কামাল পাশা চৌধুরী সাঙ্গপাঙ্গ নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করে গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ইমরান এইচ সরকারকে 'অব্যাহতি' দিয়েছেন বলে খবর বেরিয়েছে। তাদের 'অব্যাহতি' কাহিনী জেনে অনেকেই বিভিন্নভাবে তাদের প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন এবং দেখাবেনও। মূলত সবকিছু সরকারিকরণ তথা আওয়ামীকরণ করতে গিয়ে আওয়ামীলীগ তাদের ঐতিহাসিক ভুলের আরেকটা ধাপ অতিক্রম করলো। যদিও এই ভুলের কারণে আন্দোলনের মুল স্পিরিট ক্ষতিগ্রস্থ হবে না, হয়তো এটা শাপে বর হয়ে যাবে মূল গণজাগরণ মঞ্চের জন্যে।
একজন গণজাগরণ মঞ্চ কর্মী হিসেবে আজকের আগে কামাল পাশাকে চিনতাম না। আমার মতো অনেকের অবস্থাও একই। যারাই গণজাগরণ মঞ্চ সম্পর্কে ধারণা রাখে তারা জানে ইমরান এইচ সরকার গণজাগরণ মঞ্চের মূখপাত্র। সংবাদ সম্মেলনের পর উনার পরিচয় বিভিন্ন জায়গায় প্রকাশিত হয়েছে এবং সেখানে পরিষ্কার হয়ে যায় তার রাজনৈতিক এবং সামাজিক অবস্থান। জানা যায়, সদ্য সমাপ্ত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি আওয়ামীলীগ মনোনয়ন চেয়েছিলেন এবং সুযোগ ছিল বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়ে যাওয়ারও। কিন্তু দল তাকে মূল্যায়ন করেনি গত ২৫ বছর আওয়ামীলীগের রাজনীতির সাথে জড়িত থাকার পরও। দল তারচেয়ে কম বয়েসি এবং তার রাজনীতির বয়েসি অভিজ্ঞতার কমদেরও মনোনয়ন দিয়েছে কিন্তু তাকে দেয়নি কেন? উত্তর একটাই- নেতা হওয়ার মতো যোগ্যতা তিনি ধারণ করেন না। যোগ্যতা নিয়ে মানুষ জন্মায় না, অর্জন করে নিতে হয়। কামাল পাশাও অন্যদের মতো জন্মেছিলেন কিন্তু রাজনীতির মাঠের নেতা হওয়ার মতো যোগ্যতা তিনি অর্জন-ধারণ করতে পারেননি। আমি তারপরেও কামাল পাশাকে দোষ দিইনা কারণ সবাই সমানভাবে যোগ্য হয়ে গেলে একজন নেতা আর একজন মেথরের মধ্যে খুব বেশি পার্থক্য থাকতো না। এটা সৃষ্টিকর্তার খেল- মেনে নিতেই হবে!
গণজাগরণ আন্দোলন নেতাভিত্তিক নয়, এটা চেতনা আর দাবিভিত্তিক আন্দোলন। এখানে মূখপাত্র মূখ্য না তিনি গণমানুষের অনুভূতি সবার হয়ে প্রকাশ করেন। লক্ষ লোকের মধ্যে কিছু লোক নেতা হতে গিয়েছিল, নেতা হতে না পেরে তারা সরে গিয়েছিল। যারা ঘোষণা দিয়ে সরে গিয়েছিল তারা ইদানিং আবার সমালোচনা-আক্রমনের মাধ্যমে ফিরতে শুরু করেছে। তাই দীর্ঘদিন পর হুট করে নেতৃত্ব বদলাবার হাহাকার-আহাজারি লক্ষ্যণীয়। কামাল পাশা, বাপ্পাদিত্যদের অবস্থা হয়েছে এমন যারা ঘোষণা দিয়ে সরেনি ঠিক কিন্তু ভেতরে থেকে সরে যাওয়াদের লক্ষ্য পুরণে হাতিয়ার হয়ে যাচ্ছে।
তারুণ্যের অগ্নিস্ফুলঙ্গ গণজাগরণ আন্দোলনে তরুণেরা নেতৃত্ব দিয়েছে, দেবে; এই স্বাভাবিক। কিন্তু সরকারি প্রকল্পের বিভক্তি কর্মসূচিতে বয়সে পঞ্চাশের কাছাকাছি রাজনৈতিক জীবনে ব্যর্থ একজন লোককে সামনে নিয়ে এসে সরকারের অযাচিত হস্তক্ষেপ করাটা বালখিল্য আচরণ হয়েছে সন্দেহ নেই। সরকার ইদানিং সবকিছুতে দলীয় মোড়ক দিতে আগ্রহী হয়ে উঠেছে কামাল পাশা নামীয় প্রায় বৃদ্ধ লোকেরা যখন এসে তারুণ্যের স্পন্দন গণজাগরণ মঞ্চকে দখল করে নিতে চায় তখন অন্ধকারের আততায়ীদের অপরিপক্ক কৌশলের বিষয়টি বারবার চোখে পড়ে।
বিগত ২৫ বছরের রাজনৈতিক জীবনে কামাল পাশা চৌধুরী কিছু পাননি বলে তার জন্যে সহমর্মিতা প্রকাশ করছি। একই সাথে তার মানসিক সুস্থতা কামনাও করছি। 'অব্যাহতি' নাটক না করে তিনি তার ভুল বুঝতে পারবেন আশা করছি। কারণ প্রায় বৃদ্ধদের দিয়ে তারুণ্যের আন্দোলন হয় না। এটা তাদের স্বার্থের জাল, পদের লোভ-মোহ সেটা অস্বীকার করার উপায় নাই।
শ্রদ্ধেয় চৌধুরী সাহেব, আপনার কিছু অতীত হয়তো গৌরবের কিন্তু এই বর্তমান কালিমালিপ্ত তা ঠাণ্ডা মাথায় চিন্তা করলে অনুধাবণ করতে পারবেন। দলীয় এজেণ্ডা বাস্তবায়ন করতে গিয়ে আপনি এবং আপনারা পুরো তারুণ্যকে অস্বীকার করতে বসেছেন। নিন্দা এবং ধিক্কার জানানো ছাড়া আমাদের গত্যন্তর নেই। তাই নেতা কিংবা মূখপাত্র হওয়ার উচ্চাভিলাষ ত্যাগ করে কায়মনোবাক্যে নিজের তারুণ্য ফিরিয়ে আনার ধ্যাণে বসে চিৎকার করে বলুন- "ফিরিয়ে দাও তারুণ্য আমার"। সবাই জানে বরাবরই আপনি ফেল্টুস একজন, ক্রিকেট মাঠের দ্বাদশ খেলোয়াড় তাই আরামসে পানি-তোয়ালে বহন করে মাঠের বাইরেই বসে থাকুন, প্লিজ!
---------------------------------------------------------
কিছু ফেসবুক প্রতিক্রিয়া:
Aminul IslamShanjiban Sudeep
ফ্রেন্ডলিস্টের সবাই,বিশেষ করে সাংবাদিক ভাইয়েরা শাহবাগ চলে আসুন....
আমি,জনাব সঞ্জীবন সুদীপ অল্প কিছুক্ষণের মধ্যেই নিজেকে গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ঘোষণা করব । আপনারা দলে দলে যোগদান করুন
Kungo Thang
শাহবাগ হেফাজতের জন্ম দিছে তাই শাহবাগ খারাপ৷
মুক্তিযুদ্ধ রাজাকারদের জন্ম দিছে তাই মুক্তিযুদ্ধ খারাপ৷৷
Shib-lee Hasan
মিনি গণজাগরণ মঞ্চ খুলে সেটার মিনি মুখপাত্র হিসেবে নিজেকে দাবী করে একটা প্রেস কনফারেন্স করলে কেমন হয় !!?
বিষয়টা কিন্তু হালকাভাবে দেখবেন না ... আমি সিরিয়াস !! খিকজ
বাবু খোকন
ওরে কে আছিস আমারে এক টা মুখ পত্রবানা।।।আমি ও মুখপত্র হতে চাই।।। নতুন নতুন তারেক কোথা থেকে হাজির হল!!!!
দলছুট শুভ
তারেক জিয়া - "আমি ব্যারিস্টার পাশ"
কামাল পাশা - "আমি গণজাগরণ মঞ্চের সংগঠক"
দলছুট শুভ - "আইচ্চা বুঝলাম"
Paplu Bangali
কোথাকার কোন সাচ্চা আওয়ামীলীগার আসিয়া শাহবাগে অব্যহতি অব্যহতি বইলা নিজের একটু খায়েশ পূরা করতে চাচ্ছে আর প্রথম আলো সেটাকে লীড নিঊজ করে দিছে। এই পত্রিকাগুলোর অবদান জাতি মনে রাখবে।
Kaberi Gayen
বাহবা সাবাশ! এই তো চাই!
গণজাগরণ মঞ্চকে শেষ করে দেয়ার সবধরণের মরীয়া চেষ্টার পাশাপাশিঃ
১। দেশ মদীনা সনদ অনুযায়ী চলবে। প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা।
৩। সাধারণ শিক্ষার স্কুল টেক্সট বইকে মাদ্রাসা উপযোগী করার জন্য হিজাব পরানো কিশোরীকে।
৩। শফী হুজুরের কাছ থেকে সরকার, আওয়ামী লীগ আর ছাত্রলীগের বন্ধুত্ব সার্টিফিকেট লাভ।
৪। চট্টগ্রামে দুইদিন ব্যাপী শফী হুজুরের হেফাজতের সম্মেলন-প্রস্তুতি শুরু সরকারী অনুমতি নিয়ে।
৫। সারাদেশের বিভিন্ন জেলায় হেফাজতের সম্মেলনের অনুমতি এবং প্রস্তুতি-ঘোষণা।
৬। প্রতিদিন মন্দির ভাংচুর। জমিজমা দখল। নীরবে হিন্দুরা তো বটেই এমনকি বৌদ্ধরাও দেশত্যাগ শুরু করেছেন।
সমীকরণশেষে হাতে রইলো গণজাগরণমঞ্চের শক্তির প্রতি সরকারের ভীতি। ভীতি থেকেই আক্রমণ নেমে আসে। যে শক্তিকে ভয় করছে সেই শক্তির ঘুরে দাঁড়ানোই সমাধান। অতীতের অনভিজ্ঞতা থেকে যে শিক্ষা সেই শিক্ষার উপর দাঁড়িয়ে গণজাগরণ মঞ্চ রুখে দাঁড়াক।
জয় বাংলা।
Fazlul Bari
কামাল পাশা চৌধুরী গণজাগরণ মঞ্চ থেকে ইমরান এইচ সরকারকে বিতাড়নের ঘোষনা দিয়েছেন! দীর্ঘদিন রাজনৈতিক আন্দোলন-সংগ্রামের সঙ্গে আছেন এক সময়কার টিএসসির এই প্রিয় মুখ! কিন্তু কামাল পাশা চৌধুরী আওয়ামী লীগের প্রত্যক্ষ রাজনীতি, গত ২৫ বছর ধরে দলের প্রচার সেলের সঙ্গে জড়িত। কিন্তু এরপরও দল তার ওপর ভরসা করেনা! সে কারনে গত ৫ জানুয়ারির এক তরফা নির্বাচনেও তিনি প্রার্থী হতে চাইলেও দল তাকে মনোনয়ন দেয়নি! সেই মনোনয়ন চাওয়া না পাওয়ার কথা কামাল পাশা চৌধুরী নিজে তার ফেসবুক স্ট্যটাসে লিখেছিলেন! তার দল যাকে ভরসা করেনা, সেই কামাল পাশা চৌধুরী তরুণ প্রজন্মের নেতা হতে চাইছেন, অথবা তাকে সে সরকারি এসাইনমেন্ট দেয়া হয়েছে!! কিন্তু তিনিতো নিজে তরুণ না, আমাদের মতো বৃদ্ধ, গণজাগরণ মঞ্চের আন্দোলনতো তরুণদের আন্দোলন! কাজেই তরুণরা তাকে নেতৃত্বে মানবে কেনো? আর আগামিতে সাঈদির যখন ফাঁসি হবেনা, ইমরানরা যখন এর বিরুদ্ধে আন্দোলন করবেন, কামাল পাশা চৌধুরী কী তার দলের বিরুদ্ধে আন্দোলন করতে পারবেন? বুড়াকালে ধরা খাইয়া গেলেনগো কামাল ভাই, এতদিনের আন্দোলন সংগ্রামের ক্যারিয়ার আপনার, শেষটা হবে সরকারি পেটোয়া বাহিনীর নেতার এসাইনমেন্টে!!!
অনন্ত বিজয় দাশ
ওই কালের কামাল পাশারা বিপদসংকুল পরিস্থিতিতে নিজের বুক পেতে রাষ্ট্রনায়কোচিত ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিল। এ জন্য তাকে আধুনিক তুর্কি জাতির পিতার সম্মান দেয়া হয়েছে।
যার কর্মপ্রেরণায় উদ্বুদ্ধ হয়ে আমাদের জাতীয় কবি নজরুল পর্যন্ত কলম ধরেছিলেন :
"ঐ ক্ষেপেছে পাগলী মায়ের দামাল ছেলে কামাল ভাই
অসুরপুরে শোর উঠেছে জোরসে সামাল সামাল তাই
কামাল তুনে কামাল কিয়া ভাই!"
আর একালের কামাল পাশারা জাতির ক্রান্তিকালকে সিনেমার পর্যায়ে নামিয়ে নিজেরা শুধু "আইটেম বয়" হইতে জানে।
এই কামাল পাশাদের জন্য এ যুগের কবিরা কি রচনা করেন তা দেখার অপেক্ষায় থাকলাম। তবে শুধু এতটুকুই বলি :
"ইয়ে কামাল...! ইতনা কামাল তুনে ক্যাসে কিয়া রে!
ম্যাতো খামোশ হোগ্যায়া!!
Debasish Debu
মন্ত্রীসভার বৈঠকে গণজাগরণ মঞ্চে নতুন প্রশাসক নিয়োগের সিদ্ধান্ত। শীঘ্রই আসছে নিয়োগ নীতিমালা!
Omi Rahman Pial
সব কিছুর মধ্যেই ইতিবাচক কিছু না কিছু তো মিলবেই। এখন তো আমাদের জানা থাকলো আমাদের শত্রু আমাদের মিত্র কারা ছদ্মবেশী কারা অন্তর্ঘাতক। সবচেয়ে বড় যে শিক্ষাটা, প্রিয় প্রজন্ম, নিজের লড়াইটা নিজেকেই শেষ করতে হয় কারও ভরসায় ছেড়ে না দিয়ে...
Arif Jebtik
গত কয়েকদিন ধরে গণজাগরন মঞ্চের উপর হামলা পরবর্তীতে নিজে থেকে কিছু লিখিনি। লিখতে ইচ্ছাও করে না। আশা করেছি কোনো না কোনভাবে হয়তো এসব জটিলতা শেষ হয়ে যাবে, চেষ্টাও যে করিনি সেটাও নয়। সাময়িক জটিলতা হলে হয়তো সেটা হতোও, কিন্তু যদি বৃহত্তর পাজলের কোনো মিসিং পিস হয়, তাহলে সেটা জটিলই তো হচ্ছে।
সেই জটিলতায় হয়তো নিজের শক্তিমত্তায় আস্ফালন করে ইগোতে তৃপ্তি আনতে পারবে বহু লোকেই। উইন উইন সিচুয়েশনে চলে যাচ্ছে সবকিছু। একপক্ষ বেশি জয়ী হবে, অপরপক্ষ অল্প জয়ী, ছাগলের তৃতীয় বাচ্চাটাও কিছুমিছু বিজয়ের স্বাদ পাবে হয়তো।
কিন্তু হেরে যাচ্ছে সাধারণ গৃহস্ত মানুষ, অফিস ফেরতা কেরানি কি এক্সিকিউটিভ, বারডেম হাসপাতালের ডিউটি শেষ করে আসা নার্স আপা, হেরে যাচ্ছে ক্লাস এইটের সেই ছেলেটা, যে প্রতিদিন আগারগাঁও থেকে সাইকেল চালিয়ে এসে ধপাস করে বসে পড়ত পূবালী ব্যাংকের সামনের আইল্যান্ডে...
প্রোফাইলে 'হেট পলিটিক্স' লিখলে যাকে আর দোষ দেয়া যাবে না...
কবির য়াহমদ কবির য়াহমদ
পুরো দেশ দেখি একটা আজব পাগলাগারদ হয়ে গেছে!
‘গণজাগরণ মঞ্চের কর্মী ও সংগঠকবৃন্দ’ ব্যানারে একটা মূখপাত্রের প্যানেল দেখলাম আর হাসতেই আছি। নামগুলো দেখে আরো বেশি কৌতুক অনুভব করছি।
তারেক রহমান যদি জিয়াউর রহমানকে বাংলাদেশের প্রথম প্রেসিডেন্ট দাবি করতে পারেন তাহলে কামাল পাশা, শাহিন, আবির, হাবিবুল্লাহ মেসবাহ গণজাগরণ মঞ্চের মূখপাত্র দাবি করতেই পারেন।
এক তারেক লণ্ডনে, হাজার তারেক ঘরে ঘরে!