somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গণপ্রতিরার এসপার-ওসপার

২০ শে জুলাই, ২০০৮ দুপুর ১:১৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


গণপ্রতিরক্ষা নামক বইখানা নিয়ে দুকলম লেখার সাহস একারণেই হল যে এর নিরবিচ্ছিন্ন প্রশংসা কিংবা সমালোচনার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়েছে সা¤প্রতিক সময়ে বইটির উপযোগিতা। লেখাটি মূলত আমার পাঠ পরবর্তী বোঝাপড়া বৈ ভিন্ন কিছু নয়।
"রাষ্ট্রের আসল কাজ নিরাপত্তা ও প্রতিরা। রাষ্ট্র কোন অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক বা নৈতিক সংস্থা নয়- রাজনৈতিক সংস্থা"। এক্ষেত্রে জনগনের ইচ্ছা অনিচ্ছাকে কতটুকু গুরুত্ব দেয়ার প্রয়োজন রাষ্ট্রের আছে তার বিশদ বয়ান তিনি দিয়েছেন। সেনাবাহিনী কি রা করবে এবং কাকে রা করবে এর সমাধান প্রতিরক্ষা বিভাগের গোড়ার কাজ বলে তিনি দেখতে চান। তবে প্রতিরক্ষা বিভাগ এই সব মৌলিক বিষয়ের কোন সমাধান না করে এতদিন চলছে কিনা এটা আমাদের কাছে স্পষ্ট হয় না। প্রথাগত সেনাবাহিনী দিয়ে দেশরা সম্ভব নয়। এটিকে তিনি মিথ্যা ও বিপদজনক ধারণা বলছেন। সৈনিকতাকে বাধ্যতামূলক অংশ হওয়া উচিত মনে করেন। এই বাধ্যতামূলক সামরিক শিক্ষাটি আসলে কি রকম হবে? এ প্রস্তাব কি আমাদের মত দেশে কোন সুফল বয়ে আনবে নাকি হিতে বিপরীত হবার সম্ভাবনা জিইয়ে রাখবে? মাত্র এক দশক আগেও, যখন আমরা যখন সদ্য কৈশোরোত্তীর্ণ তরুণ, মোজাহিদ ট্রেনিংয়ের মত ভয়ংকর ধর্মান্ধ সামরিক প্রস্তুতিতে পাড়ার অনেক বড় ভাইকেও অংশগ্রহণ করতে দেখেছিলাম। তারা এটি করত অতি সরল বিশ্বাসে। একটি আফগানি চেতনা তাদের ভেতর খেলা করত। মাঝেমধ্যে আফগান ফেরত যোদ্ধাদের কেউ কেউ আসত তাদের জোশে রসদ জোগাতে।
সিভিল সোসাইটি নিয়ে তিনি যৌক্তিকভাবে আপত্তি তুলেছেন। "সিভিল" শব্দটিকে এনজিও পরিভাষা হিসেবে দেখেন। শেণীবিভক্ত সমাজে দ্বন্দ্ব ও সংঘাতকে আড়াল করার জন্য এ ধরণের ধারণার প্রস্তাব। এই নেতিবাচক ধারণার জন্য বাংলাদেশে শক্তিশালী প্রগতিশীল ধারার অভাবকে তিনি দায়ী করেন। কথা হচ্ছে "সিভিল-মিলিটারি" সম্পর্ক তাহলে কেমন হওয়া উচিত যেখানে সমাজের এই শ্রেণীর প্রতিনিধিরাই সেনাবাহিনীর আগে "দেশপ্রেমিক" শব্দটি যোগ করেন বেশি। গণপ্রতিরা বিষয়ে তাঁর বক্তব্যে শিক্ষা ব্যবস্থা ও এর কাঠামোগত পরিবর্তন নিয়ে যে নির্দেশনা পাওয়া যায় তা আমাদের প্রচলিত শিক্ষাব্যবস্থাকে কোন জায়গায় দাঁড় করাবে তা বোধকরি সুস্পষ্ট নয়। প্রস্তাবিত গনপ্রতিরা ব্যবস্থায় প্রচলিত শ্রেণীবৈষম্যের শিক্ষা ব্যবস্থা কোন রূপে দাঁড়াবে? মাদ্রাসা শিক্ষার মত একটি চরম বৈষম্যমূলক শিক্ষা ব্যবস্থায় কি ধরণের গুনগত পরিবর্তন আনা যেতে পারে তার সরাসরি কোনো সমাধান পুস্তকটি আমাদের দেয় না। এটা সম্ভবও হয়ত নয়। বাংলাদেশকে "ধর্মনিরপে" একটি দেশ বলে সবার মোটামুটি মেনে নেয়াটাকে তিনি প্রশ্ন করেন। বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ একটি ইসলামি দেশ ও ক্রমাগত প্রসারমান জঙ্গীবাদী রাজনৈতিক ও ধর্মান্ধ উসকানির কারণে, সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসনের চক্র অনুযায়ী বাংলাদেশও এর সম্ভাব্য আক্রমনের লবস্তু হয়ে উঠতে পারে যে কোন সময়। এই সাংঘাতিক সত্যটি তিনি আমাদের সামনে তুলে ধরেছেন। কিন্তু আমরা ধারণা করতে পারি এই সম্ভাব্য দুর্ঘটনার সাথে "ইসলাম প্রধান" দেশ কিংবা "ধর্মনিরপে" দেশ - এধরণের বিভাজনের কোন যোগসাজশ নেই। এরকম ধারণার ভিত্তিতে আমাদের প্রতিরা ব্যবস্থা সাজানোর প্রয়োজনীতা আছে বলেও মনে হয়না। তিনি মনে করেন ইসলাম ধর্মাবলম্বীরা ক্রমাগত সাম্রাজ্যবাদী কৌশলে ধরা দিচ্ছে। তাদের যুদ্ধকে "ক্রুসেডের" বিপরীতে "জিহাদ" ও "ইনসাফ প্রতিষ্ঠার লড়াই" হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে ব্যর্থ হয়েছে। কিন্তু ধর্মান্ধ সহিংসতা ও ইনসাফ প্রতিষ্ঠার লড়াইকে তিনি ফারাক করেন কীভাবে এটা একেবারেই পষ্ট হয়নি। মানবমুক্তি সংগ্রামের লড়াকু সৈনিক এডওয়ার্ড সাঈদ এর ফিলিস্তিনি জনগনের সংগ্রাম ও ওসামা বিন লাদেনের সংগ্রাম কোনোভাবেই এক হতে পারে না। তালেবান ও ইসলামপন্থী দল সম্পর্কে ঘৃণা ও শংকা নিয়ে তিনি প্রশ্ন তোলেন। তালেবানের বিরুদ্ধে ঘৃণাকে পশ্চিমা গ্রপাগান্ডার ফল হিসেবে দেখেন। প্রথিতযশা লেখক ও চিন্তক যতিন সরকারের কথা বিবেচনায় আনলে আমরা দেখি সাম্রাজ্যবাদ সৌদি বাদশাতন্ত্র কর্তৃক সৃষ্ট মৌলবাদকে যেমন মদদ যুগিয়েছে, একইভাবে সৌদি বাদশাতন্ত্র বিরোধী ওসামা বিন লাদেনকেও মদদ যুগিয়েছে। মৌলবাদ ও সাম্রাজ্যবাদের এই কৌশলগত অবস্থান তাদের স্বার্থেই হয়েছিল। সমাজতন্ত্রের বিরুদ্ধে ইহুদি, খ্রিস্টান, হিন্দু ও মুসলিম- এ ধরণের পরস্পর বিরোধী মৌলবাদ সাম্রাজ্যবাদের মদদেই পুষ্ট হয়েছিল। ধর্মীয় প্রপাগান্ডার প্রতিনিধিত্বমূলক রাজনীতি তিনি নৈতিকভাবে মানেন না। খুবই ন্যয্য কথা। কিন্তু এর মানে কি "ইঙ্গ-মার্কিন" আগ্রাসনের বিরুদ্ধে তালেবানদের যুদ্ধকে আমরা ইনসাফ প্রতিষ্ঠার লড়াই হিসেবে দেখব? মন্দের ভাল হিসেবে দুয়ের কোন একটাকে বেছে নেয়ার সুযোগ কি আমাদের সামনে আছে? আমরা জানি তালেবানদের সংগ্রামের উদ্ধেশ্যই হচ্ছে একটি ধর্মান্ধ সহিংস পন্থায় নতুন করে চৌদ্দশ বছর আগের শাসন ব্যবস্থা কায়েম করা।
ইসলাম প্রধান দেশ হবার কারণে বাংলাদেশ ইসলামী সন্ত্রাসবাদের উর্বরত্রে বলে তিনি মনে করেন। সা¤প্রতিক বছরগুলোতে ভারত, ইসরাইল ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরা ও নিরাপত্তা আঁতাত, ভারতের হিন্দুত্ববাদী উত্থান ও বাংলাদেশের ইসলামী সন্ত্রাসবাদের প্রসারে তিনি আমাদের নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তিত। সকল প্রকার সহিংসতা ও আগ্রাসনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার মধ্য দিয়ে আমরা রাজনৈতিক হয়ে উঠব বলে বিশ্বাস করেন। আমাদের রাজনৈতিক হয়ে উঠতে না পারার পেছনে রাজনৈতিক সততা কিংবা জলপাই প্রবণতা কতখানি দায়ী তার আরও বিশদ ব্যখ্যা পাঠক দাবী করতে পারে।
তাঁর রাজনৈতিক বিশ্বাস ও কর্মপরিকল্পনা সাধারণ ও প্রচলিত রাজনীতি থেকে খানিকটা ব্যতিক্রমী। মূলত জনসাধারণের সাথে ঘনিষ্টতা ও সংশ্লিষ্টতাই তার রাজনীতির প্রধান বিশ্বাস। তাঁর জীবনাচারে অনেক লৌকিক আচার ল করা যায়। বাঙালির লৌকিক ধর্মের অনেক বিশ্বাস তিনি জিইতে রাখতে সচেষ্ট। লৌকিক ধর্মের যে বিশ্বাস সেখানে ভবিষ্যতে জাতপাতবিহীন একটি সাম্য সমাজ প্রতিষ্টিত হবার স্বপ্ন থাকে। শাস্ত্রীয় ধর্মের ক্ষেত্রে মানুষ ভবিষ্যতকে অনেকেক্ষত্রে নৈরাশ্যজনকভাবেই গ্রহণ করে। অতীতকেই মহিমান্বিত করে দেখা হয় এবং ইহলোকের চাইতে পরলোককেই অধিক আলোকিত মনে করে। মানসগঠনে মৌলবাদীতার বীজও মূলত এখানে সুপ্ত থাকে। বাঙালির লৌকিক ধর্ম ও শাস্ত্রীয় ধর্মের সংশ্লেষ কীভাবে হতে পারে তার একটা নিরক্ষা নিজের জীবন সংগ্রামের মধ্য দিযে তিনি করে যাচ্ছেন বলে মনে হয়।
তাঁর জীবন সংগ্রামটাই একটা রাজনৈতিক সংগ্রামের অংশ। তিনি রাজনীতিমুখী মানুষই কেবল নন, বিশ্বাস ও চিন্তার সাথে সেটার বাস্তবিক তৎপরতার মধ্য দিয়েই সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছেন। আমরা ধারণা করতে পারি এই সংগ্রামের মধ্য দিয়ে তরুন সমাজের কাছে তিনি কি ধরণের বার্তা পৌঁছাতে চাইছেন তার উপরই নির্ভর করছে বাংলাদেশের চিন্তা ও তৎপরতার জায়গায় ফরহাদ মজহার কীভাবে দাঁড়াবেন।




সর্বশেষ এডিট : ২০ শে জুলাই, ২০০৮ দুপুর ১:১৭
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বেফাঁস মন্তব্য করায় সমালোচনার মুখে সমন্বয়ক হাসিবুল ইসলাম !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৩ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১১:৩২



"মেট্রোরেলে আগুন না দিলে, পুলিশ না মারলে বিপ্লব সফল হতো না "- সাম্প্রতিক সময়ে ডিবিসি নিউজে দেয়া সাক্ষাৎকারে এমন মন্তব্য করে সমালোচনার শিকার বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসিবুল... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমিত্ব বিসর্জন

লিখেছেন আজব লিংকন, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১:৪৮



আমি- আমি- আমি
আমিত্ব বিসর্জন দিতে চাই।
আমি বলতে তুমি; তুমি বলতে আমি।
তবুও, "আমরা" অথবা "আমাদের"
সমঅধিকার- ভালোবাসার জন্ম দেয়।

"সারভাইভাল অব দ্য ফিটেস্ট"
যেখানে লাখ লাখ শুক্রাণুকে পরাজিত করে
আমরা জীবনের দৌড়ে জন্ম... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বৈরাচারী আওয়ামীলীগ হঠাৎ মেহজাবীনের পিছে লাগছে কেন ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৭:৪১


স্বৈরচারী আওয়ামীলীগ এইবার অভিনেত্রী মেহজাবীনের পিছনে লাগছে। ৫ ই আগস্ট মেহজাবীন তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছিলেন ‘স্বাধীন’। সেই স্ট্যাটাসের স্ক্রিনশট যুক্ত করে অভিনেত্রীকে উদ্দেশ্য করে আওয়ামী লীগ তার অফিসিয়াল ফেইসবুকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:২৪



সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪১





বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×