somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সেদিন ফেলানীর জন্য কেদেছিলাম, আজ আবার কাঁদতে ইচ্ছে করছে। সেদিন ফেলানীকে বিদায় জানিয়েছিলাম। আজ সেদিনের বিদায় জানানো কবিতাটি রিপোস্ট করে আবারো বিদায় জানাচ্ছি।

০৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ৯:৪১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


বিদায় ( উৎসর্গঃ ফেলানী কে)

(আমরা হাসি মুখে একটি শিশুকে হত্যা করি! অথচ অনুশোচনা নেই, আছে কেবল গৌবরের আস্ফালন)
ফেলানী ও ফেলানী
মা এমন আয়েস করে এখনও ঘুমায় কেউ!
দেখ্ তোর সখীরা এসেছে।.....
এসো মা তোমরা ভিতরে এসো

সখীরা ফেলানীর রুমে হুরমুর করে ডুকে পড়ে...
ওদের হাতে সবুজ মেহেদী পাতা
এখনি পাটায় পিষে মিহি করে
ফেলানীর হাতকে রাঙ্গিয়ে দিবে
লাল টকটক করে।

কি সখি
এই আনন্দের দিনে এখনো উঠিস নি!
বান্ধবীরা ফেলানীর শিয়রে দাড়ায়
ভেঙচি কেটে বলে
ঘুমো আরও ঘুমো
শশুর বাড়িতে কাক ডাকা ভোরে
জাগতে হবে
তখনতো আর ঘুমোতে পারবি নে!

ফেলানী পাশ ফিরে বান্ধবীদের মুখোমুখি হয়
-আমাদের আবার ঘুম!
ঘুম পাড়ানো মাসিপিসি
জীবন সংগ্রামের কালো ধোয়ায়
গরীবের গৃহ ছেড়ে সেই কবেই তো পালিয়েছে
এখানে তো কেবল ঘুমের রাজ্যে
শীতের আনাগোনা আর
বড় জোর ঋতুর বিপরীতে
গরমের হাসিঠাট্টা।

সে যাগগে সখী
ফেলানীর মুখটা মূহুর্তেই খুশীতে টইটম্বুর
হয়ে নতুন প্রসঙ্গের সূচনা করে

এই দেখ্ দেখ‌্
কি চমৎকার থালা সেটটা
কালকে কিনেছি!
ওইযে খন্দকার চাচার মেলের পাশ থেকে
বস্তা থেকে ছিটকে পড়া কিছু চাল
কুড়িয়ে ছিলাম না?
ওগুলো খাই নি। মা বলল পান বিক্রির কিছু টাকা দিয়ে
আর চালগুলো বিক্রি করে
এক সেট থালা বাসন কিনে আন‌্
ঘরে তো মেহমানদের খাবার দেবার মত
কিছুই নাই। নইলে পাছে তোর শশুর বাডীর
কুটুমরা আমাদের অভদ্র জানবে যে!


তাইতো দাদাদের গঞ্জ থেকে
এসব কিনে আনলাম
কি চমৎকার তাইনা!
কিন্তু জানিস দাদারা আমার চাউল
ন্যায্য দামে কিনতেই চায়না!
তাই বাধ্য হয়ে সস্তায় দিয়ে এলাম
বেশী দামে বিক্রি করতে পারলে
এ যাত্রায় কানের বালা দুটোও কিনতে পারতাম!!

হইছে হইছে এখন উঠ্
হাতে মেহেদী দিতে হবে
জামাই বাবু তো বুঝি
মুখে রুমাল গুজে জলদি এসে গেল!

ফেলানী ঘুম থেকে উঠে
বাইরে ইতিমধ্যে বসেছে গীতের আসর
পাড়ার মহিলারা বেশ মজেছে তাতে।
কেউ কেউ ফেলানীকে একবার দেখতে
ভীড় করছে বাড়ির আঙ্গিনায়
ধীরে ধীরে পুরো বাড়িটি সরগরম হয়ে উঠে।

কলাগাছের গেটটা পার হয়ে একসময়
বর ডুকে কণের বাড়ির আঙ্গিনায়
মূহুর্তেই হর্ষ ধ্বনীতে মুখোরিত হয়ে উঠে চারদিক

বেজে উঠে বিয়ের সানাই......


........এসব ভাবছে আর চোখের জল
ছেড়ে হাউমাউ করে কাঁদছে সামিনা।
কি দোষ ছিল ওর!
তোমরা কেন কেড়ে নিলে ফেলানী কে
কেন মেহেদী দেয়া হল না ওর কমল হাতে
আমার বান্ধবীকে ফিরিয়ে দাও!!!!!!

বাকরুদ্ধ ফেলানীর বাপ চেয়ে থাকে
লাশের দিকে
হঠাৎ কানে এসে ধাক্কা দেয়
আব্বা একটু আস্তে হাটো
আমার হাটতে কষ্ট হচ্ছে!
মা এই আর একটু
কাটা তারটার পরেই তো বাড়ি
একটু কষ্ট করে হাটো
বাড়িতে পৌছে বিশ্রাম নিবে।

ফেলানীর আর হাটা হয় না
ফেরা হয়না মার কোলে
কেবল ফিরে আসে
-তোমরা কোথায়?
পানির পিপাসায় বুকটা ফেটে যাচ্ছে
একটু পানি দাও, একটু পানি
একটু পানি...একটু পানি....
পাশেই কিছু খেক শিয়াল
দাত উচিয়ে ধেয়ে আসে
পানির বদলে রক্ত তুলে দেয় মুখে..
নিস্তেজ হয়ে পড়ে ফেলানী!

এখন
ফেলানীর বিদায় বেলা
ভিড় জমেছে লাশটি ঘিরে
পাড়ার প্রতিবেশী
বান্ধবীরা, খেটে খাওয়া গ্রাম বাসী
কিছু তরুন-তরুণী, সাংবাদিক..

কেবল নেই পাশের বাড়ির খন্দকার সাহেব
আর রায় বাহাদুর..
................................................
(কিছু দিন পরের কথা.....)
রায় বাহাদুররা বললেন - ফেলানীকে হত্যা করা হয়নি
আমাদের নিষ্পাপ বান্দারা এ হত্যাকান্ড চালাতেই পারে না!
সবি মিথ্যে.........
নিজ চোখে দেখা মেয়ের বিদায়ের করুন আর্তনাথ এখনও নূর ইসলামের কর্ণে আঘাত হানে
সিডর বা আইলার মত ক্ষীপ্র বেগে....
ঝরে চলে চোখের অশ্রু অবিরত
কোন বাধ মানে না
হয়ত এভাবে বয়ে চলবে চিরকাল অবধি .....
নূর ইসলাম প্রিয়তমার আচল ধরে হঠাৎ ঘুমরে কেঁদে উঠে..
কাদো কন্ঠে বলে
'জানো এটাই গরীবের নিয়তি'
২টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কমলার জয়ের ক্ষীণ ১টা আলোক রেখা দেখা যাচ্ছে।

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:১৮



এই সপ্তাহের শুরুর দিকের জরীপে ৭টি স্যুইংষ্টেইটের ৫টাই ট্রাম্পের দিকে চলে গেছে; এখনো ট্রাম্পের দিকেই আছে; হিসেব মতো ট্রাম্প জয়ী হওয়ার কথা ছিলো। আজকে একটু পরিবর্তণ দেখা... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:২৪



সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪১





বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৩২



জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×