তিনদিনের একটানা ছুটি তাই বইমেলা জমতে শুরু করেছে অনুমিতভাবেই। অফিসকুঁজো লোকজনের ভিড়ে স্বভাব বইমেলা মনে হলো ধূলোর এক অসীম রাজত্ব। নজরুল মঞ্চের যেখানে খানিক খোলা জায়গা সেখান দিয়ে লক্ষাধিক ধুলোকণা তাদের অস্তিত্বের জানান দিয়েছে স্বাভাবিকভাবেই। অতি সতর্কদের অনেকেরই মুখ-নাক ঢাকার প্রয়াস ছিল লক্ষ্যণীয়। কিন্তু যারা নাক-মুখ ঢাকেনি সচেতন ও অচেতনভাবে তারা এ ধূলো গিলেছে নিজের অজান্তেই। এ যেন স্বাভাবিক এক নিয়ম হয়ে দাড়িয়েছে ক’বছরে! কে জানে এখানে কারো কোন ব্যবস্থা নেয়ার কিছু আছে কী না! তবু মানুষজন ছুটেছে ধূলোকে সমানে রেখে। যারা এগিয়েছে এদিক-ওদিক তাদের অনেকেই বই কিনেছে, অনেকেই ছিলো আড্ডার চালে আর কেউবা খানিক ঘুরাঘুরির মানসে। তবে যত মানুষ ততদের হাতের মধ্যে তেমন করে জায়গা করে নিতে পারেনি বই। মেলার শুরুর দিকে এ যেন এক স্বাভাবিক নিয়মই!
সন্ধ্যের আগে নজরুল মঞ্চের সামনে বইয়ের মোড়ক উন্মোচনের লাইন লাগে। কে যাবে কার আগে এর এক প্রতিযোগিতা চলে। যদিও মাইকে বলা হয়ে থাকে সে সময়কার বইয়ের আর প্রাসঙ্গিক তথ্যাদি। অতি উৎসাহীদের ভিড়ের কারণে অনেক সময় বইয়ের লেখককে মূল মঞ্চে উঠতে হিমসিম খেতে হয়। সাংবাদিক নাম ভাঙিয়ে লেখকের কাছে বই চাওয়ার লোকের অভাব নাই। আর মোড়ক উন্মোচনের সাথে সাথে লেখক/লেখকদের হাত থেকে বই একপ্রকার কেড়ে নেবার প্রবণতা আসলে ব্যাখ্যাতীত। কিছু লোক আছে যারা সে সময়ে লেখকের একটা ইন্টার্ভিউ নিয়ে নেয়। ভাবখানা এমন অতি গুরুত্বপুর্ণ ব্যক্তি জানতে চাইছেন তার থেকে কম গুরুত্বপুর্ন কারো থেকে কিছু তথ্য। এরা কারা তার পরিচয় অনেকেরই কাছে অজানা হলেও গত ক’বছরে তাদের দৌরাত্ম্য কমেনি মোটেও; বলা যায় বেড়েছে অনেক।
মেলার ৩য় দিন শুক্রবার। ছুটির দিন স্বাভাবিকভাবেই অনেক লোকের আগমন। আমারও ছুটি। তার উপর ব্লগার ওমর জাবীনের আমন্ত্রণ। প্রথম যৌথ কাব্যগ্রন্থ ‘এসো জোছনার বৃষ্টিতে ভিজি’র মোড়ক উন্মোচন হবে। এই কাব্যগ্রন্থটি লিখেছেন ওমর জাবীন ও আফরিন জাবীন। আমি আগেই বলেছিলাম আমি সময়মতো উপস্থিত থাকতে পারবোনা, মেলায় পৌছাবো সন্ধ্যের দিকে। ঠিক তাই হলো! বিভাসের স্টলে যাওয়ার পরে তাকে প্রথম দেখাতেই চিনে ফেললাম। এর আগে সরাসরি দেখা হয়নি কখনো। তিনি ব্যস্ত ছিলেন ওদিক-এদিক। আমি স্টলে গিয়ে বই দেখলাম তারপর খানিক সরে আসতে চাইলে আফরিন জাবীন নিজেদের বইয়ের কথা জানালে হেসে বললাম আমি আসলে এ বইয়ের জন্যেই এ স্টলে এসেছি। তিনি হাসলেন। ইত্যবসরে ওমর জাবীন চলে আসলেন। উৎফুল্লতা ঝরলো অবয়ব দিয়ে। মিষ্টি খেয়ে বইটা বাড়িয়ে দিলাম অটোগ্রাফের জন্যে। দুইজনই হাসিমুখে কলমের আগা দিয়ে লিখে দিলেন শুভেচ্ছা আর ভালোবাসা বার্তা।
রেজওয়ান তানিম মনে হয় একটু বেশিই আড্ডাপ্রিয়। জাতীয় গ্রন্থ প্রকাশের স্টলের সামনে বেশ ক’জন ব্লগারের সাথে আড্ডা দিচ্ছিলেন। আমি তাকে দেখেও না দেখার ভান করে এগিয়ে গেলাম স্টলের দিকে উদ্দেশ্য তার বইটা কেনার। কিন্তু আমাকে দেখে ফেললো ব্লগার অজানা পথিক। সে আমার দিকে এগোতে চাইলে আমি ঈশারায় থামিয়ে দিলাম। স্টলে গিয়ে মৌনমুখর বেলায় বইটা চাইলাম। দোকানী বইটা বাড়িয়ে দিতেই দেখি আমার পেছনে দাঁড়িয়ে স্বয়ং কবি। আমি তার দিকে বই বাড়িয়ে দিলাম অটোগ্রাফের জন্যে। তানিম লজ্জ্বাপরবশনেত্রে আমার দিকে তাকিয়ে লিখে নিলেন পুরো চার লাইন। তারপর সামু ব্লগের ব্লগারদের সাথে খানিক আড্ডা চললো। সে আড্ডার একজন ছিলেন আশরাফুল ইসলাম দুর্জয়। তিনি এক সময়ে প্রথম আলো ব্লগে লিখতেন। এখন সেখানে তার খুব বেশি যাওয়া হয়না জানালেন। অতীতের স্মৃতি রোমন্থন করতে গিয়ে জানালেন অনেক কিছু।
ধূসর কিছু আলোতে ভরে যায় চারিপাশ এ নিয়ত সময়ের হিসাব। কিন্তু কিছু সময় আর কিছু দিন আমাদের নিজেদের জানিয়ে দেয় আমরা আছি নিজেদের ঝালিয়ে নিতে। বইমেলা এ আসলে সে সময়েরই হিসাব। সারা বছরের হিসাব মিলিয়ে নিতে আর সব কিছু মিলিয়ে দিতে এ দিন গণনা চলছে আর চলবে; এভাবেই!
একুশে গ্রন্থমেলা ২০১২ ডায়েরি: এক অবিবাহিতের অটোগ্রাফ
নিজের বইয়ের বিজ্ঞাপনঃ একুশে গ্রন্থমেলা ২০১২ তে প্রকাশ হচ্ছে আমার ৩য় কাব্যগ্রন্থ "নিরবচ্ছিন্ন পাখিসমূহ"। মেলার ২য় সপ্তাহ থেকেই তা পাওয়া যাবে 'বাঙলায়ন" এ।