আগের পর্ব
জেদ্দাহ বিমান বন্দরে আমরা যখন বোর্ডিং করব তখন এক বিশাল দেহী সৌদি কর্মকর্তা এলো সবার টিকেট আর পাসপোর্ট যাচাই করতে, আমরা সবাই যারা নাইজেরিয়ার পথে সবাই এক জায়গাতে বসা ছিলাম। যা হোক সবার টিকেট নিয়ে লোকটা যাবার সময় দূর্ঘটনাটা ঘটলো......। সেই এরাবিয়ান কুমড়ো পটাশ সবার টিকেট নিয়ে হোচট খেয়ে ধপাশ হল সবার সামনে আর তার হাতে থাকা টিকেটগুলো ছড়িয়ে পড়লো চারদিকে। সবাই হেল্প করে গুছিয়ে দিতে সে সেগুলি নিয়ে চলে গেলো বোর্ডিংএ। কিন্তু টিকেট ফেরৎ দেবার সময় দেখা গেলো আম্মার টিকেট নেই। আম্মা ভাঙ্গা ভাঙ্গা ইংরেজিতে অনেক বোঝানোর চেষ্টা করলেও বেচারা নাছোড়বান্দা--- তার কথা হলো আম্মাই টিকেট ছাড়াই বিমানবন্দরে এসেছে। ওদিকে শিডিউল ফ্লাইট মিস......অবশ্য সেই বাংলাদেশি আন্টি রয়ে গেলেন আমাদের সাথে। আম্মার সাথে উনিও সবাইকে বুঝানোর চেষ্টা করতে লাগলেন তবে কে শুনে কার কথা? যে কোন যায়গায় গেলেই ওদের কথা, “ ও ফ্রম বাংলাদেশ...... মিসকিন!” আরে অবাক করা কথা বাংলাদেশ থেকে দু চারজন মিসকিন আসছে বলেই কি সারা বাংলাদেশ মিসকিন হয়ে গেল নাকি? তবে আল্লাহ সুবহানাহুতা’লা যেমন বিপদ দেন তেমন বিপদ থেকে উদ্ধারের পথও তৈরি করে দেন। আম্মা এয়ারপোর্টের এক কেয়ারটেকার মহিলা পেয়ে গেলেন আপাদ মস্তক কালো বোরখতে ঢাকা! আমরা দু ভাই হৈ চৈ আর ছুটা ছুটি করে খেলছিলাম তাই মহিলা ভিষন বকা দিয়েছিলেন আমাদের। তবে বকা দিলেও মহিলা যে ভিষন পরোপকারী তা পরে বুঝেছিলাম...... মার কাছ থেকে আমাদের সব বৃতান্ত শুনেই আমাদের নিয়ে গেলেন এক উচ্চপদস্থ লোকের কাছে। আপাদ্মস্তক এরাবিয়ান পোষাকে ঢাকা লোকটি আমাদের কোন মিসকিন উপাধিও দিল না বরং আম্মাকে নিজের বোন হিসাবে সম্মোধন করে আমাদের সমস্ত বৃতান্ত শুনলেন। তারপর সেই কুমড়ো পটাশকে ডেকে জিগ্নেস করলেন এবং আম্মার জন্য নতুন টিকেটের ব্যবস্থাও করে দিলেন। প্রিয় নবীর বংশধরদের মধ্যে নবীর স্বভাবের মানুষ থাকবে না তা কি হয়। যা হোক আমরা পরবর্তি যাত্রার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম তখন ভাইয়া আমাকে ডাক দিলো, “এই দেখে যা!”। বিমানবন্দরের বাথরুমগুলো ছিলো খুব পরিস্কার আর সুন্দর। ভিতরে যে টয়লেট টিস্যু গুলি থাকত ফুলের ছবি আর সুগন্ধ যুক্ত। বলতে লজ্জা নেই আমরা দু-ভাই বিভিন্ন রঙ্গের এই টিস্যু গুলি সংগ্রহ করে পকেটে পুরে রাখতাম আর মাঝে মাঝে সুবাস নিতাম। ভাবলাম ভাইয়া বুঝি এমন কোন নতুন টিস্যু আবিস্কার করে আমাকে দেখতে ডাকছে। কিন্তু যা দেখলাম তাতে মোটামুটি বাকরুদ্ধ হয়ে গেলাম। এক চাইনিজ (বা চাইনা ঘরনার কেউ) বাথরুমে তার প্রাতঃহিক কর্ম সাধনে ব্যস্ত আর আরেকজন তার এ অবস্থাতেও তার সাথে গল্প চালিয়ে যাচ্ছে! কি তাজ্জব ব্যপার বটে। আমাদের যে কাজটি আমরা অতি সংগোপনে লোক চক্ষুর আড়ালে করতে চাই আর সেই কাজের সময় গল্প করা সত্যই চাইনিজদের পক্ষেই সম্ভব। আরও বিস্ময় অপেক্ষা করছিল আমাদের জন্য। এবার বিমানে উঠার আগে বোর্ডিং এ দেখলাম আনেক কালো চেহারার নিগ্রদের আধিক্য। তবে তাঁদের অধিকাংশের মধ্যে এক ধরেনের অস্থিরতা লক্ষ্য করা যচ্ছিল। আমরা সাধারণত বিমানে বোর্ডিঙ্গের সময়ই বিমানে সিট নাম্বার পেয়ে যেতাম তাই বিমানে আগে পরে কে গেল তা নিয়ে কারো চিন্তা করতে হতো না...... সিট ত টিকেটেই দেওয়া আছে। আর বিমানেও উঠেছিও টারমাকের মধ্য দিয়ে আর সেবার নাইজেরিয়ার জন্য গালফ এয়রের বিমানটা দাঁড়িয়েছিলো সিড়ি লাগিয়ে। বোর্ডিং এর আনাওন্সমেন শেষ হতে সেই নিগ্রো পুরুষ মহিলারা এইসা দৌড় বিমানের উদ্দেশ্যে...... কিছু মহিলা আবার বাচ্চাদের পিঠে কাপড় দিয়ে বেধে নিয়েছে। বাচ্চা গু্লো পিঠে বসেই ইতি-উতি তাকাচ্ছে বারে বারে। আমরা অবশ্য ওদের মত না দৌড়ে আস্তে আস্তে সবার শেষেয় বিমানে উঠলাম। কিন্তু যেয়ে দেখি সিট দখল...... বিশাল দেহী এক নিগ্রো তার ফ্যমেলি নিয়ে আমাদের ও সেই চাচির পাশাপাশি সিট সব দখল করে বসে আছে। মুখে একটাই কথা “নো নো”। শেষে এয়ার হোস্টেজও হাল ছেড়ে আমাদের পিছনের সিটেই বসিয়ে দিলো। বুঝলাম বোর্ডিং শেষে তারা কেন এইসা দৌড় দিছিলো! যখন নাইজেরিয়া এয়ারপোর্টে নামলাম তখন আনেক মুখের মধ্যে আব্বার চিন্তিত মুখখানি দেখতে পেলাম। আমাদের দেখেই মুখখানি হাসিতে উদ্ভাসিত হোল...... শুনলাম এই দেড় দুইটা দিন আব্বা আমাদের অপেক্ষায় এয়ারপোর্টেই কাটিয়েছেন। প্রিয়জনের সাথে বহুদিন পর সাক্ষাৎ কতই না মধুর!!!
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে আগস্ট, ২০১৫ দুপুর ১:৪৯