আমার খুব কম বয়সেই বিমানে চড়ার অভিজ্ঞতা হয়েছিলো। বাবা কি একটা চাকরি নিয়ে নাইজেরিয়া গেছিলেন, তখন আমার বয়স চার/ পাচ। বাবা যাওয়ার এক বছরের মধ্যে অবশ্য আমাদের ডাক এলো। মা বেশ কদিন ঢাকাতে দৌড়া-দৌড়ি করে প্লেনের টিকেট ভিসা বের করলেন। আর আমরা পড়া লেখা নেই এই খুশিতে সারাদিন নানু বাড়িতে খেলে খেলে বেড়াতাম। যাওয়ার সময় মনে আছে খালা মামা চাচা আনেকে এসেছিলেন বিদায় দিতে।বিমানে উঠার আগের উৎকট ঝামেলাগুলো আম্মার উপর দিয়ে গেছিলো। শুধু মনে পড়ে বিমান থেকে আমরা তিন ভাই বোন খুব অবাক হয়ে ঢাকা শহরের বাস গাড়ি ছোট ছোট হয়ে যাওয়া দেখছিলাম। আমাদের অবাক চোখ দেখে এয়ার হোস্টেজ গাল টিপে বলেছিলো ‘বাবু মেঘের রাজ্যে স্বাগতম’। বাংলাদেশ বিমানে পাকিস্তান হয়ে আমরা ‘পি আই এ’ তে করে চলে গেছিলাম বাহরাইন। তখন বাহরাইনে আমার আবু মামা আর আছমা খালা থাকতেন। মামা তখনো বিয়ে করেননি আর আছমা খালার তিন মেয়ে আমাদের সমবয়সি আর কোলে একমাত্র ছেলে এনাম।আর এমদাদ খালু বুয়েট থেকে গোল্ড মেডেলিস্ট...... বাহরাইন ইউনিভারসিটিতে প্রফেসর। উনারা কেম্নে কেম্নে আমাদের একদিন বাহরাইনে থাকার ব্যবস্তা করে ফেললেন। বাহরাইনে এয়ারপোর্টে কাচের দরজাগুলো অটো সিস্টেম......... সামনে দাড়ালেই খুলে যায়। মনে পড়ে আমার এয়ারপোর্টের প্রথম এক ঘন্টা শুধু এই কাচের দরজাগুলোর পিছনে ছুটেই কেটেছিল। মামা গাড়ি নিয়ে এসেছিলেন, আমাদের বাহরাইনের অনেকটা কিছু সময়ে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখালেন। একটা বিরাট রাস্তা পার হয়েছিলাম যার দু ধারে দু রকমের জল না মিশে চলে গেছে সাগর আব্দি। খালু দেখিয়ে বলছিলেন, পবিত্র কোরআন শরিফে সুরা আর রহমানে আল্লাহ সুবহানাত’লা এদিকে ইশারা করেছেন, “তিনি প্রবাহিত করেছেন দুই জলরাশিকে--- তাদের উভয়ের মধ্যে রয়েছে এক ব্যবধান যা তারা আতিক্রম করতে পারে না” (সুরা আর রহমান, আঃ ১৯-২০)। সত্যিই আল্লাহর অনুগ্রহ অসীম।
খালার বাসায় দুপুরটা কেটেছিলো স্বপ্নের মতো। মধ্যপ্রাচ্যের ধনাঢ্য জীবন যাপনের খুদ্র নমুনা। দোতলা বাসার সবকিছুই আধুনিক আর নান্দনিক আসবাবে ভরপুর। আমার বাংলাদেশে তখন সাদা কালো টিভি দেখতাম তাও এর ওঁর বাসায় গিয়ে আর খালার বাসায় রংগিন টিভিতে নিত্য নতুন কারটুন...... আমার কাছে যেন স্বর্গে আসা। খালা খালু আর মামা মিলে ব্যপক আয়োজন হয়েছিলো। কিন্তু মোটে একদিন... দেখতে দেখতেই চলে গেল। মামা তার গাড়িতে করে এয়ারপোর্ট আব্দি পৌছে দিয়েছলেন ত বটেই তার সাথে আমাদের তিন ভাই বোনকে ব্যপক চক্লেট জুস কিনে দিয়ে গেছিলেন। এবার আবশ্যি বিমান পরিবর্তন হয়ে চড়লাম গালফ এয়ারে...... বিমানটা ছিলও বিশাল জাম্বু জেট, দোতলা বিমান। আমরা নিচ তালায় থাকলেও আমার আর ভাইয়ার কৌতূহল বাধ মানে না। বিমানের পিছন থেকে হেটে হেটে সাম্নের সিড়ি টাইপ একটা কিছুর কাছে পৌছতেই দুই নিরপত্তারক্ষী টাইপের কেউ আমাদের আবার কোলে করে পিছনে দিয়ে গিয়েছিলো।মা খুব করে বকেছিলেন কাছছাড়া হবার জন্য। প্লেন পরবর্তী গন্তব্য ছিল জেদ্দাহ বিমান বন্দর সৌদি আরব। প্লেনেই এক চাচির সাথে পরিচয় হয় আম্মার, নাম মনে নেই তবে উনারও গন্তব্য ছিল নাইজেরিয়া। জেদ্দা বিশাল বিমান বন্দর ক্ষনে ক্ষনে প্লেন উঠছে নামছে আর মাইকে মুহুরমুহু ঘোষনা...... তাল সাম্লানোই দায়। এক বিদেশিনীকে দেখছিলাম কাঁদো কাঁদো হয়ে তার মেয়েকে খুজে বেড়াচ্ছেন। আম্মা পই পই করে সাবধান করতেন যেন কোনমতেই কাছছাড়া না হই। আসলে সাদা হোক কালো হোক সব মায়ের জন্যই তার সন্তানের প্রতি ভালবাসা সমান। আল্লাহ সুবহানাহু তা’লা পবিত্র কোরানে সমগ্র মনব জাতিকে ইয়া বনু আদ’মা বা এক আদমের সন্তান হিসাবেই আখ্যা দিয়েছেন তাই তাদের স্বভাবে ত সাদৃশ্য থাকবেই।
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই আগস্ট, ২০১৫ দুপুর ২:১৮