আমাদের দেশের মন্ত্রী মিনিস্টাররা পাবলিক বাসে চড়েন না, আইন শৃঙ্খলা বাহিনী থেকে শুরু করে জর্জ ব্যরিস্টারের উচ্চ পর্যায়ের লোকজন খুব কমই বাসে চড়েন। শুধু চড়ি আমরা- আম জনতা আরকি। তাই পাবলিক বাসে এসি নাই...... শিতের দিনে ফাকা গ্লাস দিয়ে সুশীতল হাওয়া আর গরমের দিনে দুর্বিনীত গরম আপনাকে নিয়ত অভর্থনা জানাতে কার্পণ্য করবে না। তবুও আমাদের এই বাসেই বাশ খেয়ে যেতে হয়। যতই উন্নয়নের বুলি কপচাক পাবলিক বাস গুলো এমনই থাকবে। প্রথম যখন ঢাকা এসেছিলাম তখন ২০০৫/৬ হবে। চাকরির খোজে নিতান্ত বেকার যুবক......... সবাই দেখা হলেই জিগায় কিরে কোথাও হোল নাকি? মুখ পাংশা করে না বোধক সিগন্যাল দেই, না হয়নি। তখন ঢাকা জুড়েই সব ছোট মোট টেম্পুর জয়গান। অগুলোতে চড়েই চাকরির পিছে পিছে ছুটি, বড় ভাই পরিচিত জন দেখলেই ‘মা কয়টা খয়রাত দে না’ টাইপের আশা নিয়ে চাকরি খুজি। তারাও বেশ আশাবাদি সেজে কিছু উপদেশ ছুড়ে দেন—এটা কর সেটা কর, কাজের কাজ কিছুই হয় না। এমন দিনে দু একটা টিউশনি আর বাবার পাঠান হাত খরচই ভরসা। সেই ধানমণ্ডি থেকে রামপুরা বাসে চড়ে আসতে আসতে রিতিমত কাবাব হয়ে যাবার যোগাড়, তবুও টিউশানি ছাড়া কি যায়। তবে ভিড়ে ভরপুর বাসে চলতে চলতে মোটামুটি গালির একটা লাইন মুখস্ত হয়ে গেল...... জোয়ান বয়স তাই লোক লজ্জার বাছবিচার না করে যে কোন জায়গায় চলিয়ে দিতাম ভাঙ্গা রেকর্ড। শিখেছিলাম আমারই এক বন্ধুর কাছে, কুত্তার...... দিয়ে শুরু হয়ে ছু...... পুত দিয়ে শেষ, সে বেশ দুলে দুলে রাইমস অব গালাগালি তথা গালির ছড়া পাঠ করত।অবশ্য লোকজন আমার লাল ঠোটের উৎগিরিত এইসব কাল অখাদ্য গালাগালি শুনে নিশ্চয় মনে মনে আফসুস করত এই বয়সেই পোলাটা গেল বখে। তবে বাস ওয়ালারা সর্বং সহা এত গালিতে কিছুই হত না। সে সময়ে ছয় নম্বর বাসে দুই দরজা ছিল টাকা পয়সা টান থাকলে পিছন দরজা দিয়ে কাট মারা যেত, এখন অবশ্য এক উইনার বাদে সব পাবলিক বাসের এই দুই নম্বর দরজার লিক বন্দধ করে দিছে। তখন অবশ্য বিনপি সরকারের প্রথম দিকে দাইউ কোম্পানি থেকে বেশ কিছু পাবলিক দোতলা বাস ছড়ছিল প্রিন্ট করা টিকেটও ছিল। আমার একটা চাকরি ছিল শাহবাগের মোড়ে, মহাখালি থেকে সেই বাসগুলোতে উঠলে খুব আরামে পৌঁছে যাওয়া যেত, আমি প্রায়ই দোতলার ড্রাইভিং সিটে বসে যেতাম। মহাখালীর মেসে যখন থাকতে থাকতে প্রায়ই নিরাশা বাদি হয়ে উঠছি তখনই আরেকটা চাকরি হয়ে গেল, সেই সাথে বুয়েটের ভর্তি হয়ে থাকা মাস্টার্স এর কল্যাণে বুয়েটে শহীদ স্ম্বতি হলে একটা ছিটও জুটে গেল কোন ভাল কাজের কল্যাণে কি জানি। হলের ডাইনিং এ খাওয়া মেসের মত সপ্তাহান্তে বাজার সদায় করার ঝামেলা নেই, আমার মনে হল স্বর্গে আছি। তবে চাকরির ক্ষেত্রটা হোল উত্তরা...সেই বুয়েট থেকে কাক ডাকা ভোরে উঠি লোকাল বাসে নাম তার পিংক সিটি। পিংক কালারের বাসের একটা সিট বেছে নিয়ে মোটামুটি ঘুম দিয়ে উঠি দেখি উত্তরা এসে গেছি। যাওয়ার সময় পান্থপথে আর বিজয় স্মরণীতে বাসের জামে কাবাব হতে হতে সেই আগের গালিগুলা মনে পড়ে কিন্তু চাকরির ফিটফাট ড্রেসে আরা মুখ খারাপ করতে মন চায় না। আর মুখ খারাপ করলেই কি জ্যাম ক্লিয়ার হবে তা ত না, তাই খালি হাত ঘড়ি দেখতে থাকি বারে বারে, রাত ৯ টা পার হলে আবার ডাইনিং এর খাবার মিস বাইরে রুতি পরাটা দিয়ে নাস্তা কর। দশ বছর পর আবার পোস্টিং উত্তরায়, আগের অফিস ছিল বাড্ডা, তাই বাসাও বাড্ডার কাছে। হেটে যেতাম অফিসে তাই পাবলিক বাসের সংস্পর্শে আসাঁ লাগেনি অনেক দিন। পোস্টিংএর পর পাবলিক বাসে উঠতে বুঝলাম সেই আগের দিনই রয়ে গেছে, লক্কড় ঝক্কর মার্কা বাসই ভরসা। সুপ্রভাত বাসগুলো অতি সুপ্রভাতে ছাড়লেও আমার বাসার সামনে পৌছুতে পৌছুতে প্রভাত পেরিয়ে যায় যায়...... “উত্তপ্ত উনুন” বুঝতে হলে, বাসগুলর ভিতর একবার ঢু মারতে হবে। অফিসগামী যাত্রী আর বাস ড্রাইভার হেল্পারদের রোজকার খিস্তিখিওর মিশ্রিত বচসা বেশ উপভোগ্যও বটে। বাস ড্রাইভার হেল্পারদের ইচ্ছে বাসের ভিতর এক চুল জায়গাও ফাকা না থাকুক। আর তার সাথে যোগ হয় প্রতিযোগিতা...... “দি গ্রেট তুরাগ” আর “ছালছাবিলের” ছাল চামড়া উঠা বাসগুলো খিলখেত মোড়ে কিলাকিলি (ঠুকাঠুকি) করে ভাঙ্গা বডির শক্তি পরীক্ষা করে যেনো। আফিসের কাছে আসলে বাস থেকে রোজ ছিটকে পড়তে হয়, ‘নামা’ শব্দটা বললে ভুল বলা হবে যে।
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:২৯