১.
-এক্সকিউজ মি ভাইয়া, আপনার কাছে কি লাইটার আছে?
কথাটা শুনেই পাশ ফিরে তাকাল রবি। দুটো ছেলে তার একটু দূরেই দাঁড়িয়ে আছে। একজনের হাতে একটা প্রানহীন সিগারেট। সিগারেট জিনিসটা কী অদ্ভূত। আগুনের সংস্পর্শে আসলে সব কিছুরই প্রান চলে যায় অথচ এই সিগারেটের আগুন ছাড়া কোন মূল্যই নেই।ছেলে দুটোর মধ্যে প্রশ্নটা ঠিক কে করেছে বুঝতে পারছেনা রবি। আবারও ছেলেটার ডাকে তার চেতন ফিরে এল।এতক্ষন আনমনে এসব কথা ভাবছিল সে।যে ছেলেটার হাতে সিগারেট ছিল সেই কথাগুলো বলছে।
-হ্যালো ভাইয়া, লাইটার হবে? লাইটার?
কোন কিছু না বলে শুধু ঘাড় নাড়িয়ে উত্তর দিয়ে দিল রবি।এই সময়টাতে তার কথা বলতে একদমই ইচ্ছে করছেনা।ছেলেদুটো মনেহয় বেশ বিরক্তই হল। তবে তেমন কিছুই বলেনি ওরা।জিনিসটা না পেয়ে নিঃশব্দে হেটে চলে গেল। আবার ভাবনায় ডুব দিল রবি, এমনিতেই ছেলেদুটো ইতমধ্যে তার ভাবনাতে ব্যাঘাত ঘটিয়ে গেছে।
.
২.
রবি এখন যেখানটায় বসে আছে জায়গাটা বেশ সুন্দর।শহর থেকে একটু খানি দূরে মাঝাড়ি একটা নদী।কোন কোলাহল নেই।বর্ষাকাল বিধায় নদী এখন কানায় কানায় পূর্ণ।সে বসেছে নসী পাড়েই গজে উঠা একটি বট গাছের তলে।গত বছর কি একটা কাজে এখানটায় আসা হয়েছিল এক বন্ধুর সাথে।সেবার একদমি আসতে ইচ্ছা হয়নি কিন্তু এই অপরূপ সৌন্দর্য্ দেখে এরপর থেকে সে একা একাই এখানটায় আসে মাঝে মাঝে।বিশেষত যখন মনটা খারাপ থাকে তখন যেন পাগলের মত ডাকে এই জায়গাটা।আজ কি তার মন খারাপ কিনা ওটা বুঝতে পারছেনা রবি।তবে শহরেরে এত ব্যস্ততা কোলাহলে অসহ্য হয়ে উঠেছিল মনটা তাই এখানটায় ছুটে আসা।
.
৩.
ছেলেদুটো লাইটার না পেয়ে চলে গেল। মানুষের সহজাত প্রবৃতিই বুঝি এমন।যেখানে মানুষের কোন কিছু পাবার আশা থাকেনা সেখানে সে একদন্ডও থাকবেনা।সে চলে যাবে।সুরভীও যেমন চলে গেছে রবির জীবন থেকে।অথচ কত আপনই না ছিল দুজনে একসময়!কত সহজেই সব কিছু পর হয়ে যায়।জীবন কি সুন্দর করে আমাদের দূরে সরিয়ে দেয় প্রিয় মানুষগুলোর কাছ থেকে।
দুবছর আগের একটা কথা রবির খুব মনে পরছে।সুরভী প্রায়ই চিঠি দিত রবিকে।প্রতিটি চিঠির শেষেই সুরভী তার নামটা লিখত ‘ইতি সুরবি’ দিয়ে।প্রথম দিন রবি ভেবেছিল হয়ত বানানের ভুল।কিন্তু পরপর আরও দুটি চিঠিতেও একই ভাবে লেখা।রবি একদিন জিজ্ঞাসই করে ফেলল।
-আচ্ছা তোমার নাম তো সুরভী, তাইনা?
-ওমা! এতদিন বাদে আমার নাম আবার তোমাকে বলতে হবে?এটা কেমন কথা হল!ইদানিং বুঝি আমার নামটা তোমার মনেই থাকেনা?
রবির খানকটা আলগা অভিমান হয়।মেয়েটা সব কথাতেই দুষ্টামির আশ্রয় নিতে চায়।খানিকটা মাথা ঝাকিয়ে রবি বলে,
-আরে সেকথা নয়। চিঠিগুলোতে তোমার নামের বানানটা ভুল হচ্ছেতো।
রবির মুখে এ কথা শুনে সুরভী মিটমিট করে হাসে।
-কি হল, হাসছ কেন?
-এমনি।
-নামের বানান ভুল লিখছ কেন?
-ওটা ভুল না, ওটাই সঠিক।
-কিভাবে সঠিক হল! সুরভী লিখতে ‘ব’ না, ‘ভ’ লাগে।
-হুম্, আমি সেটা জানি।কিন্তু শুধু তোমাকে চিঠি লিখলে সেখানে আমি সুরভী না, সুরবি।তোমার নামের আগে শুধু ‘সু’ অক্ষরটা বসিয়ে দিলেই আমার নামটাও হয়ে গেল।এক নামের ভেতরই দুজনেই থাকতে পারছি।কত রোমান্টিক না ব্যপারটা?
এটা বলেই আবার মি্টমিট করে হাসতে লাগল মেয়েটা।রোমান্টিক কিনা জানা নেই, তবে সেদিনের কথায় রবির চোখে খুশিতে প্রায় পানি এসে গিয়েছিল।যে সুরভী এক নামের মধ্যেই দুজনকে বন্দী রাখতে চাইত সবসময় সেই আজ তার নামের পর অন্য এক মানুষের নাম জুড়ে দিয়েছে।কেউ নাম জিজ্ঞাস করলে হয়ত গর্বের সাথে সে নাম উচ্চারন্ও করে
.
৪.
এসব ভাবতে ভাবতেই কখন যে এত বেলা হয়ে গেছে খেয়ালই ছিলনা রবির।আকাশ অনেক্ষন ধরেই মেঘলা ছিল।কিছুক্ষন হল বৃষ্টি পড়তে শুরু করেছে।এখানটায় আর বসে থাকা যাচ্ছেনা।একটু দৌড়াতে হল।রাস্তার কাছে এসেই একটা রিকশায় উঠে পড়ল রবি।বৃষ্টি থেকে বাঁচতে হবে।সবচে বড় কথা বাসাতেও ফিরতে হবে।রিকশায় বসতেই আবারও সেই পুরোনু কথা নাড়া দিয়ে উঠল মনে।রবিরই বা কি করার আছে।প্রতিটি জিনিসের সাথেই সুরভীর স্মৃতি জড়িয়ে আছে যে!
একদিন দুপুরবেলা ওরা দুজনে রিকশা করে ঘুরছিল।হঠাৎ এমনি বৃষ্টি নামল।দুপুরের বৃষ্টি।শরীর ঘেমেটেমে নাজেহাল অবস্থা হয়ে আছে।যে কারোরই ভিজতে ইচ্ছা করবে এ বৃষ্টিতে।রবি রিকশার হুড নামাতে গেল ওমনি সুরভী চেচিয়ে উঠল
-এটা কি হল, করছ কি!
-করছি কি মানে! হুডটা নামিয়ে দিচ্ছি।বৃষ্টিতে ভিজব দুজনে।
-এই না না, একদম ভেজার দরকার নেই।শরীরের ঘাম না শুকিয়ে এভাবে ভিজলে ঠান্ডা জ্বর বেধে যাবে।
সেদিন আর জোড় করতে পারেনি রবি। এত মমতাকে কেও কখনও আগ্রাহ্য করতে পারেনা।হুড তুলেই একেবারে জড়োসরো হয়ে বসেছিল সারা রাস্তা।রবির মনে হচ্ছিল, কে বলে পৃথিবী অনেক বড়?সে আর সুরভী ছাড়া বুঝি ঐ সময়টাতে পৃথিবীতে আর কেও নেই।আর সমস্ত পৃথিবীটাও বুঝি আঁটকে গেছে ছোট্ট এই রিকশাটিতে।
.
৫.
রিকশাওয়ালার ডাকেই রবির স্তম্ভিত ভাবটা কাটল।রিকশায় উঠে বসার পর কোথায় যাবে সে কথা কিছুই বলেনি রবি।মেইন রোডের কাছে এসে রাস্তাটা দুভাগ হয়ে গেছে, এখন তাই রিকশাওয়ালা জানতে চাইছে সে কোনদিকে যাবে।‘বাস স্টেশনে যান’ বলেই রবি আবার তার স্মৃতি জগতে ফিরতে চাইল।গত মাসেও ভাইরাস জনিত জ্বরে প্রায় এক মাস ভুগতে হয়েছিল তাকে।অসুস্থ মনে রবি বারবারই ভাবত সুরভীর কথা।নিজেকে এত অসহায় মনেহত তখন।এখন আর রবিকে তেমন কেউ বকাবকি করেনা।ঘামে ভেজা শরীরে বৃষ্টিতে ভিজতেও বাঁধা নেই।সে এখন দেরী করে নাশ্তা করে, বেশির ভাগ রাতেই না খেয়েই ঘুম।প্রচন্ড জ্বরে শরীর পুড়লেও সুরভী কিছুই বলতে আসেনা।
বাস স্ট্যান্ডের কাছে এসে রিকশা থেকে নামল রবি।এখান থেকেই বাড়ির বাস ধরতে হবে তাকে।বৃষ্টিটা আগের থেকে একটু বেড়েছে।স্টেশনে ছোট ছোট বেশ কিছু দোকানই আছে।বাইরে বৃষ্টি বিধায় অনেকেই এসব টং দোকানে এসে বৃষ্টি থেকে রেহাই পাবার জন্যে দাঁড়িয়ে আছে।এত ভিড়ে যেতে ইচ্ছা করছেনা রবির।একটা দোকানে মাত্র তিন জন মানুষ দাড়ানো দেখে সেখানটায় গিয়ে সেও অল্প জায়গা দখল করল।
.
৬.
বৃষ্টি মানুষের মনকে নরম করে দেয়।একটা স্নিগ্ধ ভাব এসে যায় প্রবল বৃষ্টিতে।সবার মত রবিও এখন বৃষ্টি দেখছে তবে অন্য সবার মত তার মধ্যে কোন তারাহুরো নেই।বৃষ্টির দিকে একমনে চেয়ে থাকতে থাকতে রবির খেয়ালই ছিলনা যে কখন আবার সে অতীতে ফিরে গেছে।
গেল বছরের জুনের ২১ তারিখ শুক্রবার।সুরভীর জন্মদিন ছিল দিনটা।রাতে প্রথম উইশটা রবিই করেছিল।সেদিন সকালে হঠাৎ সুরভীর ফোনে ঘুম ভাঙ্গে রবির।
-হ্যালো
-এই তুমি এখনও ঘুমাচ্ছ!
-কি ব্যপার সুরভী, তুমি এত সকালে ফোন দিলে।আজ না তোমার বার্থডে।
-হুম মশাই, সেজন্যেই এই প্রত্যুষে আপনাকে স্মরণ করিতে বাধিত হইলাম।
-মানে?
-মানে টানে কিছু না।তারাতারি উঠে পড়।এক্ষুনি মোটর বিল্ডিং এর কাছে আস।আমি দাড়িয়ে আছি।দেরী করোনা যেন।
বলেই ফোন রেখে দিল মেয়েটা।
রবির ঘুম ভাবটা এখনও কাটেনি।কিছু বুঝতে পারলনা।শুধু বুঝল এক্ষুনি ওকে বেরুতে হবে।মেয়েটা যে আর কত পাগলামো করবে ওর সাথে!রেডি হয়ে বেরিয়ে পড়ল সে।মোটর বিল্ডিং এর এক কোনায় দাঁড়ানো একটি মেয়ে।সুরভীকে এক মাইল দূর থেকে দেখলেও চিনতে পারে রবি।আজ সে পরেছে কেমন হলুদ-কাঠালী রঙ্গের জামা।সুরভী শাড়ি পড়তে পারেনা ঠিকমত।আর রবিরও ওকে যাচ্ছেতাই পোশাকেও ভাল লাগে।আরেকটু কাছে এসে বুঝতে পারল আজ ও অন্য দিন থেকে একটু আলাদা।এমনিতে সাজগোজের দিকে তেমন নজর থাকতনা মেয়েটির।কিন্তু আজ সে সেজেছে।কানে দুটো বড় দুল পড়া, হাতে কিছু চুরি,চোখে কাজল, ঠোটে খুব হাল্কা লিপস্টিক।রবিকে কাছে আসতে দেখেই সুরভীর কপালের সামনের চুলগুলো কানের কাছে গুজে দিতে লাগল।তখনি রবির খেয়াল হল ওর হাতেও নেইলপলিশ দেয়া।খুব আহামরী কোন সাজ না।কিন্তু রবির কাছে মনেহল এ যেন অন্য কোন সুরভী।একে স্বর্গের দেবীর সাথেও তুলনা করা যায়না।তার তুলনা কেবল রবিই জানে।আর কেউনা।
৭.
বৃষ্টি থেমে গেছে।রবি ইতিমধ্যে বাসে উঠে পড়েছে।বাস চলছে।রবির চিন্তাগুলো কোথায় যেন থেমে গিয়েছিল?আবার মনে করতে চেষ্টা করল সে।হ্যা, মনে পড়েছে।সুরভীকে এতটা সাজে আগে দেখেনি রবি।তাই অনেকটা বিমোহিত নয়নে তাকিয়েছিল তার দিকে।
-এইযে এভাবে কি দেখছ?আর এত দেরী হল কেন আসতে?
রবি যে সুরভীকেই দেখছিল একথা বলতে পারলনা।ওকে যে আজ পৃথিবীর সেরা সুন্দরীর মত লাগছে এমন কিছু বলতে ইচ্ছা হচ্ছিল খুব রবির।সে কিছু একটা বলতে যাবে এমন সময় সুরভীই আবার বলে উঠল।
-কি ব্যপার, এখন্ও ঘুম যায়নি নাকি বাবুর? এই চলতো, খুব দেরী হয়ে যাচ্ছে।
-কোথায় যাব?
-জেলখানাতে। আজ তোমাকে চোখ দিয়ে আমাকে নির্যাতন করার অপরাধে জেলে ঢুকাব।এভাবে কেউ কারোর দিকে তাকিয়ে থাকতে পারে নাকি!(অবাক হয়ে বলে সুরভী)
রবিও যেন একটু লজ্জা পেয়ে যায়।সুরভীর সাথে সাথে হাঁটতে থাকে।একটুপর একটা রেস্টুরেন্টে গিয়ে ঢুকল ওরা।সুরভী পাগলী টাইপ হলেও বেশ চালাক।আগে থেকেই এখানে সব ব্যবথা করে রেখেছে সে।কোনার দিকে বেলুন ও ফুল দিয়ে ঘেরা একটি টেবিল।ওরা বসতেই বেয়ারা একটি কেক নিয়ে আসল।এতসব আয়োজন দেখে রবির খুব অস্বস্তি হচ্ছিল।আজ সুরভীর জন্মদিন।কোথায় রবি নিজে এসবকিছু করবে,সুরভীকে সারপ্রাইজ দেবে তা না হয়ে সব কিছু কেমন উল্টাভাবে হচ্ছে।এসব ভাবতে ভাবতে হঠাতই মনটা কেমন দমে গেল রবির।সুরভীর গলার শব্দ,
-এই আবার কি হল তোমার?
-কেন, কিছুনাতো।
-তাহলে এমন মনমরা হয়ে আছ কেন।আমিতো এখনও বেঁচে আছি।
বলেই মিটমিট করে হাসছে মেয়েটা।রবি আমতা আমতা করে বলতে লাগল।তোমার জন্মদিনে আমি কিছু করলাম না অথচ তুমি এতকিছু… পুরো কথাটা শেষ করতে পারেনি রবি।সুরভী বিদ্যুৎবেগে কথাটা কেড়ে নিল ওর মুখ থেকে।
-কে বলল আজ আমার জন্মদিন?আজ আমার একার জন্মদিন না।আজ হল আমাদের জন্মদিন।এবারের আয়োজন আমি করেছি।নেক্সট টাইম তুমি করবে, তবেইতো হল।এবার আসতো কেকটা কাটি।
কেকের দিকে চোখ পড়তেই রবির মনটা আবার উচ্ছলতায় ভরে গেল।কাল চকোলেটের উপর সাদা ক্রিম দিয়ে লেখা ‘শুভ জন্মদিন সুরবি’।এই প্রথম সুরভীর নামের ভুল বানানটাও রবির কাছে চির সত্য বলে মনে হতে লাগল।
.
৮.
সেদিন দুজনে মিলে আরও অনেক মজা করা হয়েছিল।কথার ফাকে সুরভী রবিকে বলেছিল,আজ ওর জন্মদিনে বাড়িতে একা মজা করবে রবিকে ছাড়া এটা কখনও হতে দিতে চায়নি সে।খাবারগুলো নিজ হাতে সে রবিকে খাইয়ে দিয়েছে।যেন রবি খেলে সুরভীরো পেট ভরবে।নিজেকে তখন পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ সুখি মানুষ মনে হচ্ছিল রবির।সেই সুরভী আজ কোথায়? রবি যে দেরীতে নাশ্তা করছে,রাতের পর রাত নাখেয়ে কাটাচ্ছে, কোথায় গেল সে?কেন জিজ্ঞাসিতে আসেনা? হুহ্!এখন হয়ত ভাল মন্দ রান্না করে অপর কারও আশায় পথ চেয়ে থাকে সুরভী।যেখানে রবির কোন ছায়ারও স্থান নেই।
শেষবার সুরভী শুধু বলেছিল তার পক্ষে আর এ সম্পর্ক টিকিয়ে রাখা সম্ভব নয়।কথাটা শুনে রবির মাথায় পাহার ভেঙ্গে পড়েছিল।সে সুরভীকে কিছুই জিজ্ঞাসা করেনি।কীই বা বলার আছে রবির।ভালবাসায় যখন অজুহাত চলে আসে তখন বুঝতে হবে সে ভালবাসার চুলে পাক ধরে গেছে।আয়ু খুব কম।রবির মনে খুব অভিমান হয়েছিল।সুরভীর যাই চাওয়ার ছিল সেটা সে রবির কাছ থেকে চাইতে পারত।রবি তো সবকিছু পরিবর্তন করতেও রাজি ছিল।কিন্তু কিছুই না চেয়ে সুরভী রবির কাছ থেকে মুক্তি নিল।সুরভী নামের পাখিটাকে উড়িয়ে দিয়ে সে বেঁচে রইল স্মৃতি নামের খাচাটাকে বুকে নিয়ে।
অনেকদিন পর আবার হঠাত এতকিছু এত গভীরভাবে মনে পড়ে হৃদয় নদীতে ঝড় আছড়ে পরে রবির মনে।সে বাসায় পৌছে গেছে।ঘরে ঢুকতেই ছেলের মুখ দেখতে পেয়ে রবির মা জিজ্ঞাস করে,
-কিরে বাবা, কি হয়েছে? তোর মুখ
টা এত শুকনা দেখাচ্ছে কেন? আর সারাদিন কোথায় ছিলি?
এতসব প্রশ্নের জবাব দিতে পারেনা রবি।সে মাকে কিভাবে বলবে যে, সুরভী নামের একটি মেয়ে তাকে একটি অচেনা পথে দাড় করিয়ে দিয়ে নিজেই হারিয়ে গেছে।সে যে এই পথে বড় একা। কেউ আপন বলতে নেই তার।সে এখন কোথায় যাবে কি করবে কিছুই তার জানা নেই।এসব ভাবতে ভাবতেই রবির চোখটা কেমন ঝাপ্সা হয়ে আসে।কথা বলতে গেলেই গলাটা কেমন কেঁপে উঠে।বুকের ভেতরের প্রচন্ড কষ্ট বহু কষ্টে চাঁপা রেখে সে মাকে বলে,
-কিছু হয়নি মা, খুব খিদে পেয়েছে।কিছু খেতে দেবে?
রবির মা বুঝতেই পারেনা খিদের আড়ালে রবির বুক ভেংগে কান্না পাচ্ছে আজ।সে মাকে পাশ কাটিয়ে দ্রুত ভেতরে চলে যায়।আর মনে মনে ভাবতে থাকে, পুরুষ মানুষের কাঁদতে নেই।সুরভী পুরুষ মানুষের কান্না একদমই সহ্য করতে পারতনা।।