথা বলতেছ? ওইটা সময়ে ঠিক হয়ে যাবে।"
মানুষের আক্কেল দেখে মরে যাই। একটা মানুষ কে বোরখা পড়ানর জন্য হুজুরের সাথে বিয়ে দিতে হবে? আশ্চর্য!
আর, সবাই কি পারে, নিজের মতের বিরুদ্ধে বিয়ে করেও পরে মানিয়ে নিতে? হয়তো বাইরে থেকে বোঝা যায়না। আবার কিছু দেখা যায়, মানিয়ে নিতে না পেরে, সম্পর্ক ছিন্ন করে, ডিভোর্স হয়ে যায়। এমনি কত কিছুই তো ঘটে। পত্র পত্রিকায় দেখেও কি এদের কোন আক্কেল হয়না!
আর, তার কথা শুনে আমার আরেকটা কথা মনে হল, আচ্ছা যারা তবলিগ করেনা, আমাদের মতো সাধারন মানুষ, তারা বা, আমরা কি ৫ ওয়াক্ত নামাজ পড়িনা? শুধু কি হুযুররাই পড়ে?
মানুষের এই সব খোঁড়া যুক্তি দেখলে, মনটা আরও বিদ্রোহী হয়ে উঠে!
দেখি, কে আমারে আমার মতের বিরদ্ধে চালনা করতে পারে!
এইসব বিষয় নিয়ে মনটা কয়দিন ধরে পাগল পারা।মাথা থেকে তাড়াতেও পারছিনা। চুপচাপ বসেও থাকতে ইচ্ছা করছেনা। খালামনিরে পারলে কাঁচা খেয়ে ফেলি! ওনারই তো উচিত খালু কে বুঝিয়ে বলা।অন্তত উনিত আমার পছন্দ কেমন জানেন।
মরার একজন পছন্দের মানুষ থাকলে, এই সময় বেঁচে যেতাম। এইসব কদিন পর পর পাত্র দেখাদেখি ভাল্লাগেনা।
কিন্তু, চাইলেই কি ভালবাসার মানুষ পাওয়া যায়! সেখানেও হ্যাপাঁ আছে।হয়তো কাউকে ভাল লাগে, তার আবার আমাকে হয়তো চোখেই পরলোনা!
এই বার ভ্যালেনটাইন ডে টা কাটলো সবচেয়ে বিচ্ছিরি! ওই হুজুর বেটার প্রপোজালটার কারনে মনটা অস্থির হয়েছিল।ফাগুনেও হলদে শারি পরা হলো না। কোথাও বেড়াতেও যাওয়া হলনা।
কিন্তু, আমার ভালবাসাবাসির মানুষ না থাকলেও, ফ্রেন্ড দের নিয়েই আমি মজায় থাকি।মোবাইলে মেসেজ বা, ফোনে কথা বলি।বাইরে কোথাও বেড়াতে না গেলেও ঘরেই শাড়ি পড়ি। সাজুগুজু করি।
এবার এই প্রথম, এইসবের কিছুই করা হলোনা। কেটে গেলো আমার বিবর্ণ ফাগুন আর ভালাবাসা দিবস।