চুয়েট লাইফের কোন এক টার্ম পরীক্ষার পর একবার যেতে হয়েছিলো পাটগাতি—গোপালগঞ্জের একটি গ্রামে। যাবার আগে আমি জানতাম না এই গ্রামের পাশেই বঙ্গবন্ধুর স্মৃতি বিজড়িত টুঙ্গিপাড়া। আমার সাথে ভার্সিটি লাইফের খুব কাছের এক বন্ধু ছিল। তখন রমজান মাস আর শীতকাল তাই রাত ছিল অনেক বড়। সেহেরি খেয়ে লম্বা ঘুমের পরও কুয়াশা ঘেরা সকালটা রয়েই যেত। আমরা দু’বন্ধু মিলে ঘুরে বেড়াতাম এদিক সেদিক। পাটগাতির চারধারেই খাল আর নদীর সমারোহ; প্রায়ই নদী পার হতে হতো খেয়া দিয়ে......... খেয়া ভর্তি হলে শেষ মানুষটাকে লম্বা বাশ দিয়ে নৌকাটা ঠেলা দিতে হতো জোরসে আর তাতেই নৌকাটা সা করে ওপারে। আমি একবার ঠেলা দিয়ে বুঝেছিলাম কাজটা এতো সহজ নয়। নদীতে আবার দু’তিনটা শুষক(বাংলার ডলফিন) খেয়া পারাপারের সময় হটাৎ লাফিয়ে উঠে পানি ছিটাত সবার গায়ে...... বেশ লাগত ঠান্ডা পানির মিষ্টি ঝাপটা। মাঝিকে একবার বলতেই ছেলেকে নৌকায় বসিয়ে চলে এসেছিলো আমাদের সাথে বঙ্গবন্ধুর মাজারে, দূর থেকেই চোখে পড়ার মত বিশাল স্থাপনা। আমরা বাইপাস রোড হয়ে ঢুকেছিলাম পেছনের দরজা দিয়ে......... প্রথমেই মসজিদ আর পাশেই পুকুর। প্রায় পুরোটা এলাকা জুড়েই নানান বাহারি ফুলের চাষ......... শিশিরস্নাত ফুল গুলো দেখে মনে হয় যেন অনেক দুঃখের অশ্রু নিঃসরণ। পুরো বাড়িটায় বঙ্গবন্ধু পরিবারের আসবাব দিয়ে সাজিয়ে রাখা। ডাইনিং রুমটাতে ঢুকলেই মনটা বড্ড খারাপ হয়ে যায়—ডাইনিং টেবিলের চারধারে চেয়ারগুলো সাজান...প্রতিটি চেয়রের উপর ঝুলছে বঙ্গবন্ধু পরিবারের প্রয়াত সদস্যদের ছবি। এক সময় তাঁদের পদভারে নিয়ত আন্দোলিত হতো এ বাড়ির প্রতিটি কোন। আজ তারা কেবল বেদনা বিধুর স্মৃতি হয়ে.........। আর বাড়ির ঠিক পাশেই সহধর্মিনিকে নিয়ে চির নিদ্রায় শায়িত ইতিহাসের মহানায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই আগস্ট, ২০১৫ বিকাল ৩:০৫