"ঈশ্বরের ইচ্ছা"
বাইজেনটাইন সম্রাট আলেক্সিস কোমনিয়াসের কাছে থেকে চিঠি পাওয়া পর পোপ দ্বিতীয় আরবান মনস্হির করেন তিনি ফ্রান্সে ভ্রমণ করবেন, সেইসঙ্গে তার অধীনস্ত বিশপ ও এবটদের আদেশ দেন, চার্চের গুরুত্বপূর্ণ পদাধিকারী ব্যাক্তিরা যেনো ক্লেয়ারমন্ট কাউন্সিলে হাজির থাকে। ফ্রান্সের ক্লেয়ারমন্টে অবস্হিত ক্লেয়ারমন্ট ক্যাথড্রালে অনুষ্ঠিত হতো ক্লেয়ারমন্ট কাউন্সিল। এই কাউন্সিল ফ্রান্সের রাজাকে পর্যন্ত পদচ্যুত করেছিলো ব্যাভিচারের অভিযোগ। সুতরাং এই ঘটনা দিয়ে সহজেই অনুমেয় ক্লেয়ারমন্ট কাউন্সিলের ক্ষমতা ও প্রতিপত্তি।২৭শে নভেম্বরে ক্লেয়ারমন্ট কাউন্সিলে এত জনসমাগম হয় যে, ক্লেয়ারমন্ট ক্যাথড্রালে জায়গা না হওয়ায় খোলা মাঠে অনুষ্ঠিত হয় ক্লেয়ারমন্ট কাউন্সিল। পোপ দ্বিতীয় আরবান ছিলেন এক সুবক্তা, তিনি ধর্মীয় আবেগকে সুনিপুনভাবে ব্যবহার করে উপস্হিত জনতাদের উত্তেজিত করে তোলেন।
ক্লেয়ারমন্ট কাউন্সিলের সেই ভাষণে পোপ দ্বিতীয় আরবানের আসলেই কি বলেছেন, তা সঠিক অনুলিপি পাওয়া যায়নি। উপস্হিত কেউ কেউ পরবর্তী সময়ে লিপিবদ্ধ করেছেন, এর মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাত ঘটনাপঞ্জি হলো -Gesta Francorum, যা আনুমানিক ১১০০ সালের দিকে লেখা হয়। সেই ঘটনাপঞ্জি থেকে জানা যায়, তিনি আলেক্সিস কোমনিয়াসের চিঠি পাঠ করে শোানান এবং সেই সাথে ফ্রান্কদের বীরত্বগাথা তুলে ধরেন। উল্লেখ্য যে, রোমান সাম্রাজ্য পতনের পর ফ্রান্করা ফ্রান্স দখল করে, যাদের নামানুসারে ফ্রান্স নামকরণ করা হয়, যদিও ফ্রান্করা জাতিতে খাঁটি জার্মান। ফ্রান্করা প্রথমে প্যাগান থাকলেও পরে খ্রীস্টান ধর্ম গ্রহন করে এবং ট্যুরস-এর যুদ্ধে অপ্রতিরোধ্য রহমানের বিশাল বাহিনীকে পরাজিত করে। পরবর্তীতে সম্রাট শার্লেমান ফ্রান্কদের নেতা হলে, তিনি ইউরোপে মুসলিম আগ্রাসন রোধ করেন। এর ফলে স্পেন পাড় হয়ে ফ্রান্সে মুরিশদের রাজ্যত্ব প্রসার লাভ করেনি। পোপ দ্বিতীয় আরবান তাই তাঁর ভাষণে সম্রাট শার্লেমান-এর নাম স্মরণ করেন এবং তাকে মহান যোদ্ধা হিসেবে অভিহিত করেন। সেজন্য তিনি উপস্হিত সকল ফ্রান্কদের অনুরোধ করেন তারা যেনো তাদের পূর্বপুরুষদের গৌরব অক্ষুন্ন রাখেন। তিনি অবশ্য ইউরোপের অন্যান্য সকল রাজা ও যুবরাজদেরও ধর্মযুদ্ধে শামিল হতে বলেন।বিশাল জনসমাগমের মধ্যে আবেগের ঢেউ খেলে যায়, গগনবিদারী কন্ঠে উচ্চারিত হতে থাকে, "এটাই ঈশ্বরের ইচ্ছা,এটাই ঈশ্বরের ইচ্ছা"।
পোপকে ঈশ্বরের প্রতিনিধি হিসেবে ভাবা হতো, সুতরাং স্বাভাবিকভাবেই পোপ দ্বিতীয় আরবানের ভাষণে উপস্হিত শ্রোতাদের মাঝে ধর্মযুদ্ধ নিয়ে ভাবাবেগ শুরু হয়। অবশ্য ধারণা করা হয় যে, এটাই ঈশ্বরের ইচ্ছা,এটাই ঈশ্বরের ইচ্ছা- শ্লোগানটি আগেই যাজকরা ঠিক করে রেখেছিলেন এবং আরবানের ভাষণ শেষ হওয়া মাত্রই তারা চিৎকার করে সবাই এই শ্লোগানটি দিতে উৎসাহিত করে। আরবানের ঐতিহাসিক ভাষণ শেষ হওয়া পর বিশপ আদেমার পোপের সামনে হাঁটু গেড়ে বসে ধর্মযুদ্ধে যাওয়ার জন্য অনুমতি চান। আরবান তৎক্ষনাৎ তাকে ধর্মযুদ্ধে প্যাপাল কনভয়ের (Papal Convoy) নেতা হিসেবে নিয়োগ দেন।
যদিও আরবানের ভাষণের অনুলিপি নিয়ে মতবিরোধ আছে, তবে অধিকাংশ ঘটনাপঞ্জিতে পাওয়া যায়, আরবান ঘোষণা দিয়েছিলেন যে, ধর্মযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী সকল নাইট ও সাধারণ সৈনিকের পাপমোচন হবে অর্থাৎ তাদের পাপাচার থেকে মুক্তি লাভ করবে এবং তাদের আত্না হবে পুরোপুরি বিশুদ্ধ। এই ব্যাপারে সকল ইতিহাসবিদ একমত যে, এই ধরনের ঘোষণা দেওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিলো কারণ এর ফলে নাইট ও সাধারণ সৈনিকদেরকে ধর্মযুদ্ধে আকৃষ্ঠ করা সহজ হবে।
পরবর্তী পর্ব: ধর্মযুদ্ধের স্ফুলিংগ দেশে দেশে
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ রাত ৮:৩৪