মা
একজন নারী বসে আছে পার্কের বেঞ্চে। গায়ে তাঁর জীর্ণ বসন। সামনের দাঁত দু’টো ক্ষানিটা উঁচু, চোখ কোঠরাগত। শাররীক অবয়বে দারিদ্রের তীব্রতা প্রকটভাবে প্রকাশিত। তাঁর পাশে বসা একজন যুবক। বই-খাতা ভরা কাঁধে ঝোলানো ব্যাগ। বুক পকেটে কলম। নিবিড়ভাবে বাক্য বিনিময় করছে পরস্পর। দু’জনের অবয়ব জুড়ে আনন্দের উজ্জ্বলতা। নারী যখন কথা বলছেন- যুবক শুনছে, যেন কোন জটিল বিষযের উপর শিক্ষক বক্তৃতা দিচ্ছেন আর কঠিন মনযোগী ছাত্র একাগ্রচিত্তে তা শ্রবণ করছে। আর যুবক যখন কথা বলছে- নারী তা শুনছেন, চোখে-মুখে তাঁর এমন এক উজ্জ্বল-প্রভা আছড়িয়ে পড়ছে, যেন পৃথিবীর সাতশত কোটি মানুষের ভেতর একজন সুখী মানুষ।
এমন এক স্বর্গীয় পরিবেশের আবহে কয়েকজন ছাত্র-ছাত্রী এলো। তাদের মাঝ থেকে একজন বলল, ‘রাকিব, উনি কে ?’ ক্লাসের সবচে’ ভালো ছাত্র, সকল শিক্ষকের কাছে প্রশংসনীয় রাকিব দ্বিধাহীন কন্ঠে জবাব দিলো- ‘আমার মা।’ তারা পরস্পর মুখ চাওয়া-চাওয়ি করলো। ভাবলো হয়তো রসিকতা করছে। ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যখান হতে একেক জন এমন সব প্রশ্ন করতে লাগলো , যা বিব্রতকর মনে হলেও রাকিব তার উত্তর দিলো সাবলীলতায়-
- তোমার আপন মা !
- মা তো মা-ই। মা কি আপন পর হয় ?
- উনি কি তোর জন্মদাত্রী মা ?
- জন্ম দিলেই মা হয় না। মা একটি স্বতন্ত্র সত্ত্বা, যা মাতৃত্ব গুণে প্রতিষ্ঠা পায়।
- আমরা কি তোমার মায়ের সাথে কথা বলতে পারি?
- অবশ্যই। কিন্ত আমার মা ভাষার আঞ্চলিকতাকে অতিক্রম করতে পারেনি। তোমরা হয়তো তাঁর অনেক কথা শুনে হাসবে।
একজন নারীকে কেন্দ্র করে একদল আধুনিক ছেলে-মেয়ে গল্প করছে। গল্পের পরিসমাপ্তিতে যা জানা গেলো, তা হলো- সদ্যোজাত রাকিব পড়েছিলো ডাস্টবিনে। কয়েকটি কাক চারপাশে উড়ছিলো তাদের স্বভাবজাত কা-কা শব্দে তোরপাড় করে। আজকের সভার মধ্যমনি নারী কুয়াশার ভেদ করে হেটে যাচ্ছেন ঠিকা ঝি এর কর্মস্থলে। কৌতুহল বশতঃ এগিয়ে গেলেন ডাস্টবিনের কাছে। অভূতপূর্ব দেখে তিনি বিহ্বল। কোলে তুলেন কাপড়ে জড়ানো এক মানব শিশু। নিঃসন্তান বিধবা নারী মা হলেন। তাঁর শরীর-মন এবং চেতনার সমস্ত রস নিংড়ে সে-ই মানব শিশুকে নিয়ে এসেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের চৌকাঠের ভেতরে।
( ছবির উৎসঃ নেট)