somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শেখ মুজিব থেকে বঙ্গবন্ধুঃ যেভাবে তিনি জাতির পিতা!

১৫ ই আগস্ট, ২০১০ সকাল ১১:১৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


জেনেছিলাম সে এক অলুক্ষণে বিভীষণ
যে রাতে চাঁদ ঢেকেছিল মুখ লজ্জ্বায়।
সে চাঁদ ওঠেছিল নিয়ে সমূহ আলো
হায়নার মুখ দেখে হারিয়েছিল আপনার অবয়ব
তবু রাত, সে রাত যে রাত ধরতে পারে
ঝড়ের গতিবিধি তাই রাতময় থাকেনি সে রাত
মাপতে বসেছিল কোন এক স্বপ্নদেশের দুরত্ব।

হে চাঁদ, আমার নিয়ত দেখা চাঁদ
তুমি দেখেছিলে একাত্তুর
আমার উজাড় হওয়া বাংলাগ্রাম
নিথর প্রাণের ধানক্ষেতে রেসকোর্সের মাতম
অথবা হঠাৎই হাওয়ায় হাওয়া জাগানো কালুরঘাট
ইতিহাসের স্বাক্ষী থেকে ইতিহাসের স্বপ্নবুনন।

সে রাত (৭১-র ২৬) যদিও এক অলুক্ষণে রাত
তবু সে রাতই দেখিয়েছিল পথ সতেজ ভোরের
আমার বাবার ইস্পাতসম হাত ধরে
আমার মা নামের এক পতাকা ওড়াবার স্বপ্ন।

হয়তো তিনি আজ নেই। আসবেন না ফিরে জানি। তবু কেন আমরা তাকে ভাবি। কেন বারবার শোকাশ্রু ফেলি তার জন্যে। কারণ তিনি মহানায়ক বাঙালী আর বাংলাদেশের রাষ্ট্র অভ্যুদয়ের। শেখ মুজিবুর রহমান একটি নাম; একটি ইতিহাস।

কেনই বা তিনি জাতির জনক? কী করেছিলেন তিনি যে জাতির জনক হবার জন্যে? উত্তর খুজতে আমাদের ফিরতে হবে তার জন্ম পরবর্তীকাল থেকে শুরু করে জীবনের নানান চড়াই উতরাই কালের পরিক্রমায়। জন্ম হয়েছিলো তার গোপাল্গঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়ার এক নিভৃত পল্লীতে। স্কুলের পাঠ চুকিয়ে ভর্তি হন কলকাতার ইসলামিয়া কলেজে। কলেজ থাকাকালীন সময়ে ১৯৪৭ সালে ঢাকায় অনুষ্ঠিত এক যুব সম্মেলনে তার প্রস্তাবিত পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা সম্পর্কিত প্রস্তাবটি সম্মেলনে গৃহীত হয়। সেই থেকে শুরু তারপর শুধু শুধুই টুঙ্গিপারার মুজিব থেকে বাঙালির মুজিব হয়ে যাওয়ার গল্প।

রাষ্ট্রভাষা বাংলার প্রস্তাব বাতিল হয়ে যাওয়ায় পূর্ব বাংলার সর্বস্তরের মানুষ, বিশেষ করে ছাত্র ও যুব সমাজ বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। গড়ে ওঠে রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ। ১১ মার্চ ১৯৪৮ দেশব্যাপী সাধারণ ধর্মঘট আহ্বান করা হয়েছিল এবং আব্দুল গণি রোডস্থ সেক্রেটারিয়েট (তৎকালীন ইডেন বিল্ডিং) গেটে পিকেটিং-এ নেতৃত্ব দেবার সময় গ্রেফতার হন যুবনেতা শেখ মুজিবসহ আরও অনেকে। প্রবল ছাত্র আন্দোলনের মুখে মুখ্যমন্ত্রী খাজা নাজিমুদ্দিন রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের সাথে ৮ দফা চুক্তিনামা স্বাক্ষর করেন। শর্তানুযায়ী ১৫ মার্চ কারাগার থেকে শেখ মুজিবসহ অন্যান্যক বন্দীদের ছেড়ে দেয়া হয়। ১৬ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আমতলায় সাধারণ ছাত্রসভা অনুষ্ঠিত হয়। শেখ মুজিবই ছিলেন সভার সভাপতি এবং একমাত্র বক্তা। এই সভায় খাজা নাজিমুদ্দিনের সাথে সম্পাদিত ৮ দফা চুক্তিনামায় তিনটি সংশোধনী এনে তা ছাত্রসভায় পাস করিয়ে নেয়া হয়। সভা শেষে শেখ মুজিবের নেতৃত্বে ছাত্রদের এক মিছিল পূর্ববঙ্গ পরিষদ ভবন অভিমুখে রওনা হয়। সেখানে তখন পরিষদের সভা চলছিল, পুলিশ লাঠিচার্জ করে মিছিল ছত্রভঙ্গ করে দেয়। পুলিশী নির্যাতনের প্রতিবাদে পরের দিন ১৭ মার্চ ঢাকায় ছাত্র ধর্মঘট ও সমাবেশের কর্মসূচী ঘোষণা করা হয়। কিন্তু পরবর্তীতে ১৯ মার্চ জিন্নাহর ঢাকায় আগমণ উপলক্ষে সর্বমহলের অনুরোধে শুধু বিক্ষোভ সমাবেশ করে আপাতত কর্মসূচী স্থগিত করা হয়। বাহান্নে ভাষা আন্দোলন চূড়ানত্ম পর্যায়ে পৌঁছুলেও আটচল্লিশেই ছিল তার সূত্রপাত।
১৯৪৮ সালে রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনে নেতৃত্ব দেবার মধ্য দিয়ে বাঙালীর মুক্তির সংগ্রামে যে আপোসহীন শেখ মুজিবের জন্ম হয়েছিল জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত তা অক্ষুণ্ন ছিল। ১৯৪৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিম্নবেতনভুক্ত কর্মচারীদের ন্যায্য দাবির প্রতি সক্রিয় ...সমর্থন জানিয়ে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার ও গ্রেফতার হন। দীর্ঘ ৬১ বছরাধিককাল এই বহিস্কারাদেশ বলবৎ ছিল। যা এই বছরের ১৪ আগষ্ট প্রত্যাহার করা হয়।

শেখ মুজিবের আপোষহীন নেতৃত্বের কারণে ১৯৬৯ সালে পশ্চিমা হায়েনারা দায়ের করে তথাকথিত 'আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা'। শেখ মুজিবকে রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগে অভিযুক্ত এক নম্বর আসামি করা হয়। কিন্তু ব্যর্থ হলো তাদের সব চাল। সৃষ্টি হলো ঊনসত্তরের গণঅভু্যত্থান। পূরো পূর্ব বাংলা একদাবিতে কেঁপে ওঠলো-জেলের তালা ভাঙবো-শেখ মুজিবকে আনবো।প্রবল আন্দোলনে দিশেহারা আইয়ূব খান প্রস্তাব দিলেন মুজিবকে প্যারোলে মুক্তি দেবেন। কিন্তু অস্বীকার করে বসেন মুজিব তাই অনন্যোপায় হয়ে ২২ ফেব্রম্নয়ারি ১৯৬৯ সালে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা প্রত্যাহার করে শেখ মুজিবকে মুক্তি দিতে বাধ্য হলো পশ্চিমা শাসকগোষ্ঠী। কারামুক্তির পরের দিন ২৩ ফেব্রম্নয়ারি ১৯৬৯, সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের পক্ষ থেকে ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে বর্তমানকার সোহরাওয়ার্দি উদ্যানে শেখ মুজিবকে গণসংবর্ধনা প্রদান করা এ গণসংবর্ধনা অনুষ্ঠানে লক্ষাধিক মানুষের উপস্থিতিতে গণসংবর্ধনা সভার সভাপতি তোফায়েল আহমেদ তাঁর ভাষণে পূর্ব বাংলার সর্বসত্মরের জনগণের পক্ষ থেকে কারা নির্যাতিত আপোসহীন নেতা, বাঙালী জাতির দুর্দিনের পথ প্রদর্শক শেখ মুজিবকে 'বঙ্গবন্ধু' উপাধিতে ভূষিত করেন। রেসকোর্স ময়দানে উপস্থিত লক্ষ লক্ষ মানুষ বিপুল হর্ষধ্বনি ও করতালির মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুকে অভিনন্দিত করে।
তারপরের পথ পরিক্রমায় আসে ৭ মার্চ ১৯৭১। ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে দশ লক্ষাধিক লোকের এক সমাবেশে বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার অনানুষ্ঠানিক ঘোষণাই দিয়ে দ্ব্যররথকন্ঠে উচ্চারণ করলেন স্বাধীনতার সেই সে অমোঘ বাণী-
"এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম_ এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।"

২৫মার্চ রাতে শুরু হয় মানব ইতিহাসের এক বর্বর নির্মম হত্যাকান্ডের সূচনা। মধ্যরাতে গ্রেফতার হবার পূর্বে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বিডিআর অয়ারলেস সেটের মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা প্রদান করেন। যা পরবর্তীতে আব্দুল হান্নান, জিয়াউর রহমানসহ অন্যেরা পাঠ করেন। তারপর বাংলাদেশ রাষ্ট্রের অভ্যুদয়ের ইতিহাস। একসাগর রক্ত আর মা-বোনের সভ্রমের বিনিময়ে অর্জিত বাংলাদেশ। বঙ্গবন্ধুকে রাষ্ট্রপ্রধান, সৈয়দ নজরুল ইসলাম অস্থায়ী রাষ্ট্রপ্রধান এবং তাজউদ্দীন আহমদকে প্রধানমন্ত্রী করে মুজিবনগরে স্বাধীন বাংলাদেশের বিপ্লবী সরকার গঠিত হয় ৭১-এর এপ্রিলে। নয় মাসের রক্তৰয়ী সশস্ত্র লড়াইয়ের মধ্য দিয়ে ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১ অভ্যুদয় ঘটে বাংলাদেশ নামক গ্রেফতার হওয়া মুজিব ৮জানুয়ারি পাকিস্থান থেকে মুক্তিলাভ করেন। লন্ডন হয়ে দেশে ফেরেন ১০ জানুয়ারি ১৯৭২ সালে। এক অভূতপূর্ব গণসংবর্ধনায় তিনি কান্নাজড়িত কন্টে বলেছিলেন- "আমার বাংলাদেশ আজ স্বাধীন হয়েছে, আমার জীবনের সাধ আজ পূর্ণ হয়েছে, আমার বাংলার মানুষ আজ মুক্ত হয়েছে। আমি আজ বক্তৃতা করতে পারবো না, বাংলার ছেলেরা, বাংলার মায়েরা, বাংলার কৃষক, বাংলার শ্রমিক, বাংলার বুদ্ধিজীবী যেভাবে সংগ্রাম করেছে, আমি কারাগারে বন্দী ছিলাম ফাঁসিকাষ্টে যাবার জন্য প্রস্তুত ছিলাম, কিন্তু আমি জানতাম আমার বাঙালীকে কেউ দাবায়ে রাখতে পারবে না। আমার বাংলার মানুষ স্বাধীন হবে।"

হ্যা, এভাবেই তিনি একজন সাধারণ মুজিব থেকে অসাধারণ হয়ে উঠেছিলেন। কিন্তু স্বাধীন দেশের পরাজিতচক্র তাকে বেশিদিন বাংলার মুক্ত বাতাসে থাকতে দেয়নি। কিছু বিপথগামী সেনা সদস্য ১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্টের রাতের আধারে তাকে সপরিবারে হত্যা করে বাংলার ইতিহাসে কালিমা লেপে দেয়।
আজ সেই ভয়াবহ দিন। আজ সে কালিমাময় দিন। যদিও বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের বিরাট অংশের ফাসি হয়েছে তবু আমাদের কপালের কলংকতিলকের শেষ হয়নি।
আমরা সেদিনই প্রকৃত কলংমুক্ত হবো যেদিন স্বাধীনতা আর বংবন্ধুর স্বপ্নের বাংলাদেশের যথাযথ বাস্তবায়ন ঘটবে! আমরা সেদিনেরই অপেক্ষায়---

তথ্যঋণঃ বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা এবং কলাম।
ছবিঋণঃ গুগল।
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই আগস্ট, ২০১০ সকাল ১১:২১
৯টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জাতির জনক কে? একক পরিচয় বনাম বহুত্বের বাস্তবতা

লিখেছেন মুনতাসির, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৮:২৪

বাঙালি জাতির জনক কে, এই প্রশ্নটি শুনতে সোজা হলেও এর উত্তর ভীষণ জটিল। বাংলাদেশে জাতির জনক ধারণাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে একজন ব্যক্তিত্বকে জাতির প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হয়। তবে পশ্চিমবঙ্গের... ...বাকিটুকু পড়ুন

আত্মপোলব্ধি......

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১০:৫১

আত্মপোলব্ধি......

একটা বয়স পর্যন্ত অনিশ্চয়তার পর মানুষ তার জীবন সম্পর্কে মোটামুটি নিশ্চিত হয়ে যায়। এই বয়সটা হল পঁয়ত্রিশ এর আশেপাশে। মানব জন্মের সবকিছু যে অর্থহীন এবং সস্তা সেটা বোঝার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবন থেকে নেয়া ইলিশ মাছের কিছু স্মৃতি !

লিখেছেন হাসানুর, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:৩২



হঠাৎ ইলিশ মাছ খেতে ইচ্ছে হল । সাথে সাথে জিভে ..জল... চলে এল । তার জন্য একটু সময়ের প্রয়োজন, এই ফাঁকে আমার জীবন থেকে নেয়া ইলিশ মাছের কিছু স্মৃতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্প ক্ষমতায় আসছে এটা ১০০% নিশ্চিত। আমেরিকায় ইতিহাসে মহিলা প্রেসিডেন্ট হয়নি আর হবেও না।

লিখেছেন তানভির জুমার, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৩৩

আর এস এস সহ উগ্র হিন্দুদের লিখে দেওয়া কথা টুইট করেছে ট্রাম্প। হিন্দুদের ভোট-আর ইন্ডিয়ান লবিংএর জন্য ট্রাম্পের এই টুইট। যার সাথে সত্যতার কোন মিল নেই। ট্রাম্প আগেরবার ক্ষমতায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্প জিতলে কঠোর মূল্য দিতে হবে ইউসুফ সরকারকে?

লিখেছেন রাজীব, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:৪২

ডোনাল্ড ট্রাম্পের এক মন্তব্যে বাংলাদেশের মিডিয়ায় ঝড় উঠেছে। ৫ তারিখের নির্বাচনে ট্রাম্প জিতলে আরেকবার বাংলাদেশের মিষ্টির দোকান খালি হবে।

আমি এর পক্ষে বিপক্ষে কিছু না বললেও ডায়বেটিসের রুগী হিসেবে আমি সবসময়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×