১.
রাতের দ্বিপ্রহর। মজনু হাটছে- ধীরস্থির, স্বাভাবিক গতিতে। গন্তব্য বিরাবাজার। তার হাটাচলার ভঙ্গি দেখলে কেউ কল্পনাও করতে পারবে না, সে মাত্র একটা তরতাজা মানুষ খুন করে জলে ভাসিয়ে ফিরছে। আঙ্গুলের ফাকে জ্বলন্ত সিগারেট, কানে মোবাইল- আশপাশ থেকে ফিসফাস, হ্যা, না, উ, আ... শুনা যাচ্ছে। যেনো কোনো প্রেমিক তার প্রেমিকার সাথে কথা বলতে বলতে হাটছে.....
বাতাসে শীতের আমেজ। আইয়ুব আলীর টং দোকানে মুরব্বী গোছের দু'চারজল লোক বসে চা খেতে খেতে গল্প করছে। প্রসঙ্গঃ ইউনিয়ন নির্বাচন।
''আমরার মেম্বার ইবার মেলা ভোটে চেয়ারম্যান অইবা। তিন গ্রাম'র মানুষে তানরে মানে। আর বড়কথা অইলো- ইবার আমরার চেয়ারম্যান সা'বে নির্বাচন করতা না খইরা। চেয়ারম্যানে নির্বাচন না করলে ত ফারুক মেম্বার'উ ফাইনাল- কইলাম। লেখিয়া রাখো।''
আইয়ুব আলীর কথায় উপস্থিত সবাই সহমত প্রকাশ করলো। কয়েক সেকেন্ড পর ডানপাশের একজন, "আমরার বর্তমান চেয়ারম্যান গনু মিয়া ও মানুষ ভালা রেবা। বেটায় গাউত (গ্রামে) বহুত উন্নয়ন করছইন।" আইয়ুব আলীসহ অন্যান্যরা এবারও সহমত প্রাকাশ করলো।
মোবাইলে কথা বলতে বলতে চা' শেষ করে ৮-১০ হাত দূর থেকে হাত উচিয়ে মজনু বললো, 'আয়ুব ভাই লিখিয়া রাখিও নে, পরে নিবায়।' আইয়ুব আলী বিরক্ত হয়ে বললো, তোমরার জ্বালায় ব্যবসা বাদ দিলাইমু বলে ঝাড়ি দিতে দিতে বললেন কাপ ওটা দিয়া যা তে। মজনু বরাবরের মতো আইয়ুব আলীর কথায় কর্ণপাত না করে বাসার পথে হাটতে লাগলো। আইয়ুব আলীর মতো মানুষদের কথাটথা সে খুবএকটা কানে তুলে না। এসব মানুষদের কথার চাইতে মুন্নি, শিলা,মিলার বা রাতের রজনীগন্ধাদের ফাও-কথার মূল্য তার কাছে অনেক বেশি।
মধ্যরাত। মজনু কথা বলছে: ফিসফিস, হা, উ, না..... রাত বাড়ছে। বাড়ছে তরতাজা একজন মানুষ খুনের সাক্ষী হওয়া দুঃখী, নিস্তব্ধ রাত।
২.
পুবের আকাশ জয় করে রোদ এখন মাথার উপরে। ঘাসের ডগায় কুয়াশা নেই, বাতাসে নেই শীতের আমেজ। তবুও অনেকের শরীর ভয়ে হুহু করে কাপছে।
ষাটমা গাঙ্গের জলস্রোত যেখানে শান্ত হয়েছে, তার ২ কি.মি পূর্বে, কিরিমনের সরিষাখেতের মাঠে- নরেশনগর থানার গাড়িতে পড়ে আছে ফারুক মেম্বারের লাশ! লাশের গাড়ি ঘিরে উৎসুক মানুষের ভীড়। দায়িত্বশীল পুলিশের একজন সদস্য নোটবুকে উপস্তিত দু'চারজনের স্বাক্ষরসহ কিছু বক্তব্য নোট করছেন।
ভোরে বাগমারার মাঠে লাশ ভেসে থাকতে যে দেখেছে তার নাম মতিন। মতিন মহকুন্দা গ্রামের কৃষক। লাশ ভেসে থাকতে দেখে হাক-ডাকে মানুষ জড়ো করেছে মতিন। তারপর....
ফারুক মেম্বারের ফ্যামিলির সদস্যারা হাউমাউ করে কাদছে। গনু চেয়ারম্যান কাঁদো কাঁদো চোখে তাদের শান্তনা দিচ্ছেন। দূর থেকে দৃশ্যটা মুখস্ত করার চেস্টা করছে মজনু। একজন প্রফেশনাল, সফল সিরিয়াল কিলার হতে হলে এক্টিং শেখাটা যে অনেক অনেক ইম্পর্টেন্ট!
(ক্রমশঃ)