লিখেছে :::: ভন্ড পীর
মানব সভ্যতার ইতিহাসে খুব কম সময়ই একমুখী জীবনাচারের স্রোত বইতে দখো গেছে । আর সে দ্বিমুখীনতার বৈশিষ্ট্য বরাবরই নির্ধারিত হয়েছে প্রাকৃতকি নিয়মের সাথে বিরোধ । এবং সেই বিরোধী নিয়ম-কানুনকে স্বত:সিদ্ধ প্রাকৃতিক আইনের তকমা পরিধানের চেষ্টাও চলছে বিস্তর । প্রাকৃতিক নিয়মের বিধি মতে তা কায়মেও থেকেছে কিছুকাল এবং বিলিনও হয়েছে লজ্জার কালিমা মেখে । - এই পরিকাঠামোর উপরই আমরা আলোচনা করব ভ্যালন্টোইন’স ডের সাংস্কৃতকি বৈশিষ্ট্য এবং তার সাম্রাজ্যবাদী ইতিহাস নিয়ে । তার র্পূবে সভ্যতার মান নির্ধারণী অনুষঙ্গগুলির প্রচলতি মানদন্ডের আলোচনা এখানে উল্লেখের দাবি রাখে ।
সভ্যতার যে পাশ্চাত্য ধারাটি প্রচলতি আমাদের ধারণায়, ঐতিহাসিক বিবর্তনের দিকে দৃষ্টিপাত করলে তার অযৌক্তকিতা ধরা পড়ে সহজেই। পাশ্চাত্য সমাজবিজ্ঞান সভ্যতার যে ধারণা দেয়, আদিম বা অজ্ঞ অবস্থা থেকে উন্নততর অবস্থায় বিকশিত সমাজই সভ্য । - এ ধারণা দিয়ে র্সাবজনীন কোনো ব্যাখ্যা কখনোই সম্ভব নয় । এবং এর কোনো নজির চোখে পড়ে না খোদ পাশ্চাত্য সমাজেই ।
একটি সমাজের মানুষের আচার-আচরণকেই সংস্কৃতি বলে বিশ্বাস করাতে চায় আধুনকি সমাজবিজ্ঞান । সেখানে মার্জিত রুচি আর মার্জিত রুচিহীনতা মধ্যে পার্থক্য নির্ধারণ করা হয় না । কিন্তু সংস্কৃতি দিক নির্দেশ করে এক মার্জিত উন্নত ভাবের দিকে। Culture - এর প্রতশিব্দ হিসেবে সংস্কৃতি শব্দটি ১৯২২ সালে বাংলায় প্রথম ব্যবহার করা হয় । বাংলা সংস্কৃতি শব্দটি এসেছে সংস্কার থেকে। যার অর্থ শুদ্ধি, শোধন, সংশোধন, পবত্রিকরণ । একইভাবে সংস্কৃতি শব্দের আভিধানিক অর্থ শুদ্ধিকৃত, শোধনকৃত, সংশোধিত,পবিত্রকরণকৃত । অর্থাৎ যা সংশোধতি হয়েছে, শুদ্ধকরণ বা পবিত্রকরণ করা হয়েছে তাই সংস্কৃতি ।
ইউরোপে শিল্প বিপ্লবের ফলে পুরনো কৃষি ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়ে সহজেই । এবং সমাজ ব্যবস্থার হয় পুর্ণগঠন । যান্ত্রিক সভ্যতার বিকাশমান পরিস্থিতিতে মূল্যবোধেও পরিবর্তন আসে । বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উৎকর্ষের ফলে জন্ম নেয় নতুন নতুন জীবন জিজ্ঞাসার । যুগ জিজ্ঞাসার জবাব দানে অক্ষম খ্রিস্ট ধর্ম র্ধমীয় আধিপত্য হারানোর ভয়ে বিধিনিষেধের জ্বালে জড়িয়ে পড়ে ।ধর্মের প্রতি মানুষের দেখা দেয় সংশয় । হৃদয়বৃত্তি পিষ্ট হতে থাকে যান্ত্রিকতার আড়ালে ।-উদ্ভুত এই পরিস্থিতিতে ইউরোপীয় সমাজ দিক্ষা নেয় বস্তুতন্ত্রে । পুরনো মূল্যবোধ হারিয়ে দিশেহারা ইউরোপ জড়বাদী র্দশন নিয়ে আবার ফিরে আসে ধর্মের চৌহদ্দিতে। অস্তিত্ব রক্ষার তাগিদে খ্রিস্ট র্ধমও অভিনয় নিপুণ আচারর্সবস্বতাকে মেনে নেয় সহজেই ।
উপনিবেশ র্পবে যেমন পরদেশ দখলের মাধ্যমে শোষণের একটা প্রথা চালু ছিল, তারই উত্তর যুগে নতুন নাম এবং পোশাকে সাম্রাজ্যবাদ চেপে বসেছে র্বতমান বিশ্ব সভ্যতায় । উপনিবেশ যুগে মুনাফাবৃত্তি এসছেলি ধর্মের কাধে চেপে সাম্রাজ্যবাদী যুগে তার সাথে যোগ হয়েছে প্রযুক্তির উৎর্কষজাত ফসল প্রচার মাধ্যম । আধুনিক সমাজ জীবন প্রচার মাধ্যম নির্ভরতার কারণে সত্য-মিথ্যার মিশেল আসে সহজেই।
প্রেম-ভালোবাসার কোনো র্দাশনকি অর্থায়নের চেষ্টা না করে আমরা দেখব একটি নিখাদ খ্রিস্ট ধর্মীয় চেতনা ঠিক কোন স্বার্থে অপসাংস্কুতিক আগ্রাসন হয়ে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে বিশ্বময়। ধর্মকে অবজ্ঞাকারী একটি সমাজ কেন মত্ত হয়ে আছে একটি ধর্মাশ্রয়ী উৎসবে।সেন্ট ভ্যালেন্টাইন নামক খ্রিন্ষ্টান পাদ্রির নামে যে ভালোবাসা দিবস চালু হয়েছে বিশ্ব সমাজে এবং তা যে আচরণিক প্রকাশ তা ভ্যালেন্টাইনস এর ইতিহাসের সাথে ঠিক খাপ খায়না। ভ্যালেন্টাইনস ডে হচ্ছে খ্রিস্ট ধর্মের জন্য প্রাণোৎস্বর্গকারী একজন ব্যক্তিকে স্বরণ করার উৎসব মাত্র যা ৪৯৬ সালে পোপ সেন্ট জেলাসিউও ১ম জুলিয়াস ১৪ই ফেব্রুয়ারীকে ভ্যালেন্টাইনস ডে হিসেবে ঘোষণা করেন। এবং খৃষ্টান জগতে পাদ্রি সাধু সন্তানদের স্মরণ ও কর্মের জন্য এ ধরনের অনেক দিবস রয়েছে। যেমন- ২৩ এপ্রিল সেন্ট জজ ডে, ১১ নভেম্বর সেন্ট মার্টনি ডে, ২৪ আগস্ট বার্থলোমিজম ডে, ৩০ নভেম্বর সেন্ট এন্ড্রু ডে, ১৭ মার্চ সেন্ট পযাট্রিক ডে।
উপনিবেশবাদের সামাজ্য বিস্তারের যুগে বিকাশমান ইংরেজি সাহিত্যের জগতে ব্যাপক চর্চা হতে থাকে ভ্যালেন্টাইনস দিবসের। চসার থেকে শুরু করে শেক্সপীয়রীয় সাহিত্যে বাবরবার ভ্যালেন্টাইনস প্রসঙ্গটি এসেছে।পরবর্তী আধুনিক যুগের অতিকল্পনা প্রবণতা সাহিত্য এবং সমাজ জীবনে চেতনা হারিয়ে ফেলে ভ্যালেনটাইনস দিবসটি। এজন্য ১৭৭৬ সালে ফ্রান্স সনকার কর্তৃক ভ্যালেন্টাইনস উৎসব নিষিদ্ধ করে দেয়। ইংল্যান্ডে ক্ষমতাসীন উৎসব পিউরিটানরাও একসময় প্রসাশনিকভাবে দিবসটি উৎযাপন নিষিদ্ধ করে দেয়। এছাড়া অস্ট্রিয়া, হাঙ্গেরী ও জার্মানিতে বিভিন্ন সময়ে এ দিবস প্রত্যাখ্যাত হয়। বর্তমানে এর যে বিকাশমান চরিত্র সভ্যতা এবং সংস্কৃতির মৌল প্রবণতার সাথে তার অবস্থান সম্পূর্ণ সাংঘর্ষিক। এবং সাম্রাজ্যবাদ বিস্তারের মহা মাহীসওয়ার হয়ে দাড়িয়েছে এই তথাকথিত ভালোবাসা দিবস। যা জাতিয়তাতার পরিচয়বাহি সংস্কৃতি ধ্বংসের সাম্রাজ্যবাদী মারণাস্ত্র।
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১২ রাত ৯:১৮