মাঝরাতে ঘুম ভাঙ্গে ঝড়ের করুন সঙ্গীতে,
আধারের জালে অচেনা লাগে এই পার্থীব জগতটিকে।
ধীর লয়ে উঠে দাড়াই, এগিয়ে যাই আয়নার সামনে,
এতো আমি নই, এই কূৎসিত প্রতিবিম্ব তুমি কে?
কালো চুলে কাশ ফুল গেথে হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলো
কাশ বনের মেটো পথে দৌড়ে ছিলাম হাজারো মাইল
ক্লান্তি নয় পরশমাখা শান্তি নিয়ে চোখ বুজে ছিলাম অন্ততকাল ধরে
যেনো রঙিন হয়ে ছিলো এই পৃথিবীটি হাজারো বছর ধরে,
যেনো তারকারাশিতে উল্কা ঝড়ছিলো অজুতকাল ধরে,
আমি অনুভব করছিলাম তার হৃদয়ের প্রতিটি স্পন্দন।
দোয়েলের সুমিষ্ঠ ডাক আমাদের ঘুম ভাঙ্গায়,
এরপর নূপুরের ডাক মিলিয়ে যায় কাশবনের এক কোণায়,
আমি জেগে থাকি, আবগাহণ করতে থাকি রংধনু, সূর্যাস্তের লাল আভা।
এরপর আশ্বিন মাসে সোনালী ধানগুলোতে পরশ বুলাই
পুকুরে দেখতে পাই প্রস্ফুটিত গোলাপী পদ্ম,
শুয়ে থাকি শিশির ভেজা সবুজ ঘাসে শীতের অপক্ষায়।
হঠাৎ বদলে যেতে থাকি,
নাহ আমার তখন শীত আসে না,
আসে না হেমন্ত, আসে না বর্ষা।
অনন্ত গ্রীষ্ম তাড়া করে বেড়ায় আমাকে,
তৃষার্ত হয়ে খুজি আমার সবুজ মরুদ্যানকে।
কাশ বনটি এখন মরে গিয়েছে, সেখানে গিজগিজ করছে ধুতুরা,
আমি পুকুরে দেখি অজস্র নীকষ কালো শাপ কিলবিল করছে,
আকাশে দেখতে পাই আগুনে ঝড়, তছনছ করে দিচ্ছে সবকিছু।
কাশ ফুল, তুমি আমার নাহ
দোয়েল, তুমি আমার নাহ
সোনালী ধান, তুমি আমার নাহ
ভেজা পলি মাটি, তুমি আমার নাহ
কৃষাণীর হাত, তুমি আমার নাহ
গোলাপী পদ্ম, তুমি আমার নাহ
শিশির ভেজা সবুজ ঘাস, তুমি আমার নাহ
এটি দুঃস্বপ্ন, পুরোদস্তুর এক দুঃস্বপ্ন, এটি সত্য নয়,
কিন্তু প্রতিবিম্বটর কৌতুককর চাহিনী আমি আবারও দেখতে পাই।
ইচ্ছে হলো গগণবিদারী চিৎকার করে প্রতিটি আত্নাকে জানিয়ে দেই,
এই কুৎসিত প্রতিবিম্ব, তুমি আমার নাহ।
ইচ্ছে হলো পাহাড়ের চূড়ায় উঠে প্রতিটি নক্ষত্রকে জানিয়ে দেই
এই কুৎসিত প্রতিবিম্ব, তুমি আমার নাহ।
প্রতিবিম্বটির কৌতুককর চাহিনী আমি আবারও দেখতে পাই
আরও দেখতে পাই তার বাকা হাসি,
ইচ্ছে হলো অনন্তকাল দৌড়ে সব নীথর স্তবরকে জাগিয়ে তুলি,
গলা ফাটিয়ে বলি, এই কুৎসিত প্রতিবিম্ব, তুমি আমার নাহ।
হঠাৎ একটি কাক এসে বলে, এই প্রতিবিম্ব তোমারই,
গলা টিপে মারলাম ঐ কাকটিকে, ছিড়লাম পাখাগুলোকে।
এরপর শত শত কাক আমায় ঘিরে ধরলো আমায়, বলে চললো
এই প্রতিবিম্ব তোমারই!
ইচ্ছে হলো সবগুলো কাককে গলা টিপে মারি আর জানিয়ে দেই
এই কুৎসিত প্রতিবিম্ব, তুমি আমার নাহ।
ইচ্ছে হলো সকল কামান বন্দুক মারণাস্ত্র তাক করে বলি,
এই কুৎসিত প্রতিবিম্ব, তুমি আমার নাহ।
প্রতিবিম্বটির কৌতুককর চাহিনী আমি আবারও দেখতে পাই
এবার দেখতে পাই তার কুতকুতে আগ্রাসী চোখ,
যে চোখ দিয়ে সে গিলে ফেলবে পুরো পৃথিবীকে,
খেয়ে ফেলবে পৃথীবীর সব জলরাশিকে,
আমার সোনালী ধান, কৃষাণী, পদ্ম - সবই খেয়ে ফেলবে।
বুকের ভেতর অনুভব করি সাহারার উপ্তত্ব বালুরাশি
আমি পড়ে যাই, মাটির সাথে মিশে যেতে থাকি।
প্রতিবিম্বটি ঝড়ের করুন সুরের মতন বলতে থাকে,
তোমারই দূর্নিবার চাওয়া থেকে আমি জন্মেছিলাম,
তোমারই উদগ্র বাসনা থেকে আমি বেড়ে উঠেছিলাম,
আমার এই সত্ত্বা তোমারই সত্ত্বার প্রতিরূপ মাত্র।
কবীর
৩.১০.১৪