এক মৃত ধনীর ব্যাক্তির বাড়িতে কালো বা গাঢ় নীল পোশাকে একদল অনাত্মীয় মেয়েদের করুন কান্না কখনো শুনেছেন কি? চেনা নাই,জানা নাই তার জন্য মাটিতে বসে হাত পা ছুড়ে বুক চাপড়ে চোখের পানিতে গাল ভাসিয়ে কেদে চলেছে মেয়েদের এক দল। কি অবাক করা বিষয় তাই না? কিন্ত বিশ্বে এরও প্রচলন ছিল এবং এখনো আছে।
এই ভাড়াটিয়া ক্রন্দসীদের সম্পর্কে প্রথম জানা যায় প্রাচীন মিশরীয় সভ্যতার সময়। এই পেশাজীবি ক্রন্দসীর দল চুল খুলে, চিতকার করে, মাটি থাপড়ে বুক চাপড়ে কেদে চলতো। শেষ পর্যন্ত মৃতদেহকে অনুসরণ করে চলতো। যে যত ধনী তার শবদাহ হতো তত জাকজমক করে আর পেশাজীবিদের কান্নার সময়ও দীর্ঘমেয়াদি হতো। বিশেষ করে তারা মৃতদের দেবতা আইসিস আর ওসিরিসিকে উদ্দেশ্য করে কাদতো। ভাড়াটে কান্নার পেশায় সাধারণত মেয়েদেরই দেখা যায়। কারণ তাদের কোমল এবং নরম মন ও শারীরিক গঠনের জন্য।
৭০০ শতাব্দীতে চীনেও এই কালচার দেখা যায়, তবে তারা শবদেহের সাথে শোভাযাত্রা করে সমাধি স্থানে পৌছাতো।
ইউরোপেও এই চল ছিল তবে ভিন্ন বছরে স্টাইলে। মেক্সিকোতে বছরের একদিন মৃত আত্নাদের জন্য তাদের আত্নীয়স্বজনরা শোভাযাত্রার মাধ্যমে সমাধি স্থলে পৌছে বিভিন্ন ভাবে তাদের স্মরণ করে থাকে। এই দৃশ্য হয়তো আপ্নারা দেখে থাকবেন সিলভেস্টার স্ট্যালোন অভিনীত এসাসিন ম্যুভিতে।পাক ভারত উপমহাদেশে বিশেষ করে ভারতের রাজস্থানেও এইসব ভাড়াটিয়া ক্রন্দসীদের দেখা মেলে।এদের বলা হয় রূদালী। হিন্দি ভাষায় রূ বা রো অর্থ কান্না। রূদালীদের নিয়ে ভারতের কল্পনা লাজমী একটি সিনেমা তৈরি করেছিলেন, ম্যুভিটার নামও "রূদালী" অর্থাৎ পেশাজীবি ক্রন্দসী । ভারতের বিখ্যাত লেখিকা মহাশ্বেতা দেবীর লেখা সাড়া জাগানো একটি ছোট গল্প নিয়ে তৈরি সিনেমায় নায়িকা শনিচরীর ভুমিকায় অভিনয় করে পুরস্কার জিতে নেন ডিম্পল কাপাডিয়া। রূদালী ছবির একটি দৃশ্য
রুক্ষ মরুময় রাজস্থানের কয়েকটি গ্রামে অতি দরিদ্র নিম্ন বর্নের জনগোষ্ঠীর বসবাস। সেই গ্রামগুলোতে অশুভ দিন বলে চিনহিত শনিবার একটি মেয়ের জন্ম হয়েছিল। তার নাম রাখা হয়েছিল শনিচরী। আজন্মকাল দুর্ভাগ্য আর দারিদ্র্যতার সাথে সংগ্রাম করা শনিচরী স্বামী সন্তান নিয়েও বিন্দুমাত্র সুখের মুখ দেখেনি। একে একে স্বামী সন্তান ফেলে গিয়েছিল নি:স্ব শনিচরীকে, যেমন করে ছোট বেলায় ফেলে গিয়েছিল মা অভিনয় জগতে নাম লেখাতে।
দারিদ্রের সাথে অনবরত এই সংগ্রাম তার হৃদয়কে এতটাই কঠোর করেছিল যে স্বামী সন্তানের অপমৃত্যুও তার চোখে এক ফোটা পানি আনতে পারে নি। সেই কিনা পরবর্তীতে এক মহিলার সাহায্যে পয়সার বিনিময়ে কান্নার পেশার সন্ধান খুজে পায়, যেখানে তাকে মাটিতে শুয়ে বসে বুক চাপড়ে, থুতু দিয়ে চোখে জলের রেখা তৈরি করে মেকি কান্না কাদতে হয় গ্রামের কোন বিশাল জমিদার বা নিষ্ঠুর ধনী ব্যাক্তির মৃত্যুর পর এক শোকাবহ পরিবেশ সৃষ্টির জন্য।
শেষে আমার জিজ্ঞাসা সারা বিশ্বের চোখের সামনে ইসরাইলি বর্বতায় গাজার এমন এক পরিস্থিতি, কেউ কারো জন্য কাদবে এমন মানুষ নেই। তবে কি সেখানকার মৃতদের জন্য আজ রূদালীদের প্রয়োজন??