I should steer southwest to go there......in the spheres which I have seen and in the drawings of mappae mundi it is in this region.
- Columbus in his log book, as he knew that he was not the first to reach America!!!
কলম্বাসের আগেও ৫ টি দল আমেরিকা মহাদেশে পৌছেছেন এটি মোটামুটি স্বীকৃত এখন। এর মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাত ভাইকিং'রা।
বাকিরা যেমন আইরিশ যাজক, ফিনিশিয়ান অভিযাত্রী, ঘানার অভিযাত্রী এবং চিনা অভিযাত্রীদের কথা মানুষ কমই জানে।
বন্ধুরা আমি আপনাদের বলবো চিনা অভিযাত্রীদের গল্প। ঝেং হি-এর নেতৃত্বে বিশাল এক নৌবহর ম্যাগেলানের পূর্বের পুরো পৃথিবী পরিভ্রমণ করেছিলো আর পৌছে গিয়েছিলো এক অজানা মহাদেশে। পরবর্তীতে ঝেং হি-এর এই দুঃসাহসিক যাত্রার পর অনেক ম্যাপ তৈরি করা হলেও সেগুলো পুড়িয়ে ফেলা হয় রাজনৈতিক কারণে। ভাগ্য ভালো ঝেং হি-এর, তার সমসাময়িক ঐতিহাসিকার মা হুয়ান এই পুরো ঘটনা বিস্তারিত লিপিবদ্ধ রেখেছেন বলে সেই দুঃসাহসিক যাত্রা সম্পর্কে অনেক কিছু জানা গিয়েছে।
সম্রাট ঝু ধি (Zhu Di) তখন ক্ষমতায়, চীন তখন বিশ্বের সবচয়ে ঐশ্বর্যময় দেশ। সম্রাট ঝু ধি ঠিক করলেন জ্ঞানের দিক থেকেই চীনকে এগিয়ে নিয়ে যাবেন। ২০০০ স্কলারকে নিয়োগ দিলেন বিশ্বকোষ তৈরি করবার। তখনকার দিনে ৪ হাজার ভলিউমের বিশ্বকোষ বানিয়েছিলো চীনা স্কলার'রা যা বড় একটি লাইব্রেরির সমান ছিলো। এরপর বানালেন জাংক (Junk) নৌবহর। জাংক হলো চীনের বিশাল জাহাজ যা একবারে লম্বা সময়ের জন্য যাত্রা করতে পারে এবং ঝড়ে ডোবে না সহজে। তিনি পুরো পৃথিবীর ম্যাপ বানানোর একটি উচ্চবিলাসী পরিকল্পনা আটলেন। তিনি সেই সময়ের বিখ্যাত চীনা এডমিরাল ঝেং হি (Zheng Hi)-কে দায়িত্ব দিলেন তাঁর এই উচ্চবিলাসী পরিকল্পনাকে সফল করার জন্য।
ঝেং হি-এর নৌযাত্রা শুরু ১৪২১ সালে। মালাক্কা হয়ে ভারতের কালিকট বন্দরে পৌছায় ঝেং হি। ইউরোপিয়ানদের অনেক আগেই এই বন্দরটির সাথে পরিচিত ছিলো চিনারা। কালিকট বন্দর ছাড়ার পর বর্তমান মোজাম্বিকের সাফোলা বন্দরে পৌছায় চিনারা। সাফোলা সেই সময় আরব বনিকরা বানিজ্য করতো সেই সময়। এরপর আফ্রিকার দক্ষিণ অন্তরীপে পৌছানার পর, আফ্রিকার উপকূল ঘেষে ভ্রমণ করতে থাকে ঝেং-এর নৌবহর এবং এভাবে পৌছে যায় পশ্চিম আফ্রিকা। মা হুয়ানের বর্ণনা অনুযায়ী এরপর ঝেং-এর নৌবহর কেপ ভার্ডে দীপপুঞ্জে যাত্রাবিরতি করে এবং সেখানে থেকেই একেবারে ভিন্ন দিকে রওয়া হয় তাঁর নৌবহর এবং আটলান্টিক পাড়ি দিয়ে ব্রাজিলের উপকূলে পৌছে! ঝেং-এর নৌবহর এরপর দক্ষিণ দিকে মোড় নেয় এবং ফকল্যান্ড আইল্যান্ড পার হয়ে হর্ন প্রনালী হয়ে প্রশান্ত মহাসাগরের পৌছালে আবার উত্তরে মোড় নিয়ে বর্তমান ক্যালিফো্রনিয়া পর্যন্ত চীন নৌবহর যায় বলে অনুমান করা হয়, এরপর চীনেই ফেরত আসে নৌবহরটি।
হর্ন প্রনালী/ম্যাগেলান অন্তরীপে যে চীনা নৌবহর পৌছেছিলো তার পক্ষে এক জোড়ালো প্রমাণ হলো চীনারা প্রাচীন কাল থেকেই Crucis Alpha নামক নক্ষত্রের ব্যাপারে জানতো যা দেখা যায় একেবারে দক্ষিণে। আর ১৪৩৩ সালে তারা বের করে A Sailor's Manual যা চীনা ভাষায় Wu Pei Chi নামে পরিচিত। ঐ ম্যানুয়ালে চীনারা দক্ষিণ দ্রাঘিমাংশ নিখুতভাবে নির্ণয় করে।
দুর্ভাগ্যজনকভাবে ঝু দি মারা যান ১৪২৪ সালে। এরপর চীনের রাজনৈতিক অবস্হা টালমাটাল থাকে, মানুষ ভুলে যায় এই অভিযানের কথা। সমসাময়িক কিছু ডায়রি ও ঐতিহাসিকার ছাড়া আর বড় কোন কিছুতে এর রেকর্ড রইলো না। পৃথিবীর মানুষকে তাই আবারও অপেক্ষা করতে হয় ১৪৯২ সাল পর্যন্ত এবং ইটালিয়ান নাবিক কলম্বাস হয়ে উঠেন আমেরিকা আবিষ্কারের একক নায়ক।
তথ্যসূত্র: রবার্ট স্টুয়ার্টের বই "Mysteries of History"
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে জানুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৩:০৬