প্লেবয় পত্রিকাটি প্রকাশনা শুরু হয় ১৯৫৩ সালে । তার পর থেকে এই পত্রিকাতে পঞ্চাশ বছরেরও বেশী সময় ধরে নগ্ন নারীদের ছবি প্রকাশিত হয়ে আসছে । বর্তমানে এটি একটি বিরাট কোম্পানি এবং ম্যাগাজিন ছাড়াও এরা ওয়েবসাইট এবং হোম ভিডিওর মাধ্যমে এরা ব্যবসা করছে ।
মূলত অল্পবয়সী অবিবাহিত পুরুষদের পছন্দের প্রতি দৃষ্টি রেখে প্লেবয়ের ম্যাগাজিন এবং ওয়েবসাইটে সুন্দরী মহিলাদের নগ্ন ছবি প্রকাশ করা হয় । তবে বিবাহিত এবং বেশী বয়সের পুরুষেরাও এর আকর্ষন এড়াতে পারেন না । সম্পূর্ণ বিবস্ত্র অবস্থায় অথবা বিবস্ত্র হবার বিভিন্ন অবস্থায় মহিলাদের ছবি তোলা হয় । মহিলাদের উন্মুক্ত স্তন, নিতম্ব এবং যোনি স্পষ্ট ভাবে দেখালেও তা হার্ডকোর পর্নো পত্রিকাগুলির মতো জোর করে দেখানো হয় না বরং স্বাভাবিক ভাবে যতটুকু দেখা যায় তাই দেখানো হয় ।
প্লেবয়ের ছবিগুলি যৌনতা এবং শিল্পের সঠিক মিশেল । নারীশরীর যে কত সুন্দর হতে পারে তা একমাত্র প্লেবয়ের ছবিগুলি দেখলেই বোঝা যায় । প্লেবয়ের অধিকাংশ মহিলারাই ক্যামেরার সামনে অত্যন্ত সাবলীল এবং আত্মবিশ্বাসী ভাবে পোজ দেন । যদিও তাঁদের মধ্যে অনেকেই প্রফেশনাল মডেল নন । মডেলদের ছবি যে ব্যাকগ্রাউন্ডে তোলা হয় তার পিছনেও বহু ভাবনা চিন্তা থাকে এবং আলোর ব্যবহার থাকে যথাযথ । প্লেবয়ের ফটোগ্রাফাররাও খুব নামী এবং সুদক্ষ । প্লেবয়ের অনেক মডেলই যখন অন্য পত্রিকা বা ওয়েবসাইটের জন্য ছবি তুলেছেন তখন তা প্লেবয়ের মতো অত সুন্দর হয় নি ।
শৈল্পিক দিক থেকে প্লেবয়ের ছবিগুলি সুন্দর হলেও যৌনতার দিকটাকেও খেয়ালে রাখা হয় । মূলত পুরুষের মনে কামনা জাগিয়ে তোলার জন্যই যে ছবিগুলি তা মডেলদের এক্সপ্রেসন এবং ভঙ্গিমা দেখলেই বোঝা যায় । যুগের সাথে সাথে প্লেবয় মডেলদের স্টাইলও পালটেছে ।
প্লেবয়ের জন্য প্রফেশনাল মডেল ছাড়াও বহু অভিনেত্রী, খেলোয়াড়, সাংবাদিক, শিক্ষিকা, ছাত্রী এবং অফিসাররা নগ্নাবস্থায় পোজ দেন । তাঁদের মধ্যে অনেকেই উচ্চশিক্ষিত অথবা ইউনিভার্সিটির ছাত্রী । বড় বড় কোম্পানি যেমন ওয়াল মার্ট এবং ম্যাকডোনাল্ডসের মহিলা কর্মচারীদের জন্য প্লেবয় নানা নগ্ন ছবির সিরিজ করেছে । বিরাট কোম্পানি এনরন যখন বন্ধ হয়ে যায় তখন প্লেবয় এনরনের বেশ কিছু মহিলা কর্মচারীদের মডেলিঙের সুযোগ দিয়েছিল । এছাড়াও প্লেবয় বহু যমজ বোনের একসাথে ছবি প্রকাশিত করেছে । প্লেবয় যে কোথা থেকে এত সুন্দরী যমজ বোন যোগাড় করে তা এক আশ্চর্যের বিষয় ।
ছবি প্রকাশনা ছাড়াও প্লেবয় তার মডেলদের নিয়ে প্রচুর হোম ভিডিও প্রকাশ করেছে । সুন্দর মিউজিকের সাথে যথাযথভাবে তোলা ভিডিওগুলি খুবই উঁচুদরের । এই ভিডিওগুলিতে নানাভাবে উলঙ্গ নারীশরীর দেখানো হয় কিন্তু কোন যৌনক্রিয়া দেখানো হয় না । ভিডিও গুলিতে অনেকসময় মডেলদের সাক্ষাৎকারের সাথে তাদের বাড়ির লোকেদের সাক্ষাৎকারও দেখানো হয় ।
আমেরিকার এক চতুর্থাংশ কলেজ ছাত্র প্লেবয় পত্রিকার গ্রাহক । পত্রিকাটিতে নগ্ন ছবি ছাড়াও নানা রকম বিষয়ের উপর লেখা প্রকাশিত হয় । অবশ্য প্লেবয়ের ওয়েবসাইটগুলিতে শুধুমাত্র ছবি এবং ভিডিও রাখা থাকে ।
প্লেবয় পত্রিকা এবং ওয়েবসাইটের ছবি এবং ভিডিওগুলি যে মূলত পুরুষদের হস্তমৈথুন করার জন্য উদ্দীপক হিসাবে ব্যবহৃত হয় সে বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই । এবং সেদিক লক্ষ্য রেখেই এগুলিকে তোলা এবং প্রকাশ করা হয় ।
প্লেবয় পশ্চিমি সভ্যতার প্রতীক এবং নগ্ন নারীশরীর নিয়ে ব্যবসা করে । তাই বহু দেশে প্লেবয় নিষিদ্ধ । আবার অনেক লোকের বক্তব্য যে প্লেবয় মডেলদের শরীর অনেকটাই সিন্থেটিক তাদের মধ্যে প্রকৃত সৌন্দর্য খুব কম । কিন্তু ইন্টারনেটের প্রসারের সাথে প্লেবয়েরও জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পেয়েছে ।
আরেক দিক থেকে বিচার করলে প্লেবয় নারীস্বাধীনতারও প্রতীক । কারন এখানে সব মহিলারাই স্বইচ্ছায় নিজেদের উলঙ্গ ছবি তোলেন । মেয়েদের শরীরের মালিক যে মেয়েরাই তাদের স্বামী, সমাজ অথবা ধর্ম নয় তা প্লেবয়ের জন্য পোজ দিয়ে তাঁরা প্রমান করেন । তাঁদের শরীর নিয়ে তাঁরা কি করবেন সেটা তাঁদের একান্ত ব্যক্তিগত ব্যাপার । তাঁদের অনেকরই বক্তব্য যে তাঁদের যদি দেখাবার মতো সুন্দর শরীর থাকে তাহলে তাঁরা তা অবশ্যই দেখাবেন তাকে আজীবন ঢেকে রাখার কোন মানে হয় না ।
মজার ব্যাপার হচ্ছে নগ্ন নারীশরীর নিয়ে ব্যবসা করলেও এই কম্পানির চেয়ারপার্সন এবং চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার একজন মহিলা । তাঁর নাম ক্রিস্টি হেফনার । এই মহিলা প্লেবয় পত্রিকার স্থাপক হিউজ হেফনারের মেয়ে ।