আমি যে কোম্পানীতে চাকুরী করি তাতে মাঝে মাঝে অহী নাজিলের মত কিছু আদেশ নাজিল হয়। নাজিল হওয়ার সাথে সাথেই আমরা যথাযথ আদেশ পালনে ব্যস্ত হয়ে পড়ি---হাজার হোক চাকরি বলে কথা। সে রকমই এইবার ছুটতে হলো সিলেট। আমি আবার চামে চামে চিটাগাং ঘুরারও একটা ব্যবস্থা করে ফেললাম। আম্মা আব্বার সাথেও দেখা হইলো আর সিলেট ভ্রমণও হইলো। ঢাকা থেকে চিটাগাং টিকেট পাইলাম মহানগর প্রভাতী। প্রভাতী হইলেও বিমানবন্দর স্টেশনে আসতে আসতে প্রায় দশটা। সিটে বসেই একটা ধাক্কার মত খাইলাম। উপ্রে দিয়ে ফুম বিসানো মনে হইলেও ভিতরে শক্ত লোহার ডান্ডা ছাড়া কিছুই নাই। সিটের অবস্তা যে রেইল মন্ত্রীর মত যায় যায় তা জানা ছিল না।প্রতি পনের মিনিট অন্তর অন্তর না দাড়াইলে..... পশ্চাৎ দেশের অবস্থা কাহিল। চিটাগাং পৌছতে পৌছতে বিকাল পাচটা। নেমেই টিকেট কাউন্টারে গেলাম ভাই কালকে সকালের সিলেটের টিকেট... কাউন্টারের লোকটার কাট কাট জবাব “পরের দিনের টিকেট নেই”। তো আর কি করা বউ বাচ্চা নিয়ে বাসায় গেলাম। যাওয়ার সময় দেখলাম সৌদিয়া বাসের কাউন্টারে লেখা চট্টগ্রাম – সিলেট...... মনে মনে ভাবলাম এইটাতেই সকালে সিলেট যাওয়া যাবে। সকাল সকাল কিছু নাকে মুখে গুজেই দৌড় দিলাম সৌদিয়া বাসের কাউন্টারে কিন্তু কপাল খারাপ...... রাত্রে ছাড়া বাস নাই। কি আর করা আবার ছুটলাম রেল ষ্টেষনে যদি কিছু পাওয়া যায়। আমারে টিকেট কাউন্টারে একটা মেইল ট্রেনের টিকেট ধরায় দিয়ে বলল এইটা করে আখাঊড়া যান ওখান থেকে আনেক ট্রেন পাবেন। নামে মেইল হইলেও ফিমেল গতিতে চলতে চলতে স্টেষন পার করে করে চলল...... চিনকি আস্তানা, মস্তান নগর...... সদর রসুলপুর...... গুনবতী আহা নামের কি বাহার। আমার পাশেই যিনি বসেছেন তিনিও আমার মত সিলেট যবেন ভেঙ্গে ভেঙ্গে। কথা প্রসঙ্গে জানলাম উনি রিয়াজউড্ডিন বাজারে কসাই এর কাজ করেন।তিন বছর পর বাড়ি যচ্ছেন। বাড়িতে মা নেই, আসলে...বাড়ি যাওয়ার সবচেয়ে বড় মটিভেশন হল মা বাবা। কসাই হলেও মনটা বড়ই উদার, মহিলা যাত্রী দেখলেই নিজের কেনা সিট ছেড়ে দিচ্ছেন বারেবারে। আসলে প্বথিবীর বেশিরভাগ উদারতা গুলো নিম্ন আয়ের লোকদের মাঝেই নিহিত থাকে। তবে বেশি ঊদারতার পরিণাম যে ভালো হয় না একটু পরেই টের পেলেন। জাদরেল টাইপের এক মহিলা উঠেই বসে গেলেন উনার সিটে, শুধু তাই নয় তার হোৎকা মেয়েকেও চেপে বসালেন আমার পাশে। আমার ত অর্ধেক জানালা দিয়ে বাইরে...... বৃষ্টিতে ভিজে একাকার। মহিলা শুধু বসেই ক্ষ্যন্ত হোলেন না, সেই কসাই সাহেবকে ভাই এটা দেন ওটা করেন জাতীয় ফরমায়েশের উপর রাখলেন সারা রাস্তা! জাঁদরেল মহিলারা কিভাবে পরের উপর ক্ষমতা ফলায়ে দেশের সর্বোচ্চ স্থানে অধিষ্টিত, তা বুঝলাম! আখাঊড়া স্টেসনে নেমে শুনলাম সিলেটের সব ট্রেন পগার পার। শুধু কালনি নামে ট্রেন আসবে বিকালে তাও উঠতে হলে পাশের স্টেসন যেতে হবে। রিক্সা করে পাশের স্টেসন যেয়ে দেখি স্টেসন মাস্টার নাই। শুনলাম স্টেসন মাস্টার সাহেব কোথায় ফুটবল খেলতে গেছে। তাই টিকেট দিতে দেরি হবে। দেখলাম আরও লোকজন বসে আছে মাস্টার সাহেবের প্রতীক্ষায়। খোদায় জানে মাস্টার সাহেব আগে আসে না ট্রেন আগে আসে। তবে মাস্টার সাহেবই আগে আসলেন ফুটবল জার্সি আর হাফপ্যন্ট পড়ে। শুনলাম বেচারা স্টেসন মাস্টার হোলেও খেলায় মোটেও মাস্টার না—চার এক গোলে হেরেছেন। ট্রেনের নাম কালনি হলেও গতি মোটেও কাল নাগিনীর মত না। পৌছাতে পৌছাতে রাত বারটা—হোটেল আগেই বুকিং ছিল। রুম দিল দুই সতিন ( ২০৩)...... যাক বউ ছেলেমেয়ে বাদ দিয়ে কপালে অবশেষে সতীন ই জুটল!
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই আগস্ট, ২০১৫ দুপুর ২:১৪